মনের ভাব প্রকাশের সরল এবং সহজ মাধ্যমই ভাষা। শিশুর প্রথম বুলিই শুরু হয় তার আশেপাশের মানুষের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে। এমন বাবা-মা পাওয়া যাবেনা যারা তাদের কে মা বাবা ডাকার জন্য শিশুটিকে উতসাহিত করেনি। বাবার চাইতে শিশুর বেশী কাছাকাছি থাকে মা, তাইতো প্রথম বুলি মা দিয়েই শুরু হয়। মা যে ভাবে কথা বলবে শিশুটির কথার ধরণও তেমন হবে, সেটাই মাতৃভাষা। মা ডাক শুনে খুশি হলেও বিদ্যালয়ে ভর্তির কথা আসলে ইংরেজী মাধ্যমটাকেই প্রাধান্য দেয়া হয়। গিলতে না পারলেও বাচ্ছাকে জোর করে শেখানো হয় বিদেশী ভাষার বই। আর বাচ্ছা যদি ফটাফট ইংরেজি বলে তাহলেতো সোনায় সোহাগা।
ভাষা ভাষীর ভিত্তিতে বাংলাদেশে তিন শ্রেনীর মানুষের বসবাস।
১) উচু স্তরের মানুষঃ এরা ভদ্রতার মুখোশ পরে থাকে এবং প্রচুর অভিনয় করতে পারে বাংলাকে ভালবাসার, আদতে তারা বাংলাকে চরম ভাবে ঘৃনা করে। ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবি এরা এ শ্রেনীতে পড়ে। তাদের প্রধান ভাষা ইংরেজী শুধু মাত্র জনগনের কাছা কাছি আসার জন্য, জনগনকে ধোঁকা দিতে তারা কদাচিত বাংলার ব্যবহার করে। দাপ্তরিক কিংবা কূটনৈতি সহ পারিবারিক ক্ষেত্রেও তারা ইংরেজীর ব্যবহার নিশ্চিত করে।
২) সাধারণ জনগনঃ বাংলা ভাষাকে যদি কেউ মনেপ্রানে পালন করে তারা হলো সাধারণ জনগন। তারা সংখ্যায় বেশী হলেও রাজনীতিবিদ কিংবা ব্যবসায়ীদের মতো এতো ক্ষমতাশালী নয় বলে তাদের বাধ্য হয়ে শিখতে হচ্ছে ইংরেজি। এ ক্ষমতাহীনতার কারণেই তাদের অনিচ্ছা স্বত্তেও তারা নিজেরাই তিলে তিলে নিঃশেষ করে চলছে প্রাণের বাংলাকে।
৩) আঞ্চলিক ভাষা-ভাষীঃ ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে এরা তাদের আঞ্চলিক ভাষাকেই প্রাধান্য দেয়। তারা শুদ্ধকরে বাংলা বলতে পারেনা অবশ্য বাংলা শেখার প্রতি তাদের কোন আগ্রহও নেই, তারা প্রবল আগ্রহ নিয়ে শিখতে চায় ইংরেজি। ইয়েস, নো, ভেরীগুড় এর মত ভুল ইংরেজি ভুল জায়গায় প্রয়োগ করে নিজেকে অনেক বড় মনে করে।
তবুও বাংলাদেশের মানুষ এবং সরকার বাংলা নিয়ে গর্ব বোধ করে, আদতে তারা কতটুকু সক্রিয় বাংলার ব্যবহারে? বাংলাদেশের ব্যাংক, কর্পোরেশন, বিচারালয়, সচিবালয়, বিশ্ববিদ্যালয় সব জায়গায় শুধু ইংরেজিরই জয় জয়কার। প্রকৌশল এবং প্রযুক্তির বিষয়েতো কিছুই বলার অপেক্ষা রাখেনা। আজকাল ইংরেজি না পারলে তাকে শিক্ষিত হিসেবেই ধরা হয়না। এ হীনমনতাকে পূঁজি করে অল্প সময়ে ইংরেজি শেখানোর ব্যবসা করে যাচ্ছে ম্যানটোরস্, স্পীড, এফ এম মেথড, সাইফুরস্ সহ বিভিন্ন সুবিধাবাদী প্রতিষ্ঠান।
বাঙ্গালী মুসলমানরা ভাষার প্রতি খুব আবেগ প্রবন, বাংলাকে সর্বস্তরে চালু করার দাবিও পেশ করে সব সময় কিন্তু নিজের ছেলেকে মাদ্রাসায় দিতে না পারলেও আরবি কোরান কিন্তু পড়া চাই, তা সে বুঝতে পারুক আর না পারুক। আরে ভাই আল্লাতো সকল ভাষা বোঝার কথা সে ক্ষেত্রে বাংলা কোরান পড়লে সমস্যাটা কোথায়?
বাংলাকে আরো আড়ষ্ট করে আছে ভারতীয় টিভি মাধ্যম, হিন্দী ভাষার ব্যঙ্গ চিত্র (কার্টুন), ধারাবাহিক (সিরিয়াল), চলচ্চিত্র, গান। এসব বিনোদনের মাধ্যম হলেও তাদের ভাষায় প্রভাবিত হচ্ছে বাঙ্গালীরা। এ প্রভাবটা খুব বেশী পরিবর্তন করে চলছে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে।
কিন্তু এ বাংলা ভাষার জন্যই আন্দোলন করেছিল, রাজপথ রাঙ্গিয়েছে বুকের তাজা রক্তে, জেল নির্যাতন কোনটাকেই গায়ে মাখেনি তারা। আজকের বাংলা ভাষা যে অবস্থায় এসে পোঁছেছে ভাষা শহীদরা যদি উঠে এসে দেখতো, লজ্জায় ঘৃনায় তারা আবার আত্ব হত্যা করতো।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৩০