somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি যুগোপযোগী সিনেমা "বার্ডম্যান"

২৬ শে মে, ২০১৫ রাত ৯:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

Birdman


নিজের করা সুপার হিরো মুভি "বার্ডম্যানের" প্রতি ফেড আপ হয়ে রিগান(মাইকেল কিটন) সিদ্ধান্ত নেন তিনি আর এই সিরিজের(বার্ডম্যানের) কোনো মুভি করবেন না, কারণ হিসেবে তিনি মনে করেন এই সিরিজ তার প্রতিভাকে সম্পূর্ণরূপে বিকশিত হতে দিচ্ছে না, দর্শককে তিনি আরো ভালো কিছু দিতে চান, তাই তিনি এই "বার্ডম্যান" নামক খাচা থেকে বের হয়ে পড়েন... যোগ দেন ব্রডওয়ে থিয়েটারে, নিজেকে প্রুফ করার জন্য সেখানে তিনি তার বন্ধু আর মেয়েকে নিয়ে রেমন্ড কার্ভারের শর্ট ফিল্মের উপর কাজ শুরু করে দেন... কিন্তু ফেলে আসা "বার্ডম্যানের" ছায়া তাকে প্রতি নিয়ত তাড়া করছে... কারণ এই বার্ডম্যানের হাত ধরে তিনি আজ এতোদূর এসেছেন... এতো খ্যাতির পেছনের কারণ এই "বার্ডম্যান"... খ্যাতি অর্জনের পর "বার্ডম্যান"কে ভুলে যাওয়াটা এক প্রকার প্রতারণা... এভাবে চলতে থাকে "বার্ডম্যান আর রিগেনের টিকে থাকার যুদ্ধ...



একদম যুগোপযোগি একটি সিনেমা নির্মাণ করেছেন ইনারিতু... এই রকম সিনেমা আসলে-ই দরকার ছিলো ... সিনেমাকে শুধু "অর্থ উপার্জনের একটি মাধ্যম" বলে মনে করে করা কিছু নির্মাতাদের জাত চিনিয়ে দিয়েছেন, যারা শুধু মাত্র সিনেমার শেষে "ব্লকবাস্টার", "সুপার-ডুপার", "এপার-ওসপার" ট্রেড মার্ক লাগাচ্ছেন, কিন্তু ভেতরে সব-ই "আবর্জনা", "অখাদ্য"...
তাদের এহেন সিনেমার দরুণ ভালো অভিনেতা/অভিনেত্রীরা একটা সময় ভালো অভিনয় করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন...
কিভাবে সিনেমা নির্মাণ করতে তা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন ইনারিতু... একদম ডিফরেন্ট কিছু করে দেখিয়েছেন... এখন না হোক দশ বছর পর হলেও "মাইলফলক" হিসেবে এই সিনেমা কাজ করবে... তখন হয়তো অনেক পরিচালক/স্ক্রিপ্টরাইটার/চিত্রগ্রাহক এই সিনেমাকে "আদর্শ" হিসেবে মনে করবেন...



হিউমারে ঠাসা ফুল অফ এন্টারটেইনিং একটি সিনেমা বার্ডম্যান... ডিরেকশন থেকে শুরু করে প্রায় প্রতিটি দিক-ই জাস্ট মাইন্ড-ব্লোয়িং... লাস্ট আলফ্রেড হিচককের "Rope" দেখার সময় স্ক্রিনের সাথে চোখ লেগে ছিলো মুভি শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত... এরপর দেখলাম "বার্ডম্যান"... এক কথায় ব্রিলিয়ান্ট...
কাজ শুরু করার আগে এই সিনেমার প্ল্যানের ব্যাপারে অস্কার উইনার পরিচালক মাইক নিকলসের সাথে ইনারিতু কথা বলেন, "একটি লং শটের মাধ্যমে তিনি এই সিনেমাটি নির্মাণ করতে চান" এইটা জানার পর মাইক বলেন , এটি ফ্লপ হবে... এরপরও তিনি রিস্ক নিয়ে "লং শটের" মাধ্যমে সিনেমাটি নির্মান করেন, একে-ই হয়তো পরিচালকের মুন্সিয়ানা বলে... এমন একটি স্টোরির উপর কাজ করে ব্যাপক সাহসীকতা দেখিয়েছেন... এই রকম আরো কিছু সিনেমা নির্মাণ করলে ইনারিতুও স্করসিস, ক্যামেরুন'দের কাতারে চলে আসবেন...
এই সিনেমার মেইন দুটি পয়েন্টের একটি হলো স্টোরি । সরলরৈখিক স্টোরি-লাইন... কাহিনীতে কোনো প্রকার দূর্বোধ্য মার-প্যাচ নেই... আসলে তেমন কিছু-ই নেই তারপরও মনে হলো অসাধারণ লেখনী... ইনারিতুর সাথে মিলে মোট ৪জন এই মুভির স্টোরি আর স্ক্রিনপ্লে লিখেছেন...



পুরো মুভিতে মাত্র ১৬টি কাট রয়েছে(কিন্তু আমার কাছে মনে হয়ে মাত্র ৪/৫টি কাটে পুরো মুভি ওকে করা হয়েছে)... আগে-ই বলেছি সিনেমা শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত স্ক্রিনের সাথে চোখ লেগে ছিলো... এই লেগে থাকার কারণ হচ্ছে "সিনেমাট্রোগ্রাফি"... গ্রাভিটি সিনেমা খ্যাত ইমানুয়েল লুবেজকি এই সিনেমার সিনেমাট্রোগ্রাফির দ্বায়িত্ব পালন করেন... শুধুমাত্র পুরো মুভি লং শটে দেখানোর জন্য ২মাস রিহার্সাল করা হয়... ১১৯মিনিটের এই সিনেমাকে ১৬টি শটে দেখানো চাট্টিখানি ব্যাপার না, এই অসাধ্য সাধন কারো একার পক্ষে সম্ভব না, ডিরেক্টর থেকে শুরু করে এই সিনেমার সাথে সংযুক্ত সবাই তাদের বেস্ট দিয়েছেন বলে ১৬টি শটে দেখানো সম্ভব হয়েছে... এমনও শট নেওয়া হয়েছে যেখানে ১৫পেজের ডায়ালগ ছিলো, যা একটানা বলতে হয়েছে... প্রত্যেকে ব্যাপক ঘাম বের করেছেন এই সিনেমার জন্য... মাইকেল কিটন আর এডওয়ার্ড নরটন লং শট দিয়ে অভ্যস্ত হলেও এমা স্টোন মোটেও অভ্যস্ত নন... ফলে তার-ই বেশি ভুল হয়েছে লং শট দিতে দিয়ে... অনেক ভুল করলেও অসাধারণ অভিনয় করেছেন... অস্কারে বেস্ট সাপোর্টিং এক্ট্রেসের দৌড়ে অনেকখানি এগিয়ে আছেন এমা... এবার হয়তো অস্কার বগল-দাবা করে-ই ক্ষান্ত হবেন... অন্যদিকে ইগোটিক বাট টেলেন্টেড একজন অভিনেতার চরিত্রে অভিনয় করেছেন "নরটন"... দীর্ঘ বিরতির পর আবারো সেই মানের অভিনয় উপহার দিয়েছেন নরটন... এমার মত তিনিও এগিয়ে আছে অস্কার বগল-দাবা করার দৌড়ে... এছাড়া মাইলেক কিটনও অসাধারণ অভিনয় করেছেন, পুরো গল্পকে একাই ধরে রেখেছিলেন... মাইকেল বলেন এটি ছিলো তার লাইফে করা সব'চে টাফ ক্যারেক্টার... অন্যভাবে বলতে গেলে এই সিনেমায় "রিগান" চরিত্রটি তার রিয়েল লাইফের দর্পনস্বরূপ...



মিউজিক স্কোর খুব ভালো হয়েছে, বিশেষ করে ড্রামের ছোয়া কিছু সিকুয়েন্সকে একদম অন্য লেভেলে নিয়ে গেছে... ড্রামের শব্দ শুনে মাথা কেন জানি অটোমেটিক দুলছিলো... সিকুয়েন্সের সাথে ব্যাকগ্রাউন্ডের ব্যবহার একদম যুতসই লেগেছে... পুরো সিনেমার এডিটিং এমনভাবে করা হয়েছে যেনো মনে হয়ে পুরো মুভি এক শটে শেষ হয়েছে... এখানে এডিটর তার কারুকাজ সফলতার সহিত কাজে লাগিয়েছেন, মাত্র ২সপ্তাহে এই সিনেমা এডিটিং-এর কাজ শেষ করা হয়েছে...
নিঃসন্দেহে ২০১৪ সালের সব'চে পারফেক্ট মুভি "বার্ডম্যান"... কমেডি-ড্রামা-থ্রিলার-রোমান্স-মিস্ট্রি দিয়ে তৈরী কমপ্লিট প্যাকেজ । ইনারিতু আসলে-ই একজন পিউর ফিল্মমেকার...
বার্ডম্যান না শুনে মনে হয়েছে সুপার হিরো টাইপ কোনো সিনেমা... আসলে এইটি একটি সুপার হিরো টাইপ সিনেমা যেখানে পরিচালক নিজে-ই একজন সুপার হিরো, আরো একজন সুপার হিরো আছেন তিনি হলেন ইমানুয়েল লুবেজকি...
মাস্টারপিস ক্লাবে আরো একটি সিনেমা যোগ হলো... "বার্ডম্যান"

০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×