মেধা ও মনন বিকাশে, গণতান্ত্রিক মনোভাব সৃষ্টির লক্ষ্যে, পরমত সহিষ্ঞু ও বিদ্যালয়ের উন্নয়নে এবং সামাজিক কর্মকান্ডে শিশুদের উৎসাহিত করার লক্ষ্যে বর্তমান সরকারের গৃহিত স্টুডেন্ট কাউন্সিল নির্বাচনের পাইলট প্রকল্পের অধিনে আজ ১৫/০৬/২০১০ খ্রি: তারিখে সিলেট সদর উপজেলার সরকারি কিন্ডার গার্টেন প্রাথমিক বিদ্যালয়, সোনারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নবীনচন্দ্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রাধারাণী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং লাখাউরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্টুডেন্ট কাউন্সিল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। একদম জাতীয় নির্বাচনের আদলে অনুণ্ঠিত এ নির্বাচনে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩য় থেকে ৫ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে নিয়োগ দেয়া হয় নির্বাচন কমিশনার, প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার, পুলিশ ও আনসার। তাছাড়া নিয়মানুযায়ী ভোটার তালিকা প্রণয়ন, তফশীল ঘোষণা, প্রার্থীদের মনোয়নপত্র জমা ও প্রত্যাহারসহ যাবতীয় কাজ সম্পাদন করা হয় সম্পুর্ণ জাতীয় নির্বাচনের আদলে। শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে ৭ জন কাউন্সিলর নির্বাচনের লক্ষ্যে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। প্রার্থীরা তাদের নির্বাচনী প্রচারনা চালান বিদ্যালয়েই। আবেগ, উদ্দীপনার কোন কমতি ছিল না মোটেই। প্রার্থী ও তার কর্মী বাহিনী নিজ হাতে পোস্টার তৈরি করে বিদ্যালয় আঙ্গিনা সাজিয়ে তোলেন অত্যন্ত চমৎকার ভাবে। তাছাড়া ব্যানার ফেন্টুনে ছেয়ে যায় বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ। ব্যালট পেপার ও প্রস্তুত করা হয়। অত্যন্ত সুশৃংখল ভাবে ছাত্রছাত্রীরা তাদের পছন্দের পার্থীকে ভোট সকাল থেকেই তাদের উপস্থিতিতে মুখরিত হয়ে ওঠে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ। এ প্রতিনিধি শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত সিলেট সরকারি কিন্ডার গার্টেন প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র পরিদর্শণ করতে গেলে বুথ কক্ষে প্রথমেই বাধা পান ক্ষুদে আনসার ও পুলিশের কাছে। তারা পরিচয় জানতে চেয়ে বুথ কক্ষে প্রবেশের কোন অনুমতি আছে কি না জিজ্ঞেস করে। অনুমতি পত্র দেখাতে না পারায় অত্যন্ত বিণয়ের সাথে নির্বাচন কার্যালয় থেকে অনুমতি আনার জন্য বলে। ১ নং বুথের পাশেই স্থাপন করা হয় নির্বাচন কমিশন অফিস। নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্বে নিয়োজিত আয়েশা বেগমের দিকে তাকিয়ে ভাবাই যায় না সে ৫ম শ্রেণীর ছাত্র। সালাম দিয়ে ঢুকলাম তার রুমে। কি চাই? - নির্বাচন কমিশনার মহোদয়ের সরাসরি প্রশ্ন। তাকে নিজ পরিচয় দিয়ে একটি বুথে প্রবেশের অনুমতি চাইলাম। তিনি অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে একটি কার্ড ইস্যু করলেন তারপর কার্ডটি দেখিয়ে আমি প্রবেশ করলাম ১নং বুথে। প্রবেশ করেতো চোখ ছানাবড়া। কী অপরুপ ভঙ্গিমায় দায়িত্ব পালন করছেন পুলিং এজেন্ট, পুলিং অফিসার ও সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার! দেখে নিজের চোখকে বিশ্বাস করাতে পারছিনা এ ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা তাদের কাজে কতটুকু মনোযোগী, দায়িত্বশীল! বুথে থাকতে থাকতেই নির্বাচন কমিশনার মহোদয় ভোট দিতে আসলেন। তিনিও সকল নিয়ম কানুন মেনে ব্যালট পেপার সংগ্রহ করে গোপন কক্ষে গিয়ে ভোট দিলেন। উপস্থিত কর্মকর্তাসহ ভোটারদের সাথে অত্যন্ত হৃদ্যতাপূর্ণ আলোচনা করলেন। তাদের ভোট প্রদানে কোন রকম অসুবিধা হচ্ছে কি না তা জানলেন। দুজন প্রার্থীর সাথেও আলাপ করলেন তাদের কোন অভিযোগ আছে কি না। এভাবে একসময় ঘড়িতে দুপুর একটা বাজল। শেষ হলো ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া।দুজন আনসার ও দুজন পুলিশী নিরাপত্তা সহকারে ব্যালট বাক্সগুলো নিয়ে আসা হলো নির্বাচন অফিসারের কার্যালয়ে। নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রতিটি ধাপ এ ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা পালন করল অত্যন্ত নিখুতভাবে। নির্বাচন চলাকালীন সময়ে কথা হলো বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা জনাব শেফালি বেগম এর সাথে। তিনি জানালেন শিক্ষার্থীদের মধ্যে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সৃষ্টি, বিদালয়ের শিখন শেখানো কার্যক্রমে তাদের অধিকতর অংশগ্রহণ, বিদ্যালয় ও সামাজিক কর্মকান্ডের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টিতে এ উদ্যোগ অত্যন্ত কার্যকরী একটি পদক্ষেপ। নির্বাচন চলাকালীন সময়ে নির্বাচনী কেন্দ্রগুলো পরিদর্শন করেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মাননীয় উপপরিচালক জনাব কামাল হোসেন, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের কনসালটেন্ট জনাব মিজানুর রহমান, সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জনাব মারুফ আহমদ চৌধুরী, সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার জনাব জাহিদুল ইসলাম এবং স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকার রিপোর্টারবৃন্দ, বিভিন্ন চ্যানেলের সাংবাদিকবৃন্দ।
এ নির্বাচনে ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা যেভাবে আচরণ বিধি মেনে চলে ভোট প্রদান করেছে এবং যে রকম দায়িত্ববোধ নিয়ে তাদের দায়িত্ব পালন করেছে তা তাদের ভবিষ্যত জীবনে পথ চলতে সহায়ক ভুমিকা পালন করবে বলে সকলের ধারণা। তাছাড়া তাদের এ শৃঙ্খলাবোধ, কর্তব্যপরায়নতা দেখে আমাদেরও অনেক কিছু শেখার আছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুন, ২০১০ রাত ১১:০৯