১
কোথায় যেন দেখছিলাম , যৌবনে যে সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস করে না তার হৃদয় নাই আর পরিণত বয়সে যে পুঁজিবাদে বিশ্বাস করে না তার মগজ নাই । মাওলানা দুরের পাখি আরেকধাপ আগায়া বলেন, প্রথম যৌবনে যে নিহিলিজম বিশ্বাস করে না, সে আর কোনদিনও বালেগ হয় না । নিহিলিজম ডিফেন্ড করার সাধ বা সাধ্য কোনটাই আমার নাই । (অবশ্য আইজকাল বোধহয় কোন ইজমই ডিফেন্ড করার সাধ নাই, সাধ্য যদিওবা থাকে ) । নিহিলিজম আবার বৃত্তাকার সাপ । নিহিলিজমের উপ্রেও যদিও নিহিলিজম প্রয়োগ করন যায়, তাইলে খেলা আরো জমতে পারে ।
২
ফেসবুকে এক ছোটভাই স্ট্যাটাস মেসেজ লেখছে, বাংলা মোটামুটি এইরকম : "আমরা একা আসি, একা থাকি, একা যাই । মাঝে মাঝে কেবল বন্ধুত্ব, ভালোবাসা এই ধরণের কিছু সম্পর্ক দিয়া , নিজেদের ভুলাই যে আমরা একা না "। পোলার বয়স যা, তাতে বড় বড় কথা বলার এখনই সময় । পরে সময় আর নাও থাকতে পারে । বেশীরভাগেরই থাকে না । কেউ কেউ ইল্যুশনটাকেই শেষ গন্তব্য বৈলা ধৈরা নেয়, আর সেইটার সাথেই বোঝপড়ায় আসার চেষ্টা করে । কেউ কেউ যে সারাজীবন অস্বীকার কৈরা যায় না তা না । কিন্তু সেইগুলা বিরল ঘটনা । প্রোবাবিলিস্টিক বিচারে আলোচনার টেবিলে আনার মত না ।
৩
বাল্যকালের সম্পর্কগুলার একটা অবশ্যাম্ভাবী বৈশিষ্ট্য হৈলো, তখন কেউই সম্পর্কের মধ্যে টাইম লিমিট যোগ করে না । সবকিছুই তখন চিরদিনের জন্য, সারাজীবনের জন্য । একটা সুন্দর মার্বেলও সারাজীবনের জন্য রাখার প্রতিজ্ঞা , ভালো বন্ধূর সাথে সম্পর্কেও সারাজীবনের জন্য প্রতিজ্ঞা । বালেগ নাবালেগে পার্থক্য হওনের এইটাও একটা দিক যে, কে কখন বুঝলো কোন কিছুই সারাজীবনের জন্য না । চিপাবুদ্ধির মনোবিজ্ঞানীর মনে হৈতে পারে, হয়ত গড় প্রত্যাশিত আয়ুস্কালের চাইতে অনেক দূরে থাকে বৈলাই পুলাপান জীবনটারে অনেক বড় মনে করে, এইকারণে যেকোন পরিকল্পনা অনেক দীর্ঘ, অনেক লম্বা সময়ের জন্য করে ।
৪
তাইলে ঠিক কখন থাইকা, কোন দিন কোন অশুভক্ষণটা থাইকা মানুষ মনে করা শুরু করে, আজকের এই সময়ের এত প্রিয় জিনিসটা মানুষটা বেশিসময়ের জন্য নাই ? অতিপ্রিয় কিছু হারায়া গেলে ? অতি ঘনিষ্ট কোন বন্ধুর সঙ্গ আগের মত ভালো না লাগা শুরু হৈলে ?
৫
দুইন্যাতে যেইকাজে মানুষ সবচে বেশি সময় নষ্ট করে সেইটা বোধহয় পরিকল্পনা । সারাজীবন যেই পরিমান পরিকল্পনা মানুষ করে , তার হাজারভাগের একভাগ যাদের সফল হয় তারাই বড় বড় হোমরা চোমরা হয় । তারপরেও মানুষ পরিকল্পনা করে, উজবুকেরা সেইটারে গালভরা নামও দিছে । আশা ।
৬
নতুন কোন সম্পর্কের শুরুতেই যদি মাথায় হিসাব চৈলা আসে, এইটা কদিনের সম্পর্ক, কতটুকু গভীরে পারমিটেড, কতটুক অগভীর , তাইলে সম্পর্ক জিনিসটা ইল্যুশনের মত মনে হওনে দোষ দেয়া যায় না কাউরে । ভালোবাসা বা বন্ধুত্ব কেবল নাম হিসাবে রাইখা, তলে তলে লিনিয়ার প্রোগ্রামিং (কতটুক কাছে গেলে কতটুকু লাভ হবে) । একটা না একটা বয়সে চোখ গজায় সবারই । তখন সবাই বুঝে অন্তরালের লিনিয়ার প্রোগ্রামিং । ফেসবুকের পিচ্চির মত সবারই তখন অবিশ্বাস আসে ।
৭
লিভ ইন দ্য মোমেন্ট । পূঁজিবাদী দর্শণের বোধহয় সবচে বড় ঐশীবাণী । শত শত ডাইমেনশন চিন্তা করা যায় এই একটা ছোট কথার । এই অমৃতরসে টইটম্বুর দুনিয়ায় মানুষের স্থায়ী কোন কিছুই নাই । সবসময় ভাড়া খাটানির ব্যবসা জমজমাট ।
৮
বছেরর পর বছর ধৈরা , মানুষের পর মানুষের সাথে একশ একটা প্রতিজ্ঞা কৈরা একশ একটা প্রতিজ্ঞা ভাইঙা এখন মনে হৈতেই পারে প্রতিজ্ঞা করাই অনুচিত । ছুটির নিমন্ত্রণ, বিয়ার নিমন্ত্রণ, টাকা ধার দেয়া, পড়ালেখায় সাহায্য করা, শত শত তুচ্ছের ঐসব বন্ধু এখন অনেকের নাম শুনলেও চিনা চিনা লাগে না । জরিনারে না পাইলে সুইসাইড খামু, সেই জরিনা মারা গেলেও , দূরে গিয়া মর, হয় প্রথম প্রতিক্রিয়া ।
৯
এতকিছুর পরেও আমি সম্পর্কের পক্ষপাতি । বড় দুইন্যাতে অস্তিত্বের জায়গাহীন মানুষের লাইগা সম্পর্কগুলা আশ্রয় । দুইন্যার হাটে আমার দাম, আমার জীবনের দাম, আমার সমস্ত বিশ্বাসের কানাকড়ি দাম না থাকলেও, কারো কাছে আমার সামান্য মুখ বেজারখানাই ঝড়ের সমতূল্য, এইটুক পার্থক্যই মানুষকে বাঁচায়া রাখে , আইজ হোক কাইল হোক, সব নিহিলিস্ট পাকনাই এইটা বুঝবে ।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ১১:৪২