somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডরোথি পার্কারের গল্পঃ একটি ফোন কল

২৩ শে জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১২:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


Waiting is painful. Forgetting is painful. But not knowing which to do is the worse kind of suffering.
----------Paulo Coelho

**__--**__--**__--**__--**__--**__--

হে ঈশ্বর দয়া কর, সে যেন এখন আমায় ফোন করে ৷ প্রিয় প্রভু, তাকে বল এখনই আমায় ফোন করতে ৷ তোমার কাছে আর কিছু চাইবার নেই আমার ৷ সত্যি বলছি এটুকু কি বেশী চাওয়া ! তোমার কাছে এ তো অতি ছোট চাওয়া ৷ অতি ক্ষুদ্র নগণ্য চাওয়া ! শুধু বল তাকে, বল ফোন করতে ৷ দয়া কর প্রভূ, দয়া কর, দয়া ৷

যদি নাই ভাবতাম এ নিয়ে তবে হয়ত ফোনটা বেঁজে উঠতো ৷ মাঝে মাঝে এরকম হয় ৷ যদি আমি অন্য কিছু ভাবতে পারতাম ৷ ভিন্ন কিছু যদি ভাবতাম ৷ গুনতে পারতাম পাঁচ থেকে পাঁচশত পর্যন্ত হয়ত এরইমধ্যে বেঁজে উঠতো ফোনটা ৷ গুনতাম ধীরে ধীরে কোন ফাঁকি না দিয়ে ৷ যদি তিন’শ গুনার পর বেঁজে উঠতো ফোন আর আমি ধরতে পারতাম না পাঁচশত পর্যন্ত না গণনা করে ৷ পাঁচ-দশ-পনের-বিশ-পচিঁশ-ত্রিশ-পয়ত্রিশ-চল্লিশ-পয়ঁতাল্লিশ-পঞ্চা...., ওহ প্লিজ বেঁজে উঠুক প্লিজ ৷

এই শেষ বারের মতন আমি ঘড়ির দিকে তাকাবো ৷ আর কখনই ফিরে দেখব না ৷ এখন সাতটা বেঁজে পাঁচ মিনিট ৷ সে বলেছিল পাঁচটায় ফোন করবে ৷ ‘প্রিয়া, ঠিক পাঁচটায় ফোন করব’ ৷ আমি নিশ্চিত সে আমায় তখন প্রিয়া বলেই সম্ভাষণ করেছিল ৷ এও জানি সে দু-দু’বার প্রিয়া বলে ডেকেছিল আমায় ৷ আবার যাবার সময়ও বলেছিল ‘বিদায় প্রিয়া’ ৷ সে খুব ব্যস্ত ছিল অফিসে বেশী কিছু বলতে পারে নাই তবুও বলেছিল ‘বিদায় প্রিয়া’ ৷ দু’দুইবার ৷ সে হয়ত ভুলে গেছে আমাকে ফোন করার কথা ৷ আমি এও জানি, তুমি তাদেরকে কখনই ফোন করবে না-তারাও এটা পছন্দ করবে না ৷ যখন তুমি তা জানবে তুমি তাদের কথা ভাবছো ও তাদেরকে চাইছো এবং এটাই তাদেরকে তোমার প্রতি ঘৃণার উদ্দেক করবে ৷ কিন্তু আমি গত তিনদিন যাবত তার সাথে কথাও বলেনি শুধু এ তিনদিনই নয় ৷ আমি তাকে জিজ্ঞাসা করেছি সে কেমন আছে যা আর সবার মত তার সাথে কুশল আলাপ ৷ এতে সে কখনই বিরক্ত হয়নি ৷ যা তাকে বিরক্তবোধটুকুও জাগ্রত করেনি ৷ সে বলেছিল ‘এটা এমন কিছু নয়’ তারপর বলেছিল সে আমায় ফোন করবে ৷ সে বোধ হয় কিছু বলেনি এমনটা ৷ সত্যি হল আমি তাকে জিজ্ঞাসাও করেনি ৷ নিশ্চিত আমি করেনি ৷ আমি চিন্তাও করেনি সে আমাকে টেলিফোন করবে কিনা বলেছিল ৷ তাহলে সে তা করবে না ৷ দয়া করে তাকে এমনটা করতে দিওনা ৷ ‘ঈশ্বর দিওনা’ ৷

‘প্রিয় আমি তোমাকে ঠিক পাঁচটায় ফোন করব বিদায় প্রিয়া’ ৷ সে খুবই তাড়ার ছলে ব্যস্ততায় আর আশেপাশে লোকজনের ভিড়ও অনেক ছিল ৷ তবু সে আমাকে দু’বার ‘প্রিয়া’ বলেছিল ৷ আমকেই তো বলেছিল ৷ মনে হয়েছিল আর কখনও যদি তাকে না দেখি ৷ হায়, এত টুকু ৷ বেশি নয়তো ৷ যথেষ্ট ছিল না যদি তাকে আর না দেখি ৷ প্লিজ আবার তাকে দেখতে চাই ৷ ঈশ্বর দয়া কর ৷ তাকে খুব করে দেখতে চাই ৷ খুব চাই ৷ ভাল হব আমি প্রভু ৷ চেষ্টা করব খুব ভাল হতে ৷ যদি তুমি আমায় তাকে আবার দেখাও ৷ যদি তুমি তাকে আমায় ফোন করতে উদ্বেলিত কর ৷ ওহ, সে যদি এখন আমায় ফোন করত ৷

আর প্রার্থনাকে ছোট করে দেখনা, প্লিজ ঈশ্বর ৷ তুমি তো বসে আছ সেখানে ৷ ধ্রব সাদা রঙের আর বয়ষ্ক তুমি সাথে আছে দেবদূতেরা পাশে শুয়ে আছে তারারা ৷ আমি তোমার কাছে প্রার্থনায় চেয়েছিলাম শুধু একটি ফোন কল ৷ আহ, হেসো না ঈশ্বর ৷ তুমি তো জানো না কি রকম লাগে ৷ তুমি তোমার সিংহাসনে কতই না নিরাপদ যেথায় নীলাভ আভা ছড়ায় চারিদিকে ৷ কেউ তোমাকে স্পর্শও করতে পারে না, আবার কেউ তোমার হৃদয় তার হাতে নিয়ে নাড়াচাড়াও করতে পারে না ৷ এতো যাতনা, শুধু কষ্ট, ভীষণ যাতনা ৷ তুমি কি সাহায্য করতে পারনা ? তোমার প্রিয় পুত্রের দোহাই লাগে আমায় সাহায্য কর ৷ তুমি তো বলেছো তার নামে কিছু চাইলে তুমি তা মঞ্জুর কর ৷ তোমার প্রিয় পুত্র কঙ্কটধারী যিশুর নামে প্রার্থনা যে, হে ঈশ্বর তাকে এখনই টেলিফোন করতে বল ৷

আমাকে অবশ্যই এইরূপ করা থেকে বিরত থাকতে হবে ৷ এমনও তো হতে কোন যুবক কোন যুবতীকে ফোন করবে বলেছিল কিন্তু পারল না হয়ত কোন কারণে ৷ অতিব বেদনার ৷ কারণ ঠিক এই মুহূর্তে পৃথিবীতে কত কিছুই না ঘটছে ৷ কিন্তু আমার তাতে কি পৃথিবীতে কিনা হচ্ছে তাতে ? টেলিফোনটা বাজছে না কেন ? কেন না ? কেন না ? ফোন কর ? দয়া করে ফোন কর ? তুমি পচাঁ জগন্য ! তোমার কি ফোন করতে কষ্ট হচ্ছে ? খুব কষ্ট ? মনে হয় তাই হচ্ছে ! পচাঁ তুমি ৷ আমি তোমার নিখাদ শিকড় দেয়াল থেকে তুলে ফেলব ! আমি তোমার কদাকার মুখকে থেতলে দেব ! নরকে যাও !
না না আমাকে অবশ্যই থামতে হবে ৷ আমাকে অন্য কিছু নিয়ে ভাবতে হবে ৷ এটাই আমাকে করতে হবে ৷ ঘড়িটাকে অন্য কামরায় রেখে আসি ৷ তাহলে আর তাকাতে পারব না সেটার দিকে ৷ যদি এটার দিকে না তাকাই তাহলে শোবার কামরায় যাব কিছু একটা করতে ৷ আবার ঘড়ির দিকে তাকানোর আগেই হয়ত সে আমায় ফোন করবে ৷ খুব খুশি হব সে যদি ফোন করে ৷ যদি সে ফোনে আমায় বলে আজ রাতে দেখা হবে না ৷ তবে আমি বলব ‘ঠিক আছে প্রিয় সবকিছু ঠিক আছে’ ৷ আমি আবার তার সাথে প্রথম দেখার ঘটনার মতন হয়ে যাব ৷ তবে হয়ত সে আবার আমায় পছন্দ করবে ৷ আমি খুব মিষ্টি ছিলাম ৷ প্রথম কাউকে ভালবাসলে মানুষের প্রতি সদয় হতে হয় ৷

আমার মনে হয় সে আমায় খানিকটা ভাল বাসে ৷ সে ‘প্রিয়া’ বলে বলতেই পারে না আজ দিনে দু’বার ৷ সে এখনও হয়ত অল্প ভালবাসে ৷ ছোট একটু ভালবাসলেও সব কিছু হারিয়ে যায় না ৷ ঈশ্বর সে যদি আমায় ফোন করে তবে আর বেশী কিছু চাইনা ৷ আমি অনেক ভাল হবো তার প্রতি ৷ প্রীত হবো ৷ আগের মতন তবে হয়ত সে আবার আমায় ভালবাসবে ৷ এবং তাহলেই তোমার কাছে আর কিছু চাই না ৷ তুমি দেখে নিও প্রভু ! তুমি কি তাকে ফোন করতে বলবে ? পার না, প্লিজ ! প্লিজ ! প্লিজ !

তুমি কি আমায় শস্তি দিচ্ছো, হে ঈশ্বর আমি হয়ত খারাপ ! তুমি কি রাগ করেছো সেই কাজের জন্য আমার প্রতি ? ওহ প্রভু কত কত খারাপ মানুষ আছে - তাদের ছেড়ে শুধু আমায় কষ্ট দিও না ৷ শুধু ব্যাথাই দেও- তা আরো কষ্টকর ৷ প্রভু আমরা তো কাউকে আঘাত করেনি ৷ কাউকে কষ্ট দিলই তো তাকে শাস্তি দেওয়া হয় ৷ তুমি তো জান, আমরা কোন আত্মাকে কষ্ট দেইনি ৷ তুমি তো জান, এটা কষ্টকর, জানো তো ? তাই, তুমি কি পার না, তাকে এখন ফোন করাতে ?

যদি সে আমায় ফোন না করে তবে আমি জানি ঈশ্বর আমার উপর রাগ করবে ৷ পাঁচ থেকে পাঁচশ পর্যন্ত গুনবো তবে যদি সে আমায় ফোন করে ৷ আমি জানি প্রভু আমাকে আর সাহায্য করবেন না ৷ এটাই হবে তার সংকেত ৷ পাঁচ-দশ-পনের-বিশ-পচিঁশ-ত্রিশ-পয়ত্রিশ-চল্লিশ-পয়ঁতাল্লিশ-পঞ্চাশ….খারাপ ৷ জানি সেটা খারাপ ৷ ঠিক আছে প্রভু আমাকে নরকে পাঠিয়ে দেও ৷ তুমি ভেবেছ তোমার নরকের ভয় দেখাবে ৷ নরক, তুমি তাই ভেবেছ ? তোমার নরকের চেয়েও মন্দ আমি ৷

এটা আমার করা উচিত না ৷ কখনই এরকম আমার করা উচিত না ৷ তার হয়ত খানিকটা দেরি হবে ফোন করতে ৷ এতে পাগলামি করার কিছুই নাই ৷ সে হয়ত ফোন না করে সরাসরি এখানে চলে আসবে ৷ সে চলে যেতে পারে আমাকে কাঁদতে দেখলে ৷ তারা কাউকে কান্নারত দেখতে চায় না ৷ সে কখনও কাঁদে না ৷ প্রভুর কাছে চাই, আমি তাকে কাঁদাতে ৷ ইচ্ছা আমার সে কাঁদুক ৷ মেঝের দিকে তাকিয়ে থাকবে আর অনুভব করবে ভারাক্রান্ত হৃদয় ও দোষী ভাববে নিজেকে ৷ আমার ইচ্ছা আমি তাকে নরকের মত কষ্ট দিতে পারব ৷

আমার সম্পর্কে তার বোধ হয় এমন ইচ্ছা নেই ৷ আমার মনে হয় সে বোধ হয় জানেই না আমি কি অনুভব করি তার সম্পর্কে ৷ আমার প্রত্যাশা, সে জানবে আমি না বললেও ৷ তারা পছন্দ করে না তাদের কারণে এইভাবে তোমার কান্না দেখতে ৷ যদি এরূপ কর তবে তারা ভাববে, তুমি অধিকার ও কর্তৃত্ব দেখাচ্ছো ৷ তারপর তারা তোমাকে ঘৃণা করবে ৷ তখনই ঘৃণা করবে যখন তুমি আসল ভাবনা বলে ফেলবে ৷ তোমাকে সর্বদা একটা ছোট খেলা খেলতে হবে ৷ ওহ ভেবেছিলাম আমরা এমনটা করব না ৷ আরো ভেবেছিলাম সময় এতো বড় যে আমি যা খুশি বলতে পারব ৷ মনে হয় তুমি তা কখনই পারবে না ৷ মনে হয় কিছুই বড় না তা বুঝানোর জন্য ৷ আহ সে যদি ফোন করত আমিও তাকে বলতে পারতাম না কতটা দুঃখী আমি ৷ তারা তো এধরণের মানুষদেরকে ঘৃণা করে ৷ আমি অনেক আনন্দিত হতাম সে হয়ত সাহায্য না করলেও আমায় পছন্দ করত ৷ ইশ সে যদি ফোন করত ৷ একবার ফোন করত ৷

মনে হয় তাই করবে সে ৷ সম্ভবত সে আমাকে না জানিয়ে চলে আসবে এখানে ৷ মনে হয় সে এখন রাস্তায় ৷ কোন অঘটন কি হল তার ? না, খারাপ কিছুই হবে না তার ৷ তার কিছু হবে ভাবতেই পারি না আমি ৷ চলে যাবে সে ভাবতেই পারি না ৷ চিন্তাতেও আসে না তার নিথর প্রাণহীন দীর্ঘকায় দেহটির কথা ৷ আমি চেয়েছিলাম তার মৃত্যু ৷ কি ভয়ংকর ইচ্ছে ? মনোমুগ্ধকর ইচ্ছে ? যদি তার মৃত্যু হয় তবে সে আমারই রবে ৷ যদি তার মৃত্যু হয় তবে আজ ও বিগত সপ্তাহ নিয়ে ভাবনায় থাকব আমি ৷ শুধু ভাববো ফেলে আসা মুগ্ধ ক্ষণগুলোকে ৷ সব ছিল সৌন্দর্যে ভরপুর ৷ কল্পনা করি তার মৃত্যু ৷ আমার ইচ্ছায় তার মৃত্যু ৷ সে মৃত ৷ মৃত ৷

এটা শিশুসুলভ ৷ আসলেই শিশুসুলভ চিন্তা ৷ কারণ তোমাকে কেউ ফোন করল না আর তাতে তুমি তার মৃত্যু কামনা করলে ৷ যেখানে শেষ মুহূর্তে সে ফোন করবে বলেছিল ৷ মনে হয় ঘড়িটি দ্রুত চলছে ৷ জানি না কোনটা সঠিক ৷ মনে হয় সে অনেক দেরি করছে ৷ যেকোন কিছু তাকে হয়ত কিছুটা দেরি করে দিয়েছে ৷ সম্ভবত তাকে অফিসে থাকতে হয়েছে ৷ মনে হয় সে বাসায় চলে গেছে ও সেখান থেকে আমাকে ফোন করবে ৷ এমনও হতে পারে কেউ হয়ত চলে এসেছে আর তার সামনে আমাকে ফোন করতে বিব্রতবোধ করছে ৷ মনে হয় সে চিন্তিত খানিকটা, কিছুটা, অল্প আমাকে অপেক্ষায় রাখার জন্য ৷ এমনও হতে পারে সে আশায় আছে আমার ফোনের অপেক্ষায় ৷ আমাকেই ফোন করা উচিৎ ৷ আমার করা উচিৎ ৷ আমায় তাকে ফোন করা উচিৎ ৷

অবশ্যই না ৷ কখনই না ৷ অবশ্যই না ৷ ওহ, ঈশ্বর আমাকে ফোন করতে দিতে পারনা তুমি ৷ দয়া করে এটা হতে বিরত রাখ ৷ আমি জানি, তুমিও আমার মত জান, সে যদি আমায় নিয়ে চিন্তায় থাকে তবে সে যেখানেই থাকুক আর যত লোকেদের দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকুক না কেন অবশ্যই আমাকে ফোন করবেই ৷ ঈশ্বর আমাকে বুঝতে দেও দয়া করে ৷ তোমাকে অনুরোধও করি না সহজ করে দেও সবটা ৷ তুমি পারও না যেমন সহজে পৃথিবীটা সৃষ্টি করে ফেলেছো ৷ আমাকে বুঝতে দিও প্রভু ৷ আমাকে আশান্বিত হতে দিও না ৷ আমাতে কোন স্বান্তনাবোধ তৈরী হতে দিও না ৷ আশায় জাগ্রত রেখ না আমাকে, প্রভু ৷ প্রিয় ঈশ্বর ৷ দয়া করে, দিও না ৷

আমি তাকে ফোন করব না ৷ কখনই ফোন করব না যতদিন বেঁচে থাকি ৷ আমার ফোন করার আগেই সে নরকে যাবে ৷ তুমি আমায় শক্তি দিও না প্রভু ৷ আমি নিজেই অর্জন করব সেটি ৷ যদি সে আমাকে চায় তবে আমাকে পাবে ৷ সে আমার সবটা জানে ৷ জানে কোথায় আমি অপেক্ষা করছি ৷ সে নিশ্চিত আমাকে জানে, নিশ্চিত ৷ আমি অবাক হই কিভাবে তোমাকে তারা ঘৃণা করে যখন তারা তোমার অস্তিত্বে সুনিশ্চিত ৷ আমায় এই নিশ্চিয়তাতে মুগ্ধ হওয়া উচিত ৷ এতে হয়ত তাকে ফোন করা সহজ হবে ৷ তারপরও আমি জানি ৷ মনে হয়না সেটা করা বোকামি হবে ৷ সেও কিছু মনে নিবে না ৷ সম্ভবত সে পছন্দও করবে ৷ মনে হয় সে আমাকে পেতে চেষ্টা করবে ৷ কখনও কখনও মানুষেরা তাকে পাওয়ার জন্য ফোন করে এবং বলে নাম্বারটি উত্তর দিচ্ছে না ৷ আমি তো আসলে এমনটা চাচ্ছি না, যা ঘটেছিল ৷ তুমি জান কি ঘটেছিল, প্রভু ৷ হে ঈশ্বর, আমাকে ঐ টেলিফোন থেকে দূরে রাখ ৷ দূরে রাখ ৷ আমাকে ছোট্ট একটু অহঙ্কার ধরে রাখতে দিও, প্রভু ৷ আমার খুব দরকার এটার ৷ এইতো আমার একমাত্র সম্বল ৷

ওহ, অহঙ্কারে এমন কি এসে যায় ? যখন তার সাথে কথাই বলব না তখন এর উপর দাড়াতে পারব ? অহঙ্কার হল খুবই তুচ্ছ, নগণ্য ব্যাপার ৷ বিশাল অহঙ্কারে আসলে কিছুই থাকে না ৷ আমি আসলে বলতে চাই না, শুধু তাকে ফোন করব বলে ৷ এমনটা নই আমি ৷ সত্যি বলতে আমি জানি, এটাই সত্যি ৷ আমি অনেক বিশাল ৷ দাড়িয়ে আছি ছোট অহঙ্কারগুলোর পিছনে ৷

ঈশ্বর দয়া করে আমাকে তাকে ফোন করতে বিরত রাখ ৷

আমি দেখতে চাই না অহঙ্কার কি করে এতে ৷ আমার কাছে অহঙ্কার কিছু আনে না কিছু অনুভবে হানেও না ৷ আমি সম্ভবত তাকে ভুল বুঝেছি ৷ সে হয়ত বলেছিল আমাকে ফোন করতে পাঁচটায় ৷ “পাঁচটায় ফোন কর, প্রিয়”৷ সঠিক ভাবেই সে এটা বলেছিল ৷ খুব সম্ভব আমিই ঠিক মতো শুনতে পারি নাই ৷ আমি প্রায়ই শুদ্ধ যে এটাই সে বলেছিল ৷ প্রভু, আমি যেন নিজেকে বুঝতে পারি ৷ আমাকে জানতে হবে, দয়া কর জানতে ৷

আমার ভাবা উচিত ভিন্নরকমের কিছু ৷ চুপচাপ বসে থাকা উচিত আমার ৷ আমি যদি স্থির বসতে পারতাম, স্থির হয়ে বসতে ৷ কিছু একটা পড়তে পারি আমি ৷ ওহ, সব বইয়ে তো ভালবাসার কথা, মিষ্টি করে সত্যিরূপে ৷ তারা কেনইবা এমন করে লিখে ! তারা কি জানে না এটি সত্যি নয় ৷ এমনটি তো নিখাদ মিথ্যা ৷ কিভাবে তারা এটাকে বলে যখন তারা জানে কিভাবে আঘাত করে সে ৷ নচ্ছার তারা, নচ্ছার ৷

এমনটা করা উচিৎ নয় আমার ৷ চুপ থাকা দরকার ৷ এ নিয়ে উত্তেজিত হওয়ার কিছু নেই ৷ তার হয়ত কেউ আছে জানি না আমি ৷ হয়ত কোন মেয়ে বন্ধু ৷ তাহলে টেলিফোনে আমার বলা উচিত-‘ ঈশ্বেরের দোহাই কি হয়েছে তোমার ?’ এমনটাই করা উচিৎ আমার আর অন্যরকম ভাবাই ঠিক না ৷ আমি কেন স্বাভাবিক ও সরল হতে পারি না ৷ তাকে ভালবাসি বলে ৷ আমাকে পারতে হবে ৷ আমি তাকে ফোন করব সহজ ও সুন্দরভাবেই ৷ ঈশ্বর দেখে নিও যদি এমনটা আমি না পারি ! ওহ তাকে ফোন করতে বাধ্য কর না আমায় ৷ দিও না, দিও না, দিও না !

প্রভু তুমি কি চাচ্ছো আমি তাকে ফোন করি ৷ ঠিক তো ? তুমি আবার একটু ভেবে দেখবে ? পার কি ? আমি তোমাকে বলব না যে সে এখন আমায় ফোন করুক ৷ ঈশ্বর কিছু সময়ের জন্য ফোন করতে বল ৷ আমি পাঁচ পাঁচ করে পাঁচশত পর্যন্ত গুনছি ৷ আমি গুনব খুব ধীরে আর সতর্কতার সহিত ৷ যদি সে ফোন না করে তবে আমিই ফোন করব ৷ আমিই করব ৷ ওহ প্রভু, আমার প্রিয় ঈশ্বর এটার করার আগেই তাকে ফোন করতে বল ৷ প্লিজ প্রভু, প্লিজ ৷

পাঁচ-দশ-পনের-বিশ-পচিঁশ-ত্রিশ-পয়ত্রিশ-চল্লিশ-পয়ঁতাল্লিশ-পঞ্চাশ.......
---*#*---*#*---*#*---*#*---*#*---*#*---*#*
ডরোথি পার্কার (২২ শে আগস্ট ১৮৯৩-৭ই জুন ১৯৬৭) আমেরিকান ছোটগল্পকার, কবি, সমালোচক ৷ মূলত উনার লেখায় উইট আর হিউমারের সংমিশ্রণে বিংশ শতাব্দীর শহুরে জীবনযাত্রার রূপকীয় উপকথার প্রকাশ পায় ৷

কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ১২:০৪
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×