হাগা ব্যাপারটা ট্যাবু নয়, ট্যাবু হওয়া সম্ভবও নয়, কিন্তু হাগা নিয়ে খুল্লামখুল্লা আলাপ ভদ্র সমাজে অপাঙক্তেয়। তাই যারা খুব ভদ্র, পারলে না হাগেন, তাঁরা আর আগে বাড়বেন না। সামনে হাগা নিয়ে অনেক গুরু আলাপ আছে। বিদায়।
আর যারা পড়বেন, তাদের জন্যই তো আমার এই হাগাবিষয়ক পোস্ট।
হাগা বড়ই ব্যক্তিগত ক্রিয়া, কারো সাথে পারতপক্ষে শেয়ার করা যায় না। কেউ শেয়ার করতেও চায় না। প্রেমিক চায় না প্রেমিকার সাথে বসে দু'দন্ড হাগতে। হাগার সময় মানুষ খুঁজে পায় একেবারেই অন্য এক নিজেকে। শহুরে মানুষ চার দেয়ালে বন্দী হয়ে আনমনে হাগে, উপভোগ করে সংকীর্ণ পরিসরের নির্জনতায় বসে হাগার আনন্দ। গরীবের বাথরুম অনেক বড়, তারা হাগে চন্দ্রসূর্য সাক্ষী রেখে, কিন্তু হাগার আনন্দ তাতে মলিন হয় না।
মানুষ আজীবন হাগে। না হেগে তার বেশিক্ষণ চলে না। তবে হাগাচক্রটি এক এক জনের জন্য এক এক রকম। নানা ফ্যাক্টর একে প্রভাবিত করে। খাদ্য গ্রহণের অভ্যাস, পেশা, লিঙ্গ, ইত্যাদি বিভিন্ন জিনিস হাগাচক্রের আকারআকৃতির ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। যে অনির্বচনীয় অনুভূতি আমাদের হাগতে অনুপ্রাণিত করে, তার নাম দেয়া যেতে পারে হাগামোটিভ ফোর্স। সময়ের সাথে হাগামোটিভ ফোর্স বাড়ে নিচের সমীকরণ অনুসারে
HMF = A + Btn
গাণিতিক জ্ঞান সামান্য লাগবে এই সমীকরণের গুরুত্ব বুঝতে, তবে এখানে n হচ্ছে গিয়ে শ্রেণীবিভাগের জন্য নির্ধারিত ক্রম। এর মান কারো জন্য >0 কিন্তু 1। ক্রমভেদে কেউ কেউ দীর্ঘক্ষণ হাগামোটিভ ফোর্সকে পরাস্ত করে থাকতে পারে, কেউ অল্পতেই অস্থির হয়ে ওঠে একটু হেগে নিষ্কৃতি পাবার জন্যে। HMF একটা নির্দিষ্ট মানে পৌঁছুলে সুস্থ মানুষের পক্ষে আর দমন করে রাখা অসম্ভব হয়ে পড়ে, তাকে খুঁজে নিতে হয় নিজস্ব নির্জনতা।
সবারই একটা নিজস্ব হাগার ঘরানা আছে। তাল লয় ছন্দ হাগকী এক এক জনের এক এক রকম। কেউ গান গাইতে গাইতে হাগেন, যেমন আমি, সারাটা জীবন টয়লেটেই সঙ্গীত সাধনা করলাম। কেউ কেউ হাগার সময় তেমন একটা শব্দ করতে পারেন না, কারণ তাদের দাঁতে দাঁত পিষে একটা বড়সড় বায়াসিং চাপ যোগ করতে হয় হাগামোটিভ ফোর্সের সাথে, ঐ বাড়তি চাপটুকু না দিলে প্যাকেজ ডেলিভারির ব্যাপারটা আর হয়ে ওঠে না আর কি। কেউ আবার টুকটাক কাজ সারেন, খবরের কাগজ পড়া বা চা খাওয়া বা ফোনে জরুরি আলাপ।
ধূমপায়ীদের নাকি ধোঁয়া না টানলে হাগা হয় না। কাইনেটিক থিওরি অব গ্যাসেস পড়লে ব্যাপারটার একটু পদার্থবিজ্ঞানগত ভিত্তিও হয়তো পাওয়া যাবে। কেউ আবার ধোঁয়ার মতো ধোঁয়াটে ব্যাপার দিয়ে ম্যানেজ করতে পারেন না, নানারকম আরক সেবন করে থাকেন। হাগামোটিভ ফোর্স সবার জন্য ফ্রি নয়, কারো কারো জন্য বেশ খরুচে ব্যাপার।
আমার এক বন্ধু মাঝখানে মারাত্মক পেটব্যথায় আক্রান্ত হয়ে ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়েছিলো। নানারকম রিপোর্ট দেখে ডাক্তারের মুখে আশঙ্কার কালো ছায়া দেখে ভয় পেয়েছিলো সে-ও। টিউমার? নাকি ক্যান্সার? ডাক্তার জানালেন, পেটে গু জমে একটা অবরুদ্ধ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ঔষধ হলো দুই হালি কলা।
সেদিন এক নামজাদা টয়লেটে হাগলাম। আমার আগেও অনেক কীর্তিমান সেখানে হেগেছেন। তাদের কীর্তিতে অতিষ্ঠ হয়ে টয়লেট কর্তৃপক্ষ কয়েক দফা ফরমান টাঙিয়ে রেখেছেন সেখানে। নানা বিধিনিষেধ, হাগতে গিয়ে পদে পদে হুমকির সম্মুখীন হতে হয়। শেষমেশ দেখা গেলো যে রাজ-আসনটিতে বসে হাগার কাজটি সারবো, তার সামনেই এক বিরাট বিধান পোস্টিত। এইচএমএফ তখন ট্রিগারিং পয়েন্ট টপকে গেছে, বসে পড়েছি সেই হটসীটে, প্রাথমিক ধকলটা কাটিয়ে ওঠার পর খুঁটিয়ে পড়ে দেখলাম সবকিছু। তারপর একটু নিশ্চিন্ত হলাম, যাক, হাগাবিধানের কোন ধারা লঙ্ঘন করিনি। আর্টিকেল ওয়ানেই দেখলাম বলা আছে কমোডের ওপর পা তুলে বসা নিষেধ। তখন বুঝলাম, এই কর্মটি কোন এক কামেল বান্দা আগে করেছেন। অনেকেই সেই অমোঘ আসনটি ছাড়া কর্ম সম্পাদন করতে পারেন না। হাগাশাস্ত্রে এটিকে মিশনারি পজিশন হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। কিন্তু সাহেবদের কল্যাণে নেটিভদর শিখে যাওয়া ডগি স্টাইলে আমি একেবারে অনভ্যস্ত নই, অনেক বছর তো হলো ওভাবেই হাগা সারছি, তাই নিশ্চিন্ত হয়ে কাজে মন দিই। পরবর্তী আর্টিকেলগুলিও নিষেধসূচক, অমুক করিবেন না তমুক করিবেন না, আরে বাবা এতো আইন মেনে হাগলে কি দেশটার এই হাল হয়? তবে কাজ সেরে দেখলাম যে মোটামুটি আইনের সীমানার এপারে থেকেই গোটা ঘটনাটি ঘটাতে পেরেছি। টার্গেট মিস করিনি কোনভাবেই, অপাত্রে বর্ষণ করিনি কিছু, দলিল দস্তাবেজও বেশ দক্ষভাবেই ডিল করেছি, বন্দুকও লোকে ওভাবে পরিস্কার করে উঠতে পারেনা অনেক সময়, ফ্লাশ করার আদেশটি অক্ষরে অক্ষরে মেনে উঠে দাঁড়িয়ে আবার স্খলিত প্যান্টটিকে স্বস্থানে এঁটে নিতে নিতে দেখলাম, নাহ, আমার পর যিনি এই ক্রিয়ায় নিজেকে ব্যস্ত করবেন, তাঁর ক্রোধের কারণ হবো না আমি। দিব্যি ছিমছাম হাসছে কমোডটা। খুব ভালো লাগে এমন হাগা সারতে পেরে। মনে হয়, জীবনে একটা কিছু করা হলো। অ্যানাদার ফিদার ইন মাই ক্যাপ।
তবে সবাই আমার মত ফিলানথ্রপিস্ট হাগারু নয়। কেউ কেউ থাকেন শুধু নিজকে নিয়ে, নিজের মতো নিজের কাজ সেরে নিজের খেয়ালে বেরিয়ে পড়েন, তাঁর লীলার মঞ্চটি যে উল্কাপাতের কেন্দ্রস্থলের মতো বিধ্বস্ত হয়ে পেছনে পড়ে থাকে, সে ব্যাপারে তার কোন ইয়েই নেই। এরা জাতির শত্রু। এদের চিহ্নিত করে চাবকে মারা দরকার। দেশের বাইরে গিয়ে একবার এক বজ্জাত ফরাসীর প্রতিবেশী হতে হয়েছিলো, শুয়োরের বাচ্চা, রোজ টয়লেট ময়লা করে রাখতো। শেষমেশ একদিন তিন ক্রুগ বিয়ার খাওয়ার পর একটা জেহাদী জোশ এসে যাবার পর ওর কলার ধরে বললাম, আর কোনদিন যদি ক্লো ময়লা করেছিস তো পেঁদিয়ে খাল তুলে নেবো, ব্যাটা মাতাল! স্বদেশে সবাই রাজা, কাকে ফেলে কার কলার ধরি। আরো ঝামেলা হয় যখন এক ফুল দো মালি বা তিন মালি এসে হাজির হয়। সবারই এক এজেন্ডা, তখন একটা ক্ষীণ ডিলেমা হয়। শরাফত আগে না তহবন আগে। ভদ্রতা করতেও ভরসা হয় না, যদি প্রতিপক্ষ প্রতিভদ্রতা না করে! লোকে তৃষ্ণার্ত শত্রুকেও অকাতরে নিজের মশক থেকে শেষ ফোঁটাটা খাইয়েছে, কিন্তু এইচএমএফ ঘন্টি বাজানোর পর কাউকে কমোড ছেড়ে দিয়েছে এমন দেখিনি নিজের চোখে। এক জিগরি দোস্তকে একদিন জোরজবরদস্তি করে বঞ্চিত করলাম, যা ব্যাটা, আমি তোরচেয়ে ভালো হাগি, তুই পরে আয়।
তবে পৃথিবীতে কিছু সুখী হাগারু রয়েছেন। এঁদের রীতিমতো ঈর্ষা করে চলি। কয়েকজনের সাথে রীতিমতো পীড়াপিড়ি করেছি, বলেন ভাই, রহস্যটা কী? তাঁরা সবাই মুচকি মুচকি হাসেন শুধু। খোলাসা করে বলি, এঁরা যখন খুশি যেখানে খুশি হেগে আসতে পারেন। যেখানে আমি বদনা-সাবান বা টয়লেট পেপারের চিন্তায় দিশেহারা, সেখানে তাঁরা নিষ্কম্পচিত্তে কাজে বসে পড়েন, আর এঁদের বসা মানে কাজ ফুরিয়ে নটে গাছ মুড়িয়ে ওঠা। একজন শুধু অস্পষ্টভাবে বলেছিলেন, দামী মোজা কিনবেন না কখনো, আঁ, মোজা কিনবেন খুব সস্তা।
[লেখাটা পরে বাড়াবো কমাবো। আপাতত পড়েন আর কি।]
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মে, ২০০৭ রাত ১০:৪৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



