চন্দ্রদ্বীপের দুর্গাসাগর
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
প্রাচ্যের ভেনিস নামে খ্যাত আজকের বরিশালের পূর্বনাম চন্দ্রদ্বীপ। সে আমলে চন্দ্রদ্বীপের রাজধানী ছিল মাধবপাশায়। চন্দ্রদ্বীপের পালবংশের ইতিহাস থাকলেও সেখানে রাজবাড়ীর কোনো অস্তিত্ব নেই, এমনকি নেই কোনো ধ্বংসাবশেষও। একমাত্র দুর্গাসাগর দিঘিই টিকে আছে কালের সাক্ষী হয়ে।
দেশের অনেক রাজবাড়ীটিকে আছে, আছে রাজার দিঘিও। কিন্তু দুর্গাসাগর দিঘির চমৎকার প্রাকৃতিক পরিবেশের কারণে বর্তমানে এটি আকর্ষণীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন শত শতমানুষ এখানে আসে শুধু এ দিঘিটি দেখতে। শুধু চোখের প্রশান্তিই নয়, বরং জলযেমন তৃষ্ণা নিবারণ করে, এ দিঘিটিও মানুষের মনে এক ধরনের প্রশান্তি আনে। তাই অনেকেই বার বার ঘুরতে আসেন এখানে।
দিঘির চারপাশে বাঁধানো রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে বিনোদনের নতুন মাত্রা খুঁজে পায় ইটের শহরে বাস করা নগরবাসী। আর চিরচেনা গ্রামের বাসিন্দাদের কাছে এ দিঘি যেন গ্রামীণ নিঃসর্গে নিজেকেনতুন করে খুঁজে পাওয়া। চারপাশে বৃক্ষঘেরা স্বচ্ছ জলের এ দিঘির উত্তর পাশেআছে একটি বাঁধানো বড় ঘাট। অনেকটা এল আকৃতির দিঘিটির মধ্য-উত্তর ভাগে আছেদ্বীপসদৃশ একটি মাটির টিলা।
দুর্গাসাগর দিঘিকে যদি সাগর হিসেবে কল্পনা করতে পারেন, তবে এ টিলাটি যেন একটি দ্বীপ। বাতাসের বেগ একটু বেশি হলেই দুর্গাসাগরে ঢেউ ওঠে। আর সেসব ছোট ছোট ঢেউয়ে ভেসে যায় পারের বৃক্ষরাজির ছায়া। এমন মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এ দিঘিটি খনন করেন রাণীদুর্গাবতী ১৭৮০ খ্রিস্টাব্দে।
চন্দ্রদ্বীপ রাজবংশের পঞ্চদশ রাজা ছিলেন শিবনারায়ণ। 'পাগলা রাজা' নামে খ্যাত শিবনারায়ণের স্ত্রী রানি দুর্গাবতী ছিলেন বুদ্ধিমতী ও প্রজাবৎসল। তিনি রাজবাড়ীর সৌন্দর্য বর্ধন ও প্রজাসাধারণের কল্যাণের কথা ভেবে একটি দিঘি খনন করতে মনস্থির করেন। জনশ্রুতি আছে, রানি একবার হেঁটে যতদূর যেতেপারবেন, দিঘিও তত বড় হবে।
রানি দুর্গাবতী ৬১ কানি ভূমি হেঁটে গেলে ওই জমির ওপর দীঘি খনন করা হয়। দিঘির পশ্চিম পাশে শ্রীপুর, পূর্বে কলাডেমা, উত্তরে পাংশা এবং দক্ষিণে শালনা ও ফুলতলা গ্রাম। রানি দুর্গাবতীর মৃত্যুর অল্প কিছুদিন পরই চন্দ্রদ্বীপের পালবংশের রাজত্বের অবসান ঘটে। এরপর শত বছর জঙ্গলাকীর্ণ থাকার পর জেলা বোর্ড দিঘিটি সংস্কার করেন।
বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার মাধবপাশা ইউনিয়নের নাম ছিল শ্রীনগর। চন্দ্রদ্বীপের রাজাদের রাজধানী ছিল এখানে। কালের সাক্ষী হয়ে টিকে আছে শুধু দুর্গাসাগর নামের দিঘিটি আর একটি মন্দির।
চৈত্র মাসের অষ্টমী তিথিতে দুর্গাসাগরে স্নান উৎসবের আয়োজন হয়। পাপমুক্তির বাসনায় পুণ্যার্থীরা স্নান উৎসবে যোগ দেন। দিনব্যাপী মেলাও বসে। ২ হাজার ফুট লম্বা এবং প্রায় ১ হাজার ৮শ’ ফুট চওড়া দীঘির মাঝখানের ঢিবিতে শীতকালে সুদূর সাইবেরিয়া থেকে হাজার হাজার হাঁস এসে আশ্রয় নেয়।
১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে আবদুর রব সেরনিয়াবাত দিঘিটি পুনঃখনন ও সংস্কার করেন। বর্তমানে এটি দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় দিঘি এবং অন্যতম দর্শনীয় স্থান। স্বাধীনতার পর যেভাবে মাধবপাশার দুর্গাসাগর দিঘিটি পুনঃখনন, সংস্কার ও বৃক্ষায়ণ করে দৃষ্টিনন্দন এবং দর্শনীয় করে তোলা হয়েছে, দেশের অন্যান্য প্রাচীন রাজদিঘিকে একইভাবে সংস্কার ও সংরক্ষণ করা হোক, এটাই সৌন্দর্য পিপাসুদের প্রত্যাশা।
সুত্র : Click This Link
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
ছবির গল্প, গল্পের ছবি
সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন
আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত
বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন
বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!
কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন
সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে
সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে
আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন
অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?
এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন