Click This Link
আজ কয়েকটি খেলা নিয়ে লিখবো। প্রায় ২০/২৫ বছর আগের স্মৃতি- কিছু কিছু ঝাপসা হয়ে গেছে। খেলার সাথীরা বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছে। কিন্তু যতটুকু মনে করতে পেরেছি, অনেক ভাল লাগছে। পুরনোদিনের সেই দূরন্তপনার কথা স্মরণ করতে গিয়ে এক অপূর্ব সুখে মনটা ভরে গেছে।
লাট্টু খেলা
লাট্টু ঘুরানো শিখতে বেশ ক'দিন লেগেছিলো। কিন্তু শেখার পর বড়ই আনন্দ! যারা পারেনা, বিশেষ করে জুনিয়ারদের ডেকে ডেকে দেখাতাম কিভাবে লাট্টু ঘুরাতে হয়, কিভাবে হাতে তুলে নিতে হয় ঘুরন্ত লাট্টু। এই খেলার কয়েকটা ভার্সন ছিলো। আমি এই মুহুর্তে কেবল একটির কথাই স্মরণ করতে পারছি।
একটা গোল দাগের মধ্যে সব অংশগ্রহণকারী একটা করে লাট্টু রাখতো। তারপর সবাই যার যার লাট্টু দিয়ে ঐ দাগের মধ্যে থেকে নিজেদের লাট্টু বের করার চেষ্টা করতো। যার লাট্টু বের হতো সে তাড়াতাড়ি সুতা পেঁচিয়ে মাটিতে মেরে তারপর লাট্টু হাতে উঠাতো। এভাবে যে সবচেয়ে পেছনে পরতো তার লাট্টুতে সবাই একটা করে খোঁচা মারতো। এমন ভাবে খোঁচা মারার চেষ্টা করা হতো যাতে সেই লাট্টু আর ব্যবহার উপযোগী না থাকে।
ডাঙ্গুলী খেলা
এই খেলাটা প্রচুর খেলেছি কিন্তু নিয়ম কানুন গুলো পুরোপুরি মনে নেই। (কেউ লিখে দিলে খুশী হবো) মনে আছে এই খেলার শ্লোকটি............'এরি দুরি তিল্লি চুরি'...........। দুই দলে খেলা হতো। একটা ছোট গর্ত থেকে 'গুলি' (৫/৬ ইন্চি লম্বা ছোট গাছের ডাল ছুরি দিয়ে কেটে বানানো) ছোঁড়া হতো। প্রতিপক্ষ চারদিকে ছড়িয়ে থাকতো, 'গুলি' ক্যাচ করতে পারলে একজনের দান শেষ হতো। ক্যাচ করতে না পারলে ডাং (মোটামুটি এক ফুট লম্বা গাছের ডাল) লক্ষ্য করে গুলি মারা হতো। ডাং এ লাগলে যে মেরেছে তার দান শেষ। তবে না লাগলে সেই গুলি বিশেষ ভাবে বাড়ি দিয়ে উঠিয়ে ডাং এর আঘাতে যতখানি সম্ভব দূরে পাঠিয়ে দেয়া হতো। তারপর ডাং দিয়ে গর্ত থেকে গুলির দৈর্ঘ্য মাপা হতো---'এরি দুরি তিল্লি চুরি'। যত বেশী দূরত্ব তত বেশী পয়েন্ট। এই গোনার ব্যাপারটা দারুণ উত্তেজনার ছিলো, সুযোগ পেলেই চুরি চামারীর চেষ্টা করা হতো।
চী বুড়ি
এই খেলাটাকে কি গোল্লাছুট বলে? আমি অবশ্য নিশ্চিত না। যাই হোক, এটা ছিলো মোটামুটি একটা মেয়েলী খেলা। দুই দলে ভাগ হয়ে খেলা হতো। একদলে একজন 'বুড়ি' ঠিক করা হতো। বুড়ি একটা সার্কেলের মধ্যে থাকতো, তাকে কেন্দ্র করে বাকীরা হাত ধরাধরি করে দাঁড়াতো। প্রতিপক্ষ থাকতো কাছাকাছি, তবে হাতের নাগালের মধ্যে নয়। লাইন ধরা অবস্থায় তাদের কাউকে ছুঁয়ে দিতে পারলে সে 'মারা' যাবে। আবার লাইন থেকে কেউ ছুটে গেলে প্রতিপক্ষের অন্য কেউ যদি তাকে ছুঁয়ে দেয় তাহলে ঐ লাইনচ্যুত জন 'মারা' যাবে। খেলাটার মূল অবজেক্টিভ হচ্ছে বুড়ি কে মাঠের অন্যপ্রান্তে একটা নির্দিষ্ট লাইন পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া। বুড়ি যদি এটা করতে পারে (প্রতিপক্ষের ছোঁয়া বাঁচিয়ে) তাহলে গেম। বুড়ির সহখেলোয়াড়দের কাজ হচ্ছে যতটা সম্ভব ডাইভার্সন তৈরী করে বুড়িকে সেই 'টাচ লাইন' পর্যন্ত যাবার সুযোগ করে দেয়া।
এই খেলায় জেতার জন্য বুড়িকে যেমন ভাল দৌড়বাজ হতে হয় সেইসাথে খুব চালাকও হতে হয়। সাথে সাথে পুরো দলকে ভাল লিড দেয়ার ক্ষমতাও থাকতে হয়।
চাক্কা চালানো
প্রচলিত অর্থে এটা কোন খেলা নয় কিন্তু আমাদের কাছে তো খেলাই ছিলো, দারুণ মজার এক খেলা। রিক্সার চাকা (টায়ার টিউব বাদ দিলে যেটা থাকে) কিংবা অন্য যেকোন প্রকারের গোলাকৃতির ধাতব পদার্থ দিয়ে বানানো হতো চাকা। চাকা ঘুরানোর জন্য হয় ছোট একটা কাঠি (রিক্সার চাকা হলে) অথবা বিশেষভাবে তৈরী আংটা নিয়ে বেরিয়ে পড়তাম চাকা চালাতে। নিজের এলাকায় চাক্কা চালাতে গিয়ে মুরুব্বীদের কাছে ধরা খাওয়ার ভয় ছিলো। তাই চাক্কা চালাতাম একটু দূরে গিয়ে- অন্য এলাকায়, বেশ একটা এডভেন্চার হয়ে যেত। কতদিন দুপুরের রোদে চাকা চালিয়ে বাসায় বকা খেয়েছি...........। ব্যান্ড দল নোভার একটা গান মনে পড়ে গেল।
"ভর দুপুরে চুপটি করে ঘর ছেড়ে যেতাম
কানামাছি ভোঁ ভোঁ করে সব ভুলে যেতাম
সন্ধ্যে যখন চারদিকেতে দুষ্টুমী সব ছেড়ে
জানলা দিয়ে ঢুকতে দেখে বাবা এলো তেড়ে
চুপটি করে দেখতুম আমার কোনখানে পালাই
জানতে এলে বলতো হেসে-
নাইরে নাইরে নাইরে মোর
খোকন কোথাও নাই"
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই মে, ২০০৯ ভোর ৫:২৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





