পুরো বিশ্ব প্রকৃতিতে ঘটে চলেছে জলবায়ুর পরিবর্তন। সম্প্রতি পশ্চিম এন্টার্কটিকার বিশাল বরফখণ্ডের দু'পাশে সাগরের বুকে বিজ্ঞানীরা ক্ষুদ্র আকৃতির বিশেষ ধরনের প্রাণী খুঁজে পেয়েছেন। বিজ্ঞানীরা অভিমত দিচ্ছেন, এসব ক্ষুদ্র প্রাণীই ইঙ্গিত দিচ্ছে, অতীতে কোনো এক সময় এন্টার্কটিকা সমুদ্রের মাঝখানে বিশাল বরফখণ্ডগুলো গলে গিয়েছিল। তখন ওইসব প্রাণী একদিক থেকে সাঁতরে আরেক দিকে চলে এসেছে। এখন পশ্চিম এন্টার্কটিকার বরফ পাহাড়ের দু'পাশে রোজ ও উইড্ডেল সাগরবক্ষে ফের দেখা যাচ্ছে ওইসর প্রাণীর।
গ্গ্নোবাল চেঞ্জ বায়োলজি পত্রিকার ভাষ্য মতে, দ্য এন্টার্কটিকা গবেষণায় বলা হয়েছে, সামুদ্রিক প্রাণীগুলোকে এক ধরনের শৈবাল বলা যেতে পারে। খালি চোখে এগুলো দেখা যায় না; কিন্তু একসঙ্গে গুচ্ছ আকারে থাকলে এগুলো প্রবাল কিংবা আগাছার মতো দেখায়। পশ্চিম এন্টার্কটিকায় এখনও এত বরফ আছে যে, তা গলে গলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা সাড়ে ৩ থেকে ৫ মিটার বেড়ে যাবে।
কোনো কোনো বিজ্ঞানী ধারণা করছেন, লাখ লাখ বছর আগে বিশ্ব উষ্ণায়নের সময় ওই বরফগুলো গলে গিয়েছিল। পশ্চিম এন্টার্কটিকার দুই কিলোমিটার পুরু বরফখণ্ডের দু'পাশে ২৪৭ কিলোমিটার ব্যবধানে একই ধরনের ওই প্রাণী খুঁজে পেয়ে ব্রিটিশ এন্টার্কটিকা সার্ভের প্রধান লেখক ডেভিড বার্নস বলেছিলেন, এ ঘটনাটি বড় ধরনের একটা প্রাকৃতিক বিস্ময়। তিনি বলেন, ওইসব প্রাণীর এ ধরনের সাদৃশ্যের সম্ভবত ব্যাখ্যা এমনও হতে পারে_ আগে যেভাবে চিন্তা করা হতো, এর চেয়ে ওই বরফখণ্ড অপেক্ষাকৃত কম দৃঢ় এবং আগে কোনো এক সময়ের কিছু অংশ হয়তোবা গলে গিয়ে থাকতে পারে।
সম্প্রতি পশ্চিম এন্টার্কটিকার বরফ পাহাড় যদি গলতে থাকে, তাহলে আমাদের পুনরায় চিন্তা করা উচিত। কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ভবিষ্যতে আবারও এ রকমই ঘটতে পারে। সংক্ষিপ্ত আকারে বিজ্ঞানীদের এ নিয়ে গবেষণার ফল হচ্ছে, সোয়া লাখ বছর আগে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা এখনকার চেয়ে প্রায় ৫ মিটার বেশি ছিল এবং তাপমাত্রা সম্ভবত বর্তমান সময়ের চেয়ে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল। আর লাখ লাখ বছর আগে বিশ্ব উষ্ণায়নের ঘটনা হয়তোবা বেশ কয়েকবার ঘটেছিল।
জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত প্যানেলের বিজ্ঞানীরা ২০০৭ সালে একটি প্রতিবেদনে বলেছিলেন, গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন ও জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর কারণে ২১০০ সালের মধ্যে গোটা বিশ্বের তাপমাত্রা ১ দশমিক ১ থেকে ৬ দশমিক ৪ পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। দ্য এন্টার্কটিকা গবেষণায় বলা হয়েছে, ক্ষুদ্র আকৃতির ওই প্রাণী বলতে গেলে অনড় অবস্থায় থাকে এবং ছত্রভঙ্গ হলে এগুলোর শুককীটগুলো স্বল্প সময় বাঁচে এবং খুব দ্রুত ডুবে যায়।
বার্নস বলেন, এটি স্পষ্ট করে ব্যাখ্যা করা খুব কঠিন, বিশাল বরফখণ্ডের দু'পাশে কী করে একই ধরনের প্রাণী থাকতে পারে! কিন্তু এ বরফ পাহাড় হয়তো কখনও গলে গিয়েছিল। তখনই এপাশ থেকে ওপাশে যাওয়ার পথ তৈরি হয়েছিল এবং শুককীটগুলো স্রোতে ভাসতে ভাসতে এপাশ থেকে ওপাশে চলে গিয়েছিল। তাই বার্নসের ওই মন্তব্য এবং গবেষণা থেকে পাওয়া ফল এক ধরনের সতর্ক বার্তা বটেই। সতর্ক হতে হবে এখনই। আমাদের পরিবেশ বাঁচাতে, আমাদের আশ্রয়দাত্রী পৃথিবী বাঁচাতে এবং সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ এই জলবায়ু পরিবর্তন রোধ করতে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কালক্ষেপণের অবকাশ আর আমাদের হাতে একেবারেই নেই। যা কিছু করার সম্মিলিত প্রয়াসেই এখন থেকেই শুরু করতে হবে।