somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অদ্ভুত প্রেমের গল্প (পর্ব ৯)

৩১ শে মে, ২০১৩ রাত ৯:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রীতা মিতার মা নাজমা হক কড়া মহিলা। বিশেষ করে মেয়েদের বেলাতে কখনোই খুব একটা ছাড় দেননা। বড় মেয়ে রীতাকে তিনি খুবই কড়া শাসনে বড় করেছেন। মিতাকেও একইভাবে করার চেষ্টা করছেন কিন্তু কাজ হচ্ছে না। দুই বোন দুই প্রান্তের। বড়জন কখনোই তাঁর অবাধ্য হয়নি এবং তিনি জানেন হবেও না। খালি বিয়েটা নিয়েই একটু চিন্তার মধ্যে আছেন তিনি। সময়মত বিয়েটা হয়ে গেলে ভালো হয়। তবে বিয়ে তো আর ছেলেখেলা না। ভেবে চিন্তে দিতে হবে। আরেকটু হলেই রীতাকে ভুল জায়গায় বিয়ে দেওয়ার বন্দোবস্ত করে ফেলেছিলেন। না ছেলে দেখতে শুনতে খারাপ ছিল না। ছেলের মায়ের সাথে কথা বলেও তাঁর খারাপ লাগেনি। কিন্তু পরে তিনি জানতে পেরেছেন যে ছেলের বাবা মা ডিভোর্সড। আর ছেলের বাবা নাকি মহা অত্যাচারী ছিল। যে ছেলের বাবা এমন সে ছেলেও যে এমন হবে এটা তো স্বাভাবিক। ভাগ্যিস এই পক্ষের সাথে আর কথা বেশিদূর আগায়নি। তনুজার কাণ্ডজ্ঞান দেখে তিনি খুবই মর্মাহত। তনুজা রীতার মায়ের বান্ধবী। তনুজা কিভাবে জেনে শুনে তাঁর মেয়ের জন্য এরকম একটা বাজে সম্পর্ক নিয়ে আসলো। জেনে শুনে তিনি মেয়েকে কি হাত পা বেঁধে পানিতে ফেলে দিবে? যাক রীতার যে ছেলে পছন্দ হয়নি এটাই শান্তি।

রীতার বাবা সালাম সাহেব। উনার উপরও নাজমা খুবই বিরক্ত। মেয়েকে একদম মুক্তমনা হওয়াতে চায়। মেয়ের সিদ্ধান্তই শেষ সিদ্ধান্ত। হুহ!!! বাচ্চা মেয়ে। ওর আবার কিসের সিদ্ধান্ত। এই দুনিয়া শুধু আবেগে চলে না। বাবা মা থাকে কি জন্য! বাচ্চাদের জীবন যেন সঠিক পথে থাকে। তারা যেন শান্তিতে থাকে। এই জন্যেই তো!! তাঁদের সময়েও বাবা মা রা তাই করেছিলেন। কই তারা তো খারাপ নেই। আর বেশী সময় নেই। জলদি মেয়ের বিয়ে দিয়ে দেবেন। মেয়ে তাঁর দেখতে ভালো। খালি গায়ের রঙটা আরেকটু ফর্সা হলে ভাল হত। তাঁর নিজের গায়ের রঙ ধবধবা ফর্সা। এত বছরেও গায়ের রঙ নষ্ট হয়নি। রীতা তাঁর বাবার দিকের গায়ের রঙ পেয়েছে। আবার ছোট মেয়ে মিতা আবার বেশী ফর্সা। এই মেয়ের বেলায় যে কি হবে খোদা তালাই ভালো জানেন!! এর মতি গতি সুবিধার না। ক্লাসে এইটে পড়ে। অথচ এখনই ছেলেবাজ হয়ে যাচ্ছে। রীতিমত পাহারা দিয়ে রাখতে হয় মেয়েকে। স্কুল এর বাইরেই ছেলেগুলা দাঁড়িয়ে থাকে। আচ্ছা!! এদের কি সারাদিন কোন কাজ থাকে না!! এদের বাবা-মা গুলা এদের শাসন করে না কেন? সারাদিন মেয়েদের স্কুল এর সামনে দাঁড়ানো। আশ্চর্য!!!এদিক দিয়ে বড় মেয়ের বেলায় শান্তি পেয়েছেন তিনি। বড় মেয়ে রীতা বরাবরই লক্ষী। ইউনিভার্সিটি তেও কারো সাথে তাঁর কোন সম্পর্ক নেই। প্রথম দিকে মেয়েকে একটু নজরে রাখত। মেয়ে বড় হয়েছে। ছোটবেলায় যেরকম ছিল বড়বেলাতেও তেমনই থাকবে ভাবা ঠিক না। কিন্তু রীতা কোন ছেলের প্রতি আগ্রহী হয়নি। কিছু ছেলে সহপাঠী আছে। কিন্তু তাঁদের দেখে সে বুঝেছে যে সেরকম কিছু না। ছেলেদের দিক থেকে থাকলেও মেয়ে যে এদের ওইরকমভাবে পছন্দ করে না তা বোঝা যেত।

‘মা!!! তোমার ফোন। তনুজা আন্টি।“ – রীতার গলা ভেসে এল পাশের ঘর থেকে।
নাজমা শোবার ঘরে বসে ছিলেন। উঠে দাঁড়ালেন। মনে মনে তনুজার সাথে ঝগড়া করার জন্য তৈরি হচ্ছেন। কি যেন ছেলেটার নাম!!! হ্যাঁ! পুলক আহমেদ। এরকম একটা ছেলের সাথে তাঁর মেয়ের সম্পর্কের কথা ভাবলো কি করে তনুজা?

পাশের রুমে রীতা তখন পুলকের সাথে ফেসবুক এ চ্যাট করছে। পুলক তাঁকে কিসব জানি লিখছে কিন্তু সে কিছুই বুঝতে পারছে না।
-ATB
-মানে?
-মানে কিছু না। এমনি বললাম আর কি।
-এমনি বললাম আর কি মানে কি!! ঠিক করে বল পুলক।
-আরে বললাম না এমনি। তুমি কিন্তু বেশী কথা বল।
-ওকে যাও কথা নাই বলি তাহলে।
-ওকে!!
-আচ্ছা থাক। রাগার মত কিছু হয় নাই। কিন্তু কথাটার মানে তো আমাকে জানতে হবে।
-না জানতে হবে না।
-হবে।
-হবে না।
-হবেই।
-আচ্ছা আমার খুব ঘুম পাচ্ছে। অফিস এ কালকে অনেক কাজ। গেলাম।
-ওকে!! অফিস এর কথা বলে এখন পাড় পাচ্ছ। কিন্তু আমাকে এটা জানতেই হবে পুলক সাহেব।
-বাই

মনটা খচ খচ করছে। পুলক কি লিখল এটা। এখন আবার মানে বলতে চাচ্ছে না। সে তখনি পুলককে এসএমএস করল।“পুলক! আমার ঘুম আসবেনা এটা না জানলে। পরে আমার খুব শরীর খারাপ করবে।“ এটায় কাজ হওয়ার কথা। পুলকের সাথে একবার ঝগড়া করে রাতে তাঁর খুব শ্বাসকষ্ট হয়েছিল। পুলক এটা জেনে এখন খুব ভয়ে থাকে। সহজে ঝগড়া করে না।

এসএমএস এর রিপ্লাই আসলো। “this is blackmailing rita!!! কথাটা এমন কিছু না। মানে আমার এক বন্ধু তাঁর বান্ধবীকে এরকম বলেছিল। আমিও বলে দেখলাম আর কি। সিরিয়াস কিছু না।“
-উফফ!! ভনিতা ছাড়ো। এটার মানে কি!!
-শুনো। মানে বলছি। তাঁর আগে বলে রাখি যে এটা কিন্তু আমার কথা না। A- আমি T- তোমাকে B- ভালোবাসি। এরকম করে আর কি ওই ফ্রেন্ড বলেছিল ওর বান্ধবীকে। আমি দেখলাম যে তুমি বুঝো কিনা!!

রীতার শরীরটা ঝিম ঝিম করছে। সে উঠে দাঁড়িয়ে বারান্দা থেকে ঘুরে আসলো। পুরা বাসাটা একবার হেঁটে আসলো। তাঁর মা ফোনে কার সাথে জানি ঝগড়া করছে। কিন্তু কথাগুলা তাঁর কানে ঢুকল না। তাঁর শুধু মাথায় ঘুরছে ATB। আবার বারান্দায় গিয়ে গ্রিল ধরে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলো। ঠিক কি করলে যে ওর মনের অবস্থাটা স্থির হবে সে বুঝতে পারছে না। ইস সে যদি এখন পুলকের হাতটা ধরতে পারত!! অল্প একটু সময়ের জন্য হলেও। তাহলে সে আর কিচ্ছু চাইতো না।
ঘরে এসে রীতা মোবাইল টা হাতে নিল। পুলককে এসএমএস করলো।
- পুলক। ATKB। এটা কিন্তু আমার কথা।

(চলতে পারে)
আগের পর্বের লিঙ্ক
http://www.somewhereinblog.net/blog/j_suhan/29836343
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মে, ২০১৭ রাত ১০:২৬
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×