somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যুদ্ধাপরাধীর অতীত ঃ দেলওয়ার হোসেন সাঈদী

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১০ সকাল ১০:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তাবিজ বিক্রেতা ‘দেউল্লা’ যুদ্ধের পরেই হয়ে যান আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী
তরিকুল ইসলাম সুমন:


১৯৭১ সালে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী সরাসরি কোনো রাজনৈতিক দলের সমর্থক না হলেও মাওলানা হিসেবে পিরোজপুর এলাকায় ‘পাঁচ তহবিল’ নামে একটি সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন। যাদের প্রধান কাজ ছিল মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিকামী বাঙালি এবং হিন্দুদের বাড়িঘর দখল এবং তাদের সম্পত্তি লুট করা। লুণ্ঠনকৃত সম্পদ গনিমতের মাল হিসেবে নিজে ভোগ করেছেন এবং পাড়েরহাটে লুটের মাল বিক্রির জন্য দোকানও খুলে ছিলেন। এছাড়াও তিনি লুটের আসবাবপত্র দিয়ে শ্বশুরকে ঘরও তুলে দিয়ে ছিলেন।

বর্তমানে জামায়াতের নির্বাহী সদস্য আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী পিরোজপুর জেলার তৎকালীন ইন্দুরকানীর (জিয়ানগর) সাউথখালী গ্রামে ১৯৪০ সালের ২ ফেব্র“য়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মরহুম ইউসুফ আলী শিকদারের ছেলেকে ‘দেউল্লা’ নামে সকলে চিনত। সংসার চালানোর জন্য পাড়েরহাটে তার একটি ছোট মুদি দোকান থাকলেও তিনি মূলত তাবিজ বিক্রি করতেন বলে স্থানীয় জনগণ, মুক্তিযোদ্ধা, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যসহ মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখা বিভিন্ন বই থেকে জানা গেছে।

জানা যায়, ১৯৭১ সালের ৬ মে পিরোজপুর থানার সামনে থেকে সাঈদীর সহযোগীরা লেখক হুমায়ূন আহমেদের বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদকে ধরে নিয়ে যায় বালেশ্বর নদীর পাড়ে। সেখান থেকে তিনি আর ফিরে আসেননি। ৭ মে আবার তাদের বাসায় সাঈদীর নেতৃত্বে লুটপাট হয়। পাকিস্তান বাহিনীর ক্যাপ্টেন আজিজের সঙ্গে তার সম্পর্ক থাকায় বিভিন্ন সময় জোর করে নারীদের পাঠানো হতো পাকিস্তানি ক্যাম্পে। ‘পাঁচ তহবিলে’র সদস্যরা হলেন, দানেশ মোল্লা, মোছলেম মাওলানা, আব্দুল করিম, আজাহার তালুকদার ও সেকান্দার।

মুক্তিযুদ্ধের সময়ে সাঈদীর অপকর্ম সম্পর্কে মানিক পশারী বলেন, একাত্তরে সালের ৮ মে সাঈদী আমার চোখের সামনে ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। টাকা-পয়সা সব কিছু লুটে নিয়েছে। এসময় তিনি তার ঘরের পোড়া অংশ এবং টিনের গায়ে লেগে থাকা গুলির চিহ্ন দেখান। তারা যখন এই কাণ্ড ঘটিয়েছে তখন সাঈদী নিজে দাঁড়িয়ে থেকে এই তাণ্ডবে উৎসাহ দিয়েছেন।

মুক্তিযোদ্ধা মাহাবুবুল আলম জানান, ১৯৭১ সালে এরা পাড়েরহাট বন্দরের ব্যবসায়ী বেনিমাধব সাহা, নগরবাসী সাহা, তারক সাহা এবং উমিতপুর গ্রামের হিন্দু পাড়ার চিত্তরঞ্জন তালুকদার, রবি তালুকদারসহ আরো অনেকের বাড়ি লুট করেছিল। এরাই বিনা বালীকে একাত্তরের ৪ জুন নারকেল গাছের সঙ্গে বেঁধে হত্যা করেছে।

পিরোজপুর জেলা সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার গৌতমনারায়ণ রায়চৌধুরী বলেন, বিএনপি আমলে সাঈদী যুদ্ধাপরাধী নয় মর্মে স্বাক্ষর অভিযান শুরু করেছিল। আমি তখন মাইকিংয়ের ব্যবস্থা করেছিলাম যাতে কেউ স্বাক্ষর না করে। এ বিষয়ে পিরোজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা একেএমএ আউয়াল বলেন, সাঈদী যে যুদ্ধাপরাধী এর অনেক প্রমাণ আছে। জিয়ানগরের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, যুদ্ধকালীন সময় এই সাঈদী ছিল দেলোয়ার শিকদার।

মানিক পশারী পিরোজপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রফিকুল ইসলামের আদালতে হত্যা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের অভিযোগ এনে ১৩৫/০৯ নং ধারা ৩০২, ৩৮০, ৪৩৬ ও ৩৪ নং মামলা দায়ের করেছেন। এই মামলার প্রধান আসামি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। অন্য তিন আসামি হলেন, মো. মহসীন, মমিন হাওলাদার ও হাকিম ক্বারী। মামলার এজাহারে বলা হয়, বাদুরার ইব্রাহিম হাওলাদারকে ধরে হানাদার ক্যাম্পে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা অভিযোগ রয়েছে। এদিকে জিয়ানগর থানায় অনুরূপ আর একটি মামলা দায়ের করেছেন মুক্তিযোদ্ধা মো. মাহাবুবুল হাওলাদার। এই মামলার প্রধান আসামিও দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। অন্য তিনজন হলেনÑ তার সহযোগী হিসেবে উল্লেখিত মো. হাবীবুর রহমান মুনসি, মো. মোস্তফা হাসান সাঈদী ও মাওলানা মোসলেউদ্দিন।

১৯৭১ সালের ১৯ ডিসেম্বর দেলোয়ার শিকদার পিরোজপুর থেকে পালিয়ে যান। ১৯৮৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত তিনি পলাতক ছিলেন।

বি.দ্র: একাত্তরের যুদ্ধাপরাধ এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, একাত্তরের ঘাতক দালালদের অতীত বর্তমান গ্রন্থ এবং স্থানীয় জনগণ, মুক্তিযোদ্ধা ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সঙ্গে আলাচ চারিতার মাধ্যমে প্রতিবেদনটি তৈরি
করা হয়েছে।

দৈনিক আমাদের সময় / ৪ এপ্রিল ২০১০
১৫টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×