somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গদ্দিনশীন পীর বিষয়ক সামান্য ক্যাচাল....লেখাজোকা শামীম এবং আমার মন্তব্য

১৭ ই জুলাই, ২০০৯ রাত ২:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লেখাজোকা শামীম ভাই এর গদ্দিনশীন পীর বিষয়ক সামান্য ক্যাচালে মন্তব্য করতে যেয়ে দেখি লেখাটা বেশ ভালই বড় হয়ে গেছে তাই মন্তব্যটা পোষ্ট আকারেই দিলাম। আমরা আমাদের চারপাশে বংশানুক্রমিক গদ্দিনশীন পীরদের দৌরাত্ব দেখে অভ্যস্ত যার ফলে পীর-মুরিদী সম্পর্কে নেতিবাচক ধারনা রাখি, আমি নিজেও বিষয়টিকে অনেকটা ঘৃণার চোখে দেখতাম। তবে এখন বিষয়টি অনেকটাই আমার কাছে পরিস্কার। এ বিষয়ে অনেকেরই তেমন জনাশোনা নেই এবং নেগেটিভ দিকটাই বেশি প্রচলিত। তাই হয়তবা বিষয়টি আরও কারও কারও কাছে আরএকটু পরিস্কার হতে পারে এই ভেবে কমেন্ট না করে পোষ্ট আকারেই দিয়ে দিলাম। শামীম ভাইয়ের মন্তব্য আশা করছি।


"ইসলাম ধর্ম বান্দা ও আল্লহর মাঝখানে মাধ্যম হিসেবে কাউকে চায় না। পীর, গদ্দিনশীন পীর ও মাজার কেউই ইসলাম ধর্মানুসারে কোন ব্যক্তিকে পরিত্রাণ দিতে পারে না।"

একদম খাঁটি কথা। ইসলামও এইটাই বলে। নবী-রাসূল এবং ওলী-আওলিয়াগন কখনোই বান্দা ও আল্লহর মাঝখানে মাধ্যম হিসেবে ছিলেন না বরং তারাতো বান্দা ও আল্লহর মাঝে সম্পর্ক স্থাপনকারী, পথপ্রদর্শক।

তবে আমাদের চারপাশে যে সব বংশানুক্রমিক গদ্দিনশীন পীরদের আমরা দেখি এদের জন্য এই 'মাধ্যম' একটা ফ্যক্টর। যদি কোন মাধ্যম না থাকে তবে এরা খাইব কি? ব্যাবসা তো চালু রাখতে হবে। রাতারাতি কোটিপতি হওয়ার লোভ, তিনবেলা পোলাও-বিরিয়ানি আরও কত কি!! মাধ্যম না থাকলে তো এইসব হাতছাড়া হয়ে যাবে।
আর 'পবিত্র ওরস শরিফ' এর নামে যে অপবিত্র, জঘণ্য কাজগুলা করে তা সম্পূর্ণ ইসলাম বর্হিভূত এবং বিদআত।

তবে আপনার একটি পয়েন্টের সাথে আমি ভিন্নমত পোষন করছি, তা হল ইসলামে পীর প্রথা সমর্থন করে কি না। এ বিষয়ে আমি যতদুর জানি তা সংক্ষিপ্ত আকারে উপস্থাপনের চেষ্টা করছি।

ইসলাম ধর্মে কি পীর প্রথা সমর্থন করে? উত্তর হল- করে। তবে ইসলামে সমর্থিত পীর প্রথা 'বংশানুক্রমিক গদ্দিনশীন পীরদের' প্রথা থেকে আলাদা।

"পীর কোন আরবী শব্দ না। পীর শব্দটি ফার্সি শব্দ । এর অর্থ মুরব্বী।" আপনার দুলাভাই যথার্থই বলেছেন। মানুষ কোন বিষয়েই নিজে নিজে শিখতে পারে না। এজন্য তাকে অন্যের সাহায্য নিতে হয়। অন্তত একটা পর্যায় পর্যন্ত। এই শিক্ষা দানের বিষয়টি যিনি সম্পাদন করেন তিনিই মুরুব্বি বা শিক্ষক (এখানে পীর অর্থে মুরুব্বি, শিক্ষক বা পথপ্রদর্শক ইত্যাদি বোঝানো হয়, সাধারন মুরুব্বি অর্থে নয়)।

পীর না ধরলে মুক্তির উপায় নাই, জন্নাতে যাওয়া যাবে না, পুলসিরাত পার হওয়া যাবে না, পীর সাহেবই পার করে দিবেন এই ধরনের কোন বিষয়কে ইসলাম সমর্থন করে না। পীর সাহেব নিজেই পার হতে পারবেন কিনা তারই তো গ্যারান্টি নেই অন্যকে কিভাবে পার করবেন?
একজন হক্কানি পীর এইসব বিষয়ে কোন গ্যারান্টিও দেন না।

তাহলে পীর ধরার উদ্দেশ্য কি? পীর ধরার বা পীরের হাতে বাইয়াত হওয়ার প্রধান উদ্দেশ্য হল ইসলামের বিধি-বিধান সমূহকে জানা এবং সে অনুযায়ী জীবনকে পরিচালিত করে ইহকালিন জীবনকে সুন্দর এবং পরকালীন মুক্তি অর্জনের চেষ্টা করা।

পীর কেমন হওয়া উচিৎ? ইসলাম সেই ধরনের পীর বা মুরুব্বিকে অনুসরন করতে বলে যার ইসলামের বিধিবিধান সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান আছে, যিনি এগুলো যথাযথভাবে মেনে চলেন অন্তত মেনে চলার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন, সুন্নতের পরিপূর্ণ অনুসরন করবেন এবং যিনি একজন উচ্চস্তরের হক্কানি আলেম। যিনি সকল প্রকার পাপ এবং অপ্রয়োজনীয় কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য সর্বাত্বক চেষ্টা করেন। যারা তার নিকট আসবে তাদেরকে সরল ও সঠিক পথের দিকনির্দেশনা দান এবং প্রাকটিক্যাল প্রশিক্ষনের মাধ্যমে প্রকৃত, খাঁটি ইমানদার মুসলিম হিসেবে গড়ে তুলবেন। অর্থাৎ তারা হবেন প্রকৃত অর্থেই মুরুব্বি, কোন ব্যাবসায়ী না।

পীর কি কি বিষয়ে শিক্ষা দেন? মূলত দুটি বিষয়ে শিক্ষা দেন শরিয়ত এবং মারেফত। শরিয়ত ঐ সকল বিষয় যা আমরা কোরআন ও হাদিসের মাধ্যমে পাই অর্থাৎ ইসলামের যাবতীয় আইন-কানুন, বিধিবিধান। এবং মারেফত হল আল্লহর পরিচয় লাভ অর্থাৎ মহান আল্লহর মহত্ব এবং বড়ত্বকে অনুধাবনের চেষ্টা বা সাধনা, যার ফলে শরিয়তকে মেনে চলা সহজ হয়। এই সাধনার অংশ হিসেবেই পীর কিছু ওজিফা বা পদ্ধতি অনুসরনের পরামর্শ দেন। এবং মানবীয় অসৎ গুনাবলী যেমনঃ লোভ, ক্ষোভ, পরনিন্দা, পরচর্চা, মিথ্যা ইত্যাদি যাবতীয় অসৎ গুনাবলী হতে মুক্তির পথবাৎলেদেন।

তাহলে কাজকাম বাদ দিয়ে সারাদিন ওজিফা, জিকির-আজকার নিয়ে মসজিদের কোনায় পড়ে থাকতে হবে? না, অবশ্যই না। কোন হক্কানি আলেম, পীর সাহেব এরকম বলেন না। এবং ইসলামও বৈরাগ্যবাদ সমর্থন করে না। আপনাকে সারাদিন তসবিও টিপতে হবে না। চাকরি, ব্যাবসার ক্ষেত্রে কোন বাধা নেই, বাড়ী-গাড়ী, ধন-সম্পদের পাহাড় গড়েন, রাজনীতি করেন, সাজিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহন করেন, এমনকি রাষ্ট্রের যত গুরুত্বপূর্ণ কাজেই অংশগ্রহন করুন কোন সমস্যা নাই। শর্ত একটাই সবকিছুই করতে হবে ইসলামের বিধান অনুযায়ী। এভাবেই জীবনের সকল ক্ষেত্রে কিভাবে ইসলামের বিধিবিধান অনুসরন করা যায় তার জন্য যথাযথ পরামর্শ গ্রহন এবং আত্বিক পবিত্রতা অর্জন করার জন্যই একজন পীর বা মুরুব্বিকে অনুসরন করা হয়।

যিনি একজন হক্কানি পীর তিনি কখনো প্রচারের আকাংখা করেন না বরং এর থেকে অনেক দূরে অবস্থান করেন। তারা কোন দান-দক্ষিনা পাওয়ার আকাংখাও করেন না। এবং অনেক সংখ্যক আলেম তাদের সাথে সম্পর্ক রাখেন। অপরদিকে ভন্ডপীরদের প্রধান টার্গেটই থাকে যত বেশি সংখ্যক মানুষকে নিজের দিকে আকৃষ্ট করা। এর জন্য পোষ্টার, ব্যানার, টিভি-পেপারে বিজ্ঞাপন, জাঁকজমকপূর্ণ দরবার শরীফ সহ আরো নানারকম চেষ্টা-প্রচেষ্টার কমতি থাকে না। এদের কাছে যারা থাকে তারা সবই সাধারণ মানুষ, আলেমগন ওদের কাছে যান না।

এই পীর প্রথা কোন নতুন ব্যাপার না। এটি অনেক আগে থেকেই চালু আছে এখনো পর্যন্ত। আমাদের নবী (স) এর হাতে অসংখ্য সাহাবী বিভিন্ন বিষয়ে বাইয়াত হয়েছেন। হুদায়বিয়ার সন্ধির সময় সাহাবীগন (রা) যে বাইয়াত হয়েছিলেন তা একটি ভাল উদাহরন হতে পারে। কোন কোন সাহাবী একাধিক বিষয়ে অনেকবার বাইয়াত হয়েছেন। সাহাবী (রা) এর হাতে অনেক তাবেইন বাইয়াত হয়েছেন, তাদের হাতে তাবে-তাবেইন এভাবে ধারাবাহিক ভাবে আমাদের পর্যন্ত এসেছে।

বাইয়াত কি? এটি হল শপথ বা তওবা করা। কোন পীরের নিকট কোন বিষয়ে বাইয়াত হওয়া মানে হল ঐ বিষয়টি করা বা না করার জন্য শপথ করা এবং অতীত ভুল কাজগুলোর জন্য আল্লহর কাছে তওবা করে নতুনভাবে একজন মুরুব্বির পরামর্শ অনুযায়ী জীবনকে পরিচালনা করার শপথ করা। যে কোন বিষয়ে আত্বশুদ্ধি অর্জনের জন্য কোনো হক্কানি পীরের কাছে বাইয়াত হন তিনিই হলেন মুরিদ।

আত্বশুদ্ধি অর্জন করা ফরজ। তবে কোন পীরের হাতে বাইয়াত হওয়া ফরজ না। কেউ যদি কোন পীরের নিকট বাইয়াত নাও হন তবেও তিনি পরকালে মুক্তি অর্জন করতে পারবেন। তবে নিজে নিজের আত্বশুদ্ধি প্রায় অসম্ভব, সাধারনত মানুষের নিজের দোষ-ক্রটি নিজের কাছে ধরা পরে না। এজন্য একজন অভিজ্ঞ ব্যাক্তির নিকট থেকে সংশোধন করে নেয়াই ভাল। কেউ আত্বশুদ্ধি করতে চান কিন্তু কোন পীরের হাতে বাইয়াত হতে চান না তাদের উপায় কি? আগেই বলেছি পীরের হাতে বাইয়াত হওয়া ফরজ না অতএব ভাল একজন আলেমকে নির্বাচন করে বিভিন্ন বিষয়ে তার পরামর্শ গ্রহন করা যেতে পারে, এর জন্য বাইয়াত হওয়া লাগবে না।




আমার এরকম কয়েকজন হক্কানি আলেমদেরকে কাছথেকে পর্যবেক্ষন করার সুযোগ হয়েছিল। তদের জীবনাচার, কর্মপদ্ধতি, জ্ঞানের গভীরতা ইত্যাদি আরও নানা বিষয় প্রত্যাক্ষ করে এবং এ সম্পর্কে কয়েকজন হক্কানি আলেমদের বই পড়ে পীর-মুরিদী সম্পর্কে আমার ভূল ধারনাগুলো দূর হয়।

এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানতে চাইলে আশরাফ আলী থানভী (র), সামছুল হক ফরিদপুরি (র) এবং আবরারুল হক (দাঃ বাঃ এর লেখা অসংখ্য বই থেকে সাহায্য নিতে পারেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুলাই, ২০০৯ রাত ২:৪৬
১৮টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×