পিগম্যালিওন ও গ্যালিতিয়াঃ সৃষ্টি ও স্রষ্টার অবিনশ্বর ভালোবাসা
পিগম্যালিওন ও গ্যালিতিয়া এর কাহিনীটি গ্রিক মিথে বর্ণিত অসাধারণ এক প্রেম উপাখ্যান। রোমান কবি ওভিড তার অনবদ্য সৃষ্টি “মেটামরফোসিস’ কাব্যে এই কোমল প্রেম কাহিনী বর্ণনা করেছেন সুনিপুনভাবে।
এই প্রেম উপখ্যানটি অন্য যেকোনো প্রেম কাহিনীর থেকেই আলাদা। স্রষ্টা ও সৃষ্টির প্রেমের গভীর সম্পর্ক পরিলক্ষিত হয় এখানে।
সাইপ্রাসের এক তরুন যুবক পিগম্যালিওন। ভাস্কর্য নির্মাণে সে ছিল অদ্বিতীয়। পাথর কেটে অদ্ভুত সুন্দর আর নিখুত সব মূর্তি তৈরিই ছিল তার একমাত্র কাজ। তার তৈরি ভাস্কর্য গুলো যেকোনো দর্শকের চোখেই ফুটিয়ে তুলত মুগ্ধতা। দেখতেও পিগম্যালিওন ছিলেন বেশ সুপুরুষ। তার কর্ম গুনেই হোক,আর রুপের কারনেই হোক , বহু সুন্দরী নারীরই স্বপ্নপুরুষ হয়ে উঠলো পিগম্যালিওন।
কিন্তু পিগম্যালিওন কোন এক কারনে হয়ে উঠলেন চরম নারী বিদ্বেষী। নারীদের সংকীর্ণতা কিংবা চারিত্রিক ত্রুটি এই ভাস্করের চোখে যেন স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়ে উঠলো ধীরে ধীরে। তিনি বিয়ে না করার সংকল্প করলেন। তিনি আরও গভীরভাবে মনোনিবেশ করলেন তার সৃষ্টিতে। আনন্দ ধরা দিল তার কাছে তারই সৃষ্টিশীলতার মাঝে। তিনি ঠিক করলেন তিনি তৈরি করবেন এমন এক ভাস্কর্য যা ছাড়িয়ে যাবে সব ভুল ত্রুটি,হবে সর্বশ্রেষ্ঠ। ভাস্কর্য হিসেবে তিনি বেছে নিলেন নারী রুপকেই ,এবং সৃষ্টি করতে চাইলেন পৃথিবীর সবচেয়ে নিখুত নারীকে ,যা তাকে অন্য সব ত্রুটিপূর্ণ নারী থেকে আলাদা করে। তিনি দেখাতে চাইলেন, বস্তুত নারীদের মাঝে কি কি জিনিসের অভাব।
দীর্ঘদিন ধরে চলল তার সাধনা। সৃষ্টির চিন্তায় বিভোর পিগম্যালিওন এর হাতে গড়ে উঠতে লাগলো সেই নারীমূর্তি যার সাথে তুলনা চলেনা পার্থিব কোন রমণীর। শিল্পীর জাদুর ছোঁয়ায় পরিপূর্ণতা পেতে লাগলো সেই ভাস্কর্য। সমস্ত ত্রুটি ছাড়িয়ে শ্রেষ্ঠত্ব এর পরিপূর্ণতা যখন শুধুমাত্রই সময়ের ব্যাপার ,ঠিক এসময় পিগম্যালিওন প্রেমে পড়লেন তার নিজের সৃষ্টির। যার হৃদয়ে ছিল নারীদের প্রতি তীব্র অনিহা , তার আকাশেই নামলো ভালবাসার বৃষ্টিধারা। তিনি বিশ্বাস করতে চাইলেন না তার সৃষ্টি শুধুমাত্রই এক আইভরি বা পাথরের। ধীরে ধীরে এই নারীমূর্তিই হয়ে উঠলো সব।
পিগম্যালিওন তার সৃষ্টিকে সাজালেন অনেক উজ্জ্বল উজ্জ্বল পোশাক পরিচ্ছদ দিয়ে ,পরালেন দামি দামি সব রত্ন। চাইলেন একটু খানি হাসি , কিন্তু পাথরের মূর্তির মুখে সেই হাসি তো ফোটেনা। তিনি জড়িয়ে ধরতে চাইলেন তাকে আবেগ ভরে , সে তো সাড়া দিলো না। নির্ঘুম রাত কাটে পিগম্যালিওন এর মূর্তিকে নিজের পাশে শুয়ে রেখে দিয়ে ,কই,কেউ তো কথা বলেনা। প্রেমে মত্ত পিগম্যালিওন হয়ে উঠলেন চরম অসুখী। জগতের পার্থিব কোন সুখই তাকে দিতে পারলো না একটু স্বস্তি। ভালোবাসার মানুষটির কাছ থেকে সাড়া না পাওয়ার বেদনা তাকে প্রতিনিয়ত কুড়ে কুড়ে খেতে লাগলো। প্রাণহীন এই মূর্তির তিনি নাম দিলেন গ্যালিতিয়া। গ্যালিতিয়া শব্দের অর্থ– ঘুমন্ত ভালবাসা।
তার এই প্রেমময় আকুলতা গোপন রইলো না প্রেমের দেবীর কাছেও। আফ্রোদিতি পিগম্যালিওন এর প্রেম দেখে বিস্মিত হলেন। তার মন চাইলো এই যুবককে সাহায্য করার।
আফ্রোদিতির কাছে প্রার্থনা উৎসব ছিল সাইপ্রাসে একটি বিশেষ দিন। বেশ জমকালো ভাবেই পালন করা হয় এই দিনটি। সবরকম সুখী ও অসুখী প্রেমিক ও প্রেমিকারাই আসেন, আফ্রোদিতির সাহায্য লাভ এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য। পিগম্যালিওন ও সেই উৎসবে যোগ দিলেন। তিনি চলে গেলেন আফ্রোদিতির মন্দির প্রাঙ্গনে। এতদিন ধরে লালন করে আসা বিদ্বেষ এর জন্য তিনি ক্ষমা চাইলেন প্রেমের দেবীর কাছে। হাঁটু মুড়ে বেদীর সামনে বসে তিনি আফ্রোদিতির কাছে জানতে চাইলেন, যে তিনি মূর্তিটির মতো কোন কুমারী তার জীবনে কখনো খুজে পাবেন কিনা।
কিন্তু দেবী জানতেন আসলে পিগম্যালিওন কি চাইছেন। দেবী আরও কৌতূহলী হয়ে উঠলেন। আসলেই কি সেই হাতে গড়া প্রাণহীন নারী এতো সুন্দর যে সে হারিয়ে দিতে পারে সকল নারীকুল কে? সবার অলক্ষ্যে তিনি ভ্রমন করলেন পিগম্যালিওন এর গৃহে, যেখানে রয়েছে গ্যালিতিয়া।
দেবী আফ্রোদিতি পিগম্যালিওন এর সৃষ্টি দেখে বিস্ময়ে হতবাক হলেন। তিনি মঞ্জুর করলেন পিগম্যালিওন এর ভালোবাসা। মন্দিরে বেদীর সামনের আগুনের টুকরোটি প্রজ্বলিত হয়ে উঠলো। পিগম্যালিওন বুঝতে পারলেন, হয়তো সাড়া দিয়েছেন দেবী।
গৃহে ফিরে পিগম্যালিওন হাঁটু মুড়ে বসলো তার গ্যালিতিয়ার সামনে। পরম ভালবাসায় সিক্ত দৃষ্টি দিয়ে চাইলো গ্যালিতিয়ার দিকে, এক মুহূর্তের জন্য মনে হল ,তিনি ভুল দেখছেন, এবং পরবর্তীতে তার কাছে আসলেই মনে হল ,গ্যালিতিয়াও ঠিক তার দিকে চেয়ে আছে হাস্যজ্জল মুখে।
তিনি কাছে টেনে নিতে চাইলেন গ্যালিতিয়াকে। তার বাহুকে আর পাথরের মতো শক্ত মনে হল না এখন। বরং তিনি অনুভব করতে পারছিলেন কোমল বাহুর স্পর্শ। তিনি গ্যালিতিয়ার ঠোটে একে দিলেন , এক দীর্ঘ চুম্বন , এবং অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করলেন সেই ঠোটে প্রানের অস্তিত্ব। দেবীর ইচ্ছায় পাথরের মূর্তি পেলো জীবন। পিগম্যালিওন এর ভালোবাসা পেলো পূর্ণতা।
খুব শীঘ্রই বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হলেন পিগম্যালিওন এবং গ্যালিতিয়া। তারা ভুলে গেলেন না দেবীর কথা। কৃতজ্ঞতা জানাতে তারা হাজির হলেন দেবীর মন্দিরে ,দেবীর কাছ থেকে পেলেন আশীর্বাদ । তাদের জীবন হয়ে উঠলো অন্তহীন সুখের এবং প্রেমময়। গ্যালিতিয়ার গর্ভে এলো পিগম্যালিওন এর সন্তান, তার নাম রাখা হল প্যাফোস। পরবর্তীতে অবশ্য প্যাফোস এর নামানুসারেই প্যাফোস নগরীর নামকরন করা হয়।
পিগম্যালিওন এবং গ্যালিতিয়া এর এই অবিনশ্বর প্রেম কাহিনী তাই আজও ঘুরে ফিরে ঘুরে লোকমুখে। যুগে যুগের অসংখ্য প্রেমিক প্রেমিকারা স্মরণ করে গেছে এই প্রেমের কথা।
ছবিঃ ইন্টারনেট
তথ্যঃ ইন্টারনেট
Click This Link
http://en.wikipedia.org/wiki/Galate
http://en.wikipedia.org/wiki/Pygmalion
http://thanasis.com/pygmal
সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন
রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো
রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন
যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে
ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন
আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন
মসজিদ না কী মার্কেট!
চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷
আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন