সারাদিনের অফিসের পর বিকেলে যখন বাসায় ফিরি আমার ছেলেটা ছোট ছোট পায়ে দৌড়ে এসে কোলে ওঠে। বলে,
“আব্বু আমার জন্যে কি আনছো?”
আমি পকেট থেকে লজেন্স, বিস্কুট কিছু একটা বের করে দেই। ছেলে সেটা নিয়ে লাফাতে লাফাতে টিভির সামনে গিয়ে বসে। সারা দিনের মধ্যে এটা আমার সব চেয়ে প্রিয় মুহূর্ত।
মনে মনে ভাবি ছেলেটা দেখতে দেখতে বড় হয়ে যাচ্ছে। স্কুলে দিতে হবে। তার বর্ণ পরিচয় হওয়া দরকার। ছেলে টিভিতে কার্টুন আর হিন্দি সিরিয়াল দেখতে থাকে। আমি সংসারের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। স্ত্রী এসে জানাতে থাকে সারা দিনে এটা হয়েছে, ওটা হয়েছে। এটা আমার প্রতিদিনের রুটিন।
সেদিন হঠাৎ করে এর ব্যাতিক্রম ঘটল। বিকেলে দরজায় কড়া নাড়তেই আমার ছেলেটা ভিতর থেকে বলে উঠল,
“কৌন হ্যায়?”
বড় রকমের একটা হোঁচট খেলাম। বললাম, “এটা কোথায় শিখলে বাবা?”
ছেলে বলল, “টিভি দেখে।”
আমার প্রিয় মুহূর্ত অপ্রিয় হয়ে গেল। খুব রাগ হল টিভিটার উপরে। যে ছেলে আমার ঠিক মত বাংলা শিখল না সে গড়গড়িয়ে হিন্দি বলছে। একবার ভাবলাম তার টিভি দেখা বন্ধ করে দেই। পরে ভাবলাম কত দিন ছেলেকে পাহারা দিয়ে রাখব? আমাদের দেশেও তো এখন অনেক টিভি চ্যানেল আছে। কিন্তু দর্শকদের তারা ধরে রাখতে পারছে না। সবাই হিন্দি দেখছে, হিন্দি শিখছে। এঅবস্থার পরিবর্তন তখনই ঘটবে যখন আমাদের চ্যানেলগুলো ভারতীয় চ্যানেলের সাথে লড়াই করে জিততে পারবে।
টিভির সাথে জড়িত এক বন্ধুকে কথাটা বলতে সে বলল,
“তোরা দেশীয় চ্যানেল দেখিস না তাই এই অবস্থা। তোদের দেখতে মানা করেছে কে?”
হয়ত আমাদেরও কিছু দোষ রয়েছে। কিন্তু দায়িত্বটা তো মূলত নির্মাতা ও চ্যানেল কতৃপক্ষের। তারা আমাদের কাছে আমাদের দেশকে, সংস্কৃতিকে আর্কষনীয় করে তুলতে পারছে না। অভাবটা প্রযুক্তির নাকি মেধার জানি না। শুধু জানি সালাম, রফিক, বরকতরা আর যাই হোক এই দিন দেখবার জন্যে জীবন দেয়নি।
রচনাঃ ৩০/১/২০০৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



