এই ডিঈম ডিঈম বলে জানলার নীচ দিয়া ডিমওয়ালা ডাইকা গেলে , হঠাৎ গতকাইল রাইতের কথা মনে হয় । আমার আর মোন্তাজির দুইজনেরই । যদিও আইজ হোটেল আল-আমিন এ গরু ভুনা দিয়া তন্দুরের বিশাল ভোজ চালাইছি , তাও কাইল যা গ্যাছে তার জইন্য ডিম-দুধ খাইতে হৈব । স্বাভাবিক খাওন-দাওনে ঐটা পুষাইব না । একজন আরেকজনের দিকে চুখে চুখে না তাকিয়েও দুইজনে দুইটা কৈরা ডিম খাই । দামটা মোন্তাজিরই আগ বাড়াইয়া দেয় । অন্য সময় হৈলে আমি দেয়ার জইন্য বাৎচিত করলাম । তয় আইজ মনে হৈল, কতা যত কম উচ্চারণ করা যায় ততই মঙ্গল ।
এই মাদরাছার বিশাল এরিয়া রাইতেও পুরা সজাগ । কুনো না কুনো রুমে কেউ না কেউ জাইগা আছে । কেউ কুরান তিলাওয়াত করতাছে , কেউ উর্দু কিতাব মুখস্ত করতাছে । আর শয়তানডির কেউ কেউ হয়ত মুমবাত্তি জালাইয়া তাস পিটাইতাছে । মোহতারাম ছাব না হৈলেও ছাত্রাবাসের হুজুর মাঝে মইধ্যে রাইত বিরাইতে জানালা দিয়া কান পাইতা শুনেন পুলাপাইন কি করতাছে । পুলাপাইনও চালাক কম না । খেলব এক্কেবারে মুখে তালা মাইরা । ট্যাকার হিসাব, ডাক দেয়া ডাক নেয়া সবই ইশারা ইঙ্গিতে চলে । আওয়াজ নাই বৈলা সাধারণত কুনো কোন্দলও লাগে না । বোবার কুনো শত্রু নাই হাছা কতা ।
চাইরকোণা ছাত্রাবাসের চাইর তলা মিলাইয়া দুইশর মত রুম । মাইঝখানে ঘাসে ঢাকা মাঠ । বাইরের দিকের জানলা দিয়া দীঘিপাড়ের বাজার দেখা যায় । মাইঝরাইত তমাত ঐখানে বেচাকিনা চলে । উপরে সোডিয়াম লাইটের হলুদ আলোয় মায়াময় মায়াময় লাগে । মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে গিয়া দীঘির পাড়ে বসি । বেলাজ মাইয়ারা পুলাবন্ধুগো লগে রংঢং করে দীঘির পাড়ে বৈসা । ওরা অবশ্য মোটামুটি প্রথম রাইতেই চৈলা যায় । রাইত একটার পরে ডিম, বাদাম, চানাচুরঅলা ছাড়া আর কেউ থাকে না । চাইরপাশে ঘুইরা ঘুইরা ওরা চিল্লায় । ডিঈম ডিঈম, বাআদেম বুট বাআদেম বুট ।
রাইতে বাইরে যাওয়া মোহতারাম ছাবের কড়া মানা । তয় যাওয়া যে যায়ন তা কিন্তু না । দারোয়ানরে ট্যাকাটুকা দেওয়া হয় মাঝে মইধ্যে । গেটের পাশেই ওর খুপরি । ভিতর বাইর দুইদিকেই দরজা আছে। তয় সেইডা ছাড়াও ব্যবস্থা আছে । লোহা দিয়া খুচাইয়া খুচাইয়া জানলার দুইটা শিক আলগা করা আছে । কাকপক্ষিরে টের না পাওয়াইয়া যাইতে চাইলে সেই রুট খুলা হয় । নীচের তলায় ঘর পাওয়াতে এই সুবিধা আমাগো রুমে । মাঝে মাঝে উপরের পুলাপানও এই রুম দিয়া পার হয় । তয় কুনোদিনই আমরা একসাথে অনেকে বাইর হৈ না । বাইরের পাব্লিকের চোখে পড়লে এই কান সেই কান হৈয়া মোহতারাম ছাবের কানে কতা যাইতে কতক্ষণ । শিডিউল ঠিক করা থাকে দিনেই । কাকপক্ষিও না জানলেও দুস্তরা ঠিকই জানে কে কখন বাইরে যাইতাছে । তয় এই ওয়াদা জানের ওয়াদা । জান যাইব তাও কেউ স্বীকার করব না অন্য কেডা বাইরে গেছিল ।
রুম থাইকা মনে হয় বাইরে বাইর হৈলে দীঘির পাড়ে গিয়া হাটতে ভাল্লাগবো অথবা দীঘির ডাইনপাশে ছুট্ট পার্কের বেঞ্চে বৈসা থাকতে ভাল্লাগবো । কিন্তু বাইরে যেদিন বাইর হৈ সেদিন মনে হয় এত বিপদ মাথায় নিয়া বাইর হৈয়া এইসব আবালের মত কাজে সময় নষ্ট করার কুনো মানে অয় না । হয় মোছাদ্দেক ঘাডে গিয়া সিরকেট খাওন, আর না হৈলে মোছাদ্দেক ঘাটেরই একটু পশ্চিমে আধা গেরাম আধা শহরের মত কইল্যানপুর রাস্তার মাথায় গিয়া , এলাকার দুস্ত শফিকের ভিসিআর এর দুকানে বুলু দেখা ।
বুলু দেখার সময় সারা শইল্যে গরম ভাপ জাগে কিন্তু ফিরা আসার সময়ডা সবাই চুপচাপ । মনে মনে হাজারবার আসতাগফিরুল্লাহ পড়তে পড়তে ফিরা হয় । মোটামুটি প্রতিবারই । যেগুলির সাহস বেশি হেইগুলি কতডি কইল্যানপুর বাজারের মাগির ঘরেও যায় । কিন্তু গোপনীয়তা এক্কেবারে প্রসিডেন্ট লেভেল । মাগি নিজেও চেহারা দেখতে পারে না । কুনো কতাও হয় না । আমার কইলজা এখনো অত বড় হয় নাই । যেগুলি যায় অগো কাছ থাইকা হুনি আর গরম গরম হৈ । লগে লগে এস্তেন্জার কথা বৈলা যাওন যায় না । পুলাপাইন বদমাইশ । হাসাহাসি করে । আর রাইতে গোসল করতে দেখলেতো অবস্থা আরো খারাপ । এই কয়েকমাস প্রায় প্রতিডা ফজরেই ফরজ গোসল না কৈরা খালি ওজু দিয়া নামাজে দাড়াই । পরে দুপুরে গোসল কৈরা পাক পবিত্র হৈয়া জুহরের পর , আর জুম্মার দিনে আল্লার কাছে কান্দি । গুনা মাফ করার জইন্য ।
মাঝে মইধ্যে মনের মইধ্যে সন্দ জাগে । এই যে বয়সের খাই আল্লায় ত ভালাই জানে । আর আমার আট ভাই । আমার উপরেই আরো চাইরডা । সবডি আবিয়াত্যা । আল্লায় ত জানেই বিয়া করাও সম্ভব না আবার জিনা না কৈরাও থাকা সম্ভব না , তাইলে আল্লায় ক্যান বানাইলো এত কঠিন নিয়ম । তাও খালি ঢুকাইলেই জিনা হয় তা না । হাতের জিনা চুখের জিনা কত কিছু । একবার জিনা করলে বিশ বচ্ছরের ইবাদত নষ্ট হৈয়া যায় । জীবনডাই আমার বিশ বচ্ছরের । নষ্টতো হৈয়া গ্যাছে মনে হয় কয়েক লাখ বচ্ছরের । তয় আল্লা গাফুরুর রাহীম । উনার দয়ার কুলকিনারা নাই । পাক দিলে তওবা করলে নিশ্চয়ই বুঝবেন ।
নাকি কুনো অল্পদৃষ্টিওয়ালা আবাল মানুষ বানাইলো এই নিয়ম । বানাইয়া আল্লার নাম দিলো । শইল গরম হৈয়া গ্যালে মনে জাগে এডি বেশি । আবার বাইর হৈয়া গ্যালে আস্তাগফিরুল্লাহ বৈলা বাম পাশে তিনবার ছ্যাপ ফালাই । নবি কৈছে ঐগিলি শয়তানের কুমন্ত্রণা । ঐগিলি মাথায় আইলে এই কাম করতে হয় । বেহেশতের হুরগো কতা মনে কৈরা মনরে বুঝাই । ভালা জিনিস পাইতে হৈলে সবুর করতে হয় । মিন্নত করতে হয় ।
তয় কাইল রাইতে যা হৈল তা এক্কেবারে নতুন । মনের অনুতাপের ধরণটাও ছিল তীব্র আর নতুন । রাইতে চুপেচুপে আবার বাইর হৈয়া দীগির বরফের মত ঠান্ডা পানিতে, এক্কেরে দুরের কুনাটাতে গিয়া গুছল কৈরা আইসা তাহাজ্জুদ নামায পড়লাম বারো রাকাত । নীরবে কানলাম আল্লার কাছে অনেক্ষণ । তওবার দোয়া পড়লাম এক হাজার বার । মনের অনুতাপ একটু কমলেও অহনো চুখে চুখে তাকাইতে পারতাছি না মোনতাজিরের ।
মোনতাজিরের সাথে পরিচয় এই মাদরাছাতে আসার পরেই । বড় ভাই এইখান থাইকা পাশ করছিলেন । এই মাদরাছার উপর আলাদা একটা আকর্ষণ আছে । পরথম দিন দরখাস্ত পূরণ করতে গিয়া মোনতাজিরের কাছে কলম চাইতেই কৈল দোকানে যান আমি কি কলম বেচি নাকি । কিন্তু মুখের ভাব দেইখা বুঝলাম , পুলা আমার মতই মজা কৈরা কথা কৈতে পছন্দ করে ।একখান বোকা হাসি দিয়া ওর হাত থাইকা কলমডা কাইড়া নিয়া কৈলাম এইবার চাইলে কিন্তু আমি একই কতা কমু । সেই থাইকা দুইজনের ভিতর যে মিল হৈল, সেইডা একই রুমের জইন্য দরখাস্ত করার পর থাইকা, একসাথে থাকার এই নয় মাস পর্যন্ত এখনো একটু ও কমে নাই ।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ১০:৩৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



