somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জীবন অফিস বাসা-৩

২৭ শে এপ্রিল, ২০১৭ রাত ৩:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ঢাকায় বাসা মানে গলি-ঘুপচি। বাচ্চাদের খেলার জায়গা নেই। একটু শান্তি মত হেঁটে বেড়ানোর সুযোগ নেই। বিল্ডিং এর সাথে বিল্ডিং এক সারে হয়ে গেছে, হয়ে যাচ্ছে। একটু বড়লোক হলে বসুন্ধরা, উত্তরা, পূর্বাচল ওদিকে একটু খোলামেলাভাবে থাকা যায়। কিন্তু মধ্যবিত্তের জন্য মাথা গোঁজার জায়গা পাওয়া মানেই অনেক। শফিকরাও সেরকম বাসাতেই থাকে। গায়ে গায়ে লাগানো সব বাসা। এক বাসার কাশি, হাঁচি আরেক বাসার মানুষ শুনতে পায়। এই বাসার ছোট্ট, একদমই ছোট্ট একটা বারান্দা আছে। সেটা নাইমার খুব পছন্দ। একা সময়টা এখানেই কাটায়। আরেকটা মজা হয় এই বারান্দায়। এই বারান্দার সাথেই লাগানো আরেক বাসার বারান্দা। পাশের বিল্ডিং এর। প্রায়ই ঐ বাসার তিন-চার বছরের বাচ্চা ছেলেটা আসে। সে আসে একটু লাফায়। নিজের মনে খেলে। ঝোলে। নাইমা দেখে। দেখতেই থাকে। ছেলেটা যা করে তাই সে খুব আগ্রহ নিয়ে দেখে। তাঁর খুব ভালো লাগে। কখনো হাসে। ছেলেটার সাথে কথা বলার চেষ্টা করে দেখেছে সে। ছেলেটা কথা বলে না। সে নিজের মনে গান গায়। কিন্তু কথা বলে না। ছেলেটাকে দেখতে দেখতে তাঁর মনে হয় তাঁরও এরকম একটা বাবু দরকার। যাকে নিয়ে সে সারাদিন ব্যস্ত থাকবে। এমনিতেও যে সে খুব একা বোধ করে তা কিন্তু না। তাঁর আশেপাশে কয়েকজন তাঁর মত গৃহিণী আছে। তাঁরা মাঝে মাঝে বাসায় আসে গল্প করতে। গল্প কম। শাশুড়ির বদনামই বেশী। নাইমা শাশুড়ির সাথে ওভাবে টানা থাকেনি বলে এই গৃহিণীদের মত তাঁর অত তিক্ত অভিজ্ঞতা নেই। তাও সে শোনে। পরনিন্দা পরচর্চা নেশার মত। শুনতে খারাপ লাগে না। মাঝে মাঝে ওঁদের কথা শুনতে শুনতে সে অবচেতনভাবে নিজেই ওঁদের কথা শুনতে শুনতে উত্তেজিত হয়ে যায়।

নীলা ভাবী বলে- ভাবী, আমার শাশুড়ি উনার ছেলে অফিস থেকে আসলে কয়েকবার আমার খোঁজ নিতে আসে। বউমা খেয়েছ!!! বউমা হেগেছ!! আর ছেলে না থাকলে খাওয়ার খোঁটা, বসার খোঁটা, ফোনের খোঁটা। সরাসরি, ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কথা শোনায়। ভাবী!! আমি আমার বাবার খুব আদরের মেয়ে। কখনো আমাকে ‘মা’ ছাড়া কথা বলেনি। সেই আমাকে……।

বলতে বলতে নীলা ভাবীর গলা ভারী হয়ে আসে।

আশেপাশের আরো ভাবীরা বলে- কাঁদবেন না ভাবী। আপনি তো তাও ভালো। ভাইকে কিছু বলেন না। আমি তো অফিস থেকে বাসায় ফিরলেই শুরু করি। তোমার মা আমাকে কথা শুনাবে। আর আমি লক্ষী বউয়ের মত শুধু শুনে যাব। তা হবে না। আমাকে অশান্তি করলে কাউকে শান্তিতে থাকতে দেব না। রাত হলে তো বেটা মানুষের রঙ তো কম দেখি না!!!

চাকরিজীবি মহিলারাও আছে আশেপাশে। তাঁরাও আসে মাঝে মাঝে। মজার কথা তাঁরাও যে তাঁদের শাশুড়ি নিয়ে খুশি তা কিন্তু না। তবে তারা চাকরির সুবাদে সংসার থেকে কিছুক্ষনের মুক্তি পায় এতেই তাঁরা খুশি। যদিও এ নিয়েও কম অশান্তি হয় না।

শাশুড়ি বলে- ছেলে বিয়ে করেছে চাকুরিজীবি মেয়ে। তাঁদের আর বাসায় পাওয়া যাবে কেন!!! বাড়ির বুয়া তো আমি। আমিই ঝাড়মোছ করি।

এসব গল্প শোনে আর কেমন দিশেহারা লাগে নাইমার। তাঁরও কি এরকম হত শাশুড়ির সাথে থাকলে!!

উদিতা বলে- দেখ!!! দোষটা সাইকোলজির। মায়েরা ছেলেদের সারাজীবন কোলে রাখতে চান। তাই বউ আসার আগেই তাঁকে প্রতিদ্বন্দ্বী বানিয়ে ফেলে। এখন সমাজ সংসার সবাই ধরেই নিয়েছে যে এটা এখন বউয়ের কর্তব্য শাশুড়ির মন জয় করা। যে এই কর্তব্য পালন করে সে পাঁচ বছর পর ভালো বউয়ের স্বীকৃতি পায়। কারণ শাশুড়িদের কাছে বউদের ভালোত্বও অসহ্য বোধ হয়। আর যদি সে এই অপমানজনক উপায়ে ভালো হতে না চায়। তবেই সংসারে অশান্তি। এখানে ছেলেদের আসলে তেমন কিছু করার নেই। They are vicim here.

নাইমা কিছুটা মানে। কিছুটা মানতে পারে না। কিছুটা বুঝতে পারে। কিছুটা পারে না। তাতে তাঁর জীবনে তেমন কোন উথাল পাথাল হয় না।


মজার কথা হচ্ছে অফিসে শফিককেও এ ধরনের কথা শুনতে হয়। একদম একই ধরনের কথা। যা নাইমা বাসায় শোনে। তাঁরই সেইম ভার্সন। কারণ অফিসে মেয়েরা মেয়েরা এসব সংসারী আলাপ করে। সে আলাপে তিক্ততাই ঝরে বেশী। সবদিন মনের হাহাকার তিতা থাকে না। মাঝে মাঝে অনেক বিষণ্ণতাও তাঁদের মনে কাজ করে। তখন তাঁরা শ্রোতা চায়। পুরুষের চেয়ে ভালো শ্রোতা তখন হয় না।

সমস্যাগুলো আনকমন না। ঘুরে ফিরে একই। বেশীরভাগেরই স্বামী পছন্দ করে না স্ত্রীদের চাকরি করা। এদের মধ্যে অনেকেই মা। কেউ সদ্য মা। কেউ তিন চার বয়সী বাচ্চার মা। বাচ্চার অবহেলা বাচ্চার বাবারা কোনভাবেই মানতে চায় না। মায়েদের কথা- এই অবহেলা যতটা না আছে তাঁর চেয়ে বেশী প্রকট করে দেখানো হয় তাঁদেরকে দমিয়ে রাখার জন্য। আরেক দলের সমস্যা তাঁরা চাকরি করে নিজের বাবা-মা কে সাহায্য করতে চায়। তাঁদের বাবা মা তাঁদের পড়িয়েছে। মানুষ করেছে। তাঁদের কোন দায়িত্ব কর্তব্যবোধ নেই!!! শুধু পুরুষদেরই এর দায়ভার!!

শফিক এসব শোনে। কিন্ত কখনোই যুতসই কোন প্রত্যুত্তর সে দিতে পারে না। তাঁর ভিতরে ভিতরে ঐ সময় নিজেকে খুব অসহায় লাগে। কিন্তু শুনতে আবার মজাও লাগে। পরনিন্দা পরচর্চা যে শুধু নারীরই প্রিয় তা কিন্তু না। তবে নারীদের আগ্রহ মাত্রাতিরিক্ত বেশী।

তবে সাংসারিক কোন সমস্যা নিয়ে পুরুষরা তেমন আলোচনা করে না। হয়তো তাঁদের অহং এ বাঁধে।

কামাল তো আরো না। সে অফিস নিয়েই মজায় থাকে। কাদের স্যার ম্যানেজার হওয়াতে খেলা কিছুটা ওলট পালট হয়েছে। পালটি খাওয়া চাটুকার দল আবারো তাঁর কাছে ফেরত এসেছে। কাদের স্যারও তাঁদের বরণ করে নিল। চাটুকারদের জগতে লজ্জা বলে কিছু থাকতে নেই। আর এদের কাদের স্যারও ভালোমত চেনে। তিনি নিজেও এই সকল স্টেজ পাড় করেই ওপরে উঠেছেন। এসব তাঁর কাছে নতুন কিছু তো নয়।

সমস্যাটা হয়েছে নীলা ম্যাডামের বেশী। কাদের স্যার অনেকদিন তাঁর অধস্তন হিসেবে কাজ করেছে। ব্যক্তিগত প্রভাব খাটিয়ে তিনি নীলা ম্যাডামকে ডিঙ্গিয়ে গেছেন। তিনি এতদিনের রাগ ক্ষোভ সব উজাড় করে দিলেন নীলা ম্যাডামের ওপর। কর্পোরেট রাগ ক্ষোভ সরাসরি দেখানো হয় না। পরিস্থিতি তৈরি করে দেখাতে হয়। পরিস্থিতি এরকম অনেক তৈরি করলেন কাদের স্যার।

পাবলিক মিটিং-এ জুনিয়রদের সামনে তাঁকে হেয় প্রতিপন্ন করা। যেসব প্রজেক্ট বেশ গুরুত্ববহ সেগুলো বেশীরভাগই নীলা ম্যাডামের দায়িত্বে ছিল। সেগুলো ইচ্ছা করেই নীলা ম্যাডামের থেকে নিয়ে তাঁর অনেক জুনিয়র আইরিন-কে দিল। যা ছিল খুবই অপমানজনক রীনা ম্যাডামের জন্য। আর পরিস্থিতি খারাপ হলে তুচ্ছ মানুষও দাপট দেখায়। অফিস জায়গাটা খুব নিষ্ঠুর জায়গা। এখানে মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্ক হয় না। হয় চেয়ারের সাথে। তাঁর অবস্থানের সাথে। অবস্থান বদল। ব্যবহার বদল। অফিসের মানুষরা এতই চশমখোর। কারণ অফিসের বাইরে কিছুটা মানবীয় সম্পর্ক মানুষের সাথে মানুষের থাকে। কিন্তু অফিসের ভিতরে পুরোটাই সাজানো। মেকি। প্রত্যেকটা হাসি, প্রত্যেকটা অঙ্গভঙ্গি, প্রত্যেকটা কোলাকুলি। আত্মাহীন মানুষেরা চাইলেও হয়তো নিজের কাছে সৎ থাকতে পারে না।

আইরিনের ব্যবহার নীলা ম্যাডামের প্রতি আমূল বদলে গেল। শুধু আইরিনের না। আরো অনেকেরই। তবে আইরিনেরটা প্রকট। সে সকলের চোখে আকর্ষণীয়। পুরুষরা তাঁর স্তাবক। স্বয়ং ম্যানেজার স্যার তাঁকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিচ্ছেন। স্বাভাবিকভাবেই তাঁর প্রগলভতা এখন শুধু ম্যানেজার স্যারের জন্য। আগে যেমন সে সবার টেবিলেই একটু ঝুঁকে ঝুঁকে কথা বলে আসত। বার বার সিল্কি চুলগুলোতে হাত বোলাত। দু হাত ওপরে তুলে খোঁপা বাঁধত। এখন সে আর তা সর্ব সাধারণের জন্য করে না। অন্য মহিলাদের শাপ শাপান্ত তাঁর প্রতি আগের মতই আছে। তবে তাতে আইরিনের ওপর কোন বজ্রপাত হয়নি।

এইবার কামাল হাসল না।

পর্ব ১ Click This Link পর্ব ২ Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মে, ২০১৭ সকাল ১০:৪৩
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×