=======================
এটা পৃথিবী'র বৃহৎ প্রবাল দ্বীপ, তা সবাই জানে। কিন্তু এটা যে পর্যটকদের জন্য এক নিরাপদ দ্বীপ, তা অনেকের অজানা। মধ্যরাত অবধি সাগর-পাড় পর্যটকদের পদচারনায় মুখর থাকে। এক হোটেল ব্যবসায়ীর সাথে আড্ডায় পুরো আস্থার সাথেই তিনি দাবি করলেন তাদের দ্বীপ ঠ্যাক-টিজ-বিরক্ত মুক্ত। দ্যার্থহীনভাবে তিনি জানালেন - কোন পর্যটকের যে কোন মূল্যবান দ্রব্য যদি কোন দ্বীপবাসীর হাতে পড়ে তিনি অবশ্যই তা ফেরত পাবেন। প্রয়োজনে মসজিদ-মাইকে ঘোষনার ব্যবস্থা করা হয়।
আমি সস্ত্রীক রাত বারটায়ও দক্ষিন সৈকতে গিয়েছি। উত্তর-সৈকত অপেক্ষাকৃত জনাকির্ন - হ্যাজাক, হ্যারকেন বা উন্মুক্ত চুলার কারনে আলোকিত। দক্ষিন-সৈকত সেই তুলনায় বেশ অন্ধকার। প্রথমে কিছুটা অসস্থি করলেও, কিছুক্ষন পর আর খারাপ লাগেনি।
দ্বীপটির এই সরগরম অবস্থা থাকে বছরের চার মাস। নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারী। আবহাওয়া ও সমুদ্রপথের কারনে বছরের বাকি দিনগুলো পর্যটন-শুন্য হয়ে পড়ে।
দ্বীপটির পুরোটাই সমুদ্র-সৈকত। অনেকটা 'এইট' বা কেউ কেউ মাকড়শা আকারের ভুমি বলে। ইহার পরিধী ১০/১২ কিলো হবে। বিদ্যুৎ ব্যবস্থা প্রায় সম্পুর্নটাই জেনারেটরের উপর নির্ভর। অল্প কিছু গৃহে সোলার রয়েছে। রাত ১২টা পর্যন্ত জেনারেটর ব্যবস্থা থাকে, এরপর মোম ও হ্যারিকেন। কিছু কিছু রিসোর্ট অতিরিক্ত মূল্যের বিনিময়ে ২৪ ঘন্টা জেনারেটর চালু রাখে।
দ্বীপটি পুরো পরিধিজুড়েই রয়েছে পর্যটকদের থাকবার জায়গা। কিছু কেবলই থাকার জন্য; খাবারের জন্য তাদের বাজারের হোটেলে যেতে হয়। দ্বীপে বাজার একটাই। পণ্যের দোকানগুলো বেশীরভাগ দ্বীপবাসীর, তবে হোটেলগুলো বেশীরভাগই বাহীরের মালিক দ্বারা পরিচালিত। হোটেলগুলো হরেকরকম সামুদ্রিক মাছ, চিংড়ি, ও কাকড়া কা্ঁচা অবস্থায় থাকে, গ্রাহক চাহিবা মাত্র তা ভেজে বা বারবিকিউ করে দেয়া হয়।
একটাই ঋনাত্নক ব্যাপার তা হল খাবার-দাবার একটু দাম। প্রতিটি ৪০০ টাকায় যে চিংড়ি তা সিজন ছাড়া ঐ টাকায় এক কেজি পাওয়া যায়। এটা সহজভাবে মেনে নেয়াটা যৌক্তিক। মনে রাখতে হবে ব্যবসাটা বছরে চার মাস।
সেইন্ট-মার্টিনদ্বীপবাসী - বড়ই বিনয়ী
প্রায় ১২ হাজার অধিবাসী নিয়ে এই দ্বীপটি। একটি হিন্দু পরিবার ভিন্ন সবাই মুসলিম। ৮টি ওয়ার্ড নিয়ে ইহা একটিই ইউনিয়ন। টেকনাফ থানার অন্তর্ভুক্ত একটি পুলিশ ফাড়ী এখানে রয়েছে।
আছে ৭টি মসজিদ, ৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১১টি মাদ্রাসা এবং একটি উচ্চ বিদ্যালয় যা গত দুই বছর আগে কলেজ হিসাবে স্বিকৃতি পায়।
দ্বীপের ভিতরে শান্ত-স্নিগ্ধ-মনোরম পরিবেশ। নারকেল গাছেরই প্রাধান্য বেশী। দ্বীপটির চারিদিকে কেয়া-গাছের বেষ্টনি, সমুদ্রের সম্ভাব্য আঘাত থেকে রক্ষাকারী। সুপারি, আম, জাম, বাঁশ গাছও রয়েছে।
দ্বীপে ইউনিয়ন পরিষদের রাস্তা করে দেয়া আছে - আরসিসি ঢালাই করা। কিছু রাস্তা হেরিং বোনের। মজার ব্যাপারটা হল - দ্বীপের যে কোন স্থান থেকে ২/৩ মিনিট হাঁটলেই সৈকত পাওয়া যাবে। বাহন হিসাবে আছে ভ্যান, সাইকেল।
দ্বীপবাসী খুব বিনয়ী ও অতিথী বৎসল। যেকোন বয়সের কাউকে কিছু জিঙ্গেস করলে খুব বিনয়ের সাথে তাতে সহযোগিতা করে, দেখিয়ে দেয়। আর খুব হাসিখুশী তারা।
ছেড়া দ্বীপ, ঠিক ছেড়া নয়
==================
.....ছেড়া দ্বীপে যান নাই?
সেইন্ট-মার্টিনে গিয়ে ছেড়া-দ্বীপে না যাওয়া অনেকটা অপরাধ। এ যেন গ্রামে বেড়াতে এসে মামার বাড়ি গিয়ে পাশের খালার বাড়িতে বেড়াতে না যাওয়ার মত। যতই অজুহাত দেখাও খালার অভিযোগ থেকে রেহাই পাওয়া যাবে না।
শব্দটা 'ছেড়া' না 'ছিড়া' না 'ছেরা' তা নিয়েও রয়েছে লঘু তর্ক। তবে দ্বীপটি সেইন্ট-মার্টিন থেকে শতভাগ বিচ্ছিন্ন নয়। জোয়ারের সময় সাগরজলের উচ্চতার কারনে দ্বীপ দু্'টিকে আলাদা দেখায়। ভাটার সময় দুই দ্বীপের মাঝে কাল প্রবাল বা পাথর জেগে ওঠে।
রামায়নের মত লংকাকে নিয়ে রাবনের আক্ষেপ ছিল........ হা প্রচেত, কি সুন্দর মালা আজি পরিয়াছ গলে [মধূসুদনের কবিতা]। মূল ভারত ও শৃলংকার মাঝে পাথরের যোগ রয়েছে। কথিত আছে রাম সেই পাথরের উপর দিয়ে লংকা পৌঁছেছিল। তাই রাবনের এই আক্ষেপ।
সেইন্ট-মার্টিন ও ছেড়া দ্বীপের মাঝে যে পাথরের যোগ আছে তাতে করে ভাটার সময় এপথ দিয়ে এক দ্বীপ থেকে অন্য দ্বীপে হেটে যাওয়া যায়। পথটা বন্ধুর, তবে সম্ভব।
কিছু সাইক্লিস্ট এ পথে গেলেও বেশীরভাগ পর্যটক ট্রলার বা স্পীড-বোটে ছেড়া দ্বীপে যান। যান অনুযায়ী ১৫ থেকে ৪০ মিনিট সময় লাগে। ট্রলারে গেলে পাড়ে নামার জন্য আলাদা ছোট নৌকায় করে পাড়ে নামতে হয়।
ছেড়া দ্বীপটি পুরোটাই কেয়া বনে ঘেরা। দু'টি পরিবারের বাস। চারিদিকের সৈকত বালু আর পাথরে ভরা। দ্বীপের ভিতর পাথর-সারির মাঝে স্বচ্ছ পানিতে মাছের তড়িৎ চলন দেখতে বেশ লাগে।
সাগর তীরে বড় কোন পাথরে বসে দিগন্ত-ছোঁয়া সাগর জলে দৃষ্টি ছড়িয়ে দিয়ে আনমনা হয়ে বসে থাকলে নেশা ধরে যায়।
source: facebook.com/zazabormon
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৪৯