বাদশাহ ইস্কান্দার। মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে এসেছে তার। আর কিছুক্ষণ পরেই প্রাণপাখি উড়ে যাবে। বাদশাহ অনুভব করছেন, তার জীবনপ্রদীপ নিভু নিভু করছে। পাশেই বসে আছেন তার মা। মায়ের জন্য তার প্রচন্ড ভালোবাসা। তার মৃত্যুতে মা নিশ্চয়ই কাঁদবেন, বুকখানা তার হু হু করে উঠবে, পুত্রের বিরহে মায়ের আনন্দ হারিয়ে যাবে। বাদশাহ ইস্কান্দার মৃত্যুশয্যায় শুয়ে ভাবছেন তার মায়ের কথা।
তিনি মায়ের দিকে তাকালেন। বললেন, মা, আমার মৃত্যুর পর আপনি খুব স্বাদের খাবার রান্না করে রাখবেন। যারা আমার মৃত্যু সংবাদে আপনাকে সান্তনা দিতে আসবে, তাদেরকে বলে দিবেন, বাদশাহ ইস্কান্দারের শেষ আর্যি ছিল, এ খাবার শুধু তার জন্য যাকে কখনো দুঃখ বেদনা স্পর্শ করেনি। কেবল সে-ই যেন এখান থেকে খায়।’ এসব বলার কিছুক্ষণ পরেই পরপারে চলে গেলেন প্রতাপশালী বাদশাহ ইস্কান্দার। নিথর হয়ে পড়ে থাকলো তার সুঠাম দেহ।
প্রচন্ড শোক বুকে সয়ে মা তার সন্তানের শেষ ইচ্ছা পূরণে খাবার রান্না করলেন। তারপর জানিয়ে দিলেন, যার কখনো দুঃখ আসেনি, সে যেন এখান থেকে খেয়ে যায়।’
মানুষ আসছে। যাচ্ছে। কেউ খাবারের দিকে হাত বাড়াচ্ছে না। খালি মুখে চলে যাচ্ছে সবাই। ইস্কান্দার বাদশাহর মা তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, কি ব্যাপার, তোমরা কেউ-ই খাচ্ছো না যে!
লোকেরা উত্তর দিল, ‘আমাদের মধ্যে কেউই তো এমন নেই যে দুঃখী নয়। আমাদের কারো মা নেই, কারো বাবা নেই, কারো পুত্র স্বজন নেই- সুতরাং দুঃখছাড়া আমরা কেউ নই।’
বাদশাহ ইস্কান্দারের মা বুঝে ফেললেন ঘটনা। কেন তাকে পুত্র বলেছিল এ খাবার রান্না করতে এবং কেনইবা এমন ঘোষণা দিতে। তিনি চোখ মুছতে মুছতে বললেন, আমার ছেলে মৃত্যুর পরও আমার কথা ভেবে সান্তনার জন্য এ ব্যবস্থা করে গেল। তোমাদের দুঃখ দেখে যেন আমারও দুঃখ হালকা হয়, এটাই ছিল তার উদ্দেশ্য।’
মায়ের দু চোখের কোণায় পুত্রগর্বে আনন্দের ঝিলিকমাখা অশ্র“জল চিকচিক করছে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




