somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইতিহাসের হাসি কান্না- কিছু প্রশ্ন কিছু ঘটনা!!

১৪ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১০:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তার নাম হাতিব বিন আবি বালাতাআ। কিবতীদের সম্রাট মুক্বাওকিসের কাছে রাসূল সা. এর চিঠি নিয়ে যাচ্ছেন তিনি। অনেকদূর পথ পাড়ি দিয়ে তিনি পৌঁছলেন সম্রাটের কাছে।

মুকাওকিস ছিল খ্রিষ্টান। রাসূল মুহাম্মাদ সা. এর পাঠানো চিঠিটি তিনি পড়লেন। তারপর মদীনা এবং সেখানকার পরিবেশ সম্পর্কে খোঁজখবর নিলেন। এক পর্যায়ে তিনি হাতিবকে প্রশ্ন করলেন, তোমাদের মুহাম্মাদ যদি সত্যিই নবী হয়ে থাকে- তবে তিনি কেন মদীনায় যারা তার বিরোধিতা করছে- তাদেরকে বদদুআ করে ধ্বংস করে দিচ্ছেন না? কেন তিনি তাদেরকে মদীনা থেকে বের করে দিচ্ছেন না?

সাহাবী হাতিব এর কি জবাব দিবেন? তিনি খুব সাধারণভাবে বললেন, আমারও তো জানতে ইচ্ছে করে, ইহুদীরা যখন ঈসা নবী আ.কে ঘেরাও করে ফেলল তাকে শূলীবিদ্ধ করার জন্য- কেন তিনি তখন বদদুআ করে উপস্থিত শত্র“দেরকে বিনাশ করে দিলেন না?

জবাবের এমন পাল্টা প্রশ্ন শুনে মাথা নিচু করে ফেললেন মুকাওকিস সম্রাট। তিনি বুঝলেন, রহস্য অনেক গভীর পর্যন্ত ছড়িয়ে আছে।
................................

রাসূলের চাচার নাম আব্বাস। স্বাভাবিক ভাবেই তিনি ছিলেন বয়সে মুহাম্মাদ সা. এর চেয়ে অনেক বড়। তাদের মধ্যে তো চাচা-ভাতিজা সম্পর্ক।
কেউ একদিন আব্বাস রা.কে জিজ্ঞেস করেছিল, আচ্ছা! আপনি বড় নাকি মুহাম্মাদ সা. বড়?

চাচা হলেও তো তিনি রাসূলের সাহাবী। খুব বিনম্র ভঙ্গিতে তিনি উত্তর দিলেন, মুহাম্মাদ আমার চেয়ে অবশ্যই বড়। অনেক বড়। তবে হ্যাঁ, আমি তার আগে জন্মগ্রহণ করেছি। এটুকুই।
.....................................................................

বাদশাহ মাহদীর সামনে উপস্থিত হয়েছেন একজন অসহায় বৃদ্ধা। মাহদী তার পরিচয় জানতে চাচ্ছেন, কি হে! আপনি কোথাকার? বৃদ্ধার উত্তর- তাঈ গোত্র থেকে।’ ইতিহাসের অনন্য দানবীর হাতেম তাঈ ছিলেন এ বংশের সন্তান। তাই বাদশাহ মাহদী তাকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনাদের বংশে কেন আরেক জন হাতেম তাঈ তৈরী হচ্ছে না? কারণটা কী?

বৃদ্ধা এসেছেন সাহায্য চাইতে। বংশীয় গর্ব সম্মান দেখিয়ে এখানে বাদশাহর মন মেজাজ অখুশী করলে খালি হাতে ফেরত যেতে হবে। যা বলার, হুঁশ করে প্রশংসার বাক্যে বলতে হবে।

একরাশ অসহায়ত্ব প্রকাশ করে বৃদ্ধা উত্তর দিলেন, ঠিক যে কারণে আজকের আরব জাতিতে আপনার মতো আর একজন এমন মানুষ কোথাও নেই, একই কারণে আমাদের বংশে হাতেম তাঈও আর নেই।’

বাদশাহ মাহদীর চোখে মুখে খুশির দীপ্তি ছড়িয়ে পড়েছে। প্রশংসার আহ্লাদে আনন্দিত তিনি। বৃদ্ধার সাহায্য মঞ্জুর করা হলো।

.............................................................

প্রখ্যাত ইমাম। তার নাম শাবী। তিনি দেখা করতে এসেছেন বিচারপতির সাথে। বিচারপতির নাম কাযী শুরাইহ। প্রজ্ঞা এবং তীক্ষ বুদ্ধিতে ইসলামের ইতিহাসে এমন বিচারপতি মাত্র কয়েকজন। তাদের মধ্যে শুরাইহ অন্যতম।

আদালতে প্রবেশ করলেন একজন মহিলা। স্বামী তাকে ছেড়ে অনেকদিন ধরে দূরে কোথাও পড়ে আছেন, এ নিয়ে তার অভিযোগ। বেচারী মহিলা কাঁদতে কাঁদতে আকুল হয়ে নালিশ জানাচ্ছেন কাযীর দরবারে। সে কি অঝোর ধারায় তার কান্না।

ইমাম শাবী বিচারপতির কানে কানে বললেন, আমার মনে হচ্ছে মহিলাটি সত্যিই অসহায়। বেচারী একদম নিরূপায়। দোষ হয়তো স্বামীর। আপনি কিছু একটা করুন।

নিত্যদিন এমন বিচার কাজে অভ্যস্ত কাযী শুরাইহ ইমামের বিগলিত হৃদয় দেখে পুলকিত হলেন। তাকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনার এমন মনে হচ্ছে কেন?

ইমাম শাবীর উত্তর- দেখুন না, কীভাবে কাঁদছেন মহিলা। এমন কান্না কি কোন দোষী কাঁদতে পারে!

এক ফালি মুচকী হাসি হেসে কাযী শুরাইহ তাকে বললেন, কান্না সবসময় দোষী-নির্দোষের প্রতীক নয়। নবী ইউসুফের ঘটনা পড়েন নি পবিত্র কুরআনে? ছোট ভাই ইউসুফকে কুয়ায় ফেলে রাতে যখন তার বড় ভাইরা ফিরে এল, তারা সবাই কিন্তু কাঁদছিল। কেঁদে কেঁদে বাবা ইয়াকুবকে বাঘের থাবায় ইউসুফের মৃত্যুসংবাদ জানাচ্ছিল। অথচ তারা ছিল দোষী এবং অপরাধী।

কাযীর এমন নির্মোহ প্রজ্ঞা এবং তাৎক্ষণিক উত্তরের ঝলকে চুপ হয়ে গেলেন ইমাম শাবী।
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩২

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে[

স্বাধীন সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা, মব-রাজনীতি ও এক ভয়ংকর নীরবতার ইতিহাস
চরম স্বৈরশাসন বা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রেও সাধারণত সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার সাহস কেউ করে না। কারণ ক্ষমতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

=হিংসা যে পুষো মনে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৮


হাদী হাদী করে সবাই- ভালোবাসে হাদীরে,
হিংসায় পুড়ো - কোন গাধা গাধিরে,
জ্বলে পুড়ে ছাই হও, বল হাদী কেডা রে,
হাদী ছিল যোদ্ধা, সাহসী বেডা রে।

কত কও বদনাম, হাদী নাকি জঙ্গি,
ভেংচিয়ে রাগ মুখে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণমাধ্যম আক্রমণ: হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিলেন নূরুল কবীর ও নাহিদ ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:০৫


জুলাই গণঅভ্যুত্থানের রক্তস্নাত পথ পেরিয়ে আমরা যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম, সাম্প্রতিক মব ভায়োলেন্স এবং গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণ সেই স্বপ্নকে এক গভীর সংকটের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। নিউ এজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপিকেই নির্ধারণ করতে হবে তারা কোন পথে হাটবে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:০৫




অতি সাম্প্রতিক সময়ে তারেক রহমানের বক্তব্য ও বিএনপির অন্যান্য নেতাদের বক্তব্যের মধ্যে ইদানীং আওয়ামীসুরের অনুরণন পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিএনপি এখন জামাতের মধ্যে ৭১ এর অপকর্ম খুঁজে পাচ্ছে! বিএনপি যখন জোট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী বিপ্লবীর মৃত্যু নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



শরিফ ওসমান হাদি। তার হাদির অবশ্য মৃত্যুভয় ছিল না। তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, আলোচনা ও সাক্ষাৎকারে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি অনেকবার তার অস্বাভাবিক মৃত্যুর কথা বলেছেন। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও ভারতবিরোধী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×