somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প সিরিজঃ এজেন্টস অব ডি-নকল মানুষ

২২ শে জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটা বেঞ্চি।

দুধারে দুটো মানুষ। দুজনের চোখে স্পৃহা। তাড়া নেই কিন্তু ধক ধক করে জ্বলছে যেনো একে অপরকে জ্বালিয়ে ফেলবে চোখের ইশারায়। একপাশে ডঃ ইকবাল আরেকপাশে এজেন্ট রিশাদ।

-আপনিই সেই নাটের গুরু?
-না হবার গারান্টি দেবো? শূন্য দেই যদি শতভাগে?
-অদ্ভুত তো আপনি। কেউ এতো সুন্দর মেধা থাকতে দেশকে লোকসানের মুখে ঠেলে দেয়?
-আশ্চর্য হচ্ছো না ভেবে আমি মোটেই বিচলিত হচ্ছি না। আমি তো শুধু টাকায় পাহাড়ে যারা শোয় তাদের পথে নামাচ্ছি।
-ওদের সাথে আপনি ৮কোটি কর্মক্ষম মানুষকে যে পথে নামাচ্ছেন সেটা আপনি জানেন? ব্যাংক, বীমা, ফ্লাইট কম্পানিজ, ইন্ড্রাস্ট্রিজ সব, সব পথে চলে যাবে।
-রিশাদ, হোয়েন দেয়ার ইজ আ অপরচুনিটি লেট দ্য পিপল বি ইকুয়াল দ্যাট প্লেস বিকাম আ সোসাইটি। আর তুমি ভালো করেই জানো আমি কিভাবে গ্রেফতার হওয়ার ৭২ঘন্টায় গোটা দেশটাকে কব্জায় নেবে আমার নকল মানুষগুলো।
-ডঃ ইকবাল আমি বেঁচে থাকতে সেটা হতেই দেবো না। এ অন্যায় আমি ঠেকাবো; আপনি মুক্ত, স্বাধীন যাই হোন না কেনো।

৩৩দিন আগের কথা।

এজেন্টস অব ডি কার্যক্রম শুরু করেছে ততোদিনে। শরীফ ওরফে ব্যঘ্রমানবকে সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকান্ড থেকে সরিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে ডিজিএফআই এর এই ইউনিটে। নতুন ইউনিট তাই বয়স্ক অভিজ্ঞ কেউ না থাকায় শরীফকেই করা হয়েছে টিম ক্যাপ্টেন। এজেন্ট রিশাদ তার ডেপুটি। তবে জাহেদ, আরমিন, আসিফ সাদিয়া এবং রণিন কেউই কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।
-মিঃ শরীফ, অনারেবল রেসপেক্ট টু ইউ ফর কো-অপারেটিং ইন মিশন ম্যানগ্রোভ। আপনার সাহসিকতাপূর্ণ কর্মকান্ডে আজ থেকে আপনি এজেন্টস অব ডি, স্পেশাল ইউনিট অব ডি এর চীফ হিসেবে অ্যাপয়েন্ট হচ্ছেন। রাষ্ট্রের নিরাপত্তায় সর্বক্ষণ আপনাকে চায় ডিজিএফআই।
-সার্টেনলি স্যার। আমি আমার সর্বাত্নক দিয়ে চেষ্টা করবো আমার দেশকে সেবা করার।
-আপনার পাশে এই মুহুর্তে এজেন্ট রিশাদ অপেক্ষা করছে একটি হেলিকপ্টারে এসকর্ট করে ঢাকায় ডিজিএফআই হেডকোয়ার্টারে নিয়ে আসার জন্য। তাহলে দেরি না করে চলে আসুন।
-রজার স্যার।

ডিজিএফআই হেডকোয়ার্টার। আকাশে মেঘ ডাকছে। এজেন্ট রণিনের এক মাস স্কুল ছুটির আর সপ্তাহখানেক বাকি। মিঃ ফ্লাই নামে খ্যাত এই ডিজিএফআই এজেন্টের মনে পড়ে গেলো সেই প্রথম দিনের কথা যেদিন আশ্চর্য জুতোগুলো পড়ে সে উড়ে গিয়েছিলো স্কুলের দিকে ঝড়ের ভেতর দিয়ে। আর এক সপ্তাহ ছুটি থাকলেও আজকে কি একটা গুরুত্বপূর্ণ মিটিং আছে ডিজিএফআইতে। সে লক্ষ্যেই সে উড়ে চলেছে হেডকোয়ার্টারে। হেলিপ্যাডের উপর নামতে যাবে ঠিক তার আগেই দেখলো চিতা ওরফে এজেন্ট জাহেদ কাকে নিয়ে যেনো নামছে। শিষ দিলো সে।
-রণিন! নেমে আসো।
-এই ছেলেটা কে? এজেন্ট শরীফ জিজ্ঞেস করলো।
-এ আমাদের সর্বকনিষ্ঠ এজেন্ট রণিন।
-এতো পিচ্চি!
-পিচ্চি হলে কি হবে বুদ্ধির ধার মারাত্নক।
-বলেন কি?!
-আসেন পরিচয় করায়ে দিই।

পরিচয় পর্ব সেরে তারা নিচে নেমে কনফারেন্স রুমে গেলেন। কঠোর এবং কঠিন মুখে মেজর তালহা বসে আছেন। সবাই ইতি উতি চাইছে একে অন্যের দিকে।
-লেডিস এন্ড জেন্টেলম্যান। দিস ইজ আ মিটিং টু ফাউন্ডিং এ সিরিয়াস রেসকিউ টিম। আজ থেকে আপনারা সবাই এজেন্টস অব ডি নামে পরিচিত। আপনাদের টিম চীফ এজেন্ট শরীফ। উনি আপনাদের পরিচালনা করবেন যার ডেপুটি #এজেন্ট_রিশাদ থাকবেন।

মুহুর্তের জন্য গুঞ্জনে মুখরিত হলো গোটা হল।
-সাইলেন্স!

সবাই চুপ হয়ে গেলো।
-নাও লিসেন। একটা সিরিয়াস কেস। আমি চাই কেউ বসে না থাকুক।

"ক্লিক" করে প্রেজেন্টেশন বোর্ডের পর্দা খুলে গেলো।
-লেটস সি দিজ। ছবিতে কি দেখা যাচ্ছে?
-একটা মৃত মানুষের ছবি?
-এক্সাক্টলি। দ্বিতীয়বার মৃত্যু হয়েছে লোকটার।
-হোয়াট?! দ্বিতীয়বার?!

-হ্যাঁ দ্বিতীয়বার।
-কিভাবে সম্ভব?
-শরীরের ভেতর সবগুলোই প্লাস্টিক অর্গান। বিষয়টা আমি ঠিক বুঝতে পারছি না রিশাদ। তবে এ বিষয়ে যদি খোঁজ খবর নেয়া না হয় তাহলে যে কোনো একটি জাতীয় বিপর্যয় আশংকা করছি।
-বলেন কি? এ কি করে সম্ভব? রাষ্ট্রের সাথে এর কি সম্পর্ক?
-তিনটা ছবি দেখুন। তিনটাই মৃত মানুষদের যাদের তিনবার করে মৃত্যু হয়েছে। প্রত্যেকটার শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ খুলে নিয়ে প্লাস্টিক বডির সকল কিছু ট্রান্সপ্লান্ট করা হয়েছে।
-তার মানের এরা প্রথম দিকে আসল রক্ত মাংসের মানুষ ছিলো পরে নকল মানুষ হয়ে গেছে?!
-এবং অবশ্যই নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত... যাদের শেয়ার বাজার, ব্যাংক-বীমা ও মেডিকেল কলেজে পাওয়া গিয়েছে দ্বিতীয়বার মৃত অবস্থায়...

গোটা হলরুমে চাপা আতংকের ছুটোছুটি শুরু হয়ে গেলো। চোখ বড়ো বড়ো করে একে অন্যের দিকে তাকিয়ে আছে। বিষয়টা যে কি সেটা সবার এক মূহুর্ত ভাবতেও দেরি হলো না। গেলো সপ্তাহে শেয়ার বাজার হঠাৎ চাঙা হয়ে যাওয়ায় বেশ ব্যস্ত মনোভাব চলে আসে ব্যাংক বীমা গুলোতে। কিন্তু এ হপ্তায় হঠাৎ একটি ব্যাংকের শেয়ার সংক্রান্ত জটিলতায় আবার ধস নেমে যায়। ফলে অনেক শেয়ার বিনিয়োগকারীর পথে নামার দৃশ্য অবলোকিত হয়। ঠিক একদিন আগে একটি বীমা কোম্পানীর মালিকানা হঠাৎ একজনের কাছে হস্তান্তরিত হওয়ায় চাপা উত্তেজনার সৃষ্টি হয় বিনিয়োগ বাজারে।

-ঠিক করতে হবে আমাদের, আপনি মনে করেন? এজেন্ট শরীফের মুখ এতোক্ষণে খুললো।
-বিষয়টা অত্যন্ত ঘোরালো মিঃ টাইগার। যাদের মৃতদেহ দেখতে পারছেন তারা প্রত্যেকেই শেয়ার ব্যবসার সাথেই ওঁতপ্রোতভাবে জড়িত।
-হোয়াট দ্য... কাকতালীয় না, এ যে যোগসাজশ! গভীর ষড়যন্ত্র আমি নিশ্চিত। রিশাদ হাতে হাত গুঁজলো।

এদিকে রণিন গ্লাস ব্যালকনির সাথে লাগোয়া ডোরের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। অনবরতঃ বৃষ্টি পড়ছে। দাঁতে নিচের ঠোঁট চেপে ধরেছে। কিছু একটা আঁচ করতে পেরেছে।
-বুঝতে পেরেছি। জাহেদ ভাইকে লাগবে। ঘুরে দাঁড়ালো সে।
-কি রকম? জাহেদ উৎসুক চোখে তাকালো।
-টিমটাকে গ্রুপিং করে দেয়া হোক। রণিন চাপা হেসে বললো।
-সেটা মিঃ টাইগার জানেন। মেজর তালহা হেসে উঠলেন।
-ওকে আমি, রিশাদ, সাদিয়া এক গ্রুপ। রণিন, জাহেদ অন্যটা। আর গোটা টেক সাপোর্ট এবং মেইনটেন্যান্স আসিফ সাদিয়ার হাতে। ডিজিএফআইয়ের একটা মাইক্রোভ্যান নিচ্ছে এজেন্টস অব ডি। বাঘা শরীফ সবার উপর একবার চোখ বুলিয়ে বললো।


একটা ব্যাপার ভেবে আশ্চর্য হতে হয়। যদি এতোগুলো দুর্ঘটনা হয়েই থাকে তবে কেনো অপরাধীকে ধরা যায় না। যে সমস্ত বিষয়ের সাথে এই জিনিস গুলো সম্পৃক্ত তার বেশিরভাগই ঘটে গেছে গত কয়েক সপ্তাহে। আর যেই এই কাজ করছে তার মগজে যে এক নিদারুণ খেলা চলছে তা হলফ করেই বলে দেয়া যায়। অবশ্য এই ধরণের মানুষ খুব একটা জনসম্মুখে আসে না। তারা এই ধরণের স্যাবোটাজে অদ্ভুতুড়ে আচরণ করে যায় এবং তার একটা না একটা চিনহ রেখে যায়।

এজেন্ট রিশাদকে মাইক্রোভ্যান ড্রাইভিং এর দ্বায়িত্ব দেয়া হলো। ভ্যানের ভেতরে বাকি সবাই অবস্থান নিয়েছে। প্রত্যেকের আলাদা স্মার্টফোন, ট্যাবলেট আছে। যে যার যার মতো অবস্থান নিলো।
-একটা জিনিস বুঝলাম। এজেন্ট জাহেদ বলে উঠলো।
-কি?! আরমিন জিজ্ঞাসু ভঙ্গিতে তাকালো তার দিকে।
-এই সব কিছুই ঘটছে মূলতঃ ফিন্যান্স ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান নিয়ে।
-এক্সাক্টলি। ওরা চাইছে যেনো এ দেশের ফিন্যান্স সেক্টরটাকে নিজেদের করায়ত্ত করে ফেলতে পারে।
-হতেও পারে তারা মন্ত্রীপরিষদকে কব্জায় নিতে পারে।
-অস্বাভাবিক নয়।
-ও ও ও। জাহেদ চমকিত করে দিলো সবাইকে। "লুক অ্যাট দিস"।

ট্যাব থেকে নেটওয়ার্ক কানেকশান দিলো প্রজেক্টরে। এখনকার প্রজেক্টর গুলো থাকে টেবিলে। টাচ করে অপারেট করা যায়।
-অদ্ভুত তাই না রণিন?
-হ্যাঁ তাতো অবশ্যই। পুলিশ দুজনকে ডিঙ্গিয়ে যেমন লাফ দিয়ে রাস্তার ওপাশে পৌছালো লোকটা।
-ওয়েট ওয়েট।
-কি? জাহেদ একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেলো সাদিয়ার কন্ঠে।
-জুম... জুম... আরেকটু বড়ো... হ্যাঁ... এইতো।
-বুঝলাম না!
-এই মার্কটা চিনতে পেরেছেন?! সাদিয়ার মুচকি হাসি।
-আরেহ!

থতমত খাওয়ার বাকি ছিলো। কিন্তু সবাই সেটা হওয়ার আগেই জাহেদ মেজর তালহার প্রেজেন্টেশনের তিনটা ফটো প্রজেক্টরে নিয়ে আসলো।
-এটা স্পষ্ট... দেখো সবাই প্রত্যেকের গলার কাছে একোটা করে মার্ক!
-আরে মৃত তিনজন আর জীবিত একজন!
-সেইম অরগানাইজেশনের লোক দেখি। কিন্তু এইটা ছ্যাঁচড়ামি করছে কেনো?!
-তাই তো বুঝি না অতো শতো।
-এই তোমাদের ওয়ার্মআপ হলো? ভ্যানটা কি চালু করবে রিশাদ? বাঘা একটু ঝেড়ে কাশল।
-জ্বি অবশ্যই। স্মিত হেসে বলে উঠলো।

অনেকটা দুপুর গড়িয়েছে। একটা শপিং মলের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে ভ্যানটা।
আরমিন ভ্যান থেকে সবার আগে নেমে পড়লো। নেমেই একটা জায়গায় চোখ আটকে গেলো। একটা লোক। লোকটার চেহারা চেনা চেনা লাগে।
-রণিন, স্টে কাম। একটা লোককে দেখছি চেনা চেনা লাগছে।
-কই?! কোনদিকে?
-আরেহ! এটা তো জাহেদ ভাইয়ের সেই জীবিত লোকটা!!!

ঘটনায় মোড় নিতে দেরি হয়না কখনো। প্রতিটা মুহুর্ত কখনো সমান্তরাল হয়ে থাকে না। একেকটা মোড় সর্পিল গতিতে চলতে থাকে। আজকে যেখানে শরীফ দাঁড়িয়ে তার ঠিক পেছনেই যে একদল কুচক্রী দাঁড়িয়ে তা কে জানতো? অবশ্য ভ্যানের ভেতর বসে থাকা এজেন্টরা ঠিকই তাদের একজনকে চিনতে দেরি করলো না। রণিন ডাইভ দিয়ে উড়ে গেলো লোকটার দিকে।
-আসিফ ভাই।
-হ্যাঁ রণিন বলো।
-লোকেশনটার পুরো ম্যাপ পাঠান।
-ওকে।

একটা বিশাল এলাকা জুড়ে ডিএসই জোন। লোকটা যেখানে দাঁড়িয়ে আছে তার পেছনেই একটা সুউচ্চ ভবন। হঠাৎ লোকটা ঘুরে রণিন বরাবর তাকালো। এরপরই দৌড়ে ছুট লাগালো সামনের দিকে।
-যাহ শালা ভেগে গেলো!
-শিট এখন?!
-কি করবো। এখন তো পিছু নিতে হবে। আপনারা কেউ বের হবেননা।
-ওকে।

এদিকে ফ্রন্ট সিট থেকে এজেন্ট শরীফ ওরফে বাঘা এসে পেছনে ঢুকলো ভ্যানের ভেতরে। আসিফকে ইঙ্গিত দিলো পরিস্থিতি কতটুকু এগিয়েছে। আসিফ একটা ব্রিফকেস খুললো।
-এইটা কি?
-ইয়ে এটা একটা ফ্লাইং ক্যামেরা। এটার প্রোডাক্ট নেইম ডোংগা।
-হুম তো কি লরবে এটা দিয়ে?
-এটা গোটা এরিয়ার স্ন্যাপশট নিতে পারে, সাথে বডি স্ক্যান ও করতে পারে।
-বাহ দারুণ তো!
-আরে এটা কি?
-কোনটা?

জাহেদ প্রজেক্টরে টিভি চ্যানেল খুলে দেখালো।

"ব্রিকিং নিউজ- ড. ইকবাল ইনশিওর ইন্স্যুরেন্স কোম্পানীর মালিকানার পর এবার হেক্সা গ্রুপ অব কোম্পানীর দ্বায়িত্ব বুঝে পেলেন।"

-জিনিয়াস একজন। প্রোফাইল দেখি মারাত্নক ভারী। বায়োলজি সায়েন্টিস্ট কাম একটি প্রাইভেট ইন্সটিটিউট থেকে বিএসসি পাশ করেছেন। এখন বিজনেসের দিকে ঝুঁকছেন।
"ব্লপ বিপ বপ।"

হঠাৎ মনিটরে সমস্যা দেখা দেয়ায় সবাই ব্যাস্তসমস্ত হয়ে পড়লো।
-আসিফ কি সমস্যা। জাহেদ বিরক্তির চোখে তাকালো।
-কিছু একটা নেটওয়ার্ক ফ্রিকোয়েন্সি জ্যাম করে দিচ্ছে।
-এইতো আবার ঠিক হয়ে গেছে।
-কিন্তু কি হয়েছিলো। বাঘা জিজ্ঞাসু চোখে তাকালো।
-এটা ডোংগা বলে দেবে কি হয়েছিলো।
-তাই?
-হুম।

একটু স্পর্শ করলো যন্ত্রটার এক কোনায়। "স্নুইপ আওয়াজ করে উপরে উঠে গেলো। এরপর সাঁই করে বেরিয়ে গেলো।
-সাদিয়া স্যাটেলাইট ভিউয়িং অন করো।
-ওকে।

ক্যামেরাটা মুহুর্তের ভেতর কয়েকশত ছবি তুলো। সাদিয়া ইমেজ প্রসেসিং এ দিয়ে দিলো।
-অদ্ভুত! এদের অনেকের ঘাড়ের কাছে মার্ক!
-হুম।
-দাঁড়ান স্ক্যানিং করতে দিই।

এরপর ক্যামেরাটা স্ক্যান করতে লাগলো গোটা এলাকার মানুষগুলোকে। হঠাৎ কিছু একটার সংকেত পাঠানো শুরু করলো।
-ব্যাপার কি?
-কিছু একটা তো হয়েছে।
-এটা কি? নির্দেশ দিচ্ছে।
-দাঁড়ান দেখছি।

ভিউতে সবাই যা দেখলো পুরোটাই লোমহর্ষক। শয়েক লোকের উপর রেড সার্কেল মার্ক।
-নকল মানুষ! এরা সবাই নকল মানুষ!

উড়ে চলেছে রণিন। একটা মানুষের পেছনে যে একটা নকল মানুষ।

বিপ। একটা কল এসেছে।
-ইয়েস।
-শরীফ বলছি।
-বলেন শরীফ ভাই।
-লোকটা নকল মানুষ। ওর ঘাড়ের পেছনে মার্ক দেখেছো?
-আগেই টের পেয়েছিলাম।
-ওকে ফলো করো।
-ব্যাটা তো যে জোরে দৌড়াচ্ছে।
-তাহলে লুকিয়ে ফলো করো। মেক হিম শিউর দ্যাট ইউ আর নট ফলোয়িং হিম।
-ওকে।

হঠাৎ করে একটা চিপা গলির ভেতর ঢুকে পড়লো লোকটা। হেক্সা কোম্পানীর একটা ফ্যাক্টরির দরজার দিকে এগুলো। এরপরই ঢুকে গেলো। রণিন কিছু আঁচ করতে পেরে সাপোর্ট বাটনে কল দিলো।
-শরীফ বলছি।
-রণিন বলছি। হেক্সা কোম্পানীর একটা ফ্যাক্টরিতে লোকটা ঢুকেছে।
-হেক্সা?
সবাই মুখ চাওয়া চাওয়ি করলো। এতো কিছু থাকতে ড. ইকবালের হেক্সার ফ্যাক্টরিতে?

-রণিন, আমি ভ্যান নিয়ে আসছি।
-ওকে শরীফ ভাই।

পুরো টিমটা চলে এসেছে পুরান ঢাকার এক জায়গায়। জিপিএস ট্র্যাকার দিয়ে রণিনকে খুঁজে নিয়েছে। এখন অপারেশনে নামতে হবে।

-আসিফ, সাদিয়া তোমরা ভ্যানে অবস্থান করো। জাহেদ ড্রাইভিং সিটে চলে যাও। সাদিয়া আর রণিন দুজন আলাদা করে পেট্রোল দাও বিশেষ করে রণিন উপরে নিচে দেখো কি হয়। আর রিশাদ আমার সাথে আসো। টিম চীফ শরীফ ওরফে ব্যঘ্রমানব বললো।

রণিন উড়ে বিল্ডিংটার এক কোনায় সানসেটে দাঁড়ালো। নিচে সাদিয়া। রিশাদকে নিয়ে শরীফ ভেতরে ঢুকলো। ফ্যাক্টরির বিশাল সব যন্ত্রপাতির ঘর ঘর আওয়াজে কান ঝালাপালা হয়ে যাওয়ার দশা।
-কে আপনারা? সিকিউরিটি গার্ড হাত দিয়ে থামতে ইশারা করলো।
-আমরা ড. ইকবালের সাথে দেখা করতে এসেছিলাম।
-অ্যাপয়েনমেন্ট নম্বর প্লিজ।
-ইয়ে মানে নেয়া হয়নি।

হতাশ হয়ে ফিরে আসতে হলো চারজনকেই।
-ধ্যাৎ। রিশাদ বাতাসে বাগিয়ে দিলো এক ঘুঁষি।
-এখন? আসিফ মুখ ব্যাজার করে ফেলেছে।
-ডোংগা?! ফ্লাইং ক্যামেরা কয়টা আছে?! শরীফ চকিত ঘুরে তাকালো আসিফের দিকে।
-তিনটা। কেনো?
-দুটো বের করে ফ্যাক্টরির ভেতর ঢোকাও।

ক্যামেরা দুটো উড়তে শুরু করেছে ততোক্ষণে। উড়তে উড়তে দোতলার মাঝ বরাবর চলে এসেছে। এমন সময় একটা মুখ দেখা গেলো যিনি একটা ল্যাবের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। ইনি আর কেউ নন ড. ইকবাল। একটা ক্যামেরাকে ঘুরিয়ে ল্যাবের ভেতর নিয়ে যেতেই চক্ষু চড়কগাছ সবার। সারি সারি লাশকে রাখা হয়েছে ট্রেতে। দোতলার বিশাল এই ল্যাবে লাশদের ভেতর প্রাণ সঞ্চার করে নকল মানুষে পরিণত করছেন ড. ইকবাল।

পনেরো দিন পরের কথা।

অনেক তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে ড. ইকবালের বিরুদ্ধ প্রমাণ বের করেছে এজেন্টস অব ডি টিম। কিন্তু কম্পানির সুনাম ক্ষুন্ন হবে এই ভেবে রিশাদকে বিষয়টা হ্যান্ডেল করতে বলা হয়েছে। তাই সে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে সোহরাওয়ার্দী পার্কে দেখা করতে এসেছে ড. ইকবালের সাথে। ভদ্রলোক আমুদে মানুষ। তাই অফিসে না বসে পার্কে এসেছেন কথা বলতে।

আজ সেই তেত্রিশ তম দিন।

-পারবেনা আমাকে ঠেকাতে।
-কি যে বলেন। আপনি কি বলেছেন তা তো ইতিমধ্যে গোটা দেশের সব কয়টা চ্যানেলে প্রকাশ হয়ে গেছে।
-মানে! কিভাবে?!
-আমাদের ফ্লাইং ক্যামেরা ডোংগা এতোক্ষণ সব রেকর্ড করেছে। নিজের মুখের স্বীকার করলেন না? গোটা পার্কের আশেপাশে সাড়ে সাতশো আর্মড ফোর্সেস রেডি আছে আপনাকে গ্রেফতার করতে।
-আমাকে গ্রেফতার করতে চাইলে আমি বাটন টিপে দেবো। গোটা শহর, দেশ ধ্বংস হয়ে যাবে।
-তাও পারবেন না। আমাদের আইটি ইন্টেলিজেন্স টিম আপনার চিপ সিস্টেম হ্যাক করে করে নিয়ন্ত্রণ কব্জায় নিয়েছে।
-তারপরও ধরতে পারবে না।

বলেই একটা চাবির রিংয়ে থাকা একটা ছোট্ট বাটন টিপলেন। হঠাৎ হাওয়ায় মিলিয়ে গেলেন ড. ইকবাল।

হেডকোয়ার্টার।
-মন খারাপের কিছু নাই। কালপ্রিটটা কোথায় যাবে? ধরা তো খাবেই। মেজর তালহা বলে চলেছেন, যা করেছো ফার্স্ট অ্যাসাইনমেন্ট হিসেবে পারফেক্ট।
-হেক্সা আর ইনশিওরের কি হবে? রিশাদ জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো।
-আসল মালিকানার কাছে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে।
-ভালোই। এখন? শরীফ বললো।
-গেট সেট রেডি ফর নেক্সট মিশন।

(সমাপ্ত)
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:২৩
১২টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×