somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবী এবং একজন স্বঘোষিত পর্নোষ্টার

২০ শে ডিসেম্বর, ২০০৮ ভোর ৪:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


......প্রবল আর্থিক স্ট্রাগলের সময়ও পিয়াল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায় , চাকুরির অনিশ্চয়তার মাঝে দাড়িয়েও পিয়াল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায় , নিজের সন্তানের জন্মের আনন্দ মুহুর্তেও পিয়াল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায় । এই বিচার বিচার করতে করতে লোকটার মাথা প্রায় নষ্ট হয়ে গেছে।......

এভাবেই একজন আরিফ জেবতিক আমাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে চেয়েছেন সাম্প্রতিক সময়ের বিতর্কিত ব্লগার অমি রহমান পিয়ালকে। ১৯৭১এর ২৫ মার্চ থেকে শুরু করে আমাদের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের মাস গুলোতে পাকিস্তানী বাহিনী আর তাদের এদেশীয় দোসর-রাজাকার আলবদর বাহিনী আমাদের সাধারন জনগনের উপর যে নিষ্ঠুর হত্যাকান্ড, নির্যাতন, নারীর উপর পাশবিকতা আর অত্যাচার চালিয়েছিল তা ছিল মানবতার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ। বিভিন্ন সরকারের আমলে জনগনের সচেতন ও সংবেদনশীল অংশটি এই যুদ্ধাপরাধীদের ন্যয্য বিচারের দাবীতে সোচ্চার হয়ে উঠেছে। এই যুদ্ধাপরাধের একটা বিশাল অংশই ছিল- নারীর উপর ধর্ষন-বলাৎকার সহ যাবতীয় নির্যাতন আর পাশবিকতা।

অমি রহমান পিয়াল যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীতে যৌবন জ্বালা(যাত্রা)সাইটে ব্যনার টানিয়েছেন-একথা তিনিই আমাদের জানিয়েছিলেন, সেই সাথে ফিরিস্তি দিয়েছিলেন বিগত মাস গুলিতে তিনি কিভাবে ওই সাইটের সাথে যুক্ত থেকে কাজ করেছেন। নিজের চোখে অমি রহমান পিয়ালকে চেনার জন্য নিজেই গিয়েছিলাম আলোচ্য যৌবন জ্বালা(যাত্রা) সাইটে, বোঝার চেষ্টা করছিলাম আশ্রম বা বাঘ মামাদের নিকে অমি রহমান পিয়ালকে। একই সাথে আমি বোঝার চেষ্টা করছিলাম বাঙালী এডাল্ট ওয়েব সাইট বলতে কি বোঝে?

আমি জানি ঢাকার কান্দুপট্টি কখনই লন্ডন বা ন্যুইয়র্কের কান্দুপট্টির মতো হবে না। এমনকি কলকাতার কান্দুপট্টিও হবে কলকাতার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের দিকে মিল রেখে। সেটা হতেই পারে- কিন্ত যৌবন জ্বালা(যাত্রা)কে আমার মনে হয়েছে সে ঢাকার (নাঃগঞ্জের) কান্দুপট্টির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যেকেও টপকে যেতে পারে নাই। যারা যৌবন জ্বালাতে গিয়ে জড়ো হয়েছে তারা যৌনতা উপভোগ করতে গিয়েছে এমনটা আমার মনে হয় নি। বরং মনে হয়েছে কিছু মানুষের বিকৃত যৌন রুচি, তার ধর্ষকামিতা-মর্ষকামিতার প্রশমন করার উৎকৃষ্ট স্থান এই ওয়েব সাইটটি। তারা যে ভাষায় তাদের গুরু আশ্রমের সাথে মন্তব্য বিনিময় করে-সেই ভাষার মান কান্দুপট্টির সস্তা দামের পতিতা, তাদের দালাল আর তাদের কাষ্টমার মহলেই প্রচলিত।

একটা পরিস্কার ধারনা নেওয়ার চেষ্টা করি অমি রহমান পিয়াল যৌবন জ্বালায় কি করেন? অসংখ্য শত শত পোষ্ট আছে সেখানে অমি রহমান পিয়ালের। এর মধ্যে কিছু যৌন-উদ্দীপক-রচনা কিছু ভিডিও আর আছে অগুন্তি মন্তব্য। সাম্প্রতিক সময়ে পোষ্ট করা সেসবের কিছু ভাষা, বিষয় বস্তু আমি নমুনা হিসাবে এখানে তুলে ধরতে চাই।

অমি রহমান পিয়াল ওরফে আশ্রম যৌবন জ্বালা(যাত্রা)সাইটে শুধু যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীই করেন না আশ্রম তার পন্যের কোয়ালিটির নিশ্চিত গুনমানও দাবী করেন। কি সেই পন্য? একটা ভিডিও পোষ্ট, যা এতই নিন্মমানের এবং অখাদ্য যা দেখলে মানুষের বমি চলে আসবে-- ১-০৭-০৮ তারিখে পোষ্ট করা হয়েছে। নাম- বিডি গার্ল ওয়েবক্যাম স্ক্যান্ডাল-পোষ্ট করা ভিডিওর বর্ননায় বলা হয়েছে-কানাডা প্রবাসী বাঙালী মেয়ের সাথে তার ছেলে বন্ধুর কিছু একান্ত মুহুর্ত। এই পোষ্টের মন্তব্যে একজন জিজ্ঞেস করেছেন-মামাকে- এই মেয়ে বাংলাদেশী কিনা? জবাবে আশ্রম তার এই পন্যের কোয়ালিটি নিশ্চিত করার দাবীতে জোর গলায় বলছেন- “......মামা-ওয়ান্স এন্ড ফর অল-একটা কথা কই, আশ্রমের বিডি(বাংলাদেশ) অবসেসন আছে। আর মিনিমাম রেফারেন্স ছাড়া সে দাবী তুলে না...... সংশয় থাকলে আওয়াজ দিবেন......”

চলতি বিজয়ের মাস ডিসেম্বরের ৫ তারিখে পোষ্ট করা একটা ভিডিও- হোষ্টেলের মাইয়ারা কত মজা করে রে!!! ভিডিওর বিষয় বস্তর সাথে যৌনক্রিয়ার মোটেও কোন সম্পর্ক নাই, হোষ্টেলের মেয়েদের নির্দোষ জামা কাপড় বদলানোর কিছু দৃশ্য আছে এতে। ক্যাটাগরিতে আছে এরাব গার্লস, বাংলাদেশী গার্লস, পাকি গার্লস- ইত্যাদি।

অন্য আর একটি পোষ্ট- এটা অবশ্য সিরিজ— বিডি অবসেসড আশ্রমের এই সিরিজ ঢাকার মেয়েদের নিয়ে। ঢাকার মেয়ে ১, ঢাকার মেয়ে ২-৩ ইত্যাদি। সবই মেয়েদের খোলামেলা ছবি।

এছাড়াও আছে শত শত একই ধরনের পোষ্ট- এগুলো উল্লেখ করে আপনাদের বিবমিষার উদ্রেক ঘটাতে চাই না। সে সব পোষ্টেই ভিকটিম হলো সেই মেয়েরা। যারা হয়তো জানেনও না তাদের এ ধরনের পরিনতির কথা, এক বিকৃত আশ্রমের হাতে পড়ে দিনের পর দিন কত শত মেয়েরা যে বে-আব্রু হয়ে পড়ছেন, এটা এক কথায় ভার্চুয়াল বলাৎকার ছাড়া আর কোন অভিধায় চিহ্নিত করা যায় না। মুক্তিযুদ্ধের বাস্তব জগতে যুদ্ধাপরাধীদের হাতে একজন নারী শুধু আক্রান্তই হয়- একজন বা গুটিকয় পুরুষের হাতে—আর ভার্চুয়াল জগতে এক পুরুষের মাধ্যমে সেই নারী লক্ষ লক্ষ ধর্ষকামী পুরুষ দ্বারা আক্রান্ত হয়। নিরন্তর ধর্ষন চলতেই থাকে পুব থেকে পশ্চিম, উত্তর থেকে দক্ষিন গোলার্ধে।

অমি রহমান পিয়ালের মনোজগতে মেয়েরা হলো সবসময়ই সেই বিশেষ পন্য—যারা খোলামেলা ছবি দিয়ে পুরুষদের মনোরঞ্জনে বাধ্য। পুরুষদেরও বুঝি এটা খুব স্বাভাবিক পাওনা, নগ্ন নারী শরীর দেখে তৃপ্ত হওয়া। একজন ধর্ষনকারী তার সম্ভাব্য ধর্ষনের শিকার মেয়েদেরকে এর চেয়ে খুব বেশি ভিন্ন চোখে কি দেখে? তার কাছে ধর্ষন যোগ্য প্রতিটি মেয়েই কি তাকে তৃপ্ত করার জন্য বাধ্য নয়? মেয়েটা এতে সম্মত কিনা তাতে কি তার কিছু আসে যায়? জোর খাটালেই, চাপ দিলেই মেয়েরা কত কিছুতে রাজী হয়ে যায়। সাধ্য কি তাদের-- আশ্রমের কেশাগ্র তারা স্পর্শ করতে পারে? দেশ জুড়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীটি যখন ক্রমশঃ একটি জনপ্রিয় দাবীতে পরিনত হচ্ছে—তখন মেয়েদের জন্য অপমানজনক মনোভাব ধারন করে- অমি রহমান পিয়ালের দিনের পর দিন ধরে ঘটিয়ে যাওয়া এই ভার্চুয়াল ধর্ষনের বিচারের দাবী কে তুলবে??

যৌবন জ্বালা(যাত্রা)সাইটের পুরোটা জুড়ে নারীর প্রতি যে অবমাননাকর দৃষ্টি ভঙ্গী—তা মেয়েদের ধর্ষনযোগ্য বস্তু হিসাবে দেখার মনোজাগতিক কাঠামোর ভিতটা তৈরি করে দেয়। দুঃখ এটাই, অমি রহমান পিয়ালের মতো মানুষেরা তাদের মেধা(?)র সদ্বব্যবহারের জায়গা হিসাবে এটাকেই বেঝে নেন, সাইটের সদস্যদের কাছে জনপ্রিয় মামায় পরিনত হন-- পর্নোর জগতে রীতিমতো ষ্টার।

আরো দু;খ লাগে এই স্বঘোষিত পর্নোষ্টারকে বাঁচাতে এগিয়ে আসে তার দলবাজ বন্ধুরা- সোচ্চার হন শওকত হোসেন মাসুমের মতো, কাঁ্কনের মত জনপ্রিয় বল্গাররা। জানতে ইচ্ছা করে-- অমি রহমান পিয়ালের মেয়েদের জন্য যে ধরনের অপমানজনক মনোভাব এবং সেই সাথে তার এই ভার্চুয়াল ধর্ষনের দায় দায়ীত্ব তারাও কি ঘাড় পেতে নিবেন???
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ডিসেম্বর, ২০০৮ ভোর ৪:৪৬
১৭৯টি মন্তব্য ৫৫টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×