সম্প্রতি এস আলম গ্রুপ একট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে, যেখানে তারা বাঁশখালি ট্র্যাজেডি নিয়ে তাদের অবস্থান ব্যক্ত করেছে। ওদের ঐ বক্তব্যে তারা কিছু অসংগতির আশ্রয় নিয়েছে।
অসংগতি ১: তারা তাদের নিয়োগ করা একটি আন্তর্জাতিক পরিবেশ পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের কথা উল্লেখ করেছে। জনগণের কাছে ঐ পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এবং তাদের অফিসিয়াল রিপোর্ট প্রকাশ করুন। সাথে বাংলাদেশেরও নিশ্চয় সরকারি কোন সংস্থা এই ধরনের পরিবেশ বিপর্যয় সংক্রান্ত বিষয়ে পরামর্শ দেয়। ওদের সার্টিফিকেটও প্রকাশ করুন।
অসংগতি ২: ওরা বলেছে পরিবেশের ভারসাম্য যাতে নষ্ট না হয়, সেজন্য তারা ভূগর্ভের পানি ব্যবহার করবে না। তাহলে প্রশ্ন থাকে, প্রকল্পের ব্যবহার্য পানি আপনারা পাবেন কোথায়?
অসংগতি ৩: ওরা বলেছে, "বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে পা্ওয়া পরিসংখ্যানে জানা যায়, সারাবিশ্বে উৎপাদিত বিদ্যুতের ৭০ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয় কয়লা থেকে।" - প্রশ্ন থাকে, কোন কোন ওয়েবসাইট থেকে আপনারা এই তথ্য পেয়েছেন? ওয়েবসাইট থেকে তথ্য পেলেই যে ঐ তথ্য সত্য হবে, এমনটি ভাবার কোন কারন নেই। তথ্য প্রকাশকারি প্রতিষ্ঠানের বৈশ্বিক পরিচয় কি?
আমিও ওয়েবসাইট থেকে তথ্য দিচ্ছি, এবং এই তথ্য এই ওয়েবসাইট থেকে নেয়া, যারা বিদ্যুৎ উৎপাদন, পরিবেশ, তেল উৎপাদন, ইত্যাদি সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করে থাকে। এইখানে আমি দুটি ডাটা পেজ দিচ্ছি, যেগুলোর কোনটাতেই দেখা যাবে না মোট বৈশ্বিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৭০ ভাগ কয়লা থেকে আসে।
ক) এই পেজের তথ্য তারা সংগ্রহ করেছে বিশ্ব ব্যাংক এবং ইউ.এস ইআইএ থেকে। এখানে তারা ১৯৮০ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত তথ্য দিয়েছে। এখানে দেখা যাবে ১৯৮০ সালে কয়লা থেকে বৈশ্বিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের হার ছিল ৩৭% (মোট ৭০৬৯ টেরা-ওয়াট-ঘন্টা বিদ্যুতের মধ্যে), যেটি ২০১৪ তে এসে হয়েছে ৩৯% (মোট ২২৪৩৩ টেরা-ওয়াট-ঘন্টা বিদ্যুতের মধ্যে)

খ)এই পেজের তথ্য তারা সংগ্রহ করেছে ইউ.এস ইআইএ থেকে। এইখানে তারা ১৯৮০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত তথ্য দিয়েছে।

গ) এই পেজের তথ্য তারা সংগ্রহ করেছে ইউ.এস ইআইএ থেকে। এইখানে তারা ১৯৮০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত তথ্য দিয়েছে। এই পেজে দেখা যাবে, ১৯৩০ সালে বৈশ্বিক শক্তি উৎপাদনের ৭০.৫% ছিল কয়লা থেকে। বর্তমানে সেই হার নেমে এসেছে ২৮.৩% এ।

দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কোন বিকল্প নেই, সত্যি। কিন্তু তাই বলে জোর-জবরদস্তি করার কোন সুযোগ নেই। জনগণকে জোর-জবসদস্তি করার পরিণামে আজ ৪ মারা গিয়েছে। ওদের আবেগকে যদি শ্রদ্ধা করতেন, ওদের চাহিদাকে যদি মূল্য দিতেন, ওদের যদি মানুষ হিসেবে চিন্তা করতেন, তাহলে বুঝতে পারতেন, ওরা আসলে কি চাইছে। রাঙামাটি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র যখন করা হয়েছিল তখন পাহাড়িদের জোর করে ভুমি হতে উৎখাত করা হয়েছিল, যা এখনো ঐ এলাকার বাসিন্দাদের মনোবেদনার কারন। বিদ্যুৎ উৎপাদন দরকার, সেই সাথে স্বাধীণ দেশের মানুষদের স্বাধীণভাবে বাচতে দেয়াও দরকার। সত্য তথ্য প্রকাশ করুন। পরিবেশ পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এবং বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র মানুষকে দেখান।
বাঁশখালির ঐ এলাকার একজন নির্বাচিত কিংবা স্বনির্বাচিত সাংসদ আছেন। একজন জনপ্রতিনিধি থাকার পরও কেমনে আপনারা বুঝতে পারলেন না, ঐ এলাকার জনগণ কি চায়? ভুল বোঝাবোঝি হতেই পারে, কিন্তু তা নিরসনের একমাত্র উপায় নির্বিচার গুলি বর্ষন নয়। বরং দুদলেরই কথা শুনে প্রত্যেকে প্রত্যেককে শ্রদ্ধার মাধ্যমেই তা কাটিয়ে উঠা যেত। আমার বিশ্বাস, সুযোগ এখনো আছে, যদি আপনারা মানুষের চাহিদাকে সঠিক সম্মান দিতে পারেন। এই মনকষাকষি এবং এই হত্যাকান্ডের জের যদি কাটাতে চান, মানুষের পাশে গিয়ে দাড়ান। ক্ষতিগ্রস্থরা টাকা চায় না, ওরা চায় ওদের প্রাপ্য সম্মান, ওদের অধিকার।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ৭:১৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




