somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

।। অর্ফিয়াস ও ইউরিডিস : এক অবিনশ্বর পৌরাণিক প্রেমগাথা ।।

২৩ শে এপ্রিল, ২০১১ রাত ৮:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গ্রীক পুরানের অসাধারণ এক প্রেমগাথা হল অর্ফিয়াস এবং ইউরিডিস এর প্রেম গাথা। অর্ফিয়াস এর কাহিনী প্রকৃতপক্ষে একটি মহাকাব্য। পুরান অনুসারে অর্ফিয়াস ছিল সর্বকালের শ্রেষ্ঠ মানব সুর স্রষ্টা। দেবতাদের পরে মরণশীল দের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম সুরের জাদুকর এই অর্ফিয়াস। মুলত সে ছিল একজন বাঁশি বাদক, যেটার নাম ছিল লাইর। দেবতা হারমিসের তৈরি এ বাঁশির পূর্ণতা পেয়েছে অর্ফিয়াসের কাছে। কথিত আছে ,তার সুর শুনে প্রাণীকুল থেমে যেতো , নদীর গতিপথ বদলে যেতো। গাছপালা তার শিকড় ছিঁড়ে সামনে এগিয়ে যেতো ,পাথর থেকে ঝরে পড়তো কান্না। এমনও হয়েছে যে অর্ফিয়াসের সুর শুনে দেবতাদের যুদ্ধ থেমে গেছে।,ঝরে যাওয়া ফুলগুলো আবার হেসেছে ।


অর্ফিয়াস ছিল দেবতা অ্যাপোলো এর পুত্র। অর্ফিয়াসের মাতা ছিল ক্যালিওপ যিনি ছিল পিরাস এর কন্ন্যা। অর্ফিয়াসের বাসস্থান ছিল পিম্পলিয়া ,যেখানে সে তার শৈশব তার মা এবং বোনদের সাথে কাটিয়েছে। দেবতা অ্যাপোলো অর্ফিয়াসকে খুব ভালবাসতেন এবং তিনিই প্রথম অর্ফিয়াসকে লাইর বাজানো শেখান।



অর্ফিয়াসের এই জাদুর সংগীত একবার গ্রীক অভিযাত্রিকদের নিশ্চিত ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করেছিলো । গ্রিক অভিযাত্রিক জেসন অর্ফিয়াসের সাহায্য নিয়েছিলো সাইরেন দ্বীপ পার হবার জন্য । সাইরেন দ্বীপ ছিল নবিকদের জন্য এক ভয়ংকর দ্বীপ । সাইরেন বাসিরা ছিল অর্ধেক মানুষ আর অর্ধেক পাখি । তাদের গানের গলা এতই চমৎকার ছিল যে সেই গান নাবিকদের কানে পৌঁছালে নাবিকরা দ্বীপের দিকেই ধাবমান হতো । ফলে জাহাজ চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে মৃত্যু হতো সবার । জেসনের দল যখন সাইরেন দ্বীপের পাশ থেকে যাচ্ছিলো , তখন অর্ফিয়াস তার বাঁশি বাজানো শুরু করলো । তার সুর সাইরেনদের সুরকে ছাপিয়ে গেলো । নাবিকরা নিরাপদে দ্বীপ পার হতে পারলো ।



গ্রিসে ফেরত আসার পর অর্ফিয়াস এক অনিন্দ্য সুন্দরী রমণীর প্রেমে পড়লো । তার নাম ইউরিডিস । ইউরিডিস কে প্রথম দেখাতেই ভালো লেগে যায় অর্ফিয়াসের । প্রেমে মত্ত হয়ে অর্ফিয়াস ইউরিডিসকে তার ভালোবাসার কথা জানায় । কোন কুমারীর পক্ষে তার সুরের মায়াকে প্রত্যাখান করার ক্ষমতা সত্যিই ছিল না । ইউরিডিস অর্ফিয়াসকে নিরাশ করেনি । তার পবিত্র ভালোবাসা ইউরিডিস সাদরেই গ্রহন করে । অল্প কিছুদিনের মাঝেই তারা প্রনয়ে আবদ্ধ হয় ।




কিন্তু দুর্ভাগ্য তাদের সুখকে স্থায়ী করেনি । বিয়ের দিনই ইউরিডিস তার সখীদের সাথে নিয়ে বাগানে হাঁটছিল । অ্যারিস্টাসের চোখ পড়ে ইউরিডিস এর উপর । অ্যারিস্টাস কর্তৃক ধৃত হয়ে ইউরিডিস এক ভয়ঙ্কর বিষাক্ত সাপের উপরে পা ফেলে । বিষাক্ত সাপ তার ছোবল বসাতে বিন্দুমাত্র বিলম্ব করেনি । সাপের দংশনে তীব্র বিষে নীল হয়ে ইউরিডিস সাথে সাথেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পরে ।



ইউরিডিসের মৃত্যুতে অর্ফিয়াস শোকে পাগলপ্রায় হয়ে পড়ে । তার বিষণ্ণ সুরে দেবতারাও কেঁদে ফেলে । অর্ফিয়াস দুঃসাহসী হয়ে ওঠে । সে পাতালপুরীতে যেয়ে ইউরিডিসকে ফেরত আনার সংকল্প করে । তবে এই পথ ছিল খুবই বিপদসংকুল । পথ চলতে চলতে সে পৌছায় আকেরুসিয়া নামের এমন এক উপত্যকাতে যেখান থেকে পথ গভীর হতে হতে পাতালপুরীর দিকেই নেমে গেছে । সেখানে অর্ফিয়াস এমন এক মায়ার সুর উঠালো তার বীণায় , যে সমস্ত পাতালপুরী স্তব্ধ হয়ে গেলো তার সেই সুরে । মৃত্যুপুরীর দরজায় পাহারা থাকা কুকুর সারবেরাস থমকে গেলো , সিসিফাস তার কাজ ফেলে বসে রইলো বিশ্রামে , ইকসায়নের অগ্নিচক্র স্থির হল , ট্যান্টালাস ভুলে গেলো তার তৃষ্ণার কথা , ভয়ঙ্কর ফিউরি দেবীদের চোখ থেকে প্রথমবারের মত অশ্রু ঝরল । হেডিসের রাজা ও রানী মন্ত্রমুগ্ধের মতো সেই সুর শুনলেন , এবং অবশেষে ইউরিডিসকে অর্ফিয়াস এর সাথে যেতে দিতে রাজি হলেন । তবে শর্ত একটাই ছিল যে মৃত্যুপুরী থেকে বের হবার আগে অর্ফিয়াস ইউরিডিসকে দেখতে পারবে না , যদি সে তাকায় ,তবে ইউরিডিস চিরদিনের জন্য আবার হারিয়ে যাবে ।



অর্ফিয়াস এ প্রস্তাব গ্রহন করে । সে তার বাঁশি বাজিয়ে পথ অতিক্রম করছিলো , পিছে ছিল ইউরিডিস । সে জানত তার পিছে থাকবে ইউরিডিস , কিন্তু তবু তাকে এক পলক দেখার জন্য তার হৃদয় আকুল হয়ে উঠলো । যখন পথ আর বেশি বাকি নেই , অন্ধকার মিলিয়ে মর্ত্যলোকের আলো দেখা যাচ্ছে , ঠিক এসময় দেবতাদের সতর্ক বানী অগ্রাহ্য করে অর্ফিয়াস পিছে তাকাল । সে তার হাত বাড়াল
ইউরিডিসকে আলিঙ্গনের জন্য ,কিন্তু ইউরিডিস দেখতে দেখতে হারিয়ে গেলো ।



শোকে বিহব্বল অর্ফিয়াস মৃত্যুপুরীর দরজায় এসে তার ইউরিডিসকে হারাল। পাগলপ্রায় হয়ে সে আবার মৃত্যুপুরীতে ফেরত যেতে চাইলো। কিন্তু জীবন্ত কাউকে মৃত্যুপুরীতে দেবতারা দ্বিতীয়বার ঢুকতে দিতে পারেন না। অর্ফিয়াসকে একাই মর্ত্যলোকে ফিরে যেতে হল । বিষণ্ণতায় ডুবে গিয়ে
অর্ফিয়াস মানুষের সাহচর্য ত্যাগ করলো। তার সুরই হল তার একমাত্র সঙ্গী। একা একা সে ঘুরে বেড়াতো থ্রেসের দুর্গম সব অঞ্চলে। তার সুরের একমাত্র শ্রোতা ছিল প্রকৃতি ,গাছপালা ,পর্বতমালা। নিঃস্ব ,একাকী অর্ফিয়াস এভাবেই ঘুরে বেড়াতে থাকে দিনের পর দিন। অবশেষে একদিন থ্রেসিয়ান মেইনাডরা তাকে আক্রমন করলো তাদের দেবতাকে অবমাননার জন্য। তারা হত্যা করলো মায়ার সুরের জাদুকরকে। তারা তাকে হত্যার পর তার দ্বিখণ্ডিত মাথাকে নিক্ষেপ করলো হিব্রুস নামের এক নদীতে , যা লেসবস উপকুলে যেয়ে মিশেছে। অবশেষে মিউজরা অলিম্পিয়াসের পাদদেশে তার দেহাংশ কে সমাধিস্থ করে । যে সমাধিক্ষেত্রে মধুর গান গেয়েই চলে নাইটেংগেল পাখিরা । তার বাঁশি অর্থাৎ লাইর খানা কে তারাদের মাঝে স্থান দেয়া হয় ।




অর্ফিয়াস মৃত্যুর মাধ্যমে মিলিত হয় তার প্রিয়তমা ইউরিডিস এর সাথে । তার দীর্ঘ অপেক্ষার পরিসমাপ্তি ঘটে এভাবেই ।।

তথ্যসূত্র : ইন্টারনেট
ছবি : ইন্টারনেট

Click This Link
http://en.wikipediaorg/wik/Orpheus
http://www.pantheon.org/articles/o/orpheus.htm
http://www.vcu.edu/engweb/eng384/eurydicemyth.

১২টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×