somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লাখ টাকার মেয়ে

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ বিকাল ৫:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কোথা থেকে যে কি করবে ভেবেই পাচ্ছে না মোমেনা, রাতে মনুর বাবা যখন জানালো ব্যাপারটা অকূলপাথারে পড়ার মতো অবস্হা হলো ওর। রতন-মোমেনার সংসারে আল্লাহ একি বিপদ দিলো। এমনিতেই অভাবের কারনে বড়বাচ্চা দু'টাকে গ্রামের বাড়ি রাখে, টুকটাক কাজ করে কোনমতে চলে যেত দিন, কেন যে এই পথে এলো ....
সোজা কথায় দালালি, স্বল্প আয়ের লোকদের কাছ থেকে কম হারে মুনাফার বিনিময়ে টাকা নিয়ে একদানে বেশি করে টাকা কোম্পানীর স্যারকে দিয়ে মাঝথেকে সহজেই ভালো মুনাফা কামিয়ে নেয়া। কষ্ট শুধু এতটুকুই, যাদের কাছ থেকে টাকা নেয়া হয়, তাদের সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দেয়া যেন প্রতিমাসে মুনাফার টাকা না তুলে নেয়, এই অল্পক'টা টাকা আর কিইবা উপকারে আসবে, জমুক না কিছু, একবারে মোটাদানে টাকা তোলাটাই ভালো। বেশ কাজে আসে এই বুঝানোটা। ঐ বাবুর্চীর বৌটাই শুধু টাকা তুলে নেয় প্রতিমাসে, নয়তো গার্মেন্টসের মেয়েগুলো, ভ্যানওয়ালাদের বৌদু'টা, পিঠাওয়ালা .... ভালোই বুঝাতে পারে ওদের। এমনকি এই বাড়িওলীও টাকা খাটায় রতনের কাছে, রতন না ঠিক বলা যায় মোমেনার কথায়ই আসে টাকা...

সপ্তাহখানেক যাবতই রতনের মনমেজাজ বুঝতে পারছে না, কিছু জিগ্গেস করলে ঠিকমতো উত্তর দেয়না। মনুটারও শরীর তেমন ভালো না, চার বছরের প্রায় হলো মেয়েটা কিন্তু দেখতে আরো ছোট লাগে, জ্বরজারি আছে লেগেই। আজ বাবুর্চীর বৌ ওর পাওনা চেয়ে গেলো, মনুর বাবাকে জানাতেই ও খবরটা দিলো। ঐ টাকা খাটানো কোম্পানীর স্যারই গায়েব হয়ে গেছে সাথে অনেকের টাকাও, শুনছে বিদেশে চলে গেছে বৌবাচ্চা নিয়ে। আকাশপাতাল উলটানো এই খবরে মোমেনা চোখে অন্ধকার দেখছে, ঐলোকতো বিদেশে পালিয়ে বাচঁলো, মেরে রেখে গেলো রতন-মোমেনার মতো লোকদের যারা না পারবে টাকা শোধ দিতে, না পারবে পালাতে। মানুষ রীতিমতো ছিড়ে ফেলবে ওদের, টাকা না পেলে। সারারাত ভেবে সিদ্ধান্ত নিলো দু'জন মিলে।

সকালে বাড়িওলীকে সব খুলে বললো, মহিলা রাগে চিৎকার করে লোক জড়ো করলো। যতই বুঝায় যে গ্রামের বাড়ি গিয়ে জমি বেচেই সবার টাকা ফেরত দিবে ততই আরো চেচাঁয়। এরওর তার সব্বার চেচাঁমেচিতে পুরো পাড়া সরগরম। হঠাৎ কিছু না ভেবেই রতন বলে উঠে, - "এই লন আমার কোলের মাইয়াটা থাহুক আপনেদের কাছে, জমি বেইচ্যা টাকা দিয়াই মাইয়া নিমু। অখন আপনেরাই বুজেন, আমারে কাটলেও টাকা আসবো না, কিন্তুক যাইতে দিলে একটা উপায় তো করমুই করমু।"

নির্বাক মোমেনা স্বামীর হাত ধরে পিছনে ফেলে রাখা মনুর পানে তাকাতে তাকাতে এগিয়ে যায় সামনের দিকে, মেয়ে তার দিব্যি বসে খেলতে থাকে।



এত্তোবড় ছিলে যাওয়া গালটায় অসুধ লাগাতে লাগাতে গল্পটা বলছিলো শিউলির মা, পাড়ায় নতুন আসা হানিফের বৌকে। অসুধ লাগানো শেষ হতেই কান মুচরে বললো, - "এমনিতেই থলকূল না থাকা মাইয়া, বাপমার হদিশ নাই, তার উপর যদি গাল কাইট্যা বইসা থাকিস বিয়া অইবো তোর? "

৭/৮ বছরের মনু যদিও গল্পটা শুনছিলো, তেমন কিছুই আসে যায় না ওর তাতে। মা-বাবা, তাদের আদর কিছুই টানে না ওকে। ওর মাথায় এখন ঘুরছে পাশের বাড়ির কাজ শেষ করতে হবে তাড়াতাড়ি নাহলে বাড়িওলী খালা বকবে।
খারাপ কাটে না ওর দিন, তবে হাপিয়ে উঠে একটু। এইবাড়ির কাজ শেষ করে পাশের বাড়ির কাজটা শেষ করতে করতে আলসেমি চলে আসে। মিনা কার্টুনটা দেখতে না পাবার জন্য কষ্ট লাগে বেশি। না করেও উপায় নাই মাস শেষে ওরা ২৫০ টাকা দেয় খালার হাতে। এখন কিছুটা হলেও কম শুনতে হচ্ছে আসতে যেতে - "লাক ট্যাকার মাইয়া আমার তুই, আজীবন খাটলেও শুধবো না ঐ ট্যাকা, এর উপর গুমুত ঘাইটা বড় করতাছি, খাও খরচের কতা নাই কইলাম।"

সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:১৮
৩৫টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×