ওস্তাদের নিদানঃ একাদশীতে বার্তাকু ভক্ষন যায়েজ নয়।
আমার বন্ধু গান শেখে, ভাল গায়ও। ফি বছরই তার ডাক আসে আমাদের শহরের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার। সুযোগ পেলে আমরাও সে সব অনুষ্ঠানে সামিল হই, মুগ্ধ হয়ে শুনি তার গান। কিন্তু বিস্ময়, সোমবারে সে হারমোনিয়ামে হাত ছোঁয়াবে না। সেদিন গান হবে খালি গলায়... কারন কি? কোন কারন নাই, ওস্তাদের নিষেধ।
মনে আছে, শরৎচন্দ্রের শ্রীকান্তের পিসিমা বেগুন খেতেন পঞ্জিকার তিথিক্ষন দেখে, তার নির্দেশিত বিধি নিষেধ মেনে। কোন কোন লগ্নে কি কি দ্রব্য ভক্ষন করা যায়েজ আছে, তার নিদান থাকে পঞ্জিকার পাতায়। এসব বিধি নিষেধের কোন যুক্তি আছে কিনা, বা কোন কার্য কারন সম্পর্ক আছে কিনা, তা অবশ্য আমার জানা নাই। কারন এ ধরনের কেসে সব সময় আমার ওস্তাদ আমার উপর নিষেধ জারী করে সুনির্দিষ্ট কারন দেখিয়ে।
যে কারনে নারীবাদ নিয়ে কোন কিছু আলোচনার ধারে কাছে সাধারনতঃ আমি থাকি না। আমার মতামত দেই না, বড় জোর শুধু শুনে যাই। আমার আলোচনা থেকে নারী সর্বদাই বাদ। ওস্তাদের নিষেধ বলে কথা...!!
শ্রেনী সংগ্রামের ইতিহাসে, প্রলেতারিয়েত শ্রেনী হিসাবে মহান, আধুনিকতম। সমাজ বদলের নতুন দর্শন, চিন্তার ধারক হওয়া একমাত্র তার পক্ষেই ঐতিহাসিক ভাবে সম্ভব। সমাজে নিস্পেষিত এবং শোষিত শ্রেনী হিসাবে ইতিহাসে তার যে মুর্ত নির্দিষ্ট ভুমিকা, তা ব্যাখা এবং তুলে ধরাই সমাজ বিপ্লবের রাজনীতি।
কিন্ত বিষয়টা যদি এমন হয়—প্রলেতারিয়েতের কাছে এ বিষয়ে বিস্তর জ্ঞান লাভের পর তার যদি মনে হয়, অনেক নিস্পেষিত এবং শোষিত হইছি, এবার আমার অনেক কিছু পাওয়া দরকার। আমার বহুত পাওনা জমছে। সে শুরু করলো ধান্ধাবাজি, শুরু করলো চান্দাবাজি...
এই প্রলেতারিয়েত কে লুম্পেন হওয়ার হাত থেকে ঠেকাবে কে?
ওস্তাদের ধারনা নারীবাদ চর্চা নিয়ে যথেষ্ট সতর্ক না থাকলে, সে চর্চা ক্ষেত্র বিশেষে নারীদের লুম্পেন নারীতে পরিনত করতে পারে। লুম্পেন- যে কিনা তার অধিকার আদায়ের বিষয়ে অতি তৎপর, কিন্ত তার দ্বায়ীত্ব বোধ, কিংবা করনীয় নিয়ে ততটাই বেখেয়াল। আমি অবশ্য এমন কোন হুমায়ুন আজাদ নই, যে ব্যাক্তিগত ভাবে আমার তেমন মুশকিল হয়। নারীবাদ নিয়ে আমি জানিই বা কি, বলবোই বা কি? তাই নারীবাদ মাথার উপরে তোলা থাক, আমরা ভিন্ন লাইনে আগাই...
নারী আমার নারী
এ দুনিয়ায় নারীরা এমন কোন ভিন্ন ধরনের সৃস্টি নয়, বিশেষ কোন প্রজাতি নয়, যাদের ব্যাখার জন্য পুরুষদের থেকে আলাদা কোন বিজ্ঞান বা শাস্ত্রের প্রয়োজন হবে। শরীরবৃত্তিক বা মনস্তাত্তিক বিশ্লেষনের কোন রহস্যময়তা, আধিদৈবিক বিধির প্রতি আমার পক্ষপাতিত্বও নাই। শুধু বুঝি আমাদের জগতটা ভীষন রকম পুরুষশাসিত, আর পিছিয়ে পড়া মেয়েরা সম অবস্থানে থাকা একটা পুরুষের তুলনায় একসাথে দুইটা লড়াই লড়ে—পুরুষ আধিপত্যের মাঝে নিজের জায়গা আদায় করে নিতে, আর তার পিছিয়ে পড়া অবস্থা থেকে রেহাই পেতে। তবে নারীদের নিয়ে কোন আহা উহু দেখানো, কোন লৈঙ্গিক ভেদ রেখা টানা থেকে আমাকে সতর্ক থাকতেই হবে। আত্মবিশ্বাসী এবং মর্যাদাবোধ সম্পন্ন নারীরা নিশ্চয় এ জন্য আমার প্রশংসা করবেন। বুঝতে হবে কিছু নারীবাদী লুম্পেন পয়দা করা আমাদের কারো কোন উপকারে আসবে না। নারীমুক্তি এক ইঞ্চিও এগুবে না।
ফলে কোন তত্ত্ব কথা নয়, নীতি কথা তো নয়ই। সাদা চোখে দেখা আমার চারপাশের নারীদের নিয়ে আমার যা কিছু পর্যবেক্ষন, আর তা থেকে উত্থিত কিছু প্রশ্ন...। সে গুলোই আগামীতে এখানে তুলে ধরতে চাই। তাদের জীবন সংগ্রাম, বেঁচে থাকার লড়াই কিছু একটা প্যাটার্ন যেন নির্দেশ করে। কি সেই বৈশিষ্ট্য? এটা কি বিশেষ কোন ধরনের ঝোঁক? আমার জানা নাই...।
প্রশ্নগুলো আমি তুলতে যাচ্ছি—উঠে আসা সওয়াল গুলোর জবাব খুঁজে পাওয়ার আগেই। ব্যাখা এবং বিশ্লেষনের অভিমুখ কি হতে পারে, তা চিহ্নিত করার আগেই। এমনকি যখন আমার ধারনাও নাই, উত্তর গুলোর ধরন কি হতে পারে!! সবাই কে নিয়ে সেই প্রশ্ন গুলোর উত্তর খোঁজা—একটা গ্রহন যোগ্য ব্যাখা দাঁড় করানো। আমার মনে হয়েছে, এক্ষেত্রে সেরা পন্থা হবে সেটাই...। আপনাদের অংশগ্রহন চাই।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



