somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প সিরিজঃ এজেন্টস অব ডি-ব্যঘ্রমানব

২২ শে জুন, ২০১৪ সকাল ৭:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

-আব্বা ইটা নিয়া দাউ
-ও বাঘের ডোরাকাটা জ্যাকেট কিনবার চাউ?
-আমি পুরা বাঘ সাজমু।
-হা হা হা।

তিন বছর বয়সী পুত্রের দিকে তাকিয়ে আছে শরীফ। বড় হয়ে ছেলে সত্যিকারের বাঘ হবে এটা ভেবে হাসছে সে। একজন অফিসার হিসেবে সে দ্বায়িত্ব পালন করে বলেই তার একাগ্রচিত্তে পরিশ্রম ও সততার ভিত্তিতে সেনাবাহিনীতে একটি ভালো পদে যেতে পারবে বলে উর্ধ্বতনরা মনে করেন। কিন্তু সে আশা বেশিদিন টিকলো না।

হিরণ পয়েন্ট ছাড়িয়ে আরো গভীরে যেখানে ঘন জঙ্গল আর্মির একটা বুট ক্যাম্প করা হয়েছে ঐ জোনের অধিবাসীদের নিরাপত্তার খাতিরে। কারণ ইদানীং মানুষখেকো বাঘের আনাগোনায় মানুষজন অতিষ্ঠ। তাই আধ প্লাটুন সৈন্যকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে নিরাপদ কাঁটাতারের বেষ্টনী তৈরির। শরিফই এদের নেতৃত্বস্থানীয় একজন। আজ চলে যেতে হচ্ছে স্ত্রী-পুত্রর মায়া ছেড়ে।
-লুবনা, বাবুরে দেইখা রাইখো।
-বাবুর দিকে খেয়াল রাখুম তো। তুমি নিজের দিকে খেয়াল রাইখো।

ক্যাম্পে পৌঁছাতে পৌঁছাতে বিকেল। অবশ্য অতটুকু ধকল সহ্য করতে হয়নি। জঙ্গল এলাকায় দ্রুত সূর্য অস্ত যায়। আর এটাই একমাত্র অসুবিধে।
-অফিসার শরীফ আপনার জিনিসপত্র নিয়ে সোজা চলে যান কেবিনে। কাল সকালে।
-ওকে স্যার।

স্যালুট দিয়ে বেরিয়ে এলো শরিফ। জিনিসপত্র গুছিয়ে রাতের খাবার খেয়ে নিলো। ঘুমিয়ে পড়লো গভীর ঘুম। হঠাৎ একটা চাপা গম্ভীর আওয়াজ কানে আসতেই ঘুম ভেঙ্গে গেলো। বাঘ! এতো রাতে কোথা আসবে?

গুঞ্জন শুরু হয়ে গেছে তাঁবুতে তাঁবুতে। হঠাৎ তীব্র আর্তনাদে খান খান হয়ে গেলো সেনা ক্যাম্প এলাকা। এবার আর থাকা গেলো না। আহতের আর্জিতে শরীফ না গিয়ে কি পারে? দৌড়ে বের হয়ে গেলো তাঁবু থেকে। ছুটতে থাকলো আওয়াজ উৎস ধরে। সে কি ভীষণ প্রলয়ংকরী চিৎকার। গাছের ফাঁক দিয়ে উকিঝুঁকি মেরে এগুতে লাগলো শরীফ। হঠাৎ দুজন লোকের কথা কানে এলো।
-ঠিক মতো কাজ হবে তো?
-বাঘ ছাড়িয়া দিলে আক্রমণ না করিয়া কই যাবি সে?
-আর্মিদের বনছাড়া করতেই হবে।

আঁতকে উঠলো শরীফ। তার মানে এটা চক্রের কাজ! পোষা বাঘকে দিয়ে আক্রমণ করিয়ে বনত্যাগে বাধ্য করার প্রচেষ্টা? দ্রুতলয়ে আরেকটা ঘন ঝোপের আড়ালে লুকোলো সে। ভোর আসি আসি করে এ সময়ে লোক দুটো বেরুলো। অনুসরণ করতে করতে আরো গহীনে আড়াই মাইল পেছনে ফেলে এলো। সম্পূর্ণ অপরিচিত একটা এলাকায় চলে এসেছে বোধহয়। এখানে ঘন ঝোপের এলাকা শুরু। বিস্তীর্ণ গর্জন ও নিচে বুনো আদিম ঘাসের আধার। সেখানে বোধহয় সূর্যের আলোও পৌঁছোয় না!

একটা বাড়ি!

বিশাল এলাকা জুড়ে...

এগোতে যাবে, এমন সময় গম্ভীর শ্বাস প্রশ্বাসের শব্দ। চাপা ক্রোধ কার নাক দিয়ে ঝরছে যেনো। এ কি সেই বন রাজা? সুন্দরবনে যার দোর্দন্ড প্রতাপ? কোমরের বেল্টে আত্নরক্ষার্থে প্যাঁচানো মাঝারি সাইজের ছোরা বের করে হাতে নিলো।

হুউউউম।

দীর্ঘদেহী রাজা তাকে ঘিরে অদৃশ্য বলয়ে ঘুরতে শুরু করেছে। আবছা ভোরের আলো পৌঁছোলে যতোটুকু দেখা যায় একটা মানুষ আর একটা প্রাণীতে যুদ্ধের দামামা বাজতে দেরি। সে দেরি বোধহয় আর হলো না। ঝাঁপিয়ে পড়েছে রাজা সেই রক্ত মাংসের মানুষটির উপরে। শেষ চেষ্টাটাও হলো না শরীফের। নখের আঁচড়ে ক্ষত বিক্ষত হয়েই জ্ঞান হারাবার আগেই ছোরা বসাতে পারলো রাজার উপর। রাজা আঘাত ঠেকাতে দ্রুত ছুটে পালিয়ে গেলো।
-পানি মার।
ঝপাস!
-হাআআআ।
জ্ঞান ফিরেছে সৈনিকের।
-অই কে তুই? এই জঙ্গলে কি করিস? এখানে কেমন করে আসলি।
-দেখে নেবো। তোদের দেখে নেবো। আর্মি তোদের জঙ্গলছাড়া করবে।
-হাহাহা। এটাকে নদীতে ছুঁড়ে দিয়ে আয় তো। কুমিরে খেয়ে নিক। আর বাঘটা খাঁচায় ঢুকেছে তো?
-হ।

কিন্তু ভাগ্য কি এতোই নিষ্ঠুর? নদীতে ফেলে দিলেও ভাগ্য তাকে টেনে নিয়ে গেলো আরেক পাড়ে।

-আব্বা ইটা কি?
-কোনডা?
-ঐতো। ঐ ঐ।
ছুটে গিয়ে দেহটি তুলে নেয়। সে দেহ ছনের ঘরের কিছু মানুষের পরম মমতায় স্নেহে ধীরে সুস্থে আরোগ্য হয়।
-আর্মি কি চইলা গ্যাছে?
-না তো। হেরা নাকি জঙ্গলে অপারেশন করবো।

বাঘ বাঘ বাঘ! মানুষ খাইবে গো।

ঝটিতি তাকায় শরীফ মাঝির দিকে।
-এ মাঝি তোমার দাও আছে?
-আছে মানে? একফুটি দুইখান আছে। লাগবে তুমার।
-দেও দেখি একখান।

হই হই হই। মানুষখেকো বাঘ বধের বিশাল যজ্ঞ হেথায়। নারী ও শিশুদের উঁচু মাচাঙে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। শরীফ একাই এগিয়ে চলেছে সবার আগে।

হঠাৎ বাঘটা চলে আসে সামনে। আজ বনের রাজার প্রতিদন্দ্বী যেনো আরেক রাজা। রাজার মতো দা হাতে সন্তপর্ণে কোপ বসিয়ে ধরাশায়ী করবে।

হুংকার দিয়ে বাঘ ঝাঁপিয়ে পড়লো। শরীফ একটা পোঁচ দিয়েই ধারালো দা দিয়ে কন্ঠনালীর উপর চালিয়ে দিলো। আক্রমণে পিছিয়ে ভয়ার্ত চোখে রাজা পিছিয়ে গেলো।

আহত অনুভূতি তার দুই চোখে। গল গল করে রক্তের স্রোত বয়ে যেতে লাগলো।

খকখাখাখা।

গুউউম। শেষ আওয়াজে বন কাঁপিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো রাজা।

উল্লাসে ফেটে পড়েছে গ্রাম। সবাই সম্মান করে বাঘের চামড়া ছাড়িয়ে পোশাক বানিয়ে দিলো শরীফকে। নাম দিলো বাঘা। সেইদিনই সিদ্ধান্ত নেয়া হলো পাচারকারী চক্রটিকে আক্রমণ করা হবে।

-সাব সাব।
-কিরে গজা কি হলো?
-উত্তরপাড়ার লোকজন নাকি আপনাকে মারার জন্য দলবল নিয়ে আসতেছে। আবার এদিকে আর্মিরাও অ্যামবুশ করবে বলে আগায় আসতেছে।
-কি?!

একে ৪৭ নিয়ে দাঁড়িয়ে গেলো নেতা। আজ বনবাসী কি আর্মিদের একদিন। সব্বাইকে ধ্বংস করে দেবে। গ্রামবাসীদের অনেকে এগিয়ে আসছে। অতর্কিত গুলিতে লুটিয়ে পড়লো অনেকে... আর্মিও পিছিয়ে পড়েছে...

এমন সময়...

হুংকার দিয়ে কে যেনো ঝাঁপিয়ে পড়ে ক্ষতবিক্ষত করে ফেললো নেতাকে। একে একে দুর্বৃত্তদের সকলকে আহত করে ফেললো।

-এজেন্ট জাহেদ বলছি।
-ইয়েস মেজর তালহা স্পীকিং।
-সিরিয়াস কন্ডিশন স্যার।
-কি হলো?
-স্যার আমরা ট্রুপ নিয়ে অ্যামবুশ করতে গিয়েছিলাম কিন্তু আমাদের আগেই কে যেনো ঐ দলের সবকটাকে আহত করে চলে গেছে।
-পরনে কি ছিলো?
-বাঘের ছাল দিয়ে বানানো এক ধরণের পোশাক।
-হাতছাড়া করো না লোকটাকে। ওভার অ্যান্ড আউট।
-রজার স্যার।

যদি অ্যামবুশ করে তাহলে লোকটা দক্ষিণ দিক থেকে আসবে। তাই এখানে দাঁড়িয়ে থাকাই সমীচীন হবে। এবং একটু পর সেটা সত্যি হলো। আবছা আলোতে দেখলো লোকটা এদিকেই আসছে।

-হ্যান্ডস আপ। নড়বেন না।
-আপনি কে?
-এজেন্ট জাহেদ। আপনি?
-বাঘা... ব্যঘ্রমানব...
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ২:১৮
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×