ব্লগার পরিসংখ্যান:
পোস্ট করেছেন: ৬৭টি
মন্তব্য করেছেন: ৪৯০৩টি
মন্তব্য পেয়েছেন: ২৭৫৮টি
ব্লগ লিখেছেন: ৩ বছর ৮ ঘন্টা
ব্লগটি মোট ১১১০৭৫ বার দেখা হয়েছে
৩ বছর ৮ ঘন্টা!!!!!!!!!!!!!
৩ বছর ৮ ঘন্টা!!!!!!!!!!!!!
৩ বছর ৮ ঘন্টা!!!!!!!!!!!!!
আমার ব্লগার স্ট্যাটিসটিক্সের সব পরিসংখ্যানের মধ্যে ৩ বছর ৮ ঘন্টার ঐ একটি লাইনই বোধ করি সত্য। পোস্ট অনেক মুছে ফেলেছি, ফলে পোস্ট/মন্তব্যের পরিসংখ্যান পুরোটাই ভুল, অন্যদিকে কাউন্টার জটিলতার কারনে ব্লগ কতবার দেখা হয়েছে সেটাও ভুল হবার সম্ভাবনাই বেশী।
সামহোয়ারের ব্লগ স্ট্যাটাস প্যানেলের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে মনের ভেতরে গত তিন বছরের কত কথা আর কত স্মৃতি উকি দিয়ে গেল। যখন প্রথমে এসেছিলাম, তখন ভাবিনি এতটা আকড়ে ধরব ব্লগকে। কত জায়গায় কতদিন ছিলাম, কিন্তু এরকম আফিমের নেশা তো কোথাও ছিল না। আজ তিন বছর পরে আমি জানি, এই ব্লগের বাংলা প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে যাওয়া আমার পক্ষে অসম্ভব। ব্লগের হাসি কান্না আর সুখ দুঃখ যেন জীবনের সাথে ওতপ্রোত হয়ে মিশে আছে। এমনি করিয়া জানি না কখন জীবনের সাথে মিশে, ছোট-খাট তার হাসি ব্যথা মাঝে হারা হয়ে গেনু দিশে। "কবর" কবিতার এই দুই লাইন আমার ব্লগ জীবনে অক্ষরে অক্ষরে সত্য হয়ে মিলে গেল।
আমি যখন এখানে প্রথম আসি তখন সামহোয়ারের এলেক্সা র্যাংকিং ছিল ৫০০০০ এর মত। ২-১০ জন ব্লগারকে লগ ইন দেখতাম। সাম্প্রতিক মন্তব্য অনেকক্ষন ধরে ঝুলে থাকতো। মাঝে মাঝে আমি একাই সবগুলো সাম্প্রতিক মন্তব্য করে রাখতাম। ছিল টপ রেটেড পোস্ট এবং সর্বোচ্চ পোস্টদাতা ব্লগারদের তালিকা। এই সব ধীরে ধীরে বিদায় নিয়েছে, সাথে বেড়েছে সামহোয়ারের জনপ্রিয়তা। এখন এলেক্সা র্যাংকিং ১০০০০ এর মধ্যে, সাম্প্রতিক মন্তব্য চলে যায় ঝটিকা গতিতে। তিন বছরে কত পরিবর্তন!!
যাদের আমন্ত্রনে ব্লগে এসেছিলাম তারা কেউ এখন আর নেই। যত দিন যাচ্ছে পুরোনো পরিচিতরা বিদায় নিয়ে নূতন মুখ সব আসছে। যারা নূতন আসছেন তাদের সবাই প্রায় ছদ্ম নামে লিখছেন। মূল নামে লেখার অসুবিধা অনেক, কখনও যদি ব্লগ সাসপেন্ড হয়ে যায় তবে তা সামাজিক ভাবে নিগৃহীত হবার হাতিয়ারে পরিনত হয়। প্রকৃত পরিচয় নামে লেখা অনেকেরই ব্লগ বাতিল হওয়াতে, পরিচিত মহলে বিরূপ পরিস্থিতির শিকার অনেককে হতে হয়েছে। ছদ্মনামে লিখলে এই সমস্যা থাকে না। ছদ্মনাম ভার্চুয়াল লাইফে বোরখার মত কাজ করে, আসল পরিচয় লুকিয়ে রাখে। ফলে স্বাধীনতা বাড়ে, কমে দায়বদ্ধতা।
ব্লগ লিখতে লিখতে মনে পড়ছে পুরোনো সেই দিনের কথা। কারা কারা আমার আগে এসেছিলেন। সর্বোচ্চ পোস্টদাতাদের ভিড়ে আলী ঢালীর সেই দৌড়ের কথা। সেসময়টাতে সে তালিকাতে যারা ছিলেন তাদের মধ্যে রাগ ইমন, ত্রিভুজ, মাহবুব মোর্শেদ এখনও আছেন। ত্রিভুজ এবং রাগ ইমনকে সময় সময় সক্রিয় দেখা গেলেও মাহবুব মোর্শেদ তার ব্লগ কেন্দ্রিক তৎপরতা ইদানিং কালে অনেক কমিয়ে দিয়েছেন। রাগ ইমন প্রথম দিকের গুটিকয়েক নারী ব্লগারের অন্যতম। ঝড় ঝঞ্ঝার মুখোমুখি তাকেও হতে হয়েছে। মেধা আর সাহস - এই দুটি গুন উনাকে প্রতিষ্ঠিত ব্লগার করেছে।
আমি আসার আগেই গঠিত হয় এ-টিম। আমি এসে এদের এসব তৎপরতা দেখে ভ্যাবাচ্যাকা খাই। ভয়াবহ ত্রিভুজ বিরোধিতা তাদের কাজের অন্যতম দিক হলেও ত্রিভুজকে তাতে কখনও বিচলিত দেখা যায় নি। তার ব্লগ সবসময়েই সুপার হিট। জমিয়ে তোলার এক আশ্চর্য ক্ষমতা রয়েছে ত্রিভুজের। আর কোন ব্লগার এ ক্ষেত্রে এতটা সফল ছিলেন না। পরবর্তী পর্যায়ে এই এ-টিমের অনেকে আমার ব্লগের সাথে যুক্ত হয়ে যাওয়ায় সামহোয়ার ব্লগে এদের তৎপরতা ভাটা পড়ে যায়। এ-টিম নিয়ে এই ব্লগে অনেক লেখা রয়েছে। এ-টিমের অবদান কি ইত্যাদি। আমার মতে, এ-টিমের মূল অবদান মডারেশন। এ-টিমের কারনেই সামহোয়ারে মডারেশন সক্রিয় হয়েছে, পরিবেশ ঠিক করার তাগিদ এসেছে।
আমি আসার প্রায় সাথে সাথে ব্লগে আসেন চতুরভূজ, মিরাজ এবং সারোয়ার চৌধুরী। চতুরভূজের প্রোফাইলের ছবি নিয়ে তখনটায় চলছিল তুঘলকী জাতীয় নানান কান্ড। ক্ষুরধার লেখনীর এই লেখক হঠাৎ করেই ব্লগ থেকে চলে যান। এরপরে অপ্রত্যাশিত ভাবে সারোয়ার চৌধুরী ব্লগ সাসপেন্ড হয়। মিরাজকেও আর ব্লগে দেখা যায় না। তাই এদের মাঝে আমি একাই এখনও সামহোয়ার ব্লগে রয়েছি।
সামহোয়ার ব্লগে আমার প্রথম ও একমাত্র ব্যান ঠিক কবে ছিল বলতে পারছি না। হয়ত আমারই পুরোনো পোস্টগুলো ঘাটলে বলা যাবে। এই ব্যানের ফলে বেশ অনেকদিন সামহোয়ার ব্লগের বাইরে ছিলাম। এর পরে আবার সামহোয়ারে ফিরে এলে নিক বাচিয়ে চলাই আমার মূল কাজ হয়ে যায়। যার ফলে খুব বেশী মন্তব্য না করা, কমেন্ট মডারেশন - এসব নীতি নিয়ে চলাটা ঠিক করি। দেখলাম কাজে দিল। নিভৃতচারীকে কেউ খুব ঘাটায় না। আমিও নিক নিয়ে আর কোন সমস্যার মুখোমুখি হইনি।
ক্যাচাল এই ব্লগের ইতিহাসের সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। প্রথম থেকে আজ পর্যন্ত অনেকেই এসেছেন গিয়েছেন, কিন্তু যা রয়েছে তা হল ক্যাচাল। তার মাঝেও অনেক ভাল লেখা এসেছে। ত্রিভুজের বিপরীত বিশ্বাসের মানুষ অমি পিয়াল। তথ্য ভিত্তিক লেখা দিতেন যা অবশ্যই প্রসংশনীয়। এ-টিমের অন্যতম হিসেবে উনার হাজারো কীর্তিকলাপ ব্যালেন্স হয়ে যেত এসব ইতিহাসভিত্তিক পোস্টের মাধ্যমে। এরকমভাবে নানা মতের মানুষদের প্লাটফর্ম হতে পারাটাই ছিল সামহোয়ারের বড় সাফল্য। এটাই আবার সামহোয়ারের চ্যালেন্জ্ঞও বটে। কারন ব্যানের অধিকাংশ ঘটনার সাথে জড়িত পক্ষ প্রতিপক্ষের রাজনীতি। আমরা যে রাজনৈতিক ভাবে কতটা অসহিষ্ণু তা এতদিন বিদেশ থাকতে থাকতে ভুলেই গিয়েছিলাম। সামহোয়ার বাংলাদেশের সার্থক প্রতিচ্ছবি হয়ে তা মনে করিয়ে দেয়।
সামহোয়ার ব্লগে অনেকেই লিখে থাকেন এবং বেশ ভাল লিখে থাকেন। আমি অনেক ইনফরমেশন এই ব্লগে এসেই প্রথম পেয়েছি। সেরকম একটি প্রিয় পোস্ট ছিল, নাহিদ মাহমুদের "লিওনার্ডো দ্য ভিঞ্চি"
(Click This Link)।শিল্পীর সমস্ত কাজ নিয়ে চমৎকার একটি কম্পাইলেশন। নাহিদের সব পোস্টই আমি মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। বেচারী ব্যান হয়ে যাওয়ায় তার লেখাগুলো এখন শুধুই স্মৃতি।
সব ভাল লেখককেই যে বিদায় দিতে হয়েছে, তা নয়। কেউ কেউ রয়ে গিয়েছেন। সেরকম আরেকজন হলেন ম্যাভেরিক ভাই। তিনিই সম্ভবত এই ব্লগের সবচেয়ে প্রতিশ্রুতিশীল লেখক। ইতিহাসের ছোয়া দিয়ে লেখা উনার পোস্টগুলো শুধু তথ্যবহুলই নয়, বরং অসম্ভব সুখপাঠ্য। কি এক আবেশে যেন পাঠকদের ধরে রাখেন। সবশেষে তিন পর্বের "ভয়ঙ্কর এক সংখ্যার জন্ম, নিষ্ঠুর এক খুনের গল্প" (Click This Link) সম্ভবত আমার ব্লগ জীবনের সবচেয়ে সেরা একটি লেখা পড়া। কাহিনীর পাশাপাশি ভাষার ছন্দে ফুটে উঠেছে পুরোনো দিনের আবহ, যা পাঠককে টান টান করে ধরে রাখে গল্প শেষ না হওয়া পর্যন্ত। ছড়াকার হিসেবে পরিচিত হলাম বিবেক সত্যির সাথে। ছড়া পড়তে আমার ভাল না লাগলেও আবিষ্কার করলাম এক প্রতিভাধর ছড়াকারকে (Click This Link)। সেও আমার সমসাময়িক ব্লগার। যদিও এখন ব্লগে নিয়মিত নয়। যেমন অনিয়মিত আরো দুই জনপ্রিয় ব্লগার ফারহান দাউদ এবং মেহরাব শাহরিয়ার।
ফিউশন ফাইভের কথা না বললেই নয়। সেলিব্রিটি ব্লগারদের তিনিও একজন। তবে যেসব লেখা তিনি লিখে থাকতেন তা অনেকগুলোই বেশ চ্যালেন্জ্ঞিং। "১০০ কিংবা ১০০০ লাশের বিনিময়ে হলেও নিরাপদ থাকুক বাংলাদেশের প্রতিটি ইঞ্চি" বা সেরকম লেখাগুলো মানুষের স্বাভাবিক বিশ্বাসের বহিপ্রকাশ হতে পারে, কিন্তু তা ন্যায় এবং বিবেচনা ভিত্তিক হতে পারে না। চ্যালেন্জ্ঞিং ব্লগিং এর কারনেই তিনিও সম্ভবত ব্যান ।
যাদের কথা বললাম তাদের বাইরেও অনেক লেখকের পোস্ট নিয়মিত পড়া হত। তায়েফ আহমেদ, ফারজানা মাহবুবা, কনা, সোহায়লা রিদওয়ন, নাজনীন১ - এদের অনেক পোস্ট শুধু পড়াই হত না, বরং নিয়মিত মন্তব্যও করতাম। হিউম্যানিট্যারিয়ান আপিল নিয়ে সোহায়লা এত চমৎকার পোস্ট দেয় যে না পড়লে বিশ্বাস হত না। তায়েফ ভাই তো মুসলিম বিজ্ঞানীদের নিয়ে মেগা সিরিজ দিয়েছেন। বলা বাহুল্য, আমি মূল পোস্টের চেয়ে উনার পোস্টের আলোচনাগুলোই বেশী এনজয় করি।
সামহোয়ার ব্লগে কিছু ব্লগারদের উদ্যোগে "অপরবাস্তব" নামে একটি সংকলন প্রকাশ হবার খবর বিভিন্ন সময় ব্লগে দেখেছি। এই সময়ে অনেকের লিংক ধরে কিছু লেখা পড়া হত। কেন যেন "অপরবাস্তব"কে সেরকম সফল মনে হয় নি। এর পেছনের মানুষেরা নিষ্ঠাবান, তবে পেশাদারিত্বের অভাব ছিল বড় প্রকট। তারপরেও এরকম উদ্যোগ প্রশংসনীয়।
তিন বছর অনেক লম্বা সময়। আমার আরো অনেক কথা হড়বড় করে বলে ফেলতে পারা উচিত। কিন্তু এতটুকু এসে দেখছি, স্মৃতি হাতড়ে আর খুব বেশী কিছু পাচ্ছি না। হয়ত বা, সাবধানে নিক বাচিয়ে চলতে গিয়ে নীরব সাক্ষী হয়ে থেকেছি বলে অনেক ঘটনার প্রতিক্রিয়া মাথায় কম গেথেছে।
জানি না এই ব্লগে কতদিন থাকব, তবে কর্তৃপক্ষ ঘাড় ধরে না তাড়িয়ে দিলে আদৌ যাব কিনা সেটা খুব সন্দেহজনক।
সে দিক দিয়ে বিচার করলে শুধু ছাগী নই, বরং একটা বেহায়াও বটে আমি।
=============================================
বি:দ্র: ফিউশন ফাইভ ব্যান বলে ভেবেছিলাম, কিন্তু আসলে তিনি ব্যান ছিলেন না। ব্যস্ত ছিলেন।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই অক্টোবর, ২০১০ ভোর ৪:৪২