somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প সিরিজঃ এজেন্টস অব ডি-গোয়েন্দার খোঁজে

২৯ শে জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঝিরি ঝিরি বৃষ্টির বিদায় হয়ে গেছে বহু আগেই। রাস্তার পাশে, মাঝে বহু খানা খন্দে রচনা হয়েছে গুচ্ছ গুচ্ছ শিশু জলাশয়ের। সেই শিশু জলাশয়ে দেখা যায় নিজের প্রতিবিম্ব। দেখা যায় নীলচে আকাশের ঘোলাটে চেহারা। আবারও থমথমে তার মুখ। যেনো প্রেমিক প্রত্যাখ্যাত কোনো নারীর ছিঁচকাঁদুনে গাল ডেকে বলছে একটু ভালোবাসা চাই। দেবে?

নীরার কথা ভাবছে জাহেদ। ভারতের সেই ট্যুরে আকস্মিক বিয়ে তারপর দেশে ফিরে রাজীবের ঘাঁটি ধ্বংস করে দেওয়া যেনো সিনেমার কোনো গল্প।

ঠক ঠক।

চিন্তায় ছেদ পড়লো। এখন টেবিলের ও প্রান্তে এজেন্ট শরীফ। নতুন একজন ডিটেকটিভকে টিমে রিক্রুট করার কথা চিন্তা করছে ডিজিএফআই। মেজর তালহা শয়েক প্রোফাইল দিয়েছেন। কিন্তু একটাও মনপুতঃ হচ্ছে না।

-ভাল্লাগছে না চলো বেড়িয়ে আসি।
-চলেন শরীফ ভাই।

কে যেনো মেঘগুলোর শীতলতা নিংড়ে দিয়েছে বাইরে। হিম হিম ঠান্ডা ভাব। চারিদিকে নেমে আসছে কালো অন্ধকার। পার্কিং লটে মাইক্রোবাস ভ্যানটা আছে। রিশাদকে কল করে আনা হলো। এরপর তারা রওনা হলো।

-যাবেন কোথায়?
-যে কোনো একটা খাবারের দোকানের সামনে।
-ওকে।

রিশাদ এফ এম ছেড়ে দিলো। গান শুনতে শুনতে তন্ময় হয়ে গেলো দুজনে। জাহেদ ভ্যানের ভেতরে। প্রজেক্টর টেবিলটাতে নতুন ফাইল ঘেঁটে বের করছে কোনটা আগে ধরে শেষ করা যায়। গুরুত্বপূর্ণ সবগুলোই। শুধু সবাই মিলে শিডিউল করে নেয়ার বাকি।

-এখানে দাঁড়াও। শরীফের আঙুলে ক্যাঁচ করে ব্রেক কষলো রিশাদ।

একটা ফাষ্টফুড খাবারের দোকানের সামনে তারা। নানা খাবারে ভর্তি বিশাল ফ্লোরজুড়ে দোকানটা। কিছু খালি টেবিল আছে। আর দু তিনটায় মানুষ ভর্তি।

-স্যান্ডউইচ নিচ্ছি সাথে কফি। জাহেদ আগেই বলে ফেললো।
-ওকে। আমি চিকেন উইংস বার্গার আর রিশাদ কি নেবে? উৎসুক নয়নে শরীফ তাকিয়ে আছেন রিশাদের দিকে।
-একটা ভেজিটেবল রোল আর কফি।
-ওকে স্যার। ওয়েটার অর্ডার নিলো।

নতুন ফাস্টফুড মল তাই ভালোই তাদের প্রোডাকশান হওয়ার কথা। যে কোন খাবার এরা পৌঁছে দিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তাই খুব তাড়াতাড়িই এসে গেলো খাবার।

-এক্সকিউজ মি। পাশের টেবিল থেকে কেউ একজন তাদের উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো।

প্রায় দৌড়ে এসে ফিরিস্তি দিতে শুরু করলোঃ
-মাফ চাইছি আপনাদের খাওয়ার সময়ে বিরক্ত করছি।
-আরে না না। নো প্রবলেম। টেল আস। শরীফ ভড়কে গিয়ে উত্তর দিলো।
-এই যে উনি...ভদ্রলোকের ভেজিটেবল রোলে তেলাপোকা...
-ক...ক্কি?! বলেই চেয়ার শুদ্ধ ছিটকে পড়লো রিশাদ।
-এইতো। বলেই দুটো শলা দিয়ে খুঁচিয়ে বের করে নিলো লোকটি।
-হোয়াট দ্য। রাগে গজ গজ করতে করতে কাউন্টারে গিয়ে ম্যানেজারকে ঝাড়তে লাগলেন শরীফ।

কালক্রমে তখনও কেউ জানতো না যে শনাক্তকারী লোকটি দেশের একজন তুখোড় গোয়েন্দা হয়ে উঠবেন।

-আপনারা পেয়েছেন কি অ্যাঁ? কাঁচা টাকায় বিষ...মেজর তালহার ফোন পেয়ে, "দেখে নিবো" ভাব দেখিয়ে ডাকলো বাকি দুইজনকে। বাইরে বেরিয়ে এসে ভ্যানের স্টার্ট দিলো রিশাদ।

-কি বিতিকিচ্ছিরি ব্যাপার। ঘিন ঘিন করছে শরীরটা। রিশাদ মুখ বাঁকিয়ে আছে।
-আরে লোকটার সাথে পরিচয় হয় নি তো আমাদের! ধন্যবাদ দিতে ভূলে গেছি।
-গাড়ি ঘোরাও রিশাদ।

দোকানে এসে কোথাও লোকটাকে পেলো না। হেডকোয়ার্টারে ফিরে এলো। মনটা বিষিয়ে আছে সবার। এমন বিপর্যয় আশা করে নি। এতো বড়ো চেইন ফুড শপে এইসব কারবার!

"জুঁইপ" করে কনফারেন্স রুমের বিশাল প্রজেক্টরটা অন হয়ে গেলো। রুমে সবাই নড়ে চড়ে বসলো। কোনো ব্রিকিং নিউজ থাকলেই শুধু স্বয়ংক্রিয়ভাবে অ্যাডমিনিস্ট্রেশন প্যানেল থেকে কমান্ড পেয়ে অন হয়ে যায়।

"হহহিহি" কেঁপে উঠলো আসিফ।
-এই! অমন করলে কেনো! ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে সাদিয়া গুঁতো দিলো।

"বিস্ফোরণ" বলো আসিফ চোখ বড়ো বড়ো করে ঘুরে তাকালো।
-কাওরান বাজারে বিস্ফোরণ ঘটেছে।

টিভিতে বড়ো বড়ো রেড বারে ফলাও করে প্রচার করছে।

বিপ বিপ বিপ!

-হ্যালো। এজেন্ট শরীফ স্পিকিং।
-রণিন বলছি। কাওরান বাজারে নরক গুলজার করে ফেলেছে।
-প্রজেক্টর অন আছে। দেখেছি।
-আপনারা আসছেন কবে?
-এখুনি।

জায়গাটা ঘিরে কয়েক চক্কর ঘুরলো রণিন। এর চিত্র রাণা প্লাজার মতো ভয়াবহ না হলেও অন্ততঃ কয়েক ডজন প্রাণহানি যে ঘটেছে তা নিঃসন্দেহে বলা যায়।

গাড়ি এসে থামলো। মহানগর, ডিবি, র্যাব মোতায়েন রয়েছে। শরীফ নেমে এদিক সেদিক ঘুরলেন। ক্ষিপ্রমানব জাহেদ দ্রুত পাক দিতে লাগলো ঘটনাস্থলে।
-হোল্ড! সাদিয়া চেঁচিয়ে উঠলো। "এখানে ওরা এখনো আছে।"
-কি?! আসিফসহ এজেন্টরা ঘুরে তাকালো সাদিয়ার দিকে।
-কারা আছে বললে? আরমিন ভ্রুঁ কুঁচকে তাকালো।
-যারা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। সাদিয়া বললো।


শরীফ রিশাদের দিকে তাকালো।

-এভ্রিবডি জাস্ট ডোন্ট মুভ। একপ্রকার পুলিশ অফিসার থেকে লাউডস্পিকার কেড়ে নিয়ে বললো রিশাদ। "যে যেখানে আছেন জায়গা থেকে নড়বেন না।"

এর মধ্যে দেখা গেলো একজন নির্দেশ অমান্য করে ম্যাগনিফাইং গ্লাস দিয়ে হাঁটু গেড়ে এখান থেকে ওখানে ছুটছে।
-এই কে আপনি? রিশাদ বিরক্তিভরে চিল্লিয়ে উঠলো।
-আরে আপনি!
-তে তে তেলাপোকার আবিষ্কারক! রিশাদ তোতলিয়ে উঠলো।

শরীফ এগিয়ে এসে কথা বললো। পরিচয় হলো লোকটার সাথে। বয়স ত্রিশের কাছাকাছি। বিদেশ থেকে বায়োকেমিস্ট্রি থেকে পাস করেছে। শখের গোয়েন্দা। নাম শামীম।

-আপনি... খুলনা থেকে কিছুদিন আগে এসেছেন। তাই না?
-কিভাবে বুজলেন?
-সামুদ্রিক লোনা আর্দ্রতায় মানুষের মুখের রং অন্যরকম হয়।
-আরে বাব্বা!
-আর ইনি বিএমএ থেকে। খাগড়াছড়িতে ছিলো। শরীরের পেশির কাঠিন্য দেখে আঁচ করা যায়।
-অ্যাঁ?

শরীফ রিশাদের চোখাচোখি হলো।

-যদি কিছু মনে না করেন তাহলে কিছু কথা ছিলো।
-ডিজিএফআইয়ের নাম শুনেছেন?
-দেশের সামরিক গোয়েন্দা বাহিনী?
-জ্বি হ্যাঁ। ওখানে একটি সেকশান আছে। নাম এজেন্টস অব ডি। আমরা এখানে কাজ করি।
-ভালোই তো।
-আমাদের একজন গোয়েন্দা দরকার। আপনি জয়েন করবেন।
-অবশ্যই।


সেদিন বিকেলে কিছু মানুষের জটলায় সেদলে নাম লেখান শামীম। এরপর থেকে যখনই সুক্ষ, জটিল সব কেস হাতে এসেছে এই প্রখর জ্ঞান সম্পন্ন গোয়েন্দার শরণাপন্ন হয়েছে শরীফরা। সেই যোগদানের পর থেকে এজেন্টস অব ডি এর ষোলকলা পূর্ণ হলো। পরে যা ঘটেছিলো তা না হয় আরেকদিন বলবো।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ২:২২
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×