একটা সত্যি ঘটনা বলেই শুরু করি।
কোরবানীর ঈদ আমরা বন্ধুরা সবাই একত্রিত হলাম। বন্ধুদের মধ্যে হিন্দু মুসলমান সবাই আছে। সবাই মিলে একত্রিত হওয়ার সুযোগ কে হাত ছাড়া করতে চায়।
সোহেল, আমিনুল, সুমন ঘোষ, আনোয়ার আর আমি। সবাই গল্প করতে করতে গেলাম হুমায়ুন স্যারের বাসায়। ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় ।তিনি আমাদের আপ্যায়ন করতে ভুললেন না । কিন্তু সমস্যা হল, সুমন কে নিয়ে ? ও তো আর গরু খেতে পারবে না।
স্যার জানেন তাই খাবারটা পরিবেশন করলেন সেই ভাবে। কিন্তু বিপত্তি বাধালেন এক আংকেল। তিনি বললেন, গোস্ত খাবে না কেন? কোরবানীর সময় একটু গরুর গোস্ত খেলে কিস্যু হয় না।
অনেক কষ্টে সেই আংকেল থেকে রক্ষা পেয়েছিলাম। যাই হোক এবার আসি মূল আলোচনায়-
আমাকে অনেকেই একথা বলেছে হিন্দু তথা অমুসলমানদের সাথে বন্ধুত্ব করা যাবে না। আমি এ কথাকে যখন কোন পাত্তাই দিলম না তখন এ আয়াতটি আমার সামনে আনা হল।
"হে মুমিনগণ. ইয়াহুদী ও খৃস্টানদের তোমরা বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তারা পরস্পরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে যে কেউ তাদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করলো সে তাদেরই একজন হবে। আল্লাহ জালিম সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালনা করেন না।" সূরা মায়েদার ৫১ নং আয়াত
এর পরই আমাকে প্রশ্ন করা হয়েছে তুমি কোরআন মান না। তবে, তুমি কিসের মুসলমান?
প্রথমে খুব কষ্ট হত এটা মানতে। আসলেই এটা হতে পারে না। তার সাথে মুসলমান কেউ না মিশলে সে বুঝবে কিভাবে মুসলমানরা কেমন?
অনেক দিন পর এর উত্তর পেলাম--
আল্লাহর এই নির্দেশ এমন সময় নাজিল হয়েছিল, তখন ছদ্মবেশী মুনাফিকরা ইহুদী-নাসারাদের সাথে ষড়যন্ত্র করছিল এবং কোন যুদ্ধ-পরিস্থিতিতে তাদের পক্ষে যোগদানের ষড়যন্ত্র করছিল
এবং কোন যুদ্ধ-পিরিস্থিতিতে তাদের পক্ষে যোগদানের ষড়যন্ত্র করছিল। মুসলমানদের যুদ্ধরত প্রতিপক্ষের সাথে সম্পর্কের নীতি হিসেবেই আল্লাহ এই আদেশ করেছেন। এই পরিস্থিতিতে এই নীতি অবশ্যই পালনীয়। এই নীতি সব সময় সব ক্ষেত্রে পালনীয় হবে না তা আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলে দিয়েছেন।
আল-কুরআনের সূরা 'মুমতাহানা'র ৯ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন-
'আল্লাহ কেবল তাদের সাথে বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করেন, তারা দীনের (বিশ্বাস ও ধর্মের ) ব্যাপারে তোমাদের সাথে কোন যুদ্ধ করেছে, তোমাদের স্বদেশ থেকে বহিষ্কার করেছে এবং তোমাদের বহিষ্কারে সাহায্য করেছে। তাদের সাথে যারা বন্ধুত্ব করে তারা তো জালিম।'
আল্লাহর এই আদেশে দেখা যাচ্ছে , মুসলমানদের ধর্ম এ বিশ্বাসের সাথে যারা যুদ্ধ করেনি, বৈরিতা করেনি এবং যুদ্ধ এ বৈরিতায় সাহায্য করেনি এবং যুদ্ধ এ বরিতায় সাহায্য করেনি, তাদের সাথে বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করা হয়নি। আর কারো সাথে এবং কোন জাতির সাথে বন্ধুত্ব এ শত্রুতাকে আল্লাহ স্থায়ী বিষয়ও করেন নি।
আল্লাহ সূরা 'মুমতাহানা'র ৭ নং আয়াতে বলেছেন, 'যাদের সাথে তোমাদের শত্রুতা রয়েছে সম্ভবত আল্লাহ তাদের ও তোমাদের মধ্যে বন্ধুত্ব সৃষ্টি করে দেবেন। আল্লাহ সর্বশক্তিমান এবং আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।'
আপনারা সবাই জানেন ,আল্লাহ দীনকে তার বান্দাদের জন্য সহজ করেছেন, কঠিন করেননি। আর আল্লাহ কুরআন নাজিল করেছেন ইহুদী নাসারাসহ সকল মানুষ এর জন্যে। কারও সাথে যুদ্ধমান পরিস্থিতি না থাকলে তার কাছে ইসলামের দাওয়াত নিয়ে যেতে হবে। সুতরাং এ ধরনের সকলের সাথে বন্ধুত্বপূর্ন বা স্বাভাবিক সম্পর্ক অবশ্যই রক্ষা করতে হবে।
তাই আমি বলি-"রাম আমার ভাই, রহিমও আমার ভাই।"
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই আগস্ট, ২০০৭ সকাল ৮:৫৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।






