somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আলাপচারিতায় ঔপন্যাসিক ডমিত্রি তসেপেনাগ

২০ শে জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ডমিত্রি তসেপেনাগ (যিনি এড পাস্তেনায়েক নামেও পরিচিত) বর্তমান সময়ের একজন খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী জীবন্ত কিংবদন্তি রুমানিয়ান লেখক ৷ যার কর্মযজ্ঞ বুখারেস্ট ও প্যারিসে বিস্তৃত ৷ তিনি পরিচিত সাহিত্যভিত্তিক অনিরিক গ্রুপের একজন নেতৃস্থানীয় তাত্ত্বিক হিসেবে ৷ এ কথোপকথনে উঠে এসেছে গত শতাব্দির মধ্য ৬০শতকের বুখারেস্ট পরে তাকে প্যারিসে যেতে বাধ্য করার সময়কাল মধ্য ৭০শতক অতঃপর ফিরে আসা ১৯৮৯ সালের রুমানিয়ান বিপ্লব পরবর্তীকাল ৷ এ সময়গুলোতে তাঁর অভিজ্ঞতা, নিজের লেখার ক্রমবর্তিত ধারা সাথে তার রাজনৈতিক অসহিঞ্চু দৃষ্টিভঙ্গি ৷
একের পর এক তাঁর উপন্যাসের ইংরেজি ও ফরাসি ভাষায় অনুবাদ প্রকাশ হতে থাকল গত শতাব্দিতে যার পরিক্রমায় টসেপেনায়েগ বুঝালেন কিভাবে তার লেখায় প্রভাব ছিল যুক্তরাষ্ট ও ইউরোপের ভিন্ন পরিবেশের নানান পাঠকের উপর ৷ এছাড়াও তিনি বর্তমান সাহিত্য ও সমাজের গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলো নিয়েও আলোচনা করেছেন ৷

**()()()**()()()**()()()**()()()**()()()**()()()
করিনা আপোস্তলঃ সাধারণ পাঠকদের জন্য আপনার দেখা রুমানিয়া সম্পর্কে একটু বিস্তারিত বলবেন যারা রুমানিয়ার ব্যাপারে বেশী কিছু জানেন না ?
ডমিত্রি তসেপেনাগঃ ১৯৪৮সালে রুমানিয়ায় কমিউনিষ্ট পার্টি ক্ষমতায় আসে এবং অন্য সব দলগুলোকে নিষিদ্ধ করে দেয় ৷ শুরু হয় নিকষ প্রকট সর্বাত্মক অবরুদ্ধকরণ যেখানে কেউ পর্টির পছন্দ অনুযায়ী কিছু প্রকাশ করতে পারতেন ৷ বহু মানুষ যারা রাজনৈতিক মতাদর্শের বিরোধী এমনকি যে কৃষক সমবায়ের পক্ষে ছিলেন না তাদেরকে পাঠানো হয় জেলে ৷ সে সংখ্যায় পরিমাণ ছিল ১ মিলিয়নেরও বেশী যেখানে জনসংখ্যা ছিল ২২ মিলিয়ন ৷ এভাবে চলতে থাকে ১৯৬৩ বা ৬৪সাল পর্যন্ত যখন রাজনৈতিক ধারা পরিবর্তিত হতে এর থাকে সাথে বেড়ে যায় রাশিয়ার সাথে দুরত্বও ৷
তখন থেকে আমি লেখা প্রকাশ করতে থাকি যেগুলো এতদিন আমার বাড়ীর দরাজগুলোতে জমা থাকত ৷

ক.আঃ আমি আসলে জানতে চাচ্ছি অনিরিক গ্রুপ সম্পর্কে যার জন্মই হয়েছিল আপনার বলা ঐ দুঃসহ্য সময়ের পরে ৷ যার নামের মূল উৎপত্তি oneiros শব্দ থেকে এর অর্থ ‘স্বপ্ন’ ৷ আমি পড়েছিলাম এ ব্যাপারে আপনার প্রেরণা ছিল সুরিয়েলিস্ট চিত্র ফলে আপনি সুরিয়েলিজমকে ভিন্ন মাত্রা দেন ৷
ড.তসেপেনাগঃ ১৯৬০ সালের মধ্যবর্তী সময় থেকেই আপনার সত্যিকারের সাহিত্যিক দল গড়তে চেয়েছিলাম যাদের ছিল নিজস্ব মতবাদ ৷ আর এগুলো নিষিদ্ধকারক গোষ্ঠীর পছন্দ ছিল না ৷
যার দরুন আমরা সুরিয়েলিস্ট চিত্রগুলো বিশ্লেষণ করতে থাকি ৷ কিন্তু আমার কাছে বেশির ভাগই বস্তুত সুরিয়েলিস্ট চিত্ররা প্রকৃত সুরিয়েলিস্ট ছিল না ৷ যেগুলো আসলে আন্দ্রে ব্রেটনে’র (André Breton) স্বয়ংক্রিয় লিখন প্রণালীর সমার্থক ছিল না ৷ আমার কাছে সুরিয়েলিস্ট চিত্রকর ছিল জ্যাকসন পোলক ৷ অপর দিকে রেনে্ মাগরিতে এ ধরণের ছবি আঁকতেন না ৷ তার কাজগুলো ছিল মুগ্ধকর প্রতিচ্ছবি ৷ তা ছিল মানসিক বৈকল্যের এক ধরনের বহিঃপ্রকাশের ছবি ৷ এদের থেকে সালভাদর দালি ছিল ব্যতিক্রমী যে প্রতিবাদের প্রতিনিধিত্ব করত ৷ সে ছিল যোগসূত্র সুরিয়েলিয়েজম (এ ধারায় ছবি আঁকত যুভেস তানগে জর্জিও দে চিরিকো ) ও অনিরিজমের মধ্যে ৷
আর এখানেই আমি রেখা আঁকি সুরিয়েল ও অনিরিকের মধ্যে ৷ সুরিরিয়েলের মূল পুস্তক হল স্বয়ংক্রিয় লেখা ৷ সুরিয়েলিস্ট ধারা বহুল প্রভাবিত হয় দাদাইজম দ্বারা ৷ আর দাদাবাদ হল সৃষ্টিশীল চমক ৷ কিন্তু এ ধারার সৃষ্টির পর খুব বেশী কাজ হয়নি ৷ অনিরিক গ্রুপ এই সবগুলোকে বাদ দেয় ও পূণঃগঠিত করে সুরিয়েলিস্ট চিত্রধারাকে ৷



ক.আঃ কিভাবে আপনি সুরিয়েলিয়েজম আর আধুনিক চিত্রদেরকে রুমানিয়ায় উপস্থাপনা করেন ? আর কি হয় এর প্রভাব আপনার উপর ?
ড.তসেপেনাগঃ আসলে এক রুমানিয়ান, ভিক্টর ব্রায়োনের, ছিলেন প্রকৃত সুরিয়েলিস্ট চিত্রকর ৷ তার এক ভাল বন্ধু গেল্লো নায়ুমের সংস্পর্শ পাই যার নেতৃত্বে রুমানিয়ান সুরিয়েলিস্ট গোষ্ঠীর জন্ম ১৯৪১ সালে ৷ পরে ১৯৬০ সালের পর যে কেউ আধুনিক চিত্রকরদের সম্পর্কে জানতে পারেন আর আমি প্রভাবিত হতে থাকি কাফকা ও জার্মান এক্সপ্রেসনিজম দ্বারা ৷
কিন্তু অনিরিক গ্রুপ চিত্রকলা ছাড়াও আরো কিছুতে প্রভান্বিত হতে থাকে ৷ যদি হোরাতিও’র “ut pictura poesis”( কবিতার মত ছবি ) অনেক বেশী আমাদের কবিতাকে বুঝায় ৷ যখন আমি ১৯৭০ সালে উপন্যাস লেখা শুরু করি তখন বুঝতে পারি ছবি এ ধারার যথার্থ প্রতিনিধিত্ব করে না ৷ ফলে বাক্য বড় হতে থাকে তখন আরো কিছুর দরকার হয় ৷ আর আমি বুঝতে থাকি Gotthold Lessing সঠিকভাবে বিভাজ্য করে বলেন, শিল্পকলায় কতটুকু বর্ণিত হওয়া উচিত আর কতটুকু বলতে সক্ষম ৷ সাহিত্য ও কবিতা সফলভাবে দ্রুত লক্ষ্য অর্জন করতে পারে আর চিত্রকলা ধীরে ধীরে এগিয়ে যায় ৷ আর তখন সময়টা ছিল “ut musica poesis”র ৷
তারপর আমি লিখতে শুরু করি “Vain Art of the Fugue” যা পরবর্তীতে ২০০৭ সালে ডালকি আর্কাইভ প্রেস থেকে জন ও’ব্রায়েন কর্তৃক অনূদিত হয় প্রকাশিত হয়, তাদের কাছে কৃতজ্ঞ ৷ তখন থেকে আমি আমার লেখার ধরণ বদলাতে থাকে ৷ এর আগে আমার লেখা ছিল দৃশ্যনির্ভর ৷ এখনকার সময়েও আমি আমার চরিত্রগুলোর মানসিক আত্মপ্রকৃতি আঁকতে আগ্রহী নই অথবা বক্তব্যেরও ৷ আমি ধীরে ধীরে বর্ণনা করে জন্ম দেই চরিত্রের আর সেটা ধারণাভিত্তিক ও শেকড়সন্ধানী ৷ আমি মূলত বেশী আগ্রহী বাক্যের অভ্যন্তরীণ চলমানতায় ৷

ক.আঃ কি ঘটল অনিরিক গ্রুপের ১৯৭৫ সালে যখন আপনাকে বাধ্য করা হল দেশ ত্যাগে ?
ড.তসেপেনাগঃ দুর্ভাগ্যবশতঃ এই গ্রুপটি ভীত সন্ত্রস্থ হয়ে পড়ল ৷ কেউ কেউ অস্ট্রিয়া, জার্মানি, ফ্রান্স চলে গেল ৷ শুধু লিওনিড দিমভ রয়ে গেলেন ৷ চলে আসার আগে থেকেই আমরা বেশী করে অংশগ্রহণ করতে থাকি ৷ ফলে রাজনৈতিক ভাবে কোণঠাসা হয়ে পড়ি ৷ আমরা চিহ্নিত লেখক পল গুমার বই বের করি ৷ যিনি সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের জন্য জেল বন্দী ছিলেন ৷
অনিরিজম নিজে আদতে সেন্সরশিপকে ততটা বিরক্ত করে না ৷ কিন্তু ১৯৮০ সালের দিকে কতিপয় নতুন প্রজন্ম অনিরিজম দ্বারা অনুপ্রাণিত হয় ৷ সেটাই অনেক মহত্তম সেই সময়ের রুমানিয়ার ইতিহাসে ৷ সেন্সরশিপ সত্ত্বেও আমরা তৈরী করতে সক্ষম হই আকর্ষণীয় ও চমকপ্রদ সাহিত্যকর্ম ৷ এগুলোকে প্রকাশিত ও বিতরণে বাধা দেওয়া হয় ফলে গোপনীয়ভাবে এগুতে থাকে ৷



ক.আঃ আপনার মতে অনিরিক আন্দোলন কতটা প্রাসঙ্গিক বর্তমান সাহিত্যের ধারায় ?
ড.তসেপেনাগঃ নিউ-অরিনিসিস্টরা অনেক বেশী বিশেষজ্ঞ রুমানিয়ায় (যেমন করিগ ব্রাগা ক্লুজের সাহিত্যের শিক্ষক) ৷ স্বদেশে আমাদের খুব প্রভাবশালী সাহিত্যসৃষ্টি রয়েছে আমার ধারণা ৷ এইক্ষেত্রে অনিরিক আন্দোলন তার নিজ গুণে প্রভাব রেখে চলেছে ৷
আমার ব্যক্তিগত বিশ্বাস যে অনিরিজম আন্তর্জাতিক সাহিত্য পরিমন্ডলে তার প্রভাব বৃদ্ধি করতে সক্ষম হবে ৷ অনিরিজম নিজেই বেশ বড় পরিবার সাথে আন্তর্জাতিক ব্যপ্তি ৷ উদাহরণ রবার্ট পিনগেটের লেখায় অনিরিজম ধারা পাওয়া যায় ৷ যদিও এক্সপ্রেসনিজম, ফ্যন্টাসি বা সুরিয়েলিজম থেকে এর উৎপত্তি যে কেউ শিল্প ও সাহিত্যে খুঁজে পাবে অনিরিক প্রবাহ ৷ আমার মনে হয় আমাদের অবদান রুমানিয়ান সাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ যখন রাষ্ট নতুন পোষাকীকরণ করছিল সাহিত্য ধারাকে ৷ আমাদের অনিরিক গ্রুপের নিজস্ব শক্তিশালী কন্ঠস্বর যা প্রায় দশ বছর যাবত ছিল ৷

ক.আঃ চলে আসা যাক অন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে ৷ আপনার বইয়ের যা ২০০৭ সালে ইংরেজীতে অনূদিত হল কিছু সমালোচক বলেন এতে আঙ্গিকের বার বার আগমন ৷ বিক্ষিপ্তভাবে গল্পের গতি, সময়কে নিয়ে ক্রমাগত বক্রাকারে সীমাবদ্ধতা ৷ আমার কাছে ব্যক্তিগতভাবে মনে হয় তারা রুমানিয়ার রাজনৈতিক আবহাওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন ৷ তাই আপনার কাছে কি মনে হয় ভিন্ন দেশে ভিন্ন মন-মানসিকতার পাঠকদের কাছে এর আস্বাদন করতে সক্ষম হবে ? তারা কতটুকুই রুমানিয়ার জনগণের অভিজ্ঞতার স্বাদ বা অংশ নিতে পারবে ?
ড.তসেপেনাগঃ এটি আসলে খুবই জটিল বিষয় কারণ এখনো আমি রুমানিয়ায় বাস করি ৷ আর আমি রাজনৈতিক অবহাওয়ার কারণে বইগুলোর কিছু পরিচ্ছেদ প্রকাশ করতে পেরেছি ৷
প্যারিসে এই বইটি আমি ১৯৭৩ সালে “Arpièges” শিরোনামে প্রকাশ করেছিলাম ৷ শব্দটি আবিস্কৃত বা বানানো ৷ “pièges” ফরাসিতে মানে গোলকধাঁধা আর “art” মানে শিল্প এ দুয়ে মিলে গোলকধাঁধায় শিল্প ৷ এ উপন্যাসটি আসলে অনাবিস্কৃত খেলার মতন ৷ একটি আদর্শকে অনুসরণ করতে হবে যার প্রয়োজন ফেরত যাওয়া ৷ আর এ ফেরত যাওয়ার দরকার নায্যতা ৷ তাই এই উপন্যাসে কোন পাঠক যখন তার সন্ধান পান পরের মুহূর্তে সে ভিন্ন কিছু ফেরত পান ৷ এখানে গোলকধাঁধা শব্দে তাকে ফেরত আসতে পথ দেখায় আবার সবশেষে তাকে পুনরায় অনিশ্চিয়তায় ফেলে দেয় ৷ তাই শিরোনামে বলা হয় ‘পরিশেষে শিল্প যখন আবর্তিত হওয়া’ ৷ এই আবর্তনেই উপন্যাসটি সমাপ্তি ঘটে ৷ যা মূলত এ প্রেক্ষাপটে প্রকৃতই রাজনৈতিক পাঠাংশ ৷



ক.আঃ এই রাজনৈতিক পাঠ অংশ নিয়ে আরো বিস্তারিত বলবেন ৷
ড.তসেপেনাগঃ অবশ্যই ৷ আসলে এই পাঠাংশ বুঝতে জটিল এমনি বর্তমানের রুমানিয়ান পাঠকের ক্ষেত্রেও ৷ ইহা খুবই স্থবির, এ স্থবিরতা নিয়ে যায় ভিন্ন মাত্রায় রুমানিয়ান ভাষায় ৷ যেমন সংঙ্গিতিক পাঠ্যাংশ (“fuga muzicală”) ও স্বদেশ হতে ফেলে আসা (“fuga din ţară”) ৷

[সাক্ষাৎকারীর ব্যাখ্যা রুমানিয়ান ভাষায় পাঠাংশ বা “fuga”- র দুটি অর্থ এক সঙ্গিতের ধারা আপর মানে চলে যাওয়া ক্রিয়ার অর্থে ]
আর আমি আসলে কখন চাইনি আমার স্বদেশ হতে চলে আসতে এটি আমার উপন্যাসে আমি চেষ্টা করেছি বলতে ৷ এটি আসলে অপ্রয়োজনীয় যাত্রা ৷ রুমানিয়ান সরকার আমার নাগরিত্ব কেড়ে নেওয়ার আগে আমি অনেকবারই প্যরিসে যাতায়াত করেছি আর আমি কখনই রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী ছিলাম না ৷ আমি সবসময় চেয়েছিলাম ফেরত যেতে ৷ ১৯৭৫ সালের পর সব সম্পর্কচ্যুত হয়ে যায় ৷ পারিনি কোন প্রকাশনী বের করতে ৷ এভাবেই চলতে থাকে ১৯৮৯ সালে বিপ্লব পর্যন্ত ৷

ক.আঃ ইদানিং সময়ে আমি জানতে পারি আপনি বামপন্থার অবস্থান থেকে সেই সময়ের কমিউনিষ্ট শাসনকে সমালোচনা করেছিলেন আর আপনি সন্ত্রাসবাদীও ছিলেন ৷ আপনি কি মনে করেন একজন লেখকের আর্থ-রাজনৈতিক ভূমিকা থাকা উচিত বা শিল্প হোক শুধু শিল্পের খাতিরে ?
ড.তসেপেনাগঃ তুমি ঠিক শুনেছো ৷ সেসময় আমি সন্ত্রাসবাদের সাথে জড়িত ছিলাম ৷ কিন্তু আমার কাছে লেখক শুধুই লেখক যখন উনি লেখেন ৷ এর বাইরে উনি আর দশ জনের মত একজন সাধারণ মানুষ যিনি রাজনীতির সাথে জড়িত থাকতেই পারেন ৷ আমার জন্য এটি ছিল স্বাতন্ত্র্য কর্যকলাপ ৷
সে সময়ে মানে ১৯৮৯ সালের আগে পরে সবাই যখন কমিউনিষ্ট ধারাকে সজ্ঞায়িত করছিল সাথে বাড়ছিল বামপন্থার বিরোধীতাও ৷ আমার মত ছিল ভিন্ন ৷ এ ধারার সমান্তরাল কখনই জাতিয়তাবাদের সাথে যাবে না এমনকি হবে না অগ্রগামী পুঁজিবাদও ৷ আমাদের দরকার ভিন্ন কিছু তাই জড়িয়ে গেলাম সন্ত্রাসবাদে ৷



ক.আঃ বর্তমানে ইউরোপ ও আমেরিকায় প্রতিবাদস্থল থেকে শোনা যায় ‘পুঁজিবাদ নিপাত যাক’ যেখানে আমরা শুনতে অভ্যস্থ ছিলাম ‘সরকারের পতন হোক’ ৷
ড.তসেপেনাগঃ এ ব্যাপারে আমি একজন আশাবাদী ৷ এখনকার নতুন প্রজন্ম বামধারার চিন্তার দিকে ফিরে আসতেছে ৷ এমনকি রুমানিয়ায় প্রকাশনীগুলো জর্জিও আজামবেন বা জ্যাক দেরিদার মত দার্শনিকদের বই প্রকাশ করছেন ৷ এসব লেখকদের আপনি পুঁজিবাদী বলতে পারেন না ৷ বলা যায় তারা পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে ৷ আমি আলেকজেন্ডার কজেভির লেখা রুশ ভাষা থেকে অনুবাদ করেছি ৷ যিনি প্যরিসে বাস করা একজন দার্শনিক, যে কিনা মার্কস ও হাইডেগারের বাম দৃষ্টিকোণ থেকে হেগেল অধ্যায়ন করেছেন ৷ আমি অনেক মানুষদের কথা চিন্তা করি আসলে আমরা এভাবে চলতে পারব না ৷ আমরা ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছি একটিই দেওয়ালের দিকে আর তা হচ্ছে ‘ওয়াল স্টিট্’ ৷

ক.আঃ আপনি বললেন আপনার অনুবাদক হিসেবে কাজের কথা ৷ আরো একটু বলেন সম্পাদক হিসেবে “Cahiers de l’est”এর অভিজ্ঞতা ৷
জিজ্ঞাসা করলাম এই কারণে যে আমি অনেক পূর্ব ইউরোপের লেখকদের কাছে থেকে জানলাম আপনি তাদের অনেক লেখা ফিরিয়ে দিয়েছেন ৷ যেগুলো সাধারণ ছিল যা স্বৈরাচারের সময়কালে বাইরে প্রকাশিত হওয়া উচিত বলে মনে করেন তারা ৷
এভাবেই আসলে ই-শিল্প আন্দোলন গতিশীল হয় আর এতে অংশ নেন শিল্পীরা লেখকেরা সমাজবাদীরা ৷ তখন আসলে তা ছিল একধরণের মানসিক ভ্রমণ যখন সব কিছুতেই প্রচণ্ড প্রভাব ছিল রাশিয়ার যথেষ্ট পরিমাণেই ৷

ড.তসেপেনাগঃ অবশ্যই ৷ ৭০শতকে আমি প্যরিস থেকে বেশ কিছু পত্রিকা বের করি যাতে রুমানিয়ার অনেকের ভূমিকা ছিল ৷ প্রথমেই “Cahiers de l’Est” র কথা এটি সরাসরি এ অঞ্চলের বিরোধিতা করেনি ৷ তবে এর শেষটা বুঝলাম যখন পল গোমার মতন বিরুদ্ধবাদীর লেখা প্রকাশ করা হল ৷ ২০০০ সালে আমি সমপাদনা করি “Seine et Danube” যা উৎসাহী ছিল দানিয়ুব তীরবর্তী ফ্রান্স, জার্মান, অস্ট্রিয়ান, রুমানিয়ান লেখকদের লেখা প্রকাশ করতে ৷ সব প্রকাশনীগুলোই নিবেদিত ছিল পশ্চিম ও পূর্বের লেখকদের মিলিত করার ইচ্ছায় পাশাপাশি তাদের মধ্যে আলোচনার উদ্দ্যোগ নেয় ৷ অবশ্য সেক্ষেত্রে অর্থনৈতিক বৈরীতা ও ১৯৮৯ সালের আগ পর্যন্ত অনেক লেখকের ভয়-অনাগ্রহতার মত অনেক বাধা ছিল ৷
অবশ্যই ই-শিল্প(email-art), তখনকার সময়ে যেসব বই ছাপা হতো সেগুলো সেন্সরশীপের জন্য কখনও আলোর মুখ দেখতো না ৷ তুমি সত্যি বলেছো আসলে যা আমাকে বাধিত করে তা হল সাহিত্যের সীমাবদ্ধকরণ ৷ আর এই সীমাবদ্ধকরণ শুরু হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেরও আগে থেকে ৷ লুসিয়ান ব্লাগার ও ডমিত্রো ডি রোসার মতন বিখ্যাত রুমানিয়ান লেখকেরা যারা অনেক স্থানে ভ্রমণের সুযোগ পেয়েছিল তারাও আন্তর্জাতিকভাবে কিছুই প্রকাশ করার চিন্তাও করেননি ৷ যু্দ্ধের সময়ও সীমাবদ্ধকরণ চলে ডান জাতিয়তাবাদের কারণে এরপর কমিউনিষ্টরা এবং একইভাবে বাধা চলতে থাকে ৷ ১৯৮৯ সালের পরও বলা যায় স্থানীয় প্রকাশকরা কোন উত্তম প্রকাশনী বের করতে সক্ষম হননি আর তখন তো পুরো অংশটাই ভেঙ্গে পড়ে ৷



ক.আঃ প্যরিসে আসার পর থেকে আপনি শুধু রুমানিয়ান ভাষায় লিখেননি, লিখেছেন ফরাসি ভাষাতেও ৷
ড.তসেপেনাগঃ আমি রুমানিয়ান ও ফরাসি উভয় ভাষায় “Le mot sablier” (1994) (“The Hourglass Word”) উপন্যাসটি লিখেছিলাম ৷ উপন্যাসটি এভাবে লেখা হয়েছিল-শুরুটা রুমানিয়ানে তারপর ফরাসি প্রবেশ করতে থাকে ধীরে ধীরে প্রচুর অংশে ৷ আর শেষের পরিচ্ছেদটি সম্পূর্ণই ফরাসিতে ৷ আমি মনে করি না এটি ইংরেজিতে অনুবাদ হতে পারবে ৷ ফ্রান্সে তারা সম্পূর্ণটা ফরাসিতে প্রকাশ করে যাতে ভিন্ন ভিন্ন চরিত্র আছে রুমানিয়া ও ফ্রান্সের জ্ন্য ৷ কিন্তু এটি যথার্থ নয় ৷ শুধুমাত্র রুমানিয়ান সংস্করণে সঠিকটি বের হয় যাতে দুটো ভাষার মূলভাব আছে ৷

ক.আঃ আগে কথা বলে ছিলাম সুরিয়েলিষ্ট চিত্ররা আপনাকে অনুপ্রাণিত করেছিল ৷ কিন্তু আপনি আরো বলেছেন কিভাবে সঙ্গীত আপনাকে অণুপ্রাণিত করেছে ৷ আপনার লেখায় সাঙ্গেতিক দিকটি কি ?
ড.তসেপেনাগঃ সঙ্গীতের মতই আমি উপন্যাসে পুনর্বার অনুসঙ্গ ব্যবহার করি অনুচ্ছেদে যা আগের অনুচ্ছেদ বা অংশে ছিল ৷ যেমন “The Bulgarian Truck”(2011)তে আমি অনেক দৃশ্যই আনি যা ১৯৬০ সালের লেখাগুলোতে ছিল ৷ অথবা “Vain Art of the Fugue”তে আগুনের সতর্কীকরণের একটি দৃশ্য যা পুনর্বার ব্যবহৃত হয় “Hotel Europa” (1996) উপন্যাসে কিছুটা ভিন্নতা নিয়ে ৷ আমি যা উল্লেখ করেছিলাম আমি খুব বেশী আগ্রহী নই বিস্তরিত বর্ণনায় কিন্তু গতিতে আগ্রহী ৷

ক.আঃ আলোচনার এই শেষ পর্যায়ে জানতে চাই আপনি চিন্তাধারা বর্তমান সময়কালের ভবিষ্যত কি রকম ? আরো নির্দিষ্ট করে রুমানিয়ার একালের সংস্কৃতি সম্পর্কে ৷ এখনকার সময়ে সেখানে গড়ে উঠেছে তীব্র ও ঋণাত্মক পরিবর্তন ৷ যা আবারো রুমানিয়াকে আলোচনায় নিয়ে এসেছে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে ৷ যার নেতৃত্ব দিচ্ছে রুমানিয়ার সংস্কৃতিক ইন্সিটিটিউট ৷ যারা প্রগতিশীল এক ধারার প্রভাবে মিলে রুমানিয়ার জাতীয়তাবাদের মূলবোধকে একপেষে রূপান্তরিত করছে ৷
অনেকে এটিকে দেখছেন পশ্চাতমুখি বিবর্তন অভিজ্ঞতা ও নূতনত্বের বিরুদ্ধে ৷ যার বড় সমর্থক রুমানিয়ার সংস্কৃতিক ইন্সিটিটিউটের নির্বাচিত নেতা আন্দেই মারগা ৷ যিনি এই প্রবাহকে বলেছেন জাতীয় আবিস্কার আর তা সংস্কৃতির মাধ্যমে উৎসাহিত করা হবে ৷

ড.তসেপেনাগঃ ইহা অবশ্যই ঘটবে ৷ তুমি যেমন করে এই গুরুত্বপূর্ণ ও দূর্ভাগ্যময় ঘটনাগুলো বললে ৷ কিন্তু আমি মনে করি রুমানিয়ানরা তাদের মননের দ্বারা এগুলোকে তাড়াতে পারবে ৷ আমরা কিছু থেকে শক্তি পাই দুঃখ-কষ্ট ভোলার জন্য ৷ ভবিষ্যতকে আমি কিভাবে দেখি ? আমার মনে হয় আমরা এখন সময়ক্ষেপন করছি ৷ ২০০০ সালের পর থেকে আমাদের সংস্কৃতি পরিস্ফুটিত হয়েছে ৷ সাথে ছিল রুমানিয়ান নিউ ওয়েভ সিনেমা যারা ছায়াশিল্পেও প্রভূত উন্নতি করেছে ৷ মনে হচ্ছে সংস্কৃতিক ইন্সিটিটিউটের নেতারা শুধু ফোকলোর নৃত্যধারা এগিয়ে আনতে চাচ্ছে ৷ তাদেরও এগুতে হবে সাথে মনে রাখতে হবে আপনি রুমানিয়ান সংস্কৃতি জাতীয় মূল্যবোধের বাইরে নয় ৷
অতি শিঘ্রই তাই আমার মনে হয় তারা বুঝবে এভাবে কোনকিছু যেতে পারে না ৷ তারা এটাও ভাল ভাবে বুঝবেন যে রুমানিয়ান লেখক চিত্রকর ও সিনেমা নির্মাতাদেরকে কখনই আন্তর্জাতিক মর্যাদা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত করা উচিত ৷ মান ও এতসংক্রান্ত জিনিসগুলো খুব প্রয়োজন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার জন্য ৷ এটাই শুধু যথেষ্ট নয় রুমানিয়ার সংস্কৃতিক ইন্সিটিটিউট যা প্রকাশ করেছে ৷

ক.আঃ আমি সম্পূর্ণ একমত ৷ যদিও আমি শঙ্কিত আমরা আরেকটি সীমাবদ্ধতায় পতিত হতে যাচ্ছি এইসব পরিবর্তনে ৷
ড.তসেপেনাগঃ দুর্ভাগ্যবশতঃ আমি মনে করি তুমি সঠিক ৷ এক বা দুই বছরের জন্য এ আবদ্ধতা থাকবে ৷ ততদিন পর্যন্ত যখন তারা বুঝবেন কিভাবে আন্তর্জতিক প্রেক্ষাপট কাজ করছে ৷ তবু আমি আশাবাদী ৷

ছবিতে করিনা আপোস্তল ৷


কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল

___[][][][][]___[][][][][]___[][][][][]___[][][][][]___[][][][][]___[]__
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১:৫৯
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×