আহমেদ শরীফ নন্দিত এবং নিন্দিত তার রাজনৈতিক মতাদর্শ এবং তার স্পষ্টবাদিতায়। তার ভাষ্যকে প্রামাণ্য ভিত্তিতে গ্রহন করবার কোনো কারণ আছে এমনটা আমার মনে হয় না কখনই, তবে তারা সমাজের যে স্তরে বসবাস এবং ঘোরাফেরা করেছেন, সেই উপস্থিতি সূত্রে গুজব এবং ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় তারা হয়তো কিছু তথ্য জানেন যা অন্য নীচ তলার মানুষেরা কখনই জানতে পারে না। সুতরাং এখানে তার যেসব বক্তব্য পেশ করা হবে সেটার প্রামাণ্যতা নিয়ে কোনো বক্তব্য আমার নেই- বরং সেটা আহমেদ শরীফের বরাতেই মেনে নিতে হবে-
আহমেদ শরীফের অগ্রন্থিত ডায়েরী থেকে নেওয়া বক্তব্যগুলোর পুনরাবৃত্তি বাদ দিয়ে একটা কালাণুক্রমিক সজ্জ্বা দিয়েছি শুধুমাত্র- এইটুকুই আমার বক্তব্য-
হুজুগে বাঙ্গালী, সুযোগসন্ধানী, সুবিধেবাদী নগদজীবি বাঙালী। চাটুকারিতায় তোয়াজে তোষামদে স্তবে-স্তুতিতে ছোটো- বড়-মাঝারী সব দেবতার পূজারী বাঙালী আবার যথাসময়ে যথাস্থানে যথাপ্রয়োজনে যথাপাত্রে অকৃতজ্ঞ হয়ে বেওয়াফা হয়ে নতুন শক্তির ওফাদারি হচ্ছে বাঙালীর চারিত্রিক বৈশিষ্ঠ্য। চিরকাল বাঙালী তাই পর-প্রভাবিত, মেরুদন্ডহীন-অনৃতভাষী, আত্মসম্মানবোধে রিক্ত পরাধীন, ভীত-ভেতো, সরকার ঘেঁষা,সরকারভীরু ও সরকারের পা চাটা। তার বাঘা তেজ নেই, আছে সর্বার্থে ও সর্বাত্মক ভাবে কুকুরেপনা- তবু কুকুরের মতো প্রভুর দুঃখে-বিপদে-আপদে প্রভুর প্রতি অনুরাগ- আনুগত্য, প্রভুর অনুগামিতা তার থাকে না। এক্ষেত্রে সে কুকুরেরও অধম। এটি কুকুরের মহৎগুন কিন্ত তা বাঙালীর নেই। সে আত্মরতিপরয়ান বলেই নিমকহারাম।
শেখ মুজিবর রহমানকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় জড়ানোর ফলেই ক্ষুব্ধ ক্রুদ্ধ অআওয়ামী লীগ বাঙালী মাত্রই মুজিবের প্রতি সহানুভুতিশীল ও তার সমর্থক হয়ে উঠে। যদিও তখন সব আওয়ামী লীগারই দলছুট হয়ে যায়। বাকি থাকেন শিব রাত্রির সলতের মতো আমিনা বেগম আর আব্দুস সালাম খান। পরে সালাম খানও সরে পড়েন। আমিনা বেগমই ধরে রাখেন আওয়ামী লীগ নামটা। কেন না আওয়ামী লীগ তখন নামসার। এভাবে ক্ষুব্ধ-ক্রুদ্ধ সাতন্ত্র্যকামী বাঙালীর স্বতোস্ফুর্ত নেতৃত্বে বৃত হয় শেখ মুজিবর রহমান। তখন তিনিই বাঙালীর বল-ভরসার আকর ও ভিত্তি, প্রেরণার, প্রণওদনার, সংগ্রামের প্রবর্তনার উৎস। তাই নির্বাচন কালে দেশশুদ্ধ প্রায় সবাই আওয়ামী লীগপন্থী হয়ে উঠলো। মুজিব হলেন বাঙালীর একছত্র অবিসংবাদিত নেতা ও নায়ক।
নেতাসূলভ গুণের ও ব্যক্তিত্বের অভাব থাকা স্বত্ত্বেও শেখ মুজিবর রহমান অপ্রতিদন্ডী ও অবিসংবাদিত নেতৃপদে বাঙালীমাত্রেরই অন্তরে ও বাইরে স্বীকৃত ছিলেন, এবং অস্থিরচিত্ততা, চেলাপ্রীতি ও সিদ্ধান্তহীনতার জন্য নিন্দিতও।
মুজিববাদী আঁতেলরা এমন বেহায়া চাটুকার যে কোন মিথ্যাভাষণে তাদের কোন লজ্জা-শরম নেই। তাঁরা জানেন মুজিবের পাকিস্তান ভাঙার কোনো স্বপ্ন বা সাধ ছিলো না, তিনি ছিলেন সোহরাওয়ার্দীর চেলা এবং মুসলিম লীগার ও হিন্দুবিদ্বেষী। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ এনে দিয়েছিলো তাঁকে ১৯৭০ সালের নির্বাচন। কেননা আগরতলা মামলা তাঁকে অপমানিত , ক্ষুব্ধ ও ক্রুদ্ধ বাঙালীর হিরো বানিয়ে দিয়েছি। শেখ মুজিব ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ অবধি প্রধানমন্ত্রীত্বের জন্য দককষাকষি করেছিলেন, যদিও যে লক্ষ্যে ছাত্রনেতাদের পরামর্শে তিনি ৭ই মার্চের ভাষণে স্বাধীনতার ও মুক্তির সংগ্রামের কথা উচ্চারণ করেছিলেন তাঁর প্রধানমন্ত্রীত্বপ্রাপ্তি ত্বরাণ্বিত করার লক্ষ্যেই। প্রমাণ তিনি ঐ সভার পরেই দ্রোহী হন নি, ছাত্ররাও ধরে নি অস্ত্র।
তিনি স্বাধীনতা চান নি। তরুণেরা তারুণ্যের আবেগ বশবর্তী হয়ে স্বাধীনতার দাবি ও সঙ্কল্প তাঁকে দিয়ে জোর করে তাঁর মুখে উচ্চারণ করিয়েছিলো তাঁর আপত্তি ও পরিব্যক্ত অনীআ সত্ত্বেও। তাঁর বাড়ীতেও ওরাই স্বাধীনতার পতাকা উড়িয়েছিলো তাঁর হাতেই। মানুষের বিশে করে বাঙালীর স্বভাব হচ্ছে হুজুগে তাই তারা কাক-শিয়ালের মতো বুঝে না বুঝে শেখ মুজিবকে স্বাধীনতা সংগ্রামী বলে মেনে নিলো। সেভাবেই তাঁর প্রতি ভক্তি শ্রদ্ধা ও আনুগত্য নিবেদন করলো।
২৫শে মার্চে পাকিস্তান সরকারই বাঙালীকে প্রতারিত করে হত্যাকান্ড চালাতে থাকে। বিপন্ন ও অস্ত্রচ্যুত বাঙালী সেনানীরা, পুলিশেরা এবং ক্ষুব্ধ-ক্রুদ্ধ তরুণেরা অনন্যপায় হয়ে অস্ত্রধারণ করে, তাদের সাথে জুটে যায় আওয়ামী লীগারেরা, এবং ক্ষুব্ধ-ক্রুদ্ধ স্বাধীনতাকামী জনগণ গাঁ গঞ্জ থেকে শিক্ষিত- অশিক্ষিত নির্বিশেষে। শেখ মুজিব যে মুক্তি বা স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রেরণা-প্রণোদনা প্রবর্তনা দাতা তা কেউ অস্বীকার করে না। যদিও সবটা তাৎক্ষণিক এবং অবস্থায় ও অবস্থানের পরিণাম, পরিকল্পিত নয়, উদ্বিষ্ট ছিলো না বলেই।
শেখ মুজিব বঙ্গবন্ধুর মর্যাদা এবং জাতির পিতার পরিচিতি নিয়ে ১০ই জানুয়ারী ১৯৭২ সনে ঢাকায় আসেন ।
শেখ মুজিব কিন্তু তাঁর দলের লোকদের নিয়ন্ত্রণে ও শাসনে অনুগত রাখতে পারলেন না। তাঁর রক্ষীবাহিনীর, তাঁর অনুচর, সহচর, সহযোগীর লুণ্ঠনে, পীড়ন নির্যাতনে, অত্যাচারে, শাসনে- শোষণে দেশে দেখা দিলো দুর্ভিক্ষ, মরল লক্ষাধিক মানুষ।
১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সনের আগস্ট মাস অবধি মুজিব শাসন হচ্ছে ত্রাসের হত্যার কাড়ার-মারার, জোর-জুলুমের, স্বৈরাচারের, দুর্ভিক্ষের, পীড়ণের, শোষণের, জবরদখল ও জবরদস্তির হৃৎকাঁপানো বীভৎস রূপের।
সম্ভবত শেখ মনিই ভাবিশত্রু তাজউদ্দীনকে মুজিবের প্রতিদন্ডী বলে মুজিবের কান-মন ভারী করে তাঁকে পদচ্যুত করিয়েছিলো। রাজত্বটাও প্রায় পারিবারিক হয়ে উঠেছিলো- সৈয়দ হোসেন, সারনিয়াবাদ, শেখ মনি, কামাল- জামাল তখন সর্বশক্তির আধার কার্যত
এ সুযোগে উচ্চাশী মুশতাক ও অন্যরা হলো ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। অস্থিরচিত্ত ও অনভিজ্ঞ রাজনৈতিক নীতি আদর্শেও হলেও অস্থির। ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইঙ্গিতে তাঁর মুক্তিযোদ্ধ আওয়ামী লীগের একটি উচ্চাশী ক্ষুদ্র দল তাঁকে সপরিবার পরিজনে হত্যা করলো।
।
মুজিবকে যারা হত্যা করলো, তারা গোড়ায় সবাই মুজিবের অনুগতই ছিল।
শেখ মুজিবের সাড়ে তিন বছরের দুঃশাসন কিন্তু হত্যা-লুণ্ঠনের বিভীষিকা মুজিবকে গণশত্রুতে পরিণত করেছিলো। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার আন্তর্জাতিক রাজনীতির স্বার্থে সে সুযোগে তাকে হত্যা করায় সপরিবার।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



