somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

ইহতিশাম আহমদ
একটি বেসরকারী টিভি চ্যানেলে ক্যামেরাপারসন হিসাবে চাকুরীরত। ত্রিকোন চলচ্চিত্র শিক্ষালয় নামে একটি ফিল্ম স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রশিক্ষক। গল্প, কবিতা লেখা ও অভিনয়ের অভ্যাস রয়েছে।

চলচ্চিত্র নির্মাণ টিপস-৩ চলচ্চিত্র ও টিভি নাটকের স্ক্রীপ্টের মাঝে পার্থক্য

২৩ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ১১:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আপনারা যারা স্ক্রীপ্ট রাইটার হতে চান তাদের মনে রাখতে হবে যে স্ক্রীপ্ট লেখাই হয় চলচ্চিত্র বা টিভি নাটক নির্মান করার জন্যে। সুতরাং আপনার লেখা স্ক্রীপ্ট নিয়ে কাজ করার সময় যেন র্নিমাতাকে কোন রকম টেকনিকাল বা নন টেকনিকাল সমস্যার সম্মুক্ষীণ হতে না হয় সেটা বিবেচনায় রাখা একজন স্ক্রীপ্ট রাইটার হিসাবে আপনার নৈতিক দায়িত্ব। চলচ্চিত্র মাধ্যম এবং টিভি মাধ্যমের মাঝে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে। একজন সফল স্ক্রীপ্ট রাইটার হওয়ার জন্যে এই পার্থক্যগুলোকে গুরুত্বের সাথে স্মরণে রাখা বাঞ্চনীয়।

প্রথমতঃ, একটি টিভি স্ক্রীন সাধারনতঃ ২০ ইঞ্চি বা ২৪ ইঞ্চি হয়ে থাকে। খুব বেশী হলে ৪২ বা ৬০ ইঞ্চি। অপর দিকে একটি সিনেমার পর্দা মোটামুটি ১০ ফিট বাই ২০ ফিট বা তার চেয়েও বড় হয়ে থাকে। অর্থাৎ একটা সিনেমার পর্দায় একই ফ্রেমে যতটা খুঁটিনাটি বিষয় তুলে ধরা সম্ভব একটি টিভির পর্দায় স্বাভাবিক ভাবে তা সম্ভব নয়। সুতরাং একটি লং শট বা একটি মিড শটের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে যতটা খুঁটিনাটি ফুটিয়ে তোলা সম্ভব তা টিভিতে করতে হলে আপনাকে একাধিক ক্লোজ শটের আশ্রয় নিতে হচ্ছে। অথবা যে বিষয়টা আপনি চলচ্চিত্রে দৃশ্যায়নের মাধ্যমে দেখাতে পারছেন টিভিতে তা আপনাকে ডায়লগের মাধ্যমে তুলে আনতে হচ্ছে। যদি একাধিক ক্লোজ শট ব্যবহার করা হয় তো সেক্ষত্রে রাইটারের কিছু করার নেই। কিন্তু ডায়লগের মাধ্যমে বিষয়টিকে ফুটিয়ে তুলবার ক্ষেত্রে রাইটারের ভুমিকা গুরুত্বপূর্ণ।

২য়তঃ, চলচ্চিত্রে ব্যবহৃত ক্যামেরা ও টিভি ক্যামেরার লেন্সের মাঝে বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে। চলচ্চিত্রে প্রচুর পরিমানে প্রাইম লেন্স ব্যবহার করা হয় যা টিভি প্রোডাকশনে করা হয় না। তাই হাইপার ফোকাল ডিসটেন্স এর ব্যবহার টিভিতে প্রায় নাই বললেই চলে। আর একারণে যোজন বিস্তৃত ফসলের মাঠ বা একেবারে কাছ থেকে শুরু করে অসীম দূর পর্যন্ত পুরোটাই ফোকাসের মধ্যে রাখা টিভি ক্যামেরায় সম্ভব হয় না। তাই এই জাতীয় দৃশ্য টিভি নাটক লেখার সময় যতটা সম্ভব এড়িয়ে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। তবে বিগ বাজেটের অনেক নাটকে প্রাইম লেন্স ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রে বিষয়টুকু ভিন্ন।

৩য়তঃ, চলচ্চিত্র প্রজেক্টরের মাধ্যমে দেখানো হয়। তাই এখানে যে মানের ছবি ধারণ হয় সেই মানের ছবিই র্দশক দেখতে পায়। কিন্তু টিভিতে বিষয়টা ভিন্ন। সবার প্রথমে নাটকটি ব্রডকাস্ট বা অন এয়ার করার সময় ছবির মান কিছুটা কমে। তারপর ক্যাবল কানেকশন যদি ১০০% ঠিক না থাকে তবে সেখানে আরেক দফা ছবির মান কমছে। এরপরে যদি আবহাওয়া খারাপ থাকে তাহলে আরো কিছুটা মান কমছে। যদি আপনার টিভির টিউনিং ঠিক না থাকে তাহলেও আরেক দফা মান কমছে। মোট কথা একটি নাটকের ছবির মানের বা রেজুলুশনের অনেকটাই আপনি টিভি দেখবার সময় খুঁজে পাচ্ছেন না। আর এই কারণে বাধ্য হয়েই টিভি নাটকে অনেক বিষয় ক্লোজ শট নয়ত ডায়লগের মাধ্যমে তুলে ধরতে হয় যা কিনা চলচ্চিত্রে খুব সহজেই কোন লং শট বা মিড শটের মাধ্যমে দেখানো সম্ভব।

৪র্থতঃ টিভি নাটকের সময় সীমা নির্ধারিত। চলচ্চিত্রের মত যতটুকু দরকার ততটুকু দৈর্ঘ্যরে কাহিনী আপনি বানাতে পারছেন না। যদিও আমাদের দেশের পরিবেশকরা চলচ্চিত্রের নির্দিষ্ট সময় সীমা বেঁধে দেয়ার চেষ্টা করে কিন্তু সেটাকে চাইলেই আপনি অস্বীকার করতে পারেন। যা টিভিতে একেবারেই সম্ভব নয়। তাই চলচ্চিত্রের মত মনের মাধুরী মিশিয়ে দৃশ্যের পর দৃশ্য সাজানো টিভি নাটকে সব সময় সম্ভব হয়ে ওঠে না।

৫মঃ বাজেট। চলচ্চিত্রের বাজেট স্বাভাবিক ভাবেই টিভি নাটকের চেয়ে অনেক বেশী তাই চলচ্চিত্রের স্ক্রীপ্ট লেখার ক্ষেত্রে আপনি যতটা স্বাধীনতা পাচ্ছেন টিভি নাটকে ততটা পাওয়া সম্ভব নয়। চলচ্চিত্রে যেখানে আপনি নায়ক নায়িকাকে সরাসরি সুন্দরবন, কক্সবাজার বা দেশের বাইরে নিয়ে যেতে পারছেন সেখানে টিভি নাটকে আপনাকে বিষয়টা নায়ক নায়িকার আলাপচারিতার মাধ্যমে তুলে আনতে হবে। অথবা ধরেন, একটি ব্যস্ত সড়কে দূর্ঘটনার দৃশ্যে সুটিং করতে পর্যাপ্ত আয়োজন ও সময়ের প্রয়োজন। আর আয়োজন ও সময় বেশী মানেই বাজেট বেশী। চলচ্চিত্রে সেটা সহজেই করা গেলেও টিভি নাটকের ক্ষেত্রে বিষয়টা বেশ কঠিন। সুতরাং ঘরের ভিতরে নায়ক তার বন্ধুকে এই মাত্র রাস্তায় তার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাটার বর্ণনা দিচ্ছে, এমনটা যদি দেখানো যায় তবে কাহিনীও ঠিক থাকে আবার বাজেটও কম হয়।

সব মিলিয়ে চলচ্চিত্র আর টিভি নাটকের স্ক্রীপ্টের মধ্যে পার্থক্য প্রধানত দুটি। এক, চলচ্চিত্রের স্ক্রীপ্টে লং, মিড ও ক্লোজ শট ব্যবহার করতে হয় এমন সব ধরনের দৃশ্য রাখার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু টিভি নাটকে লং শট ব্যবহার করতে হয় এই জাতীয় দৃশ্যর ব্যবহার সীমিত। দুই, চলচ্চিত্রের স্ক্রীপ্টে তুলনামূলক ভাবে দৃশের চেয়ে ডায়লগ কম থাকবে। অপর দিকে টিভি নাটকে দৃশ্যের চেয়ে ডায়লগ বেশী থাকবে।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১১:৩০
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×