রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ওরফে রবি বাবুর সাথে আমার সামনা সামনি কথা হয়নি কখনো; সেই সুযোগ ছিলনা আর আমি বা ঠাকুর বাবু অবসরও করে উঠতে পারিনি কারণ আমরা দু'জনেই ভিষণ ব্যস্ত।
মুখোমুখি কখনো কথা না হলেও ঠাকুর বাবুর রচনার ভক্ত আমি ছেলেবেলা থেকেই। সেই এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকা তালগাছের আকাশে উঁকিঝুকি মারা থেকে শুরু করে তরুণ বয়সে ক্যামেলিয়ার কাছ থেকে প্রত্যাখান হওয়া সহ অনেক কিছুই আমার জানাশোনার মাঝে রয়েছে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবন সম্পর্কে একটা বোধগম্য ধারণা দেবার জন্য শ্রি সুনীল গংগোপাধ্যায় কাছেও আমি ঋণী। প্রথম আলো পরেই প্রথম ব্যক্তি রবীন্দ্রনাথকে জানার সুযোগ হয়েছিল আর তুমি কি কেবলই ছবি শুধু পটে আঁকা (অথবা লেখা সঠিক মনে করতে পারছিনা) গানটির পেছনের গল্প বুঝতে পেরেছিলাম ওখান থেকেই। ঠাকুর বাবুর অসংখ্য বই কেন তোমাকে উৎসর্গ করা সেই রহস্যের সমাধানও হয়েছিল প্রথম আলো থেকেই।
ছোটবেলায়; তখন আমি সম্ভবত ক্লাস ফাইভে উঠেছি, ছোটকাকার গলায় একরাতে শুনেছিলাম যখন পরবে ধুলা তানপুরাটার তারগুলায়, কাঁটালতা উঠবে ঘরের... তখন কে বলেগো সেই প্রভাতে নেই আমি...। জন্ম-মৃ্ত্যু অথবা এই গমনাগমন সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা না থাকলেও সেই কথা আর সুর কেন আমার চোখে জল নিয়ে এসেছিল জানিনা। ১০ কি ১১ বছরের বালক মৃত্যু বিষয়ক গানে চোখ ভেঁজাবে কেন!!
কলেজে থাকতে পড়েছিলাম মেমসাহেব, নিমাইয়ের ভট্টাচার্যের প্রেমের-বিরহের উপন্যাস। চোখে জল এসেছিল আর হৃদয়ে গেঁথে গিয়েছিল উপন্যাসে ব্যবহৃত কবিতার লাইন-
প্রহর শেষের আলোয় রাঙা সেদিন চৈত্র মাস, তোমার চোখে দেখেছিলেম আমার সর্বনাশ...
খুঁজে পেতে জানা গেল ওটা ঠাকুর বাবুর লেখা।
আমি মুলত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা আর গানের ভক্ত। আমার কম পয়সার মোবাইলটিতে গান শোনার সুবিধা রয়েছে। মোবাইলে নিয়মিত গান শোনাও হয়। নিয়মিত শোনা গানের মাঝে রয়েছে-
● আলো আমার আলো ওগো...
● আমি জেনে শুনে বিষ করেছি পান...
● আমি তোমারও সঙে বেঁধেছি আমারও প্রাণ...
● চাঁদের আলো বাঁধ ভেঙেছে...
● আগুনের পরশমনি ছোঁয়াও প্রাণে...
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অসংখ্য কবিতার মাঝে মাঝে মাঝে অজান্তে অথবা বই থেকে বেশি পড়া হয়-
● কিন্তু আমার ভাগ্যটা যেন ঘোলা জলের ডোবা,
বড়রকম ইতিহাস ধরে না তার মধ্যে,
নিরীহ দিনগুলো ব্যাঙের মতো একঘেয়ে ডাকে-
না সেখানে হাঙর-কুমিরের নিমন্ত্রন না রাজঁহাসের...
ক্যামেলিয়াঃ পুনশ্চ
● কাহারে জড়াতে চাহে দুটি বাহুলতা-
কাহারে কাঁদিয়া বলে, 'যেও না, যেও না!'
কেমনে প্রকাশ করে ব্যাকুল বাসনা,
কে শুনেছে বাহুর নীরব আকুলতা!
বাহুঃ কড়ি ও কোমল
● এ মোহ ক'দিন থাকে, এ মায়া মিলায়,
কিছুতে পারে না আর বাঁধিয়া রাখিতে-
কোমল বাহুর ডোর ছিন্ন হয়ে যায়,
মদিরা উথলে নাকো মদির আঁখিতে।
মোহঃ কড়ি ও কোমল
● বৃথা এ ক্রন্দন।
হায়রে দুরাশা-
এ রহস্য, এ আনন্দ তোর তরে নয়।
যাহা পাস তাই ভালো-
হাসিটুকু, কথাটুকু,
নয়নের দৃষ্টিটুকু, প্রেমের আভাস।
সমগ্র মানব তুই পেতে চাস,
এ কী দুঃসাহস!
কী আছে বা তোর!
কী পারিবি দিতে!
আছে কি অনন্ত প্রেম?
নিস্ফল কামনাঃ মানসী
● হেথাও ওঠে চাঁদ ছাদের পারে,
প্রবেশ মাগে আলো ঘরের দ্বারে।
আমারে খুঁজিতে সে ফিরিছে দেশে দেশে,
যেন সে ভালোবেসে চাহে আমারে।
বধূঃ মানসী
● যে কথা এ জীবনে রহিয়া গেল মনে
সে কথা আজি যেন বলা যায়
এমন ঘনঘোর বরিষায়।
বর্ষার দিনেঃ মানসী
● এতকাল নদীকূলে যাহা লয়ে ছিনু ভুলে
সকলই দিলাম তুলে থরে বিথরে-
এখন আমারে লহ করুণা করে।
সোনার তরীঃ সোনার তরী
● নাই বা বুঝিলে তুমি মোরে।
---------------------------
বুঝা যায় আধো প্রেম, আধখানা মন-
সমস্ত কে বুঝেছে কখন্।
দুর্বোধঃ সোনার তরী
● কৃষ্নকলি আমি তারেই বলি,
আর যা বলে বলুক অন্য লোক।
দেখেছিলেম ময়নাপাড়ার মাঠে
কালো মেয়ের কালো হরিণ-চোখ।
কৃষ্নকলিঃ ক্ষণিকা
● যে জন আজিকে ছেড়ে চলে গেল খুলি দ্বার
সেই বলে গেল ডাকি,
'মোছ আঁখিজল, আরেক অতিথি আসিবার
এখনো রয়েছে বাকি।'
অতিথিঃ স্মরণ
● তোমার মনে থাকার মত করেছি কোন কাজ!
তোমায় দিতে পেরেছিলেম একটু তৃষার জল
এই কথাটি আমার মনে রহিল সম্বল।
কুয়ার ধারে দুপুরবেলা তেমনি ডাকে পাখি,
তেমনি কাঁপে নিমের পাতা- আমি বসেই থাকি।
কুয়ার ধারেঃ খেয়া
● আকাশে তো আমি রাখি নাই, মোর
উড়িবার ইতিহাস
তবু উড়েছিনু এই মোর উল্লাস।
লেখনঃ ১৬ লেখন
● মোর নাম এই বলে খ্যাত হোক,
আমি তোমাদরই লোক,
আর কিছু নয়-
এই হোক শেষ পরিচয়।
পরিচয়ঃ সেঁজুতি
... ... এবং আরো, আরো...
উৎসর্গঃ ব্লগার শায়মা ও চানাচুর
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মে, ২০১১ রাত ৯:৪০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




