somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদের হিরোসকল এবং হোয়াই দিস স্টিংকস

১৬ ই জানুয়ারি, ২০১০ রাত ১২:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অল্পবয়সে মহাভারত পড়তে গিয়া পড়ছিলাম অদ্ভূত সমস্যায় । প্রথমেই মনে হৈলো আমি দ্রোণাচার্য হতে চাই । পরে অর্জুনের রুপ আর যুদ্ধবিদ্যা দেইখা মনে হৈলো অর্জুন হৈতাম চাই আবার ভীমের শক্তি দেইখা মনে হৈলো, আরে ধূর পুরুষের আবার লাবণ্য কি , আমি গদাধর ভীমই হৈতাম চাই । মাঝে মধ্যে মিচকা শয়তান যুদিষ্ঠিরও হৈতে মন চাইছিলো যে না তা ও আবার না । কিন্তু শেষ পর্যন্ত গিয়া যেইটা থাকলো, মহাভারতের আসল নায়ক কর্ণ । এই ট্র্যাজিক হিরুর চাইতে আর বেশি কোন মোহ নাই ।

মাগার আমার ঢাল নাই , তলোয়ার নাই , আমি নিধিরাম সর্দার ।

আমাদের পুরাতন যতসব উপকথা যতসব বই, সব এইসব হিরুদের গালগপ্পো আর কীর্তিকাহানিতে ভরা । এইটা এতই সাধারণ এবং এমনভাবে আলোবাতাসের মত চাইরপাশে ছড়াইন্যা যে , ঘুণাক্ষরে কারো কি কখনো মনে হৈছিলো যে, আমি নিধিরাম সর্দার, হারকিউলিসের লোহার পাতের মত পেশীর বর্ণনা বা ইছুপের তিরিশ হাজার সুন্দরীর মন কাড়া রুপের গালগপ্পো শুইনা কি করমু । আমার কি কামে আসবে রক্তলিপ্সু আলেকজান্ডারের ঘোড়া ছুটানির কাহিনী ?

ধীরে ধীরে আরসব বিবর্তিত প্রাণীর মত আমরাও চাইরপাশের আলোবাতাসের সাথে সন্ধিতে পৌঁছাই । আমিও এর সাথে র‌্যাশনালাইয করি । বড় বড় বাল পাকনা হিরুর কাহিনী আমাদের শুনানো হয় হয়ত আমরাও একদিন তাগো মত পাকনা হমু, নিদেনপক্ষে হৈতে চামু এই আশা থাইকাই হয়তো । মাগার ছা-পোষা বাপজান নিজেও কি এইসব হারকিউলিস অর্জুনের কাহিনী শুইন্যা বড় হয় নাই ? যেই জিনিস তারে হারকিউলিস না বানাইয়া কেরানি বানাইছে সেই জিনিসের এমন মুখ থুবড়ানো ব্যর্থতার পরেও পরের প্রজন্মের হাতে তুইলা দেয়া কেনো ?

হিরুদের গালগপ্পে আমাদের ঝিমানি আসে, ঢুলুনি আসে । স্বপ্নের । গায়ের লোম খাড়া হয়, সাথে তাগো সঙ্গিনীগো কথা চিন্তা কৈরা অন্য কিছু । শেষ পর্যন্ত যার দফারফা হয় অন্ধকার টয়লেটে ।

সবকিছু বাদ দিয়া প্রোবালিস্টিক এপ্রোচ থাইকাই দেখি না হয় ঘটনাগুলি । হাজার কোটির উপ্রের পূর্বপুরুষের মাঝখান থাইকা যেই শখানেক পালোয়ান, বাপের সাম্রাজ্যের জোরে অথবা দেবতার সরাসরি বীর্যের গুনে বাল ফালায়া তালগাছে উঠাইছে , তাগোর সংখ্যারে সম্ভাব্য প্রতিযোগী সংখ্যা দিয়া ভাগ দিলে যেই সংখ্যাটা আসে , সেই পরিমাণটা নিত্যদিনের দুই ট্যাকার লটারিতে তিরিশ লাখ ট্যাকা পাওনের সম্ভাব্যতার চাইতেও কম । অথচ লটারি কিনতে মানা নাই, কিন্তুক নেপোলিয়ানের মত কৈরা না খাইলে না নাইলে ঘরে জায়গা নাই ।

শেষ বেচারা নেপোলিয়ানের কথাতে আবার অন্য কথা পাড়তে হয় । মানুষের এখন হেডম বাড়ছে , সাথে সাহস আর ইগোও । ইগোতে টইটুম্বুর মানুষ একসময় আর অলিম্পাসে কি আসগার্ডে কি আকাশের কাব্বাকাব্বা নগরীর দেও দেওতাগো হেডমে বিশ্বাস রাখে না । বিশ্বাস রাখে নিজের হেডমে । এখন আমাগো হিরু হৈছে অন্য মানুষই । আমার মতই দুইটা হাত দুইটা চোখ দুইটা কান আনুমানিক বত্রিশটা দাঁতওয়ালা মাইনষেই । (একচোখ বা দুইচোখ একহাত বা দুইহাত না থাকারা, নো অফেন্স) খালি গায়ে গতরে অন্যরকম অথবা কোন কোন অঙ্গের দৈর্ঘ্যে বেশকম থাকতে পারে ।

মানুষের নিজের ব্যর্থতার পরিমাপও শেষ পর্যন্ত রেফরেন্স পয়েন্টের স্বাপেক্ষে চৈলা যায় । দুইন্যার যত আবুলের বাপ পারে না, তাদের না পারাটা কষ্টদায়ক হয় খালি হাবুলের বাপে পারে বৈলাই । হাবুলের বাপেও যদি না পারতো তাইলে আবুলের মার ঘ্যানঘ্যানও কমতো কিছুটা ।

অলিম্পাস, আসগার্ড , কাব্বাকাব্বার হিরুগো দিন গিয়া আমাগো মানবিক হিরুগো দিন আসাতে , আবুলের বাপের পারার সম্ভাবনায় কোন হেরফের হয়নাই । কিন্তু যন্ত্রণা বাড়ছে বহুগুণ । আমাদের মিডিয়া আমাদের গুজব-বার্তা, আমাদের বই, আমাদের লেজেন্ড সবকিছু এখন সবার কানের কাছে দুইন্যার কানাচে কোনাচে পইড়া থাকা সব পারা হাবুলের বাপের খবর নিয়া ঢোল পিটাইতাছে । ফলে দিনদিন নিজস্ব দীনতায় আমরা মাটির লগে মিশ্যা যাইতাছি আরো বেশি । আমার ছোট জিনিসটা সত্তর পর্দা দিয়া ঢাইক্যা রাখলেও , মিডিয়া সেইখানে , ভার্নিয়ার স্কেল, স্ক্রু গেজ, ফিতা নিয়া হাজির হৈতাছে ।

তবু আমরা শিশুদের দেশপ্রেম শিখাইতে চাই বড় হেডমওয়ালা যোদ্ধা হিরুর কাহিনী দিয়া, অধ্যবসায় শিখাইতে চাই স্কটল্যান্ডের মাথা-খারাপ রাজার কাহিনী দিয়া, ধর্ম শিখাইতে চাই এসেক্সুয়াল হেলুসিনেটরি বড় বাবার কাহিনী দিয়া । এক দিক থাইকা হয়ত এইটার ভালো কোন অল্টারনেটিভ নাই । যেই বয়সে সিসিফাস , হেমলেটের কাহিনী শুনি , সেই বয়সে মাথার ভিতরে যা আকাম ঘটার ঘৈটা গেছে ।

তবে আমরা শিখাইতে চাই সবকিছুই, ধর্মে বড় বাবা, যুদ্ধে নেপোলিয়ান, দেশপ্রেমে বঙ্গবন্ধু, জিহাদে উমর, বেহালায় তানসেন, ফিগারে মেরিলিন মনরো , এক শিশুর ভিতরে আমাগো দেবী দূগ্গার দশহাত দরকার । আমাদের ভিতর যারা আবার এত কোনাইচ্চা না, তারা অর্জনও করে এইসব হিরুগণের সকলের ভিতরকার কিছু কিছু । কিন্তু আদতে সেইটা তাগোরে শেষ পর্যন্ত সবকিছুর আধা হিরু বানায়া রাইখা যায় । কোনকিছুতেই সে তার রেফারেন্স হিরুর স্পেশালিটি ছাড়ায়া যাইতে পারে না । এইটা কি এপিডেমিক হীনমন্যতা, বিষণ্ণতার একটা কারণ ? এইটা কি মানবিক হিরুদের মিডিয়া নর্তনকুর্দনে উথালপাথাল উন্নতবিশ্বে ক্রমবর্ধমান আত্নহত্যার একটা কারণ ? অবশ্য এর ভিতর থাইকা যেইসব হাবুলের বাপ গজায়া যায়, তাদের বিষয়ে আমি শ্রদ্ধভীতি নিয়া নিরব থাকি ।

আমাদের শিশুদের চৌদ্দগুনে গুনান্বিত করার নিপাট সদিচ্ছা বাস্তবায়নের অন্য কোন পদ্ধতি কি থাকতে পারে ?
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১০ দুপুর ১:৪৮
৭টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অণু থ্রিলারঃ পরিচয়

লিখেছেন আমি তুমি আমরা, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৭


ছবিঃ Bing AI এর সাহায্যে প্রস্তুতকৃত

১৯৪৬ কিংবা ১৯৪৭ সাল।
দাবানলের মত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে।
যে যেভাবে পারছে, নিরাপদ আশ্রয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। একটাই লক্ষ্য সবার-যদি কোনভাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পেইন্টেড লেডিস অফ সান ফ্রান্সিসকো - ছবি ব্লগ

লিখেছেন শোভন শামস, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:১৯

"পেইন্টেড লেডিস অফ সান ফ্রান্সিসকো", কিংবা "পোস্টকার্ড রো" বা "সেভেন সিস্টারস" নামে পরিচিত, বাড়িগুলো। এটা সান ফ্রান্সিসকোর আলামো স্কোয়ার, স্টেইনার স্ট্রিটে অবস্থিত রঙিন ভিক্টোরিয়ান বাড়ির একটি সারি। বহু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামহীন দুটি গল্প

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৫

গল্প ১।
এখন আর দুপুরে দামী হোটেলে খাই না, দাম এবং খাদ্যমানের জন্য। মোটামুটি এক/দেড়শ টাকা প্লাস বয়দের কিছু টিপস (এটা আমার জন্য ফিক্সড হয়েছে ১০টাকা, ঈদ চাদে বেশি হয়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজত্ব আল্লাহ দিলে রাষ্ট্রে দ্বীন কায়েম আমাদেরকে করতে হবে কেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:০৬



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) কেড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×