প্রিয় ব্লগার ভাই-বোনেরা ,
বিজ্ঞানীদের মতে পৃথিবীর বয়স ৪.৬ বিলিয়ন । কোটি কোটি বছর পার হয়ে গিয়েছে । আমরা কয় জনে জানি পৃথিবীর সঠিক ইতিহাস ?
কি কি উত্থান - পতন ঘটেছে এই পৃথিবীর বুকে ?আর কিভাবেই বা জানব ? আমরা মানুষেরা আর কয় বছর বাচি ? বেশি হলে একশ বছর । গড়ে ৭০/৮০ বছর । আধুনিক বিজ্ঞানের গবেষণার ফলে যা জানি তাই । এমন যদি হতো আমরা অতীতে ফিরে যেতে পারতাম টাইম মেশিনে করে, তবে দেখে আসতে পারতাম আগেকার মানুষের জীবন যাত্রা কেমন ছিলো । তাহলে কতইনা ভাল হতো । অনেক কিছু জানতে পারতাম । কিন্তু সেটা তো হচ্ছে না । তাই এখন এমন একজন ব্যক্তির বক্তব্য দেয়া হলো যিনি সত্যি সত্যি অনেক দিন ধরে বেচে আছেন এবং পৃথিবী ধ্বংস হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত বেচে থাকবেন । চলুন দেখা যাক ওনার কথা থেকে আমরা কিছু শিখতে পারি কিনা , জানতে পারি কিনা !
অনেক দিন আগের কথা । বনি ইসরাঈলী এক রাজার সাথে হযরত খাজা খিজির (আঃ) এর সঙ্গে দেখা হয়েছিলো । রাজা খিজির (আঃ) কে উদ্দেশ্য করে বল্লেন, 'জনাব, আমার অনেক দিনের শখ আপনার কাছ থেকে কিছু বিচিত্র গল্প কাহিনী শুনব । আপনার মত জ্ঞানী-গুনী এবং অভিজ্ঞ ব্যক্তি এই পৃথিবীতে খুব কম । দৃশ্য-অদৃশ্য অনেক কিছুই আপনার জানা । জলে-স্হলে, আকাশে, পাতালে সর্বত্রই আপনার অবাধ বিচরণ । আপনার জীবনের বিচিত্র অভিজ্ঞতা থেকে দয়া করে আমাকে কিছু শুনান ।'
খিজির (আঃ) বল্লেন,'পৃথিবীর কত ঘটনাইতো বিচিত্র । আবার অনেক আজব ঘটনাই অনেকের কাছে আজব বলে মনে হয়না । তবে ছোট্ট একটি ঘটনা আমি বলব যা থেকে বোঝা যাবে দুনিয়াটা কত অদ্ভুত ।
'হাজার বছর আগেকার কথা । আমি একটি বড় শহরের উপর দিয়ে যাচ্ছিলাম । শহরটি অত্যন্ত জনবহুল এবং সমৃদ্ধশালী ছিল । শহরের অধিবাসীদের আমি জিজ্ঞেস করলাম, 'কত বছর আগে এই শহরের গোড়াপত্তন হয়েছে ?' কিন্তু কেউ এর সঠিক জবাব দিতে পারল না ।
'পাচশো বছর পর আবার আমি সেই এলাকা দিয়ে যাচ্ছিলাম । কিন্তু তখন সেখানে কোন শহরের অস্তিত্ব নেই । জায়গাটা ঘন বন জঙ্গলে পরিণত হয়েছে । দেখলে মনেই হয়না যে এখানে একসময় একটি বড় শহর ছিলো ।
'আমি লোকজনকে জিজ্ঞেস করলাম, 'এখানে যে একটি বড় শহর ছিলো সেটির কি হলো ?' লোকেরা অবাক হয়ে বলল,"কি যা তা বলছেন আপনি ? এই জঙ্গলে আপনি শহর দেখলেন কোথায় ? আপনার মাথা কি খারাপ হয়ে গেলো ? আমার জীবনেও শুনিনি যে এখানে কোন শহর ছিলো ।"
'আরও পাচশো বছর পরে আবার আমি সেই জায়গা দেখতে গেলাম । তখন সেখানে কোন বন জঙ্গলের চিহ্নও নেই । সেখানে খুব বড় ও খরস্রোত নদী প্রবাহিত হচ্ছে । নদীতে জাল ফেলে জেলেরা মাছ ধরছে ।
'জেলেদের জিজ্ঞেস করলাম,'ভাই সব এখানে যে একটা ঘন বন ছিলো তার কি হলো ?"
ওরা আমার কথায় হেসে উঠল, " এখানে বন ছিলো সেকথা আপনি কোথায় শুনলেন ? দেখতে পাচ্ছেন না কত বড় একটি নদী বয়ে যাচ্ছে, কখনও আমরা শুনিনি যে এখানে কোন বন ছিলো ।"
আরও পাচশো বছর পর আমি সেই জায়গা দিয়ে যাচ্ছিলাম । কিন্তু সেখানে কোন নদী দেখতে পেলাম না । জায়গাটা বিরাট এক খোলা ময়দানে পরিণত হয়েছে ।নদীটি ভরাট হয়ে গেছে ।
'এলাকার লোকজনকে জিজ্ঞেস করলাম, "এখানে যে একটি বড় নদী ছিল তার কি হয়েছে, বলতে পারো ?"
লোকজন আমার কথায় দারুন বিস্মিত হয়ে বলল, " কি বলছেন আপনি ? নদী ! এখানে নদী কোথা থেকে আসবে । বাপদাদার আমলেও তো কখনও শুনিনি যে এখানে কোন নদী ছিল । আপনার মাথা ঠিক আছে তো ভাই ? "
'এবং আরও পাচশো বছর পর ওই জায়গা দেখার জন্য আমি আবার গিয়েছিলাম । তখন সেখানে খোলা মাঠ চোখে পড়ল না । মাঠের জায়গায় শোভা পাচ্ছিল এক বিরাট শহর । এটা প্রথম শহরটার চেয়ে জনবহুল ও সমৃদ্ধ ছিল ।
'আমি শহরের লোকজনকে জিজ্ঞেস করলাম, "কখন থেকে এই শহরের গোড়াপত্তন হয়েছে কেউ বলতে পারো ?"
"সেটা কি করে বলব," জবাব দিল লোকেরা । "শত শত বছর ধরেই এই শহর এখানে রয়েছে । এর কোন সঠিক তারিখ কেউ বলতে পারেনা ।"
' আমি হেসে তাদের কাছ থেকে বিদায় নিলাম ।'
এই গল্প বলে হযরত খিজির (আঃ) বণি ইসরাঈলী রাজার দিকে তাকিয়ে বললেন, 'এখন আপনিই বলুন এই ঘটনা কি বিচিত্র নয় ?'
এই বলে খাজা খিজির (আঃ) রাজার সামনে থেকে অদৃশ্য হয়ে গেলেন ।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই নভেম্বর, ২০০৮ বিকাল ৪:৪৩