তাবিজ বিক্রেতা ‘দেউল্লা’ যুদ্ধের পরেই হয়ে যান আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী
তরিকুল ইসলাম সুমন:
১৯৭১ সালে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী সরাসরি কোনো রাজনৈতিক দলের সমর্থক না হলেও মাওলানা হিসেবে পিরোজপুর এলাকায় ‘পাঁচ তহবিল’ নামে একটি সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন। যাদের প্রধান কাজ ছিল মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিকামী বাঙালি এবং হিন্দুদের বাড়িঘর দখল এবং তাদের সম্পত্তি লুট করা। লুণ্ঠনকৃত সম্পদ গনিমতের মাল হিসেবে নিজে ভোগ করেছেন এবং পাড়েরহাটে লুটের মাল বিক্রির জন্য দোকানও খুলে ছিলেন। এছাড়াও তিনি লুটের আসবাবপত্র দিয়ে শ্বশুরকে ঘরও তুলে দিয়ে ছিলেন।
বর্তমানে জামায়াতের নির্বাহী সদস্য আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী পিরোজপুর জেলার তৎকালীন ইন্দুরকানীর (জিয়ানগর) সাউথখালী গ্রামে ১৯৪০ সালের ২ ফেব্র“য়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মরহুম ইউসুফ আলী শিকদারের ছেলেকে ‘দেউল্লা’ নামে সকলে চিনত। সংসার চালানোর জন্য পাড়েরহাটে তার একটি ছোট মুদি দোকান থাকলেও তিনি মূলত তাবিজ বিক্রি করতেন বলে স্থানীয় জনগণ, মুক্তিযোদ্ধা, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যসহ মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখা বিভিন্ন বই থেকে জানা গেছে।
জানা যায়, ১৯৭১ সালের ৬ মে পিরোজপুর থানার সামনে থেকে সাঈদীর সহযোগীরা লেখক হুমায়ূন আহমেদের বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদকে ধরে নিয়ে যায় বালেশ্বর নদীর পাড়ে। সেখান থেকে তিনি আর ফিরে আসেননি। ৭ মে আবার তাদের বাসায় সাঈদীর নেতৃত্বে লুটপাট হয়। পাকিস্তান বাহিনীর ক্যাপ্টেন আজিজের সঙ্গে তার সম্পর্ক থাকায় বিভিন্ন সময় জোর করে নারীদের পাঠানো হতো পাকিস্তানি ক্যাম্পে। ‘পাঁচ তহবিলে’র সদস্যরা হলেন, দানেশ মোল্লা, মোছলেম মাওলানা, আব্দুল করিম, আজাহার তালুকদার ও সেকান্দার।
মুক্তিযুদ্ধের সময়ে সাঈদীর অপকর্ম সম্পর্কে মানিক পশারী বলেন, একাত্তরে সালের ৮ মে সাঈদী আমার চোখের সামনে ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। টাকা-পয়সা সব কিছু লুটে নিয়েছে। এসময় তিনি তার ঘরের পোড়া অংশ এবং টিনের গায়ে লেগে থাকা গুলির চিহ্ন দেখান। তারা যখন এই কাণ্ড ঘটিয়েছে তখন সাঈদী নিজে দাঁড়িয়ে থেকে এই তাণ্ডবে উৎসাহ দিয়েছেন।
মুক্তিযোদ্ধা মাহাবুবুল আলম জানান, ১৯৭১ সালে এরা পাড়েরহাট বন্দরের ব্যবসায়ী বেনিমাধব সাহা, নগরবাসী সাহা, তারক সাহা এবং উমিতপুর গ্রামের হিন্দু পাড়ার চিত্তরঞ্জন তালুকদার, রবি তালুকদারসহ আরো অনেকের বাড়ি লুট করেছিল। এরাই বিনা বালীকে একাত্তরের ৪ জুন নারকেল গাছের সঙ্গে বেঁধে হত্যা করেছে।
পিরোজপুর জেলা সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার গৌতমনারায়ণ রায়চৌধুরী বলেন, বিএনপি আমলে সাঈদী যুদ্ধাপরাধী নয় মর্মে স্বাক্ষর অভিযান শুরু করেছিল। আমি তখন মাইকিংয়ের ব্যবস্থা করেছিলাম যাতে কেউ স্বাক্ষর না করে। এ বিষয়ে পিরোজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা একেএমএ আউয়াল বলেন, সাঈদী যে যুদ্ধাপরাধী এর অনেক প্রমাণ আছে। জিয়ানগরের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, যুদ্ধকালীন সময় এই সাঈদী ছিল দেলোয়ার শিকদার।
মানিক পশারী পিরোজপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রফিকুল ইসলামের আদালতে হত্যা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের অভিযোগ এনে ১৩৫/০৯ নং ধারা ৩০২, ৩৮০, ৪৩৬ ও ৩৪ নং মামলা দায়ের করেছেন। এই মামলার প্রধান আসামি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। অন্য তিন আসামি হলেন, মো. মহসীন, মমিন হাওলাদার ও হাকিম ক্বারী। মামলার এজাহারে বলা হয়, বাদুরার ইব্রাহিম হাওলাদারকে ধরে হানাদার ক্যাম্পে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা অভিযোগ রয়েছে। এদিকে জিয়ানগর থানায় অনুরূপ আর একটি মামলা দায়ের করেছেন মুক্তিযোদ্ধা মো. মাহাবুবুল হাওলাদার। এই মামলার প্রধান আসামিও দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। অন্য তিনজন হলেনÑ তার সহযোগী হিসেবে উল্লেখিত মো. হাবীবুর রহমান মুনসি, মো. মোস্তফা হাসান সাঈদী ও মাওলানা মোসলেউদ্দিন।
১৯৭১ সালের ১৯ ডিসেম্বর দেলোয়ার শিকদার পিরোজপুর থেকে পালিয়ে যান। ১৯৮৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত তিনি পলাতক ছিলেন।
বি.দ্র: একাত্তরের যুদ্ধাপরাধ এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, একাত্তরের ঘাতক দালালদের অতীত বর্তমান গ্রন্থ এবং স্থানীয় জনগণ, মুক্তিযোদ্ধা ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সঙ্গে আলাচ চারিতার মাধ্যমে প্রতিবেদনটি তৈরি
করা হয়েছে।
দৈনিক আমাদের সময় / ৪ এপ্রিল ২০১০
আলোচিত ব্লগ
বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...
বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন
আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।
১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন
৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন
১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।