somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লিলি পোতপারা'র গল্পঃ চমক

৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বেশ কিছুদিন ধরে গোটা এ্যাপার্টমেন্টটি জুড়ে গম্ভীর নিস্তব্ধতা ৷ ছেলে-মেয়ের নিরব খেলাধুলা আর কোনও কথা নেই বাবা-মার মাঝে ৷ নিরাবতাখানি যেন তীক্ষ্ণ ও বিকট ভারী ৷ ছেলে ও মেয়েটি যখন মা-বাবার মাঝে কোন প্রশ্ন ফেলে দেয় ততক্ষণাৎ হয়ত দু’জনেই উত্তর দিয়ে ফেলে ৷ সেই সঙ্গে নৈঃশব্দ্যের প্রতিধ্বনির আচ্ছন্নে আবৃত করে ফেলে পরিবেশ ৷
একবার একদিন মা কাজ সেরে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে আসেন ৷ তখন ভাইটি ছিল না সেখানটায়, যদিও বাবা কাজ করছিলেন ৷ মেয়েটি একা একা নিজের সাথে কথা বলার খেলায় মত্ত ছিল ৷ সেটি ছিল প্রশ্ন ও ভিন্ন স্বরে উত্তরের ক্রিয়াশৈলী ৷
যখন সিলভা ও ক্যাটরিনা তাকে ‘আমেরিকা’ সম্পর্কে ধারণা দিল ৷ ঢালগুলো কেমন পিচ্ছিল যেন তাতে যে কেউ পড়ে গিয়ে মাঝ বরাবর প্রচণ্ড আঘাত পেতে পারে ৷ তা শুনে আলেঙ্কা তাদেরকে ভিন্নরকম কিছু বলতে বললো ৷
মা বললো- ‘আলেঙ্কা রান্নাঘরে আসো ৷’
খেলনাগুলোর কাছে মিনতি জানিয়ে অন্যস্বরে বলে গেল, সে দ্রুতই ফিরে আসবে ৷
এদিকে মা বলতেই লাগলো ‘আলেঙ্কা, তোমাকে আমার কিছু বলার ছিল’ ৷
মায়ের ক্রুদ্ধ অবয়ব দেখে সে আরো ভীতসন্তুস্ত হয়ে উঠলো ৷ খানিকটা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে বিভ্রান্ত চেহারা নিয়ে উৎকন্ঠায় রইল ৷
‘তুমি কি জানো বাবা একখানা জন্মদিনের উপহার নিয়ে এসেছেন ৷’
যদিও আলেঙ্কা এগারতম বর্ষে পদার্পন করবে শীঘ্রই ৷ কৈশরে উত্তীর্ণের চূড়ান্ত বছর এটা ৷ ফলে সে আর থাকবেই না ছোট্ট মিষ্টি মেয়ে হিসেবে ৷
‘বাবা তোমার জন্য একখানা সাইকেল নিয়ে এসেছে ৷ সেই রকম একটি রগ-পনি-ফল্ডিং সাইকেল ৷’
শোনে আলেঙ্কা কিছুই বললো না ৷ তবে কিছু একটা তার হৃদয়ে চেপে বসছিল তাতে ক্রমশঃ রাগ বাড়তে লাগলো ৷ অবশ্য দীর্ঘদিন যাবত একখানা পনি চেয়ে আসছিলো সে ৷ যাতে চড়ে সিলভা আর ক্যাটেরিনাকে নিয়ে পাশের রাস্তার ছোট্ট ‘অ্যামেরিকা’তে যেতে পারে ৷ সাইকেল বিহীন অবস্থায় যা ছিল তার কাছে বেশ দূরবর্তী ৷ তাদের কাছ থেকে প্রতিনিয়ত শুনতো ঢালগুলো কতটা পিচ্ছিল যাতে পড়ে যে কেউ ভাঙ্গতে পারে মাঝ বরাবর আঘাত পেতেই পারে যখন তখন ৷ তার অবশ্য ইচ্ছে হতো আরও অন্য কিছু শুনতে ৷
সেই ভুল মুখশ্রীর ঐ দৃষ্টি নিয়ে মা বলতে লাগলো, ‘তুমি কি জান আলেঙ্কা ? খুব খুশি খুশি ভাবে থাকো কারণ বাবা আসলেই বেশ ক্লান্ত ৷ সে সাইকেলের জন্য ধার নিতে বাধ্য হয়েছে ৷’
‘ঠিক আছে মা’ বলে জানালার ধারের তার খেলনাগুলোর কাছে চলে আসল ৷ আর তাদের বলতে লাগল ‘অবাক হবার মতন করে আমি একখানা সাইকেল পেয়ে গেছি ‘৷ তা শোনে তারা উপরে নিচে লাফালাফি শুরু করে দিল ৷
তারপর যথা সময়ে সমাগত তার জন্মদিন ৷ পেট ব্যাথা নিয়েই সে স্কুলে চলে গেল ৷ এরপর ক্লাশের মাঝ সময়ে সে অবাক হয়ে খেয়াল করল সব সাইকেলের রঙই নীল অথবা লাল ৷ সব পনি-ই নীল বা লাল রঙের শুধু সিলভা’টির রঙ গোলাপি যা তার বাবা করে দিয়েছে ৷
মধ্যাহ্নভোজের পর বাবা আসলেন ৷ কেমন অদ্ভূত অনুভূতি হতে লাগলো আলেঙ্কার সঙ্গে সে বোধের মতই তার চেহারাও বদলে যেতে লাগল, যা আদতে তার স্বাভাবিক চেহারার সাদৃশ্য ছিল না ৷ বাবা বেসমেন্টে নেমে আসতে বললো তাকে ৷ পরে নেমে আলেঙ্কা হালকা নীল রঙের সাইকেলটির কাছে চলে আসল ৷
সেদিকে তাকিয়ে রইল আলেঙ্কা, পরে এক ফাঁকে দেখে নিল বাবাকেও ৷ সে জানতো তার এখন খুশি হওয়া উচিত কিন্তু পেটের ব্যাথা আরো বাড়তে লাগল ৷ যখন সাইকেলটি স্পর্শ করল তখনই যেন শীতল ধাতবখানা ধীরে ধীরে তাকে মৃদু আঘাত দিতে লাগল ৷
ধন্যবাদ বলেই সে যেতে চাচ্ছিল যত তাড়াতাড়ি উপরে উঠে তাদেরকে বলবে তার চমক প্রাপ্তির কথা ৷
‘তুমি কি খানিকটা চড়ে বেড়াবে না ?’ প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল বাবা ৷ অল্প সময় ধরে কিংকর্তব্যমিমূঢ় আলেঙ্কা ৷ অতঃপর স্বগতোক্তি দিল ‘ঠিক আছে খানিকক্ষণ পর ৷’
বেসমেন্টটুকু ছিল খুব সরু আর মৃদু আলোয় ভরপুর ৷ বিশাল আকৃতির বাবা আর ক্ষুদ্রাকৃতি আলেঙ্কা ৷ মাথায় শুধু একটা শব্দই ভেসে আসল “ধার”৷ কিন্তু একটুও নড়তে পারছিল না সে ৷ বাবার পেছনে তার নতুন পনি-র পাশে দাঁড়িয়ে রইল সে ৷ অপেক্ষা করতে লাগল বাবার প্রস্থানের, যাতে সিলভা আর ক্যাটরিনা চলে আসতে পারে ৷ তাদেরকে নিয়ে তার ইচ্ছা ‘অ্যামেরিকা’র উদ্দেশ্যে পালিয়ে যেতে পারে অবশেষে ৷


**
স্লোভান থেকে ইংরেজি ভাষান্তর ক্রিস্টিনা জরাভিক রিয়েরডন ৷
==================================

[লেখিকা পরিচিতিঃ লিলি পোতপারা (জন্ম ১৯৬৫ সালে মারিবোর, স্লোভেনিয়ায় ) লেখক ও ফ্রিল্যান্স অনুবাদক যিনি বর্তমানে স্লোভেনিয়ায় Ljubljana শহরে কর্মরত আছেন ৷ বিভিন্ন সাহিত্য সাময়িকীতে তার লেখা প্রকাশিত হয়েছে ৷ এর মধ্যে গল্প সংকলন Zgodbe na dusek (Bottoms Up Stories, LUD Literatura, 2002) and Prosim, preberi (Please, Read Me, LUD Literatura, 2006) অন্যতম ৷ যার মধ্যে Zgodbe na dusek জিতে নেয় ২০০২ সালের স্লোভেনিয়ান বইমেলার নতুন লেখকের সাহিত্য সম্মান পরে ২০০৬ সালে পুনর্মুদ্রণ হয় এর ৷ বহু ইংরেজী উপন্যাসের সফল অনুবাদক হিসেবে এদের মধ্যে অন্যতম করমাক ম্যাকার্থির The Road যার জন্য ২০০৮ সালে Slovenian Literary Translators' Association-এর সম্মাননা লাভ করেন ৷
দুই সন্তানের জননী লিলি ফ্রেন্চ আর ইংরেজি ভাষা এবং সাহিত্যের উপর ব্যাচলর ডিগ্রি লাভ করেন Ljubljana বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদ থেকে ৷ এছাড়াও স্কুল ও কলেজেই পারফর্মিং আর্টস্ (সংগীত)এর উপর দুটো ডিপ্লোমা লাভ করেন ৷ এদিকে সার্বিয়ান, সুইডিশ, ইংরেজি ও গায়েলিক ভাষায় তার ছোটগল্পের অনুবাদ হয়েছে ৷]

*উপরের ছবিতে গল্প সংকলন Zgodbe na dusek (Bottoms Up Stories, LUD Literatura, 2002)এর প্রচ্ছদ, যেখান থেকে The Surprise বা চমক গল্পটি সংগৃহীত ও পাশে লেখিকা ৷
০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৫:০২
২২টি মন্তব্য ২২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আরো একটি সফলতা যুক্ত হোলো আধা নোবেল জয়ীর একাউন্টে‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪০



সেদিন প্রথম আলো-র সম্পাদক বলেছিলেন—
“আজ শেখ হাসিনা পালিয়েছে, প্রথম আলো এখনো আছে।”

একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আজ আমি পাল্টা প্রশ্ন রাখতে চাই—
প্রথম আলোর সম্পাদক সাহেব, আপনারা কি সত্যিই আছেন?

যেদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১১

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

ছবি এআই জেনারেটেড

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ প্রতিবাদের ভাষা নয় কখনোই
আমরা এসব আর দেখতে চাই না কোনভাবেই

আততায়ীর বুলেট কেড়ে নিয়েছে আমাদের হাদিকে
হাদিকে ফিরে পাব না... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×