somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এই শীতে ঘুরে আসুন প্রকৃতির রাণী ‘শ্রীমঙ্গল’

০৬ ই জানুয়ারি, ২০১০ রাত ১১:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এই শীতে ঘুরে আসুন প্রকৃতির রাণী ‘শ্রীমঙ্গল’
(রি-পোস্ট)
ইসমাইল মাহমুদ
শ্রীমঙ্গল[/sb
চা-পাতার আঁচল ছড়ানো একটি আবাসস্থল,
অনেক প্রাণের মমতা জড়ানো আমার শ্রীমঙ্গল।
‘শ্রী’ এখানে মুদ্রা তোলে শ্রমিক নারী হাতে,
‘মঙ্গল’ এখানে সোচ্চার হয় সবুজ প্রপাতে।
বাংলা নামের দেশের মুখে একটি সবুজ তিল,
সুন্দর তার অঙ্গ-শোভার পেয়েছে মধুর মিল।
গোপলা তাঁর পায়ে বাঁধা ছোট্ট এক মল,
হাইল হাওরে বাউল হাওয়া আমার শ্রীমঙ্গল।
আনারসের মিষ্টি হৃদয় তুলনা তাঁর নেই-
রবার গাছের নরম পাতায় পল্লবিনী সে-ই।
অরণ্যের আদরিনী, শস্যাঙ্গী, সবুজে নির্মল
পেলব মধুর তিলোত্তমা আমার শ্রীমঙ্গল।
দেশের অতি পরিচিত কবি-সাহিত্যিক-প্রাবন্ধিক শ্রীমঙ্গলের রতœ প্রফেসর নৃপেন্দ্রলাল দাশ তাঁর কবিতায় এভাবেই শ্রীমঙ্গলের প্রাকৃতিক রূপের বর্ণনা দিয়েছেন।
শ্রীমঙ্গল দুটি পাতা একটি কুঁড়ির দেশ। যে দিকে দু’চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজ। সুনীল আকাশ, দিগন্ত জুড়ে বিশাল হাওর, সাজানো সবুজ চা বাগান আর সুউচ্চ সবুজ পাহাড়ি টিলার নয়নাভিরাম দৃশ্যাবলীর দেশ শ্রীমঙ্গল। ‘শ্রী’ অর্থ সুন্দর এবং ‘মঙ্গল’ অর্থ শান্তি। সুন্দর ও শান্তির দেশ শ্রীমঙ্গল। শ্রীমঙ্গল বাংলাদেশের একটি উপজেলা হলেও অন্য উপজেলা থেকে যেন একটু অন্যরকম। শ্রীমঙ্গল যেন এক স্বপ্নময় স্বর্গের নাম। এ উপজেলাটি দেশী-বিদেশী পর্যটকদের নিকট যেন স্বর্গোধ্যান। চা বাগান, ঘন জঙ্গল, উঁচু-নিঁচু টিলা, লেবু-পান-আনারস-রাবার বাগান, সুবিস্তৃত হাওর, লেক দিয়ে সাজানো অদ্ভুত সুন্দর এক উপজেলার নাম শ্রীমঙ্গল। সৃষ্টিকর্তা যেন অকৃপনভাবে নিজ হাতে সাজিয়েছেন এ উপজেলাকে। দেশের শীত ও বৃষ্টিপ্রধান অঞ্চল হিসেবেও শ্রীমঙ্গল সুপরিচিত।
ঈদের ছুটিতে শহরের কোলাহল ও কর্মব্যস্ত জীবন থেকে মুক্ত হয়ে একটু প্রশান্তি খুঁজছেন? একটুও চিন্তা না করে বেড়িয়ে পড়–ন শ্রীমঙ্গলের দিকে। যেন শিল্পীর তুলিতে আঁকা শ্রীমঙ্গলে আপনি কি কি দৃশ্য উপভোগ করবেন তার কিছু বর্ণনা উপস্থাপন করা হয়েছে এ প্রতিবেদনে। লিখেছেন ইসমাইল মাহমুদ।

চা বাগান :
চা বাগান মানেই অপার্থিব মুগ্ধতা ছড়ানো এক অস্তিত্ব। চা বাগান মানেই সবুজের অবারিত সৌন্দর্য। চা বাগান মানেই আনন্দ, অ্যাডভেঞ্চার, রোমাঞ্চ। শ্রীমঙ্গল উপজেলায় জেমস ফিনলে, ইস্পাহানী টি কোম্পানী ও ব্যক্তি মালিকানাধীন মিলিয়ে ছোট-বড় ৩৮টি চা বাগান রয়েছে। শহর থেকে যে কোন সড়ক ধরে হাটাপথ দুরত্বে পৌছা মাত্র চোখে পড়বে মাইলের পর মাইল চা বাগান। চা বাগানের বেস্টনির মাঝে ছোট শহর শ্রীমঙ্গল। চা বাগানের অভ্যন্তরে প্রবেশ করার পর মনে হবে কোন চিত্রশিল্পী মনের মাধুরী মিশিয়ে সবুজ-শ্যামল মাঠ তৈরী করে রেখেছে। চা বাগানের সবুজ বুক চিড়ে আঁকা-বাঁকা পথ ধরে কোন এক বিকেলে বৈকালিক ভ্রমণ করলে মনটা আনন্দের অতিসয্যে ভরে উঠবেই-উঠবে। ভাগ্য ভাল হলে মহিলা চা শ্রমিকদের চা পাতা উত্তোলনের মনোরম দৃশ্যও চোখে পড়বে। শহরের পাশেই ভাড়াউড়া, বুড়বুড়িয়া ইত্যাদি চা বাগানের অবস্থান। একটু দুরেই কাকিয়াছড়া, ফুলছড়া, কালীঘাট, সিন্দুরখান, রাজঘাট চা বাগান অবস্থিত। সবুজের মেলা চা বাগানের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে হলে আপনাকে অতি অবশ্যই বাগান কতৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে। ইচ্ছে করলে কতৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে এসব চা বাগানের চা প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানায় প্রবেশ করে কাচাঁ চা পাতা থেকে চা তৈরীর প্রক্রিয়াও দেখা যেতে পারে।

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান :
সারি সারি চা বাগানের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ সড়ক ধরে ৯ কিলোমিটার পথ এগিয়ে যান। সেখানে রয়েছে আরেক বিস্ময়। দেশের সবচেয়ে সৌন্দর্যমন্ডিত পাহাড় লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। ১ হাজার ২শ’ হেক্টর এলাকা জুড়ে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের উঁচু-নিচুঁ টিলায় কয়েক হাজার প্রজাতির লক্ষ লক্ষ সুউচ্চ বৃক্ষ আপনাকে বিমোহিত করবে। এ জাতীয় উদ্যানে প্রবেশ করে একটু ভেতরের দিকে গেলেই দেখা যাবে বড় বড় বৃক্ষরাজির মগডালে উল্লুক, বানরসহ নানা প্রাণীর লাফালাফি। ঝিঁ-ঝিঁ পোকার মনোমুগ্ধকর ডাক শুনতে শুনতে বনের আরো গভীরে প্রবেশ করুন। ভাগ্য ভাল হলে সেখানেও আপনার জন্য রয়েছে বিস্ময়ের আলোকচ্ছটা। চোখে পড়তে পারে মেছোবাঘ, ভাল্লুক, হরিন, বিভিন্ন জাতের সাপ, বনমোরগ, বন বিড়াল, উল্লুক, বানর, খাটাস প্রভৃতি প্রাণী। এ বনে রয়েছে আড়াই হাজারের অধিক প্রজাতির পাখি, দশ প্রজাতির সরিসৃপ এবং বাঘ, ভাল্লুক, সিভিটকেট, বানর, হরিণসহ অর্ধ শতাধিক প্রজাতির বন্যপ্রাণী। এ বনে রয়েছে অসংখ্য ছোট-বড় পাহাড়ী ছড়া। বনের গভীরে বিভিন্ন পশুপাখির কিচির-মিচির ডাক ও ঝিঁ-ঝিঁ পোকার শব্দে আপনার মধ্যে কাজ করবে এক মোহনীয় অনুভূতি। পর্যটকরা বনের এ শব্দের নাম দিয়েছেন ‘ফরেষ্ট মিউজিক’। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের অভ্যন্তর দিয়ে সামান্য দুরত্বের মধ্যে ঢাকা-সিলেট রেলপথ এবং শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ সড়কপথ রয়েছে। এ দুটি পথ জাতীয় উদ্যানকে তিন ভাগে বিভক্ত করে রেখেছে। আমেরিকান দাতা সংস্থা ‘ইউএসএআইডি’ এর অর্থায়নে পরিচালিত ‘আইপ্যাক’ নামের একটি সংস্থা এ বনটি রক্ষনাবেক্ষণ করছে। পর্যটকদের নিকট এ বনের আকর্ষন আরো বৃদ্ধি করার জন্য বনের সৌন্দর্য রক্ষা ও বৃদ্ধিকল্পে ‘আইপ্যাক’ বিভিন্ন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

হাইল হাওর :
শ্রীমঙ্গলের ঐতিহ্যবাহী হাইল হাওর প্রাকৃতিক সম্পদ, জীব-বৈচিত্র ও জীবন জীবিকার বিবেচনায় একটি গুরুত্বপূর্ন জলাভূমি। উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের মধ্যে ৪টি ইউনিয়ন যথা-কালাপুর, শ্রীমঙ্গল, ভূনবীর ও মির্জাপুর নিয়ে বিস্তৃত এ হাওরের চার পাশে গ্রাম রয়েছে প্রায় অর্ধশতাধিক। ৫ থেকে ৬ হাজার অতি দরিদ্র মৎস্যজীবী পরিবার হাওরে মাছ ধরে নির্বাহ করে থাকেন তাদের জীবিকা। তাছাড়াও হাইল হাওর দেশী বিদেশী নানা প্রজাতির পাখি, শামুক, ঝিনুক, ফোকল, ঘাস, শাপলা, শালুক, উকল, হিজল-করচ গাছ ইত্যাদি এবং অন্যান্য বন্য প্রাণীর নিরাপদ আবাস স্থল।
হাইল হাওরের এ প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ তথা এই জলাভূমির উপর নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর বিশেষ করে দরিদ্র মানুষের খাদ্য ও পুষ্টির চাহিদা পূরণের জন্য স্থানীয় বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার প্রতিনিধিদের নিয়ে মাচ্ প্রকল্পের সহায়তায় সংগঠিত হয়েছে জলাভূমি সম্পদ ব্যবস্থাপনা সংগঠন (আরএমও)। এই সংগঠন হাইল হাওরের মৎস্য সম্পদের উৎপাদন ও বিলুপ্ত প্রজাতির মাছ বৃদ্ধি এবং জীববৈচিত্র রক্ষা করাসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করে আসছে। এসব কাজের মধ্যে রয়েছে- হাওরে বিলুপ্ত প্রজাতির মাছ গইন্না, কালিবাউস, চিতল, গুলশা, আইর, দেশীয় স্বরপুটি, পাবদা, রুই ইত্যাদি অবমুক্তকরণ। এছাড়া হাওরে বিপুল পরিমাণ জলজ গাছ রোপন করা হয়েছে। সেখানে তৈরী হয়েছে বন্যপ্রাণী ও পাখির আবাসস্থল।
বর্ষা মৌসুমে হাইল হাওরের সুনীল জলরাশি চোখ ধাঁধিয়ে দেয়। শুধু পানি আর পানি। হাইল হাওরের পানির প্রধান উৎস গোপলা নদী। (উজানে বিলাসছড়া থেকে উৎপত্তি লাভ করে হাইল হাওরকে দ্বিখন্ডিত করে গোপলা নদী ভাটিতে বিজনা নদীর মাধ্যমে মেঘনার উধাংশের সাথে মিলিত হয়েছে)। হাইল হাওরে গেলে আপনি এর অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। নৌকা ভ্রমনের উৎকৃষ্ট স্থান হাইল হাওর। ভোরে ঘুমন্ত হাইল হাওর যেন জেগে উঠে। হাওরের চারপাশে হাজার হাজার মৎস্যজীবির মাছ আহনরনের দৃশ্য অত্যন্ত মোহনীয়। বিকেলের হাইল হাওর থাকে যেন পাখিদের দখলে। সন্ধ্যায় হাইল হাওরে ভ্রমন করলে মনে হবে সারা রাত কাটিয়ে দেই পাখিদের এ রাজ্যে।

বাইক্কা বিল
শ্রীমঙ্গলের ঐতিহ্যবাহী সুবিশাল হাইল হাওরের ‘বাইক্কা বিল’ না দেখলে শ্রীমঙ্গলের কিছুই যেন দেখা হলো না। বর্তমান হাইল হাওরের প্রাণ বাইক্কা বিল। ‘ইউএসএআইডি’ এর অর্থায়নে মাচ্ প্রকল্পের মাধ্যমে বাইক্কা বিলে গড়ে তোলা হয়েছে মৎস্য ও পাখির স্থায়ী অভয়াশ্রম। বর্তমানে বাইক্কা বিলটি রক্ষনাবেক্ষণ করছে সমন্বিত রক্ষিত এলাকা সহ-ব্যবস্থাপনা প্রকল্প (আইপ্যাক)। বাইক্কা বিলে মাছের অভয়াশ্রম গড়ে তোলায় দেশের বিলুপ্তপ্রায় রুই, গইন্না, কালিবাউস, দেশী সরপুটি, পাবদা, আইড়, গুলশা, চিতলসহ ১৫/২০ প্রজাতির মাছ বর্তমানে প্রচুর পরিমানে পাওয়া যাচ্ছে। আগে শুধুমাত্র শীতকালে হাইল হাওরে পাখি দেখা যেত। কিন্তু পাখির স্থায়ী অভয়াশ্রম হবার কারনে পুরো বছরই পাখির কলকাকলিতে মুখরিত থাকে বাইক্কা বিল। পর্যটকদের সুবিধার্থে পাখি দেখার জন্য বাইক্কা বিলে পানির উপরে তৈরী করা হয়েছে তিন তলা বিশিষ্ট একটি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। দেশের একমাত্র এ পর্যবেক্ষণ টাওয়ার থেকে শক্তিশালী দূরবিক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে পাখি দেখার ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া বাইক্কা বিলে পাওয়া যায় সুস্বাধু মাখনা, শালুকসহ নানা স্বাদের, নানা বর্ণের জলজ ফল। বিলের পানিতে ফুটে থাকা পদ্ম, শাপলা প্রভৃতি জলজ ফুল আপনার তনোমনে নাড়া দেবে। প্রচন্ড গরমের সময় পর্যবেক্ষণ টাওয়ারের উপরে বসলে হিমশীতল পানি বাহিত আওলা বাতাস আপনার শরীরে ঠান্ডার কাঁপন তুলবে মুহুর্তেই। ইচ্ছে করলে আপনি স্বল্পমূল্যে বিলে নৌকাভ্রমন করতে পারেন। বাইক্কা বিলে যেতে হলে শ্রীমঙ্গল-মৌলভীবাজার সড়ক ধরে কালাপুর বাজার থেকে একটু সামনে এগুলেই বরুনা-হাজীপুর পাকা রাস্তার দেখা মিলবে। এ রাস্তায় প্রবেশ করে যেতে হবে হাজীপুর বাজারে। স্থানীয়দের কাছে এ বাজারটি ঘাটেরবাজার নামে পরিচিত। সেখান থেকে মোটর সাইকেলে বা পায়ে হেটে প্রায় ৩/৪ কিলোমিটার দুরে অবস্থিত বাইক্কা বিল। হাজীপুর বাজারে বেশ ক’জন গাইড রয়েছে। আপনি চাইলে গাইডের সাহায্যও নিতে পারেন। গাইড আপনাকে পুরো বাইক্কা বিল দেখতে সাহায্য করবে।

বিটিআরআই :
বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনষ্টিটিউট (বিটিআরআই) পর্যটকদের জন্য একটি আকর্ষনীয় স্থান। দেশের চা শিল্পের উন্নয়নে কাজ করছে এ প্রতিষ্ঠানটি। বিটিআরআই কমপ্লেক্স-এর সামনে অপরূপ ফুলকুঞ্জ, শত বছরের চা গাছ, চা পরীক্ষাগার, চারদিকে চা বাগান, চা নার্সারী, চা ফ্যাক্টরী, অফিসার্স ক্লাব ভবনের পেছনে অবস্থিত চোখ ধাঁধানো লেক, অ্যারাবিয়ান ও রোবাস্টা কফি গাছ, নানা জাতের অর্কিডসহ ভেষজ বাগান আপনার মনকে চাঙ্গা করবেই। ১৯৫৭ সালে স্থাপিত বিটিআরআই-এর স্থাপত্যগুলো অনেকটাই পশ্চিমারীতির পরিচয় বহন করে। কতৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে আপনি ঘুরে দেখতে পারেন বিটিআরআই’র পুরো ক্যাম্পাস। প্রতিদিন বিকেলে ও সরকারি ছুটির দিনে পর্যটকদের ঢল নামে বিটিআরআই-তে।

সিতেশ দেবের মিনি চিড়িয়াখানা
সিতেশ রঞ্জন দেব। প্রায় ৬৭ বছর বয়স্ক সাম্য ভদ্রলোক এক সময়ের দূুদর্ষ শিকারী সিতেশ রঞ্জন দেব সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে তুলেছেন মিনি চিড়িয়াখানা। তাঁর মিশন রোডস্থ বাসভবনে ১৯৭২ সালে শুরু করা চিড়িয়াখানাটি বর্তমানে স্থানান্তর করে শহরতলীর ভাড়াউড়া এলাকায় অবস্থিত নিজ খামার বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সিতেশ বাবুর এ মিনি চিড়িয়াখানাটিতে রয়েছে দূর্লভ ও বিলুপ্তপ্রায় কিছু প্রাণী। বর্তমানে ভাল্লুক, পাহাড়ি ময়না, গন্ধগকোল, হরিয়াল, লক্ষণ টিয়া, ধনেশ, গুইসাপ, উরুক্কু কাঠবিড়ালি, বিরল প্রজাতির সাদা আলবিনো বাঘ, মেছো বাঘ, গোল্ডেন টারটইল বা সোনালী কচ্ছপ, সোনালী বাঘ, লজ্জাবতী বানর, সাইবেরিয়ান লেজ্জা লামবার্ড, ঘুঘু, বানর, বন্যমথুরা, বন্যমোরগ, সরালী, কালেম, ময়না, বন্যমাছ, অজগর সাপ, মেলর্ড, তিতির, মায়া হরিণ, সজারু, ইন্ডিয়ান সোনালী বানর, বন্যখরগোস, সাদা খরগোস প্রভৃতি প্রাণী রয়েছে তাঁর চিড়িয়াখানায়। সোনালী কচ্ছপের বৈশিষ্ট্য হলো-এরা গাছে বসবাস করে। ভূলেও কখনো পানিতে নামে না। সব সময় শুকনো খাবার খায়। লজ্জাবতী বানরের বৈশিষ্ট্য হলো-এরা দিনের বেলা মাথা নিচু করে, চোখ বন্ধ করে বসে থাকে। দিনে কোন খাবার খায় না। রাতের আধাঁরে স্বাভাবিক চলাফেরা করে এবং খাবার গ্রহন করে। এটি একটি বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী। সোনালী বাঘ একটি বিরল প্রজাতির প্রাণী। এরা গভীর জঙ্গলে বসবাস করে। আকারে ছোট এ বাঘ অত্যন্ত হিংস্র। সাদা বাঘ দেশের আর কোন চিড়িয়াখানায় নেই। এটি একটি দূর্লভ প্রাণী। আপনি সিতেশ বাবুর চিড়িয়াখানায় গিয়ে এসব প্রাণী দেখে আসতে পারেন। আপনার অভিজ্ঞতার ভান্ডার সমৃদ্ধ করতে প্রাণীগুলোর বৈশিষ্ট্য জেনে নিতে পারেন সদা হাস্যোজ্জল সিতেশ রঞ্জন দেবের কাছ থেকে।

ওয়্যার সিমেট্রি :
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও তৎপরবর্তী সময়ে যে সব ব্রিটিশ নাগরিক তথা চা বাগান ব্যবস্থাপনা কতৃপক্ষ মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের কবর (ওয়্যার সিমেট্রি) অত্যন্ত আকর্ষনীয় এক স্থান। চা বাগানের মাঝে-পাখির কল কাকলিতে ভরা, চারিদিকে দেয়াল ঘেরা ওয়্যার সিমেট্রির অবস্থান খেজুরীছড়া চা বাগানে। শত-শত ব্রিটিশ নাগরিকের কবরের শিয়রে মৃতের পরিচিতি ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ওয়্যার সিমেট্রি দেখতে চাইলে শ্রীমঙ্গল শহর থেকে গাড়িযোগে চলে যান খেজুরীছড়া চা বাগানের ফ্যাক্টরির সামনে। সেখান থেকে ডানদিকে রাজঘাট চা বাগানের রাস্তায় সামান্য এগুলেই ডান পাশে চোখে পড়বে ওয়্যার সিমেট্রিটি। প্রতিদিন অসংখ্য বিদেশী পর্যটক এখানে এসে প্রার্থনা করে যান।

খাসিয়া পান পুঞ্জি :
সিলেট বিভাগে ৭৫টি খাসিয়া পান পুঞ্জি রয়েছে। এর মধ্যে শ্রীমঙ্গলে পান পুঞ্জির সংখ্যা দশ। উপজাতি খাসিয়া সম্প্রদায়ের লোকজন বিভিন্ন দূর্গম পাহাড়ি এলাকায় এসে সুউচ্চ পাহাড়ি টিলা পরিস্কার করে বসবাসের উপযোগি ঘর তৈরী ও পান চাষে আত্মনিয়োগ করে। এসব পান চাষের এলাকাকে পুঞ্জি বলে। প্রতিটি পান পুঞ্জিতে ২৫/৩০টি পরিবার গোষ্ঠীবদ্ধভাবে বসবাস করে। খাসিয়ারা পাহাড়ি পতিত ভূমিতে সুউচ্চ গাছের পাশে লতানো পানের চারা রোপন করে। রোপনকৃত এ চারা অল্পদিনেই বড় গাছ বেয়ে উঠতে থাকে উপরের দিকে। বড় গাছ পরম মমতায় বুকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে লতানো পান গাছকে এ দৃশ্য অত্যন্ত নয়নাভিরাম। টিলার পর টিলা সুউচ্চ গাছগুলো সবুজ পান পাতায় ঢাকা পড়ে আছে। খাসিয়া সম্প্রদায়ের পুরুষরা বাঁশের তৈরি এক প্রকার মই ব্যবহার করে সুউচ্চ গাছ থেকে পান সংগ্রহ করে। সে পান খাসিয়া নারীরা গুছিয়ে খাচায় ভরে রাখে। খাসিয়া সম্প্রদায়ের জীবন জীবিকা সম্পর্কে ধারনা পেতে এবং পান পুঞ্জির পান চাষ সম্পর্কে জানতে চান? চলে আসুন নাহার, নিরালা, চলিতাছড়া, লাউয়াছড়া প্রভৃতি পান পুঞ্জিতে। এসব পুঞ্জিতে প্রতিদিনই সকাল-বিকেল পান ক্রেতাদের জীপ গাড়ি যাতায়াত করে। আপনি ভাড়া পরিশোধ সাপেক্ষে যে কোন পুঞ্জি ভ্রমনে যেতে পারবেন।

পাহাড়ি টিলা :
‘পাহাড়ি টিলা হাতছানি দিয়ে ডাকে-আয়, আয় আমার মায়াময় কোলে বসে একটুখানি জিরিয়ে যা’। পাহাড়ি টিলার এই আহ্বান, এই দুরন্ত-দুর্বার টান কোন মানুষের পক্ষে উপেক্ষা করা অসম্ভব। তাইতো মানুষ ছুটে আসে পাহাড় এবং টিলার কাছে। শ্রীমঙ্গলে রয়েছে ছোট-বড় অসংখ্য পাহাড়ি টিলা। তবে আকাশ ছোয়া সবুজের মেলা দেখতে হলে আপনাকে অবশ্যই যেতে হবে বার্ণিশ টিলায়। বালিশিরা চা বাগানে অবস্থিত এ টিলার নাম শুনলেই যে অজানাকে জানার এক শিহরন উঠে মনের মধ্যে। সারি সারি চা বাগানের মাঝে এ টিলা নিচ থেকে দেখলে মনে হবে টিলাটি যেন আকাশ ছুয়েছে। বার্ণিশ টিলায় যেতে হলে আপনাকে শহর থেকে গাড়ি নিয়ে কাকিয়াছড়া, ফুলছড়া, কালীঘাট চা বাগান পেরিয়ে পৌছতে হবে ফিনলে টি কোম্পাণীর প্রধান কার্যালয় ‘ফিনলে হাউস’-এ। ফিনলে হাউস-এর পাশ দিয়ে সামান্য এগুলেই পাওয়া যাবে ফিনলে রাবার ফ্যাক্টরি। রাবার ফ্যাক্টরি পেছনে ফেলে আরো সামনে এগিয়ে যান। চা বাগানের বর্ণিল জগতে প্রবেশ করুন আবারো। চা বাগানের সড়ক ধরে ৩/৪ মিনিট হাটার পর তাকান ডান দিকে। চোখ পড়বে সুউচ্চ বার্ণিশ টিলায়। ইচ্ছে করলে অতি সাবধানে উঠতে পারেন টিলার চুড়ায়। যদিও অনেক কষ্ট ও সময় ব্যায় হবে এতে। যদি কষ্ট সহ্য করে টিলার চুড়ায় আরোহন করতে পারেন তবে আপনার কাছে মনে হবে হিমালয়ের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ জয় করেছেন। চুড়ায় দাড়িয়ে তাকান চার পাশে। মনে হবে উড়োজাহাজে চড়ে দেখছেন শ্রীমঙ্গলকে। শ্রীমঙ্গল শহরের দিক থেকে ‘ইউ-টার্ণ’ ঘুরে দাড়ান। কি দেখছেন? ভেবে পাচ্ছেন না নিশ্চয়ই। তাহলে আমিই জানিয়ে দিচ্ছি-এটি হচ্ছে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য।

আনারস বাগান :
শ্রীমঙ্গলে দেশের সবচেয়ে বেশি আনারস উৎপন্ন হয়। চায়ের পাশাপাশি শম্মঙ্গলকে আনারসের রাজধানীও বলা চলে। শ্রীমঙ্গলের আনারস দেশ জুরে সুপসিদ্ধ। স্বাদে-গন্ধে এ আনারস অতুলনীয়। শ্রীমঙ্গলে ভ্রমনে আসবেন আর আনারস বাগানে যাবেন না তা কি হয়? শ্রীমঙ্গল শহর গাড়ি অথবা মোটরসাইকেলে চড়ে চলে আসুন মোহাজেরাবাদ, বিষামনি, পিচের মুখ অথবা সাতগাঁও পাহাড়ে। ঈদের ছুটিতে আনারস বাগান এলাকায় পৌছার সাথে সাথে আপনার নামে লাগবে পাকা আনারসের সুমিষ্ট গন্ধ। ভোরে এসব এলাকায় গেলে দেখতে পাবেন শত শত শ্রমিক বাগানের টাটকা আনারস পেড়ে ঠেলাগাড়িতে করে পাঠিয়ে দিচ্ছে শহরে। যা কয়েক হাত বিক্রি হয়ে চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। পাহাড়ি টিলায় থরে থরে সাজানো আনারসের গাছ আপনাকে পুলকিত করবে। ছবির মতো সাজানো প্রতিটি আনারস বাগান আপনাকে আহ্বান জানাচ্ছে আনারসের রাজ্যে।

মনিপুরী পাড়া :
সরকারি পৃষ্টপোষকতার অভাব, কাচামালের দুস্প্রাপ্যতা ইত্যাদি নানাবিদ কারনে মনিপুরী তাঁত শিল্প অনেকটা ধ্বংশের দ্বারপ্রান্তে চলে আসলেও অনেক সৌখিন নারী এখনো মনিপুরী তাঁতের শাড়ি পরিধান করার জন্য ব্যকুল। মনিপুরী তাঁত শিল্পের আগের সেই রমরমা অবস্থা না থাকলে শ্রীমঙ্গল রামনগর মনিপুরী পাড়ায় এখনো ঐতিহ্য ধরে রাখার প্রয়াসে বেশ কটি তাঁতে তৈরী হচ্ছে শাড়ি, ত্রি-পিস, ওড়না, ব্যাগসহ নানা ধরনের পণ্য। তাঁত শিল্প সম্পর্কে জানতে এবং তাঁতে কাপড় বুনার প্রক্রিয়া দেখতে চাইলে চলে আসুন শ্রীমঙ্গলের রামনগর মনিপুরী পাড়ায়। মনিপুরীদের আতিথেয়তা গ্রহন করতে শ্রীমঙ্গল শহর থেকে রিকসা বা অন্যান্য যে কোন বাহন যোগে সহজেই আসতে পারেন মনিপুরী পাড়াতে। তবে বাংলা সনের কার্তিক মাসের শেষ পূর্ণিমা তিথিতে মনিপুরীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ‘রাসোৎসব’ দেখতে চাইলে যেতে পারেন কমলগঞ্জের মাধবপুরস্থ জোড়ামন্ডপ অথবা আদমপুরস্থ মনিপুরী শিক্ষা ও সংস্কৃতি কেন্দ্রে। দু’স্থানই প্রতি বছর ‘রাসোৎসব’-এ লক্ষ লক্ষ মানুষের পদভারে মুখরিত হয়।

লালমাটি পাহাড় :
শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ সড়কে ‘টি রিসোর্ট’ কে বামে ফেলে ডানে চা বাগানের মেঠো পথ ধরে সামনে এগুলেই পাওয়া যাবে লালমাটি পাহাড়। পাহাড়ের মাটি রক্তবর্ণের। পাহাড়ের প্রায় দুইশত ফুট নিচ দিয়ে বয়ে গেছে স্্েরাতস্বিনী পাহাড়ি ছড়া ‘বুড়বুড়িয়া’। ছড়ার পানির স্রোতে পাহাড়ের নিম্নাংশ ভাঙ্গনের ফলে পাহাড়টি একেবারে খাড়া রূপ লাভ করেছে। ছড়ার পানিতে নেমে সোজা পাহাড়ের দিকে তাকালে মনের মধ্যে ভয় ভয় অনুভূতি কাজ করে। পাহাড়ের উপরে উঠলে নিচের বুড়বুড়িয়া ছড়াকে ছোট একটি খাল মনে হবে। লালমাটি পাহাড়াঞ্চলে ছড়ার পানিতে প্রাকৃতিকভাবে কিছু পাথুরে বাঁধ তৈরী হয়েছে। এসব বাঁধ ডিঙ্গিয়ে ছড়ার পানি বয়ে যাবার দৃশ্য খুবই অপরূপ। একটির পর একটি পাথুরে বাঁধে পানি আছড়ে পড়ে বিকট শব্দ তৈরী হচ্ছে। পানির এ শব্দটি শোনা যায় অনেক দুর থেকেই। আপনি শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ সড়কের টি রিসোর্ট এলাকায় এসে ডানে চা বাগানের আঁকা-বাঁকা ছোট মেঠো পথে নেমে একটু সামনে এগুলেই পানির শব্দ শুনতে পাবেন। অতপর শব্দ লক্ষ্য করে হেটে চলে যান লালমাটি পাহাড়ে।

রাবার বাগান :
বাংলাদেশ বন শিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশন (বশিউক) রাবার বিভাগ সিলেট জোন শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত। এ বিভাগের অধিনে রয়েছে সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত মোট ৪টি রাবার বাগান। এর মধ্যে সাতগাঁও রাবার বাগান শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত। বাকি বাগানগুলোর মধ্যে ভাটেরা রাবার বাগান কুলাউড়া উপজেলায়, রূপাইছড়া রাবার বাগান বাহুবল উপজেলায় এবং শাহজিবাজার রাবার বাগান হবিগঞ্জে অবস্থিত। শ্রীমঙ্গলে সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত সাতগাঁও রাবার বাগান ছাড়াও জেমস ফিনলে টি কোম্পাণী ও ডানকান ব্রাদার্স এর প্রায় প্রতিটি চা বাগানে রাবার চাষ করা হচ্ছে। এছাড়া ব্যক্তি মালিকাধীন অসংখ্য রাবার বাগান রয়েছে শ্রীমঙ্গলে। শ্রীমঙ্গল-মৌলভীবাজার সড়কের ভৈরববাজার নামক স্থানে রাস্তার খুব কাছেই অবস্থিত মাইজডিহী রাবার বাগান দেখলে নয়ন জুড়িয়ে যায়। আপনি ইচ্ছে করলে যে কোন একটি রাবার বাগান ঘুরে দেখতে পারেন। খুব সকালে রাবার বাগানে গেলে টেপার (রাবার শ্রমিক) কতৃক রাবার কষ আহরন পদ্ধতি, রাবার তৈরি প্রক্রিয়া দেখা সম্ভব। এছাড়া রাবার বাগানে কর্মরত শ্রমিকদের জীবন-মান সম্পর্কে অবগত হওয়া যাবে। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত রাবার গাছের ফাঁকে ফাঁকে ঘুরে বেড়ালে রাবার বীজের রিমঝিম শব্দে হৃদয় ভরে উঠবে।

ভাড়াউড়া লেক :
শ্রীমঙ্গলকে সবুজ চাদরে ঢেকে রেখেছে উপজেলার চা বাগানগুলো। এসব চা বাগানের নান্দনিক সৌন্দর্যকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে কোন কোন চা বাগানের বুক চিড়ে চলে যাওয়া ছড়া ও হ্রদগুলো। তেমনি এক আকুল করা স্থান হচ্ছে ভাড়াউড়া লেক। অবসর সময়গুলো ভালোলাগার অনুভূতিকে পূর্ণ করার এক উত্তম স্থান। শ্রীমঙ্গল শহর থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার দুরে অবস্থিত চারদিকে চা বাগানে ঘেরা এ লেকটি আপনার হৃদয় মনে দোলা দেবে নিঃসন্দেহে। কাঁচা চা পাতার আকুল করা গন্ধ নিয়ে লেকের পাড়ে টিলার উপর দাড়ালে বা লেকের স্বচ্ছ পানিতে নামলে আপনার মনকে করবে মোহবিষ্ট। লেকের পানিতে ফুটে থাকা নানা জাতের ফুল দেখলে মনে হবে যেন অপরূপ সাজে সাজানো হয়েছে লেকটি। লেকের স্বচ্ছ পানিতে টিলার উপর অবস্থিত চা বাগানের প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠে। লেকের পাড়ে গাছে-গাছে রয়েছে অসংখ্য বানরের দল। আপনাকে দেখা মাত্র হয়তো বানরেরা দলবেধে আপনাকে ভেংচি কাটতে থাকবে। আপনি লেকের দিকে যত এগুবেন বানরের দল তত পেছোবে। খেয়াল রাখতে হবে আপনার দ্বারা যেন বানরের উত্তেজিত হবার কোন ঘটনা না ঘটে। বানরেরা উত্তেজিত হলে আপনার উপর আক্রমন করে বসতে পারে। সন্ধ্যা হবার পূর্বেই ভাড়াউড়া লেক এলাকা থেকে আপনাকে ফিরে আসতে হবে শহরের দিকে।

রাজঘাট লেক :
জেমস ফিনলে টি কোম্পানীর রাজঘাট চা বাগানের অফিস সংলগ্ন ব্রিজ পেরিয়ে উদনাছড়া-বিদ্যাবিল চা বাগানের পথে একটু সামনে এগুলেই হাতের বাম পাশে চোখে পড়বে রাজঘাট লেক। লেকে ফুটে থাকা পদ্ম আর শাপলা ফুল গুলোর দিকে তাকালে আপনার মন ভালোলাগার মিষ্টি অনুভূতিতে আচ্ছন্ন হবে। তিনদিকে চা বাগান ও একদিকে সুইমিংপুলের মাঝখানে অবস্থিত রাজঘাট লেকে যাওয়া যায় সিন্দুরখান ও কালীঘাট দু’বাগানের সড়ক দিয়েই। লেকের পানিতে বিকেলে অতিথি পাখিদের স্নান করার দৃশ্য অত্যন্ত মোহনীয়। শহর থেকে বেশ দুরে রাজঘাট লেক অবস্থিত বিধায় সন্ধ্যার পূর্বেই এ লেক এলাকা ত্যাগ করে শহরের দিকে রওয়ানা হওয়াই ভাল।

সাতগাঁও লেক :
শ্রীমঙ্গল শহর থেকে হবিগঞ্জ সড়ক ধরে লছনা বাজারকে পেছনে ফেলে সামান্য এগুলেই সাতগাঁও চা বাগান। বাগানের চা ফ্যাক্টরি ও ব্যবস্থাপক বাংলোর মাঝখানে অত্যন্ত আকর্ষনীয় এ লেকটির অবস্থান। লেকটির অপর দু’পাড়ে রয়েছে রাস্তা ও ফুলের বাগান এবং চা বাগানের সারি। লেকটির একপাশে পানির উপরে ভাসমান দুটি কাঠের মাচাং লেকটির আকর্ষন অনেকটা বাড়িয়ে দিয়েছে। লেকটি চা ফ্যাক্টরী ও ব্যবস্থাপক বাংলোর মাঝখানে অবস্থিত বিধায় লেকটি দেখতে হলে আগে থেকেই বাগান কতৃপক্ষের অনুমতি নেয়া আবশ্যক। নতুবা লেকটি দেখার সাধ অপূর্ণই থেকে যাবে। ক্লান্ত শরীরে লেকটির কাঠের মাচাং-এ বসে একটু বিশ্রাম নিলে চাঙ্গা হয়ে উঠবে আপনার মনোপ্রাণ। শ্রীমঙ্গল শহর থেকে ৭ কিলোমিটার পশ্চিম-উত্তরে অবস্থিত লেকটি। প্রাইভেট গাড়ি নিয়ে যেতে সময় লাগবে সর্বোচ্চ ১০ থেকে ১৫ মিনিট।

হরিণছড়া লেক :
হৃদয় হরণ করা একটি স্থান হরিণছড়া চা বাগান লেক। শ্রীমঙ্গল শহর থেকে কাকিয়াছড়া, ফুলছড়া, কালীঘাট, লাখাইছড়া, খেজুরীছড়া, পুটিয়াছড়া চা বাগান পেছনে ফেলে সবুজের অবারিত পথ দিয়ে প্রায় ২২ কিলোমিটার দুরে গেলেই পৌছে যাবেন হরিণছড়া চা বাগানে। বাগানের ১নং সেকশনে মনোমুগ্ধকর দৃশ্যপটের চমৎকার এ লেকটি অবস্থিত। পাইন গাছেন সারির খুব কাছেই অবস্থিত অপেক্ষাকৃত ছোট লেকটিকে চা শ্রমিকরা বাঁধ বলে চেনে। কোন শ্রমিকের কাছে লেক কোথায় জানতে চাইলে কেউই দেখিয়ে দিতে পারবে না। পাইন বাগানের ভেতর দিয়ে এ লেকে পৌছার পর আপনার মনে হবে এখানেই কাটিয়ে দেই জীবনের বাকি সময়টুকু। সময় থাকলে ভারতীয় সীমান্তের কাছাকাছি এ বাগানেরই শেষ প্রান্তে অবস্থিত বড় লেকটিও দেখে আসতে পারেন। বড় লেকটি আকারে বেশ লম্বা। আঁকা-বাঁকা এ লেকটির উভয় পাড়ে রয়েছে সবুজ চা বাগান। স্বচ্ছ টলটলে পানি, ছায়া সুনিবিড় পরিবেশ ও শাপলা-শালুকে পরিপূর্ণ লেকটির পাড়ে বসে চা বাগানসহ লেকটির ছবি তুলে নিয়ে আসতে পারেন।

চা জাদুকরের সাতস্তরের চা :
পুরো শ্রীমঙ্গলের মনোমুগ্ধকর সব স্থান দেখতে দেখতে আপনি কি ক্লান্ত? আপনার সব ক্লান্তি এক নিমিষেই দূর করতে চান? ভাবনা নেই-শ্রীমঙ্গলে আছে চা জাদুকর রমেশ রামগৌড়। কি নামটি খুব চেনা চেনা লাগছে? লাগারইতো কথা। কারণ দেশের সীমানা ছাড়িয়ে রমেশের অভিনব চা আবিস্কারের কাহিনী ছড়িয়ে পড়েছে ইংল্যান্ড, আমেরিকা থেকে শুরু করে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। দেশ-বিদেশের প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার সংবাদকর্মীরা রমেশকে নিয়ে তৈরি করেছে বিশাল বিশাল প্রতিবেদন।
রমেশ ২০০০ সালে কাকিয়াছড়া চা বাগানের বাজারে এক গ্লাসে দু’স্তরের চা তৈরি করে আলোড়ন তুলেছিলো। একে একে নিজের গড়া রেকর্ড নিজেই ভেঙ্গে চলেছে রমেশ। বর্তমানে রামনগর মনিপুরী পাড়ার সম্মুখস্থ নীলকন্ঠ চা কেবিনে তৈরি হচ্ছে এক গ্লাসে ৭ স্তরের চা। এছাড়া ৯ প্রকারের চা তৈরি হয় তার চা কেবিনে। শ্রীমঙ্গলে ভ্রমনের শেষে অন্তত একবার চলে আসুন রমেশের নীলকন্ঠ চা কেবিনে। চা জাদুকর রমেশের তৈরি চা পান করলে ভ্রমনটাই যে আপনার অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।





ইসমাইল মাহমুদ
শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার
মুঠোফোন : ০১১৯৬১২৮৫১৩
১৩টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×