কবিরাও সঙ্ঘবদ্ধতা শিখেছে এটাই আমাদের পরমপ্রাপ্তি।
----------------------------------------------------------------
আধুনিক কবিতা এবং উত্তরাধুনিক কবিতার ভেতরে তফাত আমি করতে পারবো না, সুতরাং সেসব বাগ্মিতা কিংবা অযথা কপচানি বাদ দিয়েই বলতে চাই এই সময়ের অতিউত্তরাধুনিক কবিতার অনেকগুলো ব্লগসৃষ্টির আগে আমি পড়েছি ফুটপাতে না বিকোনো বইয়ের সারিতে। নীলক্ষেত আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুটপাতে, বই মেলার সামনের অস্থায়ী সস্তা বাজারে অনেক উত্তরাধুনিক কবিতার পসরা বসতো, ১০ টাকা ১০ টাকা হেঁকে যেতো দোকানি, সেখানেই হাঁটু গেড়ে বসে মাঝে মাঝে উত্তরাধুনিক কবিতা আস্বাদন করেছি আমি। সুতরাং আমি এইসব বিষয়ে কোনো বক্তব্য দেওয়ার মতো অভিজ্ঞ ব্যক্তি নই। আমি নিতান্ত পাঠক এবং সরলমতি পাঠক।
কবিতা পাঠের জন্য কোনো ব্যকরণ বই কিংবা ইতিহাসের বই আমি খুলতে নারাজ, দুর্বোধ্য কোনো উপমাভারাক্রান্ত কোনো কবিতা আমাকে আকর্ষণ করে না। আমি নিতান্ত গাধাশ্রেণীর পাঠক, আমার পাঠচক্র নেই, নিত্য আলোচনা কিংবা উঠাবসা নেই কবিদের সাথে, আমি আজ অস্তিনে করে কবিতা লুকিয়ে নিয়ে আসলাম, আমার বুক পকেটের ভাঁজে একটি কবিতা ছিলো, এইসব কাব্যালোচনা সভায় আমার নিয়মিত উপস্থিতি নেই। আমি এই চত্ত্বরে একেবারেই বহিরাগত।
কতিপয় বোদ্ধা উজবুকের জন্য কবিতা লিখতে আমি নারাজ, আমি কবিতা সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত পাঠ্য মনে করি, মনে করি সাধারণ মানুষ যে ভাষায় বুঝে এবং উপলব্ধি করে সে মাত্রায় না গেলে কোনো কবিতাই লোকপ্রিয়তা পায় না। শেষ পর্যন্ত প্রকাশিত হইবার বাঞ্ছা হইলে আমি ঠিক সে রকমই কবিতা লিখতে চাইবো, যা বিদগ্ধ পাঠক নয় সাধারণ মানুষ পড়ে তাদের অনুভুতির বিচ্ছুরণ দেখবে সেখানে।
কবিসঙ্ঘ কিংবা কবিদের রাজনীতি, কবিতার রাজনীতি বিষয়টা প্রকট দেখলাম। কয়েকজন মানুষ নিজেদের পিঠ চুলকাতে চুলকাতে ঘা করে ফেলছে, সেইসব কবিতা বিষয়ে আমার মতামত, যদি মন না টানে তবে পড়বার প্রয়োজন নেই। তবে যদি ভুল করে পড়ে ফেলো, কবিতা বিষয়ে নিজের মতামত অকপট প্রকাশ করে ফেলাই ভালো।
এখানে উত্তরাধুনিক কবিদল সোচ্চার, জীবানানন্দের পঁচা পুঁজ খেয়ে বর্ধিষ্ণু কবিতা কিংবা আরও আগের লোকগানের ফর্মায় লিখা কবিতা কিংবা এইসব কিছুই না হয়ে উঠা কবিতাদের বাজার এখানে, সবাই আহা উঁহু বাহ বাহ বেশ বেশ করে। নিতান্ত নিজস্ব সময়ের কবিতা হয়তো এখনও খুঁজে পাই নি, আমার সীমিত পঠনে এমন কোন কবিতা স্মরণ করতে পারি না, যারা পিঠ চুলকে ঘা করছেন তাদের কবিতা পড়েও আমার তেমন মনে হয় নি যে এমন কোনো কবিতা যা না পড়লে আমার মানবজন্ম বৃথা যেতো।
সময়িক অসস্তি, পেটে গ্যাস হলে চোঁয়া ঢেকুর তুলে ফেলা কিংবা আড়ালে কিংবা প্রকাশ্য মজলিসে বায়ুত্যাগের মতো কবিতা প্রসবে আমার আপত্তির কিছু নেই, সেটা সাধুবাদ জানানোর মতো বিষয় কি না সেটাও আদতে গোত্রপ্রিয়তা ও রাজনীতির গল্প।
একটা ছোটো কৌতুক বলি, এক লোক ভীড় বাসের ভেতরে বসে আছে, হঠাৎ করেই তার মনে হলো পেটে ভীষণ চাপ, বায়ুত্যাগ না করলেই নয়, চমৎকার সুরের খেলা চলছে, সুতরাং সবার চোখ এড়াতে সুরের তালে তালে বায়ুত্যাগ করবার পরে যখন লোকটা নিজের স্টপেজে নামলো, তখন উপলব্ধি করলো বাসের সবাই তার দিকে কেমন অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে আছে। আর ঠিক সে সময়েই তার উপলব্ধি হলো আদতে তার কানে আইপড গোঁজা।
কবিতাকে কবিতা হয়ে উঠতে হবে এমন কোনো শর্ত নেই, কবিতা থাকুক কবিতার মতো, কেউ যদি গুটিকয়েক মানুষের জন্য লিখে সে তার বিবেচনা, এমেচারদের জন্য যেসব কবিতা নয়, সেসব কবিতা এমেচারদের বাজারে প্রকাশিত হলে এমেচার কবিতার ভাবার্থ না বুঝে কিছু মন্তব্য করেই ফেলবে, ওরা পাষন্ড ও নারীবিদ্বেষী হতেও পারে, সাধারণ সামাজিক মানুষ নারীবিদ্বেষী, নারীকে হীন ও ইতর জ্ঞান করে।
তবে এখানে দেখলাম কবিতার বাজারে, পিঠ চুলকানি গোত্রে যারা আছেন, তারা ভালো কিংবা মন্দ, হলো কিংবা না হলো, সব বিষয়েই নিজস্ব গোষ্ঠিকে আলিঙ্গন করে চলেন, এবং গোত্রে গোত্রে সংঘাতও আছে। আমি তার চেয়ে দুই পাতা বেশী কবিতা বুঝি, আমি তার চেয়ে আরও ৩ পাতা কবিতা বেশী বুঝি, এই বেশী বুঝদার মানুষগুলোর প্রশংসা দেখে এবং থাবরাথাবরি দেখে আমি আনন্দিত হওয়ার কিছু পাই না।
যতটুকু আলোগোছে থাকা যায়, যতটা অগোত্রভুক্ত থাকা যায়, সব গোত্রপ্রিয়তা কিংবা টোটেমপ্রিয়তা বাদ দিয়ে আমি নিজের মন্তব্যে বলতে চাই- বাংলাদেশের সামাজিক সংস্কার এবং জীবানাচারের ভেতরে অনেকগুলো সাবসেটের উপস্থিতি চোখে পড়েছে, বলিউডের ধাঁচে এখানের কিছু সংস্কৃতি কর্মীর জীবনযাপন, একপাশে অশ্লীল আপদের মতো বেড়ে উঠা বনিক ও নব্যবনিক সংস্কৃতি ও জীবানাচার, এই দুই পদের মাঝের আধুনাকর্পোরেট জীবনাচার, দায়বদ্ধতাবিহীন ,
এবং এসবের সংকর হলো আধুনিক ও উত্তরাধুনিক কবিদের মিশ্রে জীবনযাপন। সেখানে কবির লৈঙ্গিক পরিচয় হয়তো মুখ্য নয়, তবে কবি হয়ে উঠবার কারণে যেসব সামাজিক সংস্কার ত্যাগ করতে হয়, এবং যেসব লালসাকে পরিশীলিত করতে হয়, সব কিছু মিলিয়ে নারী হলে ভালো কবি না হলেও আলোচিত হওয়া যায়, একেবারে যাচ্ছেতাই লিখেও প্রচুর প্রশংসাধন্য হওয়া যায়। এখানে নারীর কবিতা লিখবার যোগ্যতা নয় বরং তার শাররীক কাঠামো ও তার পার্ফরমেন্স যখম মুখ্য হয়ে উঠে তখন সেখানে কবিতার আলোচনা করা উচিত নয়।
কিংবা সাহসী অকপট হয়ে যাওয়া যায়। প্রশংসা যারা করে তারা কতটুকু কবিতার মানের গরজে এবং কতটুকু নিজের বিভিন্ন কাম ও কামনাকে প্রকাশিত করতে করে সেটাও আমার কাছে প্রশ্নসাপেক্ষ মনে হয়, আমি যাদের পিঠ থাবরে আসলাম, আমিযাদের পিঠ চুলকে আসলাম, তারাও কৃতজ্ঞতার নাগপাশে বন্দী হয়ে একদিন আমার বাতিল ও জঘন্য কবিতায় সুশোভন বিশেষণ লাগিয়ে আসবে।
আর তখনই মনে হয়, এইসব আত্মরতিপরায়ণ কবিরা, যারা শুধু নিজেদের জন্যই কবিতা লিখে, এবং নিজেরাই নিজেদের পিঠ চুলকে রক্ত বের করে ফেলে তাদের নোটিশবোর্ড লাগানো উচিত কি না?
যারা কবিতা না বুঝেও ভাবে এটাতে বোধ হয় অনেক গভীরতা, তাদের জন্য কিছু বলবার নেই।
একটা কৌতুক বলি পুনরায়-
লাজুক এক কিশোর জীবনে প্রথম বারের মতো ডেটিংয়ে গিয়েছে, এতটাই লাজুক মুখ ফুটে বলতে পারে না চুম্বন দিতে চাই।
বন্ধুরা তাকে যার সাথে ডেটিংয়ে পাঠালো, সে ঘাঘু, এবং উদার।
কয়েকপাত্তর মদের শেষে একান্তে নির্জনে কিশোর সমস্ত লাজুকতা ঝেড়ে বললো, আমার আসলে এখন সংকীর্ণ যোনী চাই গমনের জন্য,
পাশে বসে থাকা মেয়েটাও বললো, আমিও তাই চাই বুঝলে, আমারটা হাইওয়ে হয়ে গেছে।
-----------------------------------------------------------------------------
যার এক ইঞ্চি মাত্র ধন, সেও একদিন হয়তো প্রবল উত্তেজনায় ভেবে বসতে পারে এই ধন দিয়েই সে এভারেস্ট ফুঁড়ে ফেলবে।
সমস্যা হয় তখনই যখন গোত্র প্রিয়তার কারণে তার বন্ধু মানুষেরা তার এই মতকেও সমর্থন করে বলে, একটু সাবধানে লাড়াইয়ো, যদি এভারেস্টের মাথার বরফ খসে যায় তাহলে তুমি চাপা পড়ে মারা যাবে, ড্রিল ইট বাট ডোন্ট শেক ইট মাচ।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মার্চ, ২০১১ রাত ৮:৫৩