চিত্রনাট্য ও পরিচালনায়ঃ বদিউল আলম খোকন
অভিনয়েঃ সাকিব খান,সাহারা,মিশা সওদাগর,মেহেদী,প্রবীর মিত্র,উজ্বল সহ আরো অনেকে।
কাহিনী সংক্ষেপঃ বিশেষ চরিত্রে অভিনয় করা উজ্বল দেশের লাখ লাখ ছেলেকে মাদকের ছোবল থেকে বাচাতে নিজের ছেলে কিং কে মৃত্যু'র দিকে ঠেলে দেয়।পেশাদারি খুনী আর মাদক ব্যবসায়ীদের ছাড় দিতে নারাজ উজ্বল।
১৫ বছর পর।
পালিত ছেলে সাকিব বাবার আদর্শে অনুপ্রানিত হয়ে ডন থেকে কিং ডন নাম্বার ওয়ান হয়ে যায়।একের পর এক মাদক আর পেশাদারি খুনীদের শক্ত হাতে শায়েস্তা করতে থাকে শাকিব খান।সহযোগী বাল্যবন্ধু মেহেদী এবং বিশাল বাহিনী সাকিবের কাজে সহায়তা করতে থাকে।পরোপকারি সাকিব অসহায়দের পাশে দাড়ায়।হঠাত একদিন রাস্তার জ্যামে নায়িকা সাহারা সাথে দেখা।সাকিব তার মনের মত দায়িত্বশীল মেয়ে পেয়ে যায়,সাকিব প্রেমে পরে যায়।সাহারা চাপা মারে সে ডন নাম্বার ওয়ানের সাথে প্রেম করে অথচ,সাকিব তার সামনে।লোকজন তদবিরের জন্য সাহারাকে ঘুষ দেয়।সাকিব আড়াল থেকে সব কাজ করে দেয়।সাহারা বুঝতে পারে না কে ডন নাম্বার ওয়ান।হাউজিং প্রকল্পের দখলদারিত্ব মুক্ত করা,হাসপাতালের অবোইধ মালিকানা উচ্ছেদ,শপিং মল কিনে দেয়া,ছুরির আঘাতে হাসপাতালে যাওয়া।অতঃপর প্রেম,গান,নাচা-নাচি।ডন নাম্বার ওয়ান একটি আতংকের নাম,ছিন্নমূলদের ভালবাসার নাম,একজন প্রেমিকের নাম,একজন সুনাগরিকের নাম।সাকিবের অসুস্থতায় হাসপাতালের সামনে লোকজনের ভীর,মাদক ও পেশাদারি খুনীদের অস্থিরতাই যার প্রমান।পুলিশ বাহিনী ইন্টারপোল থেকে খবর পায় হংকং এ ডন লুইস কে খুন করে নিজে ডন ঘোষনা করে বাংলাদেশে আসছে মিশা সওদাগর।সার্ক ভুক্ত দেশ গুলোতে মাদক ব্যবসা করতে বাংলাদেশকে বেছে নেয় মিশা,কিন্তু বাধ সাধে সাকিব।সাকিবকে নানান রকম ভাবে হাত করতে ব্যর্থ হয় মিশা।সাকিব মিশা কে দেশ ছাড়ার জন্য ৭২ ঘন্ট সময় বেধে দেয়।মিশা উল্টো সাকিবের একের পর এক প্রিয় স্বজন দের কে খুন করতে থাকে।সহযোগী মেহেদী তার ছলনাময়ী নায়িকাকে বাচাতে গিয়ে মারপিটের এক পর্যায়ে মারা যায়।প্রতিশোধ পরায়ন শাকিব-মিশার নিকট বন্দী থাকা সাহারাকে উদ্ধার করতে ট্রেন স্টেশনের নিকট লাল দূর্গোতে যায়।কঠিন মারপিটের আর গোলাগুলিতে মিশা সহ তার বাহিনীর সবাই মারা পরে।পুলিশ এসে সাকিবকে ধরে নিয়ে যায়।কোন সাক্ষ্য প্রমান ছাড়াই ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পায় সাকিব।
এই ছিলো সিনেমার মোটা-মুটি কাহিনী।
কিছু কথাঃ
সিনেমা চলাকালীন সময়ে মাঝে মধ্যেই দর্শকরা বিল্লা বিল্লা করে দুয়োধ্বনি দিচ্ছিল।সম্ভবত তামিল ছবি বিল্লা'র সাথে কিছু কিছু দৃশে মিল থাকার কারণে।দর্শকদের মধ্য যে হিন্দী আর তামিল ছবির প্রভাব আছে তা স্পষ্ট।কাহিনীকার অমল সরকারকে এই দিকে মনযোগী হবার দরকার ছিলো।অতীতে অনেকেই বাণিজ্যিক ভাবে বিদেশী সিনেমা নকল করে ব্যবসা আর জনপ্রিয়তা পেয়েছে।কিন্তু,এরকম ছায়া অবলম্বনে সিনেমা নির্মান করে দর্শকদের সাথে চিট করা খুবই তাড়া-তাড়ি ধরা পরে যেতে হবে।কারণ,মোবাইল ফোনে সিনেমার সহজলভ্যতার কল্যাণে দর্শকরা আগের তুলনায় বেশি রকমের সিনেমা সম্পর্কে সচেতন।
সিনেমায় প্রথম গান অনেক দেরীতে শুরু হয়,পরবর্তীতে তা পর পর হতে থাকে।যা বার বার বিরক্ত হতে বাধ্য করেছে।গানের দৃশায়ন আর সিনেমায় দৃশ্যায়নের মধ্য কোন মিল নেই।গান গুলো সিনেমার বহির্ভূত মনে হয়েছে।এই মুহূর্তে কোন গানের কথাই মনে পড়্ছে না-এর জন্য গানের লিরিকস,দৃশ্যায়ন,সূর,গানের শিল্পীরি দায়ী।গানের কথা গুলোর সাথে কাহিনী মিল নেই বললেই চলে।ছন্দের সাথে মিল রেখে সাকিব-সাহারা জুটি নাচে সফল।নাচে সহ শিল্পীদের ভূমিকাও প্রশংসা জনক।
মারপিটের দৃশ্য গুলো এলো মেলো এবং মেকি।তবে কাহিনীর সাথে আস্তানা বা দৃশ্যায়ন সত্যই প্রশংসার দাবী রাখে।মারপিটে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকে আরো দায়িত্বশীল হওয়া উচিত ছিলো।প্রায় সকল ছবিতেই একই রকম দুঃখ,কান্না,আনন্দ হাসির জন্য ব্যবহৃত ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের ব্যবহার এই সিনেমাতেও তার বাহিরে নেই।
সিনেমায় শট আর দৃশ্যায়নে অনেক ভূল ছিলো-দুই ডনে গাড়ী বহর একই দিক হতে আসছে মনে হয়েছে।হেলিকাপ্টার সংযোজনে আলাদা মাত্রা যোগ হলেও তার দৃশ্যায়ন এলো মেলো।বোমা মেরে বৃদ্ধা শ্রম উড়ে দেয়ার দৃশ্যটা সম্ভবত বিদেশী সিনেমা থেকে ধার করা।একই ভবনে স্কুল,হাসপাতাল,বাড়ি ইত্যাদি দেখানো এবং একই রাস্তায় জ্যাম,গাড়ি বহর,মারপিট,এয়াকসিডেন্ট ইত্যাদি রিপিট করাতে গ্রহনযোগ্যতা কমেছে।
কিছু কিছু জায়গায় প্রপস আর কস্টিউম কন্টিনিউটি ভয়ানক ভাবে ব্রেক হয়েছে।একই দৃশ্যের মধ্যে ক্লোজ আপে চরিত্রের লুকিং আর কসটিউম কিভাবে পরিবর্তন হতে পারে তা পরিচালকই ভালো জানেন।অনেক দৃশ্যেই শট টু শটের একশন কন্টিনিউটি ঠিক ছিলো না।দৃশ্যে চরিত্রের একশন কন্টিনিউটির জন্য দায়ভার সম্পাদকের।শটের কাটিং পয়েন্ট ধরতে পারেননি।
দীর্ঘক্ষন ধরে ড্রলি করা-যা দেখতে বিরক্তিকর।একই দৃশ্যে একাধিক ক্লোজ আপ,একসেস অতিক্রম করা,ব্যাগ্রাউন্ড কন্টিনিউটি ব্রেক থাকার কারনে কাহিনীর মধ্য ঢুকতে কষ্টসাধ্য হয়েছে।অনেক দৃশ্যই অস্পষ্ট,তা প্রজেকশন বা চিত্রগ্রাহকের ব্যর্থতা হতে পারে।
ছিন্নমূল শিশুদের দিয়ে ড্রাগ ব্যবসা করানো,সার্কভুক্ত দেশ গুলোতে মাদক ব্যবসা করতে বাংলাদেশ,পুলিশের দায়িত্বহীনতার পরিচয় হতাশার না আশার তা বলা মুশকিল।ইন্টারপোল থেকে খবর পেলেও পরবর্তীতে পুলিশের কোন ভূমিকা দেখা যায়নি।অধারাবাহিক ভাবে একাধিক কাহিনীর আগমনের ফলে মাঝে মধ্যেই ডন নাম্বার ওয়ান বদলে প্রেমিক নাম্বার ওয়ান মনে হয়েছে।
সিনেমা জুড়ে কাবিলার অভাব স্পষ্ট।দর্শকদের মেহেদীকে নিয়ে বাজে মন্তব্যতেই বোঝা যায় মেহেদী অভিনয়ে নিজের জায়গাটা ঠিক রাখতে পারেনি।সহ অভিনয়ে হাস্যরস নিয়ে আসলে আরো প্রনবন্ত হয়ে উঠতো।পুরো সিনেমা জুড়েই হাস্যরস অনুপস্থিত।বরাবরের মতই সাকিবের চিরচেনা গেটআপ যা প্রায় ছবিতেই একই রকম দেখা যায়।পরিচালক এই বিষয়্টা নিয়ে আরেকটু ভাবতে পারতেন।সাকিবের জায়গায় সাকিব।সে কি কারনে বেশি পারিশ্রমিক নেয় তা অভিনয় আর আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তাই প্রমান করে।মিশা সওদাগরকে আরো পাকাপোক্ত ভাবে উপাস্থাপন করা যেতো।প্রবীর মিত্রকে আরো অভিনয়ের জায়গা ছেড়ে দিতে হতো।বেচা বিক্রির জন্য সাহারাকে না নিয়ে অন্য কাউকে নিয়ে ভাবার দরকার ছিলো।
সবশেষে যেটা বলতে হয়-এই রকম করে আমাদের মতো নিম্নবিত্ত,মধ্যবিত্ত শ্রেণীর দর্শকদের হলে নিয়ে গিয়ে ধোকা দেয়ার কোন মানে হয় না।টিকেটের সম পরিমান টাকা দিয়ে মোবাইল ফোনে এর চেয়ে অনেক অনেক ভালো মানের গান,নাচ,মারপিট আর প্রেমের তামিল,হিন্দী অথবা কলকাতার সিনেমা উঠায়ে দেখতে পাওয়া যেতো।আশার কথা হলো এবারের ঈদুল আযহায় ব্যবসা সফল সিনেমার মধ্য ডন নাম্বার ওয়ান অন্যতম।
মেহরাব হাসান জাহিদ
গোবিন্দগণ্জ,গাইবান্দ্ধা
৩১-১০-১২
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই নভেম্বর, ২০১২ বিকাল ৫:৩৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



