somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চক্র

২৭ শে নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


“এই তুমি কি করছো”?
“অপেক্ষা করছি”
“কিসের জন্য”
“যেদিন আমার অপেক্ষা শেষ হয়ে যাবে সেই দিনটির জন্য”
“এইটা কি কোন ধাঁধা ছিলো”?
“নাহ! একদম না! এইটা তো সবচেয়ে সোজাসুজি সত্য কথা”।
“ঠিক আছে, আজ থেকে অপেক্ষা করা বন্ধ করে দাও। তাহলে আজকেই হবে তোমার অপেক্ষার শেষ দিনটা। সোজাসুজি সত্য কথার সোজাসুজি সমাধান”।

মেয়েটা খিল খিল করে হেসে উঠে। ছেলেটা বিভ্রান্ত হয়। পুরো ব্যাপারটার মধ্যে অবশ্যই একটা ধাঁধা আছে। সে ধরতে পারছেনা। সোজাসুজি সত্য কথাগুলোই সাধারণত সবচেয়ে কঠিন ধরনের ধাঁধা হয়।

মেয়েটা এবার ছেলেটাকে জিজ্ঞেস করে, “আচ্ছা সত্যি করে বলোতো তুমি কি কোনকিছুর জন্য অপেক্ষা করছোনা”?

ছেলেটার তড়িৎ জবাব, “জ্বি না। অপেক্ষা মানে ঝুলে থাকা। আর ঝুলে থাকা মানে পায়ের নিচে মাটি না থাকা। আমি মাছ না, পাখিও না। আমি মাটির মানুষ, মাটির কাছাকাছি থাকতে ভালবাসি”।

মেয়েটা আবারো খিল খিল করে হেসে উঠে। মেয়েটার হাসির মধ্যে বিচিত্র একটা ব্যপার আছে। কিছু না বলেও সে যেন হাসি দিয়েই বলতে থাকে, কি বোকা, কি বোকা, ছেলেটা কি বোকা।

“হাসছো কেন”?
“তোমার কথা শুনে হাসছি। তুমি খুব মজা করে মিথ্যে কথাটা বললে। প্লেইন মিথ্যে না একেবারে যুক্তিতর্কসহ মিথ্যা। যাতে সত্যের কাছি কাছি শোনায়। সত্য কথার জন্য যুক্তি লাগেনা”।
“আচ্ছা, খুব ভালো,এবার আপনিই বলেন দেখি, হোয়াট ইজ সত্য। ট্রুথটা কি”।
“সত্যটা হলো তুমিও অপেক্ষা করছো। তুমি ভাবছো আমি তোমার সাথে ধাঁধা ধাঁধা খেলছি। তুমি অপেক্ষা করছো কখন তুমি তোমার ধাঁধার উত্তরটা পাবে”।
“এটা কোন অপেক্ষার জাতেই পরেনা”।
“অপেক্ষা তো অপেক্ষাই। অপেক্ষা মানে ঝুলে থাকা। আর ঝুলে থাকা মানে পায়ের নিচে মাটি না থাকা”।
“আমার বুলি আমাকেই শেখানো হচ্ছে”।
“উঁহু। সত্যকে স্বীকার করে নিচ্ছি”।
“বার বার বলার দরকার কি”?
“আছে। দরকার আছে। মিথ্যা বার বার বললে সত্য হয়ে যায়। আর সত্য বার বার বললে সাহস হয়ে যায়”।
“এতো সাহস দিয়ে করবে কি”।
“অপেক্ষা করবো। অপেক্ষা করতে অন্নেক সাহস লাগে”।
“ধরো একদিন তোমার অপেক্ষা শেষ হয়ে গেলো। তখন?!! তখন কি করবে”?

মেয়েটা আবারো খিল খিল করে হেসে উঠে। সেই হাসির শব্দ যেন বলতে থাকে আমি যা জানি তুমি তা জানোনা, আমি যা বলি তুমি তা বুঝোওনা। নিজেকে বোকা ভাবার মধ্যে এক ধরনের বিরক্তি আছে। ছেলেটাও বিরক্তস্বরে বলে,”এই হাসি থামাও। হাতে সময় খুব বেশি নেই”।

“সময় কি কখনো বেশি কম হতে পারে। সময় কি কখনো শেষ হয়? অথচ দেখো আমাদের এই ব্যস্ত সময়ে, সময় প্রতি মুহূর্তেই শেষ হয়। আমাদের কাছে আমাদের জন্যই সময় নেই। কিন্তু সময় তো নেই হয়নারে, ছেলে। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে মানুষই নেই হয়ে যায়। সময়ের শেষ নেই। অপেক্ষারও শেষ নেই। তোমার জন্মই হয়েছে মৃত্যুর অপেক্ষা করার জন্য। এই বিশাল অপেক্ষা ভুলে গিয়ে তুমি তুচ্ছ অপেক্ষার পেছনে ছুটছ। চোখ খুলো, তাকিয়ে দেখ, মাথার উপরে কি সুন্দর আকাশ। তোমার সময় শেষ হয়ে যাচ্ছেনা। তুমি শেষ হয়ে যাচ্ছ, সময়ের কাছে একটু একটু করে”।

“বুঝলাম, তোমার অনেক বুদ্ধি। আমি বোকা ছেলে। অতশত বুঝিনা। আমি শুধু বুঝি যার শুরু আছে তার শেষ আছে। যে অপেক্ষার জন্য আমার জন্ম, আমার মৃত্যু দিয়ে তার শেষ। আমি নেই তো কিছু নেই। আমি আছি তো সময় আছে, অপেক্ষা আছে, শুরু আছে, শেষ আছে। একি আবার হাসি শুরু করলে কেন। আশ্চর্য”!!

মেয়েটা পাগলের মতো হাসতে থাকে। হাসতে হাসতে চোখে পানি এসে যায়। তারপরও হাসি থামেনা। ছেলেটা বসে থাকে। মেয়েটার এই হাসি সে বোঝেনা। এই হাসির কাছে সে ভীষণ অসহায়। মেয়েটা একসময় হাসি থামায়। হাসি মুখ করে ছেলেটাকে বলে, “তোমাকে আজ বলবোনা কেন হাসছিলাম। আরেকদিন বলবো”।

“আজ কেন নয়”।
“উঁহু, আরেকদিন যেদিন দেখা হবে সেদিন বলবো”।
“ঠিক আছে। দেখা হবে তো”।

মেয়েটা হাসতে হাসতে চলে যায়। ছেলেটা অপেক্ষায় থাকে। একদিন যায়, দুই দিন যায়। মেয়েটা আর আসেনা। ছেলেটা আশায় আশায় থাকে। দিন কয়েক পর মেয়েটার বাসা থেকে মৃদু স্বরে কোরআন শরীফ তিলাওয়াতের সুর ভেসে আসে। মেয়েটা আর নেই। সে তখন না ফেরার জগতের বাসিন্দা। ছেলেটা জানতেও পারলোনা মেয়েটা যাবার বেলায় তার অপেক্ষাগুলো ছেলেটাকে দিয়ে গেলো। সময় শেষ হয়না। অপেক্ষাও শেষ হয়না। শুধু মানুষ চলে যায়।
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আরো একটি সফলতা যুক্ত হোলো আধা নোবেল জয়ীর একাউন্টে‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪০



সেদিন প্রথম আলো-র সম্পাদক বলেছিলেন—
“আজ শেখ হাসিনা পালিয়েছে, প্রথম আলো এখনো আছে।”

একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আজ আমি পাল্টা প্রশ্ন রাখতে চাই—
প্রথম আলোর সম্পাদক সাহেব, আপনারা কি সত্যিই আছেন?

যেদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১১

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

ছবি এআই জেনারেটেড

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ প্রতিবাদের ভাষা নয় কখনোই
আমরা এসব আর দেখতে চাই না কোনভাবেই

আততায়ীর বুলেট কেড়ে নিয়েছে আমাদের হাদিকে
হাদিকে ফিরে পাব না... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×