somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

ইহতিশাম আহমদ
একটি বেসরকারী টিভি চ্যানেলে ক্যামেরাপারসন হিসাবে চাকুরীরত। ত্রিকোন চলচ্চিত্র শিক্ষালয় নামে একটি ফিল্ম স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রশিক্ষক। গল্প, কবিতা লেখা ও অভিনয়ের অভ্যাস রয়েছে।

চলচিত্র র্নিমাণ টিপস-৭ মন্তাজ ২

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ১১:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


(আয়তনে বড় হওয়ায় রচনাটি ২টি পর্বে বিভক্ত)

(১ম পর্ব পড়তে ক্লিক করেন - Click This Link)
ডায়ালেকটিক মন্তাজের ক্ষেত্রে বর্তমান সময়ের একটা উদাহরণ দেব মাত্র। কারণ আমার বিশ্বাস এতক্ষণে পুরো বিষয়টা আপনাদের কাছে পরিস্কার হয়ে গেছে। “ব্যাড বয়েজ” সিনেমাটা প্রায় সবাই-ই দেখেছেন। উইল স্মিথের নায়িকা ভিলেনের দলে ভীড়ে গেছে তথ্য সংগ্রহের জন্যে। উইল আর তার পার্টনার ভিলেনকে ধরার জন্যে তৈরী হয়ে বসে আছে। সব কিছু পরিকল্পনা মাফিক না যাওয়াতে উইল স্মিথ ও তার পার্টনার ছুটতে থাকে ভিলেনের গাড়ির পিছনে। প্যারালাল কাটিংএ একবার নায়িকা আরেকবার উইল স্মিথ। মনে পড়েছে দৃশ্যটা?

অনেক বোদ্ধা হয়ত বলবেন, কোথায় আগরতলা আর কোথায় চকির তলা। উত্তরে বলল, এখানে ঘন ঘন প্যারালাল কাটিং আছে। বিষয়টার শুরু এবং শেষ রয়েছে এবং দর্শকের মনে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। তবে কেন এটাকে ডায়ালেকটিক মন্তাজ বলা যাবে না? শুরুতেই বলেছি মন্তাজকে অযথাই জটিল ও কঠিন একটা বিষয় হিসাবে উপস্থাপনের মানষিকতা আমাদের মাঝে রয়েছে। দয়া করে এর থেকে বের হয়ে আসেন, দেখবেন প্রায় বেশির ভাগ একশন দৃশ্যে এই মন্তাজের ব্যবহার রয়েছে। তাছাড়া ব্যাটেলশীপ পটেমকিন তো সব অর্থেই একটি একশন ধর্মী সিনেমা। সুতরাং এই সিনেমা থেকে সৃষ্টি হওয়া মন্তাজ যে একশন সিনেমাতেই ব্যবহার হবে এতে অবাক হওয়ার তো কিছু নাই।

মেট্রিক্স মন্তাজ- এটিও উত্তেজনা সৃষ্টকারী একটি মন্তাজ। এখানেও প্যারালাল কাটিং রয়েছে। তবে এখানে প্রতিটি শট মেপে মেপে আগের শটের চেয়ে কম র্দৈঘের হয়ে থাকে। এতে করে দৃশ্যটির উত্তেজনা গানিতিক হারে বাড়তে থাকে। উত্তেজনা যখন চরমে তখন কোন একটা টুইষ্ট দিয়ে এক ধাক্কায় পুরো উত্তেজনাকে নিচে নামিয়ে আনা হয়। এখানে গানিতিক হিসাব রয়েছে বলেই এর নাম মেট্রিক্স মন্তাজ রাখা হয়েছে।

৭০ দশকের কান ফেস্টিভলের সেরা চলচ্চিত্র “ক্রেইনস আর ফ্লাইং” এ একটি দৃশ্যে দেখা যায় নায়িকা দ্রূত হেঁটে যাচ্ছে আত্মহত্যা করার জন্যে। ট্রেন ছুটে আসছে। একবার ট্রেনের শট, একবার নায়িকার শট। প্রতিবারই আগের বারের চেয়ে দ্রুত কাট করে করে উত্তেজনা যখন চরমে, র্দশক যখন ভাবছে নায়িকা মরবেই তখন হঠাৎ করে নায়িকার নজরে আসল একটা ছোট ছেলে দূর্ঘটনা বশতঃ ট্রেনে কাটা পড়তে যাচ্ছে। তখন নায়িকা ঝাঁপিয়ে পড়ে ছেলেটাকে রক্ষা করে। ট্রেনটাও শব্দ করে চলে যায়। তারপর সব শান্ত।

পুরোনো উদাহরণ গেল। এবার আসি এই যুগের উদাহরণে। “মিশন ইমপসিবল”-এ একটি দৃশ্য রয়েছে সাব ওয়েতে ট্রেনের ছাদে টম ক্রজ ও ভিলেনের মারামারি। উত্তেজনা গানিতিক হারে বাড়তে বাড়তে এক সময় হঠাৎ করেই দেখা যায়, যেখানে টম ক্রজ ও ভিলেন দুই জনেরই মরে যাওয়ার কথা সেখানে শুধু ভিলেন মরে যায় আর টম ক্রজের একেবারে গলার কাছে এসে হেলিকপ্টারের ভাংগা ডানাটা থেমে যায়। অর্থাৎ উত্তেজনা চরমে উঠে হঠাৎ করেইে একটা চমক দিয়ে থেমে যায়।

এখানে একটা কথা বলে রাখা ভাল। ক্রেইনস আর ফ্লাইংয়ে উত্তেজনা যতটা চড়ায় উঠে মিশন ইমপসিবলে ততটা হয়ত ওঠে না। তাছাড়া ক্রেইনস আর ফ্লাইংএ মিক্সিংএর ব্যবহার করা হয়েছে যা মিশন ইমম্পসেবলে করা হয়নি। এর কারণ সেই সময়কার অভিনয়, কাহিনীর গঠন ইত্যাদি সব কিছুর সাথে অতখানি চড়া উত্তেজনা মানিয়ে যেত যা হয়ত এখন যায় না। মোট কথা হল, ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা এবং একটি চমক দিয়ে সেই উত্তেজনাকে হঠাৎ করে শুন্যে নামিয়ে আনা- এটা যেখানেই দেখতে পারেন চোখ বন্ধ করে জানবেন সেটাই মেট্রিক্স মন্তাজ।

ইন্টেলেকচুয়াল মন্তাজ- এটি একটি ভিন্নধর্মী মন্তাজ। নাম শুনেই বুঝতে পারছেন এখানে সৃজনশীলতার বড় একটি ভুমিকা রয়েছে। আর তাই এই মন্তাজটি শুধু মাত্র সম্পাদনা র্নিভর নয়। এখানে স্ক্রীপ্ট রাইটারেরও বড় একটি ভুমিকা রয়েছে। কারণ যা কিছু সিনেমার মাঝে এখন পযর্ন্ত ঘটে গেছে সেই সবের সাথে মিল রেখে কল্পনা বা স্বপ্ন বা ভবিষ্যতে কি হতে পারে বা পারত এই সবকিছু মিলিয়ে একটি পরাবাস্তাবিক এফেক্ট এই মন্তাজে তৈরী করা হয়। ক্রেইনস আর ফ্লাইং সিনেমাটিতে এর চমৎকার একটি ইদাহরণ রয়েছে।

সিনেমার শুরুতেই নায়ক নায়িকার কিছু রোমান্টিক দৃশ্য দেখানো হয়। তার মধ্যে একটি হল নায়ক সিঁড়ি ঘরের নিচে দাঁড়িয়ে আছে। সিঁড়ি ঘরটি চারকোনা এবং তার চারদিক পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে সিঁড়িটি উপরে উঠে গেছে। নায়িকা সিঁড়ি ভেংগে উপরে উঠে যায়। নায়কের পয়েন্ট অফ ভিউ থেকে ঘুরে ঘুরে নায়িকার উপরে উঠে যাওয়া দেখানো হয়। তাদের বিয়ের সিদ্ধান্ত হয়েছিল কিন্তু ২য় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ার তা আর হয়ে উঠেনি। নায়ক যুদ্ধে চলে যায়। যুদ্ধের এক পর্যায়ে নায়ক গুলি খায়। গুলি লাগার পরে নায়ক একটা চক্কর মেরে মাটিতে পড়ে যেতে থাকে। নায়কের পয়েন্ট অফ ভিউ থেকে সেখানকার আকাশ ও গাছকে স্লো মোশনে ঘুরতে দেখা যায়। সেই ছবির সাথে ডিজভ করে আগের দেখা সিঁড়ির সেই ঘুরে ঘুরে নায়িকার উঠে যাওয়ার শট দেখানো হয়, যা আগে ঘটে ছিল। তারপরে দেখানে হয় নায়িকা বিয়ের সাজে সেজেছে। তাদের বিয়ের অনুষ্ঠানে নাচ ইত্যাদি বেশ কিছু শট ডিজলভ ও মিক্সিংএর মাধ্যমে দেখানো হয় যা কিনা নায়কের আকাংখায় ছিল কিন্তু বাস্তবে ঘটেনি।

এভাবে বিভিন্ন এফেক্ট ব্যবহার করে এবং যা ঘটেছে ও যা ঘটতে পারে তার মিশ্রণের মাধ্যমে যে মন্তাজ তৈরী করা হয় তাকে ইনটেলেকচুয়াল বা বুদ্ধিদীপ্ত মন্তাজ বলা হয়। এই মন্তাজটি সাধারণতঃ দৃষ্টি নন্দন ও অর্থ পূর্ণ হয়ে থাকে। ক্রেইনস আর ফ্লাইং সিনেমাতে ব্যবহার করা এই মন্তাজকে ৯১/৯২ সাল পর্যন্ত সর্বকালের সেরা মন্তাজ হিসাবে বিবেচনা করা হত বলে জানি। পরবর্তিতে জীবিকার ব্যস্ততায় নিয়মিত চলচ্চিত্র সমালোচনা পড়া হয়ে ওঠেনি তাই বর্তমানে সেরা মন্তাজের খেতাবটি কার দখলে তা আমার জানা নেই।

“লর্ড অব দা রিংস” সিনেমাটি যারা দেখেছেন তারা নিশ্চয় ইতিমধ্যেই বুঝে গেছেন ইন্টেলেকচুয়াল মন্তাজের ব্যবহার সেখানে কি পরিমান করা হয়েছে। সে বিষয়ে আলাদা করে বর্ণনা দিয়ে আপনাদের বিরক্ত না করে আমি টম ক্রুজের “মাইনোরিটি রিপোর্ট” সিনোমাটিতে আসতে চাই। কারণ এটি একটি একশনধর্মী সিনেমা আর মন্তাজ যে সব ধরনের সিনেমাতেই ব্যবহার করা যায় এটা প্রমান করার জন্যে আমি এই উদাহরণটি বেছে নিচ্ছি। টম ক্রজ যখন নিজের মাইনোরিটি রিপোর্ট জানার চেষ্টা করে তখন কিছু স্পেশাল এফেক্টের ব্যবহারসহ বেশ কিছু শট দেখানো হয় যার বেশ কিছু বাস্তাবে ঘটেছে আর কিছু ঘটতে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে। ইন্টেলেক্চুয়াল মন্তাজের সব শর্তই এখানে পূরণ করা হয়েছে। শুধু টেকনোলজির আধুনিকায়ন ও ফিল্ম লেংগুয়েজের পরিবর্তনের কারণে উপস্থাপনটি কিছুটা ভিন্ন।

আরেকটি ছোট উদাহরণ দিয়ে শেষ করব। “গ্লাডিয়েটর” আমার ভীষণ প্রিয় একটি সিনেমা। রাসেল ক্রো বারবার কল্পনায় তার জীবনে ঘটে যাওয়া বউ ও ছেলে সংক্রান্ত ঘটনাগুলো দেখতে পায় সেই সাথে দেখে হেভেনের দরজায় তার বউ ও ছেলে তার জন্যে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে। কিছু বাস্তব আর কিছু মনের আকাংখা। এটা অবশ্যই পূর্ণাঙ্গ ইন্টেলেকচুয়াল মন্তাজ নয়। কিন্তু এর মূল ভাবটুকু এখানে ব্যবহার করা হয়েছে।

আশা করছি মন্তাজ বিষয়টি আপনাদের কাছে পরিষ্কার হয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১২:০০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৬

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট



পানি জীবনের মূল উৎস। এটি ছাড়া কোনো প্রাণের অস্তিত্ব সম্ভব নয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন:

وَجَعَلۡنَا... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে shoot করে লাভবান হলো কে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৪


শরিফ ওসমান হাদি যিনি সাধারণত ওসমান হাদি নামে পরিচিত একজন বাংলাদেশি রাজনৈতিক কর্মী ও বক্তা, যিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে গঠিত রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত। তিনি ত্রয়োদশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×