somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রসঙ্গ যখন “ডুব”

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১২:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কয়েকদিন যাবৎ “ডুব” সিনেমাটি নিয়ে মাঠ গরম হয়ে আছে। ভেবেছিলাম পক্ষে বিপক্ষে কোন ধরনের মন্তব্য করবো না। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ এটার প্রকাশের পক্ষে। আর আমি এটার প্রকাশের বিপক্ষে। সবার চিন্তাধারা এক হবে, সবার চিন্তার কোণ এক হবে তা আমি মানি না। তাদের যুক্তিটাও সঠিক! বাক স্বাধীনতার জন্য সিনেমাটির মুক্তি হোক, কোন একজন ব্যক্তির জন্য সিনেমাটা থেমে থাকতে পারে না। বিশেষ করে যখন পরিচালক মশাই, ১৭ লক্ষ ডলার লগ্নি করেছেন। বাংলা সিনেমার বাজারে, এই সিনেমাটি ক্ষতির মুখে পড়লে, একই সাথে অনেকেই সিনেমা বানাতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। তবে পরিচালক মশায়ের সিনেমা শুরুর আগেই, বুঝা উচিত ছিল, কতটা সামলে উঠিতে পারবেন তিনি?

তবে আমার কাছে মনে হচ্ছে, যে কোন সিনেমা, যদি কোন বিশিষ্ট ব্যক্তির সাথে ৮০-৯০% মিলে যায়, তাহলে সাধারণ দর্শক কিন্তু ঐ ব্যক্তির কাহিনী হিসেবেই এটাকে মনে করবে। একজন ব্যক্তির জীবনী নিয়ে সিনেমা হতেই পারে। এবং বিখ্যাত ব্যক্তি হলে, সবার সেটা জানা বা দেখা উচিত। কিন্তু একজন ব্যক্তি জীবনীর মত করে সিনেমা বানিয়ে ভুল ইনফরমেশন গেলে, তাতে ব্যাক্তির পরবারের জন্য ক্ষতির কারন হতে পারে! শুধু তার পরিবার না, মানুষের কাছে চলে যাবে ভুল তথ্য। যেগুলো মানুষের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলতে পারে।

ব্যক্তি হুমায়ুন আহমেদকে আমি পছন্দ করি আর নাই করি, সেটা আমার ব্যক্তিগত ব্যপার। কিন্তু ব্যক্তি হুমায়ুন আহমেদ বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মানুষ। হুমায়ুন আহমেদ বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখক ছিলেন! তার জীবনীর থিমে কেউ গল্প লিখলে, সেটাকে তার জীবনীই বলবে সবাই। যতই না করা হোক না কেন? আবার এই ছবির একজন গুরুত্বপূর্ণ অভিনেত্রী ‘রোকেয়া প্রাচী’ও বলেছেন, এটা হুমায়ুন এর জীবনী নিয়েই করা। পরিচালক যতই না করুক, না বলুক, সেটা কেউ বুঝবে না। বরং না করলেও মানুষ আরও বেশি ভাববে। কারন, ‘কেন একজন ব্যক্তিরই নাম বারবার আসতেছে, অন্য কারোর নাম না।'



ছবি যদি করতেই হয়, তবে সেক্ষেত্রে ১০০% মিল রেখেই করা উচিত ছিল। আমি মনে করি, যেকোন বিখ্যাত লোকজনদের কাহিনী নিয়ে সিনেমা হতেই পারে। কিন্তু সেটা যেন সত্যিকারে জীবনী নিয়েই হয়। তথ্য কম থাকুক, কিন্তু যেন ভুল তথ্য না থাকে! আর তাছাড়া অনেক বিষয়ে তার দুই পরিবারের আপত্তি থাকতেও পারে। সেটা যেকোন বিষয়েই। যেমন ধরুন, আমি মদ খাওয়াকে কোন বিষয় মনে করি না। এটা স্বাভাবিক ব্যপার। কিন্তু এই দেশের বেশিরভাগ মানুষের কাছে মদ খাওয়া মানেই অনেক বাজে ব্যপার। এখানে পরিচালক যদি সেটা দেখায়, তাহলে পরিবারের আপত্তি থাকাটাই স্বাভাবিক। একই সাথে লেখকের ইমেজ অন্য দিকে মোড় দিতে পারে। কিন্তু দেখা গেল বাস্তবতার সাথে কোন মিলই নেই। শুধু থিমটা ছাড়া। তাহলে সেটা কি সঠিক হবে? তাছাড়া স্পর্শকাতর কোন কিছু মনে হতেই পারে পরিবারের কাছে, যেটা সেই পরিবারের (যে কোন একটি) ভবিষ্যৎ এ চলার জন্য সমস্যা হতে পারে।

ধরুন, হুমায়ুন আহমেদ না, তসলিমা নাসরিন কিম্বা হুমায়ুন আজাদের, কিম্বা বঙ্গবন্ধুর জীবনীর কাহিনী দিয়ে কেউ সিনেমা বানালো। ব্যক্তির নাম আলাদা, কিন্তু মূল থিম এক। তবে ভিতরে অনেক ভুল তথ্য। তাহলে কি কেউ সহজ ভাবে মেনে নিবে? তাহলে হুমায়ুন আহমেদ এর জীবনী নিয়ে “ডুব” সিনেমাটা কেন মেনে নিবেন?

বাক স্বাধীনতা মানেই না,
‘বিশেষ কোন ব্যক্তির জীবনী পাল্টে দেওয়া!’
‘কোন পরিবারের অনুমতি বিহীন তাদের পরিবারের বিশেষ ব্যক্তিকে নিয়ে ছবি করা!’

অনেকেই বলেছেন, সিনেমার কাহিনী তো কোন না কোন মানুষের, পরিবারের কাহিনী নিয়ে করা। কিন্তু “হাজার বছর ধরে” মন্টু মিয়ার কাহিনী কিম্বা ব্যক্তি তাহসিবের কাহিনী আর হুমায়ুর আহমেদের কাহিনী এক না। মন্টু মিয়া ঘরে ঘরে আছে। তাহসিব কাহিনীও কেউ জানে না, কেউ সেভাবে চিনে না, যে কোন প্রভাব পরবে। কিন্তু হুমায়ুন আহমেদের সাথে তাহসিবের তুলনা চলে না।
বিখ্যাত ব্যক্তিদের নিয়ে অনেক সিনেমা হয়েছে, হতেই পারে। কিন্তু সেটা অনুমতি নিয়েই হয়েছে। অথবা বহু আগে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের নিয়ে। তারপরও ‘হাছন রাজা’র জীবনী নিয়ে বানানো সিনেমা নিয়েও আপত্তি হয়েছিল তার পরিবার থেকে। যদিও তার আসল পরিবার বেঁচে নেই। কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়েও অনেকেই কিছু করতে গেলে খিলখিল কাজীর অনুমতি নিয়ে নেয়।
আরেকটি বিষয়, একজন লেখক মারা যাবার পর প্রায় ৫০ বছর (বছরে সংখ্যাটা মনে আসছে না, ৫০ নাও হতে পারে। তবে সংখ্যা নেহাত কমও না) তার লেখক স্বত্ব থাকে। তার জীবনীও সেই স্বত্বের মাঝেই পরে। সেক্ষেত্রেও শাওন বাধা দিতে পারেন। একজনের লেখায় দেখলাম, শাওন নাকি ‘হুমায়ুন আহমেদ’কে বেচে (বিক্রি করে) চলেন। কথা সত্য হলেও সেই ক্ষমতা কিন্তু আমি আপনি দেই নাই। লেখক হুমায়ুন আহমেদ স্বয়ং দিয়ে গেছেন, তাহলে আমি আপনি কে? আমিও তো বাপের কেনা জমি বিক্রি করে খাই, আর উনি লেখা বিক্রি করে খান। পার্থক্য তো রইল না! আমার বাবা বা অন্য কেউ যদি লেখক হতেন, তাহলে কি আমিও তাই করতাম না? এটা কি আমার অধিকার হত না?

ফারুকীর ঢেঁড়স চাষ, আর মুক্তমনা, মুক্তচিন্তা নিয়ে কথা নিয়ে আমার কোন বক্তব্য নেই। রবং তিনি আলোচিত হবার জন্যই এসব করেন। যত জনপ্রিয় হবেন, ততই তার ব্যবসায়িক লাভ। বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ মুক্তমনাদের না জেনেই খারাপ চোখে দেখে, সেটা তিনি জানেন। তাই এই সুযোগ সম্ভবত তিনি নিয়েছেন। আর সিনেমার ক্ষেত্রেও তিনি সম্ভবত, সমলোচনা আলোচনা যতই হবে, ততই সুযোগ গ্রহণ করে নিবেন। তিনি জানেন, তাতে সিনেমার হিট বাড়বে বই কমবে না। সবাই যেহেতু এই নিয়ে লিখছেন, ফেসবুকেও অনেক আলোচনা হচ্ছে। তাই আমিও লিখলাম। আমি তাহসিব লেখায়, সিনেমাটির হিটে কোন প্রভাব পরবে না, বরং যা হবার তা হয়েই গেছে। আমি জানি, আজ অথবা কাল এই সিনেমা মুক্তি পাবেই। এবং ব্যপক হিটও হবে এই ছবি। যেটাই ফারুকী চেয়েছিলেন।

সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১২:১৯
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×