কোন এক অদ্ভুত কারণে পুলকের ‘রকস্টার’ মুভি টা ভালো লাগল। শুধু ভালো না। খুবই ভালো লাগলো। কিন্তু নিজের এই ভালো লাগাটাকে তার একটুও ভালো লাগলো না। পুলক সেই পুরুষদের দলে যারা কখনোই অন্য আর কোন পুরুষের জনপ্রিয়তা সহ্য করতে পারে না। তার এই দিকটা সে ভালো মতই জানে। যখন সে স্কুলে পড়ত তখন যেসব অভিনেতা গায়ক জনপ্রিয় ছিল, তাদের প্রতি তার তেমন বিরাগ ছিল না। তখন মনে মনে ভাবত যে বড় হলে আমিও অনেক জনপ্রিয় কিছু একটা হব। কিন্তু যখন সে তথাকথিত বড় হল তখন দেখা গেলো যে মোটেও তার জনপ্রিয় হওয়া হচ্ছে না। তাই সে যখন দেখত যে তারই বয়সী ছেলেগুলা দারুণ নামকরা হয়ে উঠছে। মেয়েরা এদের জন্য পাগল হয়ে যাচ্ছে। তখন তার অসহ্য বোধ হত। একধরনের অসহায়তা কাজ করত। সে জীবনে কিছুই হতে পারলো না এই ভেবে তার মনে খুব দুঃখ হত। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে সম্পর্কের ক্ষেত্রেও তার এই ইগো যথেষ্ট সমস্যা তৈরি করেছে। দেখা গেলো, তার বান্ধবী জন নামে কোন এক ব্যান্ড ভোকাল এর জন্য পাগল। ও কোন কনসার্ট এ আসলে ওই মেয়ে অবশ্যই যেত। সাথে যেতে হত পুলককে। যতবার সে জন-কে দেখত ততবার সে জ্বলে-পুড়ে মরত। কারণ তার সেই তথাকথিত ‘ইয়ো’ হওয়ার ক্ষমতা ছিল না। সে একজন সাধারণ মানুষ। তার নিজের জানামতে তার মধ্যে অসাধারণ কিছু সে খুঁজে পেত না। তো সেই মেয়ে দিনে অন্তত ৪০-৫০ বার জনের নাম জপত। এতে তাঁদের প্রতদিনই ঝগড়া ঝাটি লেগেই থাকত।
যাই হোক! পুলকের ঈর্ষা সেইসব মানুষদের ক্ষেত্রেই বেশী কাজ করে যাদের সে খুব বেশী পছন্দ করে। তাহলে এই রীতার বেলায় এরকম হওয়ার কারণ কি? মেয়েটাকে তো সে ঠিকমত চেনে না। তাছাড়া এই মেয়ের সাথে কথা বলে প্রথম দিনই সে বুঝিয়ে দিয়েছে যে সে মোটেও তাকে বিয়ে করতে রাজি না। তাহলে নিজের মধ্যে এরকম ঘাপলা থাকার কারণ কি? মেয়েটা তার প্রতি কিছুটা আগ্রহ দেখিয়েছে। এটাই কি অবচেতন মনে এইভাবে কাজ করছে?
পুলক দেখতে খারাপ নয়। অনেকে তাকে সুপুরুষই বলবে। নারীমহলে তাকে সুদর্শন হিসেবেই অভিহিত করা হয়। কিন্তু তারপরো সেরকম ঘন ঘন নারীর আগমন তার জীবনে ঘটেনি। এর অন্যতম কারণ পুলক নারীদের কখনো আগ বাড়িয়ে পাত্তা দিত না। এমন না যে তার নারীসঙ্গ কাম্য না। তবে তার পৌরুষ তাকে চিরাচরিত ছ্যাবলা পুরুষ হতে নিরুৎসাহিত করত। সে দেখত যে ছেলেগুলা কিভাবে মেয়েগুলার পিছনে ঘোরে। আর মেয়েগুলা কিভাবে এদের বিভিন্নভাবে অপমান করে। তাও ছেলেগুলার কোন থামাথামি নাই। তারপর কোন এক সময় হয়তো কোন মেয়ে তাঁদের পিছনে ঘুরা ছেলেদের মধ্যে থেকে একজনকে প্রেমিক উপাধি দান করে। এরকম অপমানজনক পদ্ধতিতে কোন নারীর প্রেমিক হওয়া তার ধাতে সয়নি। তাই সে ঠিক করেছিল যে মেয়েদের যখন এত দেমাগ। তারই বা কম কিসে। সেও কাউকে পাত্তা দিবে না। সে না হয় দেখতে অত সুন্দর না। অপমানিত হওয়ার ভয়ে সে কোন মেয়েকেই পাত্তা দিত না। এতে মেয়েরা অনেকে তার প্রতি আগ্রহী থাকলেও ভয়ে তার দিকে কেউ অগ্রসর হত না। কারণ পুলক দেখতে সুপুরুষ হলেও চার্মিং সুপুরুষ নয়। তার চেহারার মধ্যে গাম্ভীর্য বেশী। যদিও সে সেরকম গম্ভীর নয়। মন মেজাজ ভালো থাকলে সে যথেষ্ট ফুর্তি করতে পারে।
তো শুক্রবার বিকেলে বসে বসে সে রীতার প্রিয় মুভি রকস্টার দেখল। রানবির নামক ছেলেটা এত ভাল অভিনয় করলো যে তার জ্বলুনি বেড়ে গেলো। এবং তার এই জ্বলুনি কেন বাড়ছে এরও কোন যৌক্তিকতা খুঁজে না পেয়ে তার মেজাজ আরও খারাপ হচ্ছে।
সন্ধ্যায় ফেসবুক এ। পুলক অফলাইন হয়ে আছে। সে বেশিরভাগ সময় অফলাইন এই থাকে। বেশীরভাগ মানুষের সাথেই কথা বলে সে মজা পায় না। প্রথম প্রথম ফেসবুকে সে যথেষ্ট গল্প করত। অচেনা মেয়েদের ফ্রেন্ড রিকুয়েস্টও দিত। ফেসবুক ছিল তার সেই জগত যেখানে সে সেই সব করত যা সত্যিকারের জীবনে করতে পারত না। এভাবে তার অনেক মেয়ে বন্ধু হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে থেকেই একজনের সাথে তার তথাকথিত প্রেম হয়েছিল। সেই প্রেম মোটেও সুখকর ছিল না। এরপর থেকে আর সে ফেসবুকের জগত আর সত্যিকারের জগতে তফাৎ রাখে না। যাই হোক! পুলক মাঝে মাঝে অনলাইন হচ্ছে এই দেখতে যে রীতা অনলাইন কিনা! কিছুক্ষণ এভাবে চেক করার পর সে ক্ষান্ত দিল। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই ইনবক্স এ মেসেজ আসল।
-আছেন?
-হুম।
-কী খবর?
-ভাল
-রকস্টার দেখেছেন?
-হুম! দেখলাম।
- কেমন লাগলো? ভালো না? রানবির দারুণ না?
- আছে। চলে আর কি! এমন কিছু না। It was OK.
-OK? কি বলেন?
-হুম। সেরকম আহামরি কিছু মনে হয়নি আর কি। ছেলেটা ভাল করেছে।
-শুধু ভালো না। অনেক ভাল করেছে। আপনি আসলে ভালো বলতে জানেন না। আমার সব ফ্রেন্ড ওর জন্য পাগল। আর আপনি বলেন OK!!!
রীতা এর কথা পড়ে পুলকের ভিতরে মোটামুটি ছোটখাটো বিস্ফোরণ ঘটল। সে জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে কীবোর্ড এর উপর ঝড় বইয়ে দিল।
- শুনুন!! প্রত্যেক মানুষের নিজস্ব পছন্দ অপছন্দ আছে। আপনার ভালো লাগলেই তা আমার ভালো লাগতে হবে এমন কোন কথা আছে? আমার ভালো নাই লাগতে পারে। ইন ফ্যাক্ট!! ওই ফজলি আমের মত চেহারার নায়ককে আমার একটুও পছন্দ না। আপনারা মেয়েরা মাতামাতি করতে পারেন খুব সহজে। একটা জিনিসকে পচায়ে না ফেলা পর্যন্ত আপনাদের কোন শান্তি নাই। প্রথম দিন থেকে রানবির রানবির করে কানের পোকাটা নাড়ায়ে ফেলতেসেন। জীবন মানেই আপনাদের কাছে সিনেমা আর ন্যাকামি। ন্যাকামি ছাড়া এক পা চলতে পারেন না আপনারা।
পুলকের এরকম রেস্পন্সে তো রীতা বেশ হতভম্ব হলো। লোকটা দেখি আস্ত পাগল। পুলক তখনো লিখে যাচ্ছে।
রীতা লিখল,
-আরে!! আপনি এরকম করছেন কেন?
- এরকম করছি কেন মানে? How dare you যে আপনি আমাকে বলেন আমি ভালো বলতে জানি না!! যেটা ভালো সেটা এম্নিতেই মানুষ ভালো বলবে। এখন আপনার ভালো লাগার উপর ভিত্তি করে আমাকে ভালো বলতে হবে?
-আশ্চর্য মানুষ তো আপনি!! আপনার মত মানুষ আমি জীবনে দেখিনি।
পুলক আরো ফুঁসতে লাগলো। তার রাগ এখন যে পর্যায়ে সেখানে শুধু লিখে তা বোঝান যাবে না। সে শুধু লিখল,
-সরি! আপনার সাথে আর কথা বলতে চাচ্ছি না।
এই লিখে সে তক্ষুনি রীতার প্রোফাইল এ গিয়ে ওকে ফ্রেন্ড লিস্ট থেকে বাদ দিল। কম্পিউটার বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে লম্বা শ্বাস নিল। কত বড় সাহস তাকে কথা শুনায়!! এই মেয়ের সাথে সে জীবনে কথা বলবে না। একে আসলে ব্লক করে দেওয়া উচিৎ ছিল। আজকে আর কম্পিউটার খুলতে ইচ্ছা করছে না। কালকে সকালে উঠেই একে ব্লক করতে হবে। যত্তসব!!!
(চলতে পারে)
আগের পর্বের লিঙ্ক
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ২:৪৮