somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ক্যামেরুনের মেয়েরা এখনো আদিম বর্বরতার শিকার

২৬ শে আগস্ট, ২০১০ রাত ৯:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ক্যামেরুনের উত্তরে দুয়ালা থেকে কয়েক ঘণ্টার পথ ইয়াবাসী। ইয়াবাসীর একটি ঘরের দরজার বাইরে মাথায় হাত দিয়ে বসেছিলেন এমিলিয়েন দোম্বি নামের এক নারী। ঘরের ভেতরে তার মেয়ের হৃদয়বিদারক চিৎকার শুনেও তিনি মেয়ের পাশে ছুটে যাননি। কারণ তার মেয়ের বাড়ন্ত বয়স ঠেকাতে মেয়ের বুকে ঘঁষা হচ্ছে গরম পাথর। কারণ এটা তাদের সমাজের স্বীকৃত প্রথা। আর এ নির্মম প্রথার স্বীকার তার মা এমিলিয়েনও।
এমিলিয়েন জানান, তার মেয়ের ওপর যখন এ ধরনের কিছু করা হয় তখন সত্যিই তার ভীষণ কষ্ট হয়। তিনি সহ্য করতে পারেন না। কিন্তু তার কিছুই করার নেই। এ গ্রামে প্রতিটি মেয়ের জন্যই ‘স্তন’ একটি সমস্যা। এমিলিয়েনের বয়স বর্তমানে ৩৫। কিন্তু তাকে দেখতে আরো অনেক বেশি বয়স্ক মনে হয়। জীবন যুদ্ধে পরাজিত এমিলিয়েন মনে করেন মেয়ে হয়ে জন্মানোই তার উচিত হয়নি। সচরাচর ঘর থেকে বের হননা এমিলিয়েন। কেননা তার শারীরিক পরিবর্তন তিনি অন্য কাউকে দেখাতে চাননা। এর কারণ অনেক ছোটবেলায় গরম পাথর ঘঁষে দেয়া হয়েছিল তার বুকেও। তার গলার নিচ থেকে পেট পর্যন্ত শুধু পোড়া কালো দাগ ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়ে না।
এমিলিয়েন বলেন, ‘আমি যখন খুব ছোট তখন আমার মা গরম পাথর আমার বুকে ঘঁষে দিত। প্রতিদিনই এমনটা চলতে থাকে যতক্ষণ না স্তন মিশে গিয়ে একেবারে হাড়ের সঙ্গে লেগে যায়। সে অমানুষিক শারীরিক কষ্ট বোঝানোর মতো নয়। সেই কষ্ট এবং ব্যথা কখনো যায় না। তাই আমি আমার মেয়ের কষ্টও বুঝি, কিন্তু আমি নিরুপায়।’
এমিলিয়েনের মা আনে কোয়েডি বলেন, তিনি কখনো চাননি তার নিজের মেয়ে এ ধরনের কষ্ট পাক। কিন্তু এখানে তার হাত-পা ছিল বাঁধা, সমাজের দিকে তাকিয়ে মেয়েকে এ যন্ত্রণা দিতে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি। একটি মেয়ের বয়স যখন আট হয় তখন থেকেই শুরু হয় বুকে নিয়মিত গরম পাথর ঘঁষা। তখন থেকেই স্তন আর বড় হতে পারে না। এর ফলে কোনো ছেলেও কোনো মেয়েকে বিরক্ত করতে পারে না। সেদিক থেকে বিবেচনা করলে মেয়েদের রক্ষার জন্যই এটা করা হয়।
অন্ধকারাচ্ছন্ন মহাদেশ বলে বরাবরই খ্যাতি রয়েছে আফ্রিকা মহাদেশের। আর এ অন্ধকার, সূর্যালোক থেকে বঞ্চিত হয়ে নয়। জ্ঞানের আলো, সভ্যতার আলো থেকে এখনো বঞ্চিত তারা। আফ্রিকার অন্যান্য অঞ্চলের মতো ক্যামেরুনেও মেয়েদের বড় হতে বাধা দেয়া হয়। এমনকি প্রকৃতিগতভাবে বেড়ে ওঠাকেও তারা ঠেকিয়ে রাখে অন্ধকার যুগের কুসংস্কার আর প্রথার বলে। আফ্রিকা মহাদেশে বিভিন্ন সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের দোহাই দিয়ে প্রতিনিয়ত মেয়েদের ওপর চলে নানা ধরনের অমানুষিক নির্যাতন। এরই মধ্যে একটি যৌনাঙ্গচ্ছেদ। উত্তর আফ্রিকার বেশকিছু দেশে মেয়েদের যৌনাঙ্গচ্ছেদ খুবই স্বাভাবিক বলে ধরে নেয়া হয়।
এরই মতো আরেকটি বর্বরতার শিকার ক্যামেরুনের মেয়েরা। আফ্রিকার এ দেশটিতে এ ধরনের আরেকটি অমানবিক প্রচলন রয়েছে। বিশেষ করে যখন কোনো মেয়ে বড় হতে থাকে তখন শারীরিক বেশকিছু পরিবর্তন স্পষ্টতই চোখে পড়ে। যেমন-বাড়ন্ত শরীর, গলার স্বর, আচার-স্বভাবেও আসে তার পরিবর্তন। অনেক মেয়ে আবার শারীরিক গঠনে একটু দ্রুত বেড়ে ওঠে। এটা ক্যামেরুনের মানুষের দৃষ্টিতে স্বাভাবিক না হয়ে উল্টো মনে হয়। সেখানে মেয়েদের এ ‘বড় হওয়া’ বা ‘বাড়ন্ত’ বয়সকে অমানবিক নির্যাতন করে রীতিমত থামিয়ে দেয়া হয়। একটি মেয়ে যখন বেড়ে ওঠে তার স্তনও স্বাভাবিক গতিতে বাড়তে থাকে। এটাই প্রকৃতির নিয়ম। একজন মেয়ের শরীরের এ স্বাভাবিক বৃদ্ধিকে জোর করে আটকে দেয়া হচ্ছে ক্যামেরুনে। একটি মেয়ের বয়স যখন আট হয় তখনই তার বুকে আগুনে সেঁক দেয়া গরম পাথর ঘঁষে দেয়া হয়। যাতে তার স্তনের বেড়ে ওঠা থেমে যায়। এভাবে প্রতিনিয়ত এরকম নির্লজ্জ বর্বরতার নির্মম শিকার হচ্ছে এখানকার মেয়েরা।
এখানকার অধিবাসীদের ধারণা এর মধ্য দিয়ে একটি মেয়ের ‘বড় হওয়া’কে রোধ করা যায়, যাতে কোনো ছেলে মেয়েটিকে বিরক্ত না করে। কোনো পুরুষ মেয়েটির দিকে লোলুপ দৃষ্টিতে না তাকায়, তার প্রতি যেন আগ্রহ না দেখায়।
এ বর্বরতা শুধু ক্যামেরুনেই নয়, আফ্রিকার অন্যান্য দেশ যেমন টোগো, বেনিন, নাইজেরিয়া এবং গিনি একোটোরিয়ালেও লাখ লাখ মেয়ের ওপর চালানো হয় এ নির্যাতন। ওই অঞ্চলে কয়েক দশক ধরেই এ রীতি মেনে চলা হচ্ছে। এর মূলে রয়েছে বাবা-মায়ের অহেতুক ভয়। সেই ভয় হলোÑ হয়তো মেয়ে কারো সঙ্গে পালিয়ে যাবে বা বিয়ের আগেই গর্ভবতী হয়ে পড়বে। আর যদি মেয়েটি শারীরিকভাবে আকর্ষণীয় না হয় তাহলে এসব হবে না।
এদিকে ক্যামেরুনে আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে মেয়ে অপহরণ ও ধর্ষণ। তাই এর চেয়ে প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মকে বাধা দিয়ে দুর্ঘটনারোধকেই শ্রেয় মনে করেন তারা।
এ বিষয়ে মহিলা রোগ বিশেষজ্ঞ ডেনিস কাফুন্ডার মতে, মেয়েদের বুকে বা স্তনে যে অত্যাচার চালানো হয় তা নিরাময়ের কোনো ওষুধ নেই পৃথিবীতে। ফলে ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে বহু সোনালি জীবন অকালেই ঝরে পড়ে।

এ লেখাটি প্রকাশিত হয়েছে গত ২৩-৮-২০১০ তারিখে দৈনিক যায় যায় দিন এর নন্দিনী বিভাগে
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১২:১৫
১৪টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষায় বসতে না পারার কষ্টটা সমালোচনার কোন বিষয়বস্তু নয়

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩৬

গতকালের একটি ভাইরাল খবর হচ্ছে কয়েক মিনিটের জন্য বিসিএস পরীক্ষা দেয়া হলো না ২০ প্রার্থীর !! অনেক প্রার্থীর কান্নাকাটির ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।এ বিষয়ে পিএসসি চেয়ারম্যান এর নিয়ামানুবর্তিতার জ্ঞান বিতরনের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×