somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিজের গাছে নিজেই ফোঁটাই গোলাপ!

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১১:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গোলাপ ফুল কার না ভালো লাগে? আসুন না দোকান থেকে না কিনে নিজের গাছেই ফুটাই গোলাপ খুব সহজে।
আমার ৭ বছর ধরে ছাদে গোলাপ চাষের অভিজ্ঞতার আলোকে আপনাদের জন্য সহজ ভাষায় টবে গোলাপ এর চাষ সম্পর্কে লিখলাম।





গোলাপের চারা যেকোনো সময় লাগানো যায়। তবে নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত গোলাপের ভালো চারা পাওয়া যায়।





১৫ দিন বয়সী চারা (প্যাকেট) মূল্য সাধারণত ৪০-৫০ টাকা প্রতিটি, আর ২-৬ মাস বয়সী গাছ এর মূল্য ১২০-২০০ টাকা (১০ ইঞ্চি টবে লাগানো) প্রতিটি (২০১৩ এর মার্চ মাসের বাজার মূল্য অনুযায়ী)।





ফেব্রুয়ারী থেকে মার্চ এর মধ্যে নতুন চারা ফুল দেখে পছন্দ করে কেনা সম্ভব। চারা সংগ্রহের সময় সুস্থ, সুন্দর, সবল চারা সংগ্রহ করা উচিত। আমাদের দেশের বেশ কিছু নার্সারির গোলাপ গাছ ভাইরাস আক্রান্ত, তাই দেখে শুনে সুস্থ চারা কিনতে হবে। চারা সংগ্রহের সময় এর গোড়ার মাটি শক্ত আছে কিনা তা ভাল করে দেখে নিতে হবে। চারা সংগ্রহের ব্যাপারে অভিজ্ঞ লোকের পরামর্শ নেয়া যেতে পারে। গাছের ব্যাপারে যেকোনো তথ্য এর জন্য ব্রাক নার্সারিঃ ০১৬৭০২২৭০৪২ (গুলশান শাখা), ০১৭৪১২৩১০৮৭ (বাড্ডা শাখা), সোহেল ভাইঃ ০১৯৩৭৮৬০৩১৯ (বৃষ্টি নার্সারি, আগারগা), ০১৮১৯১৯৪৩০৩ (কৃষিবিদ উপকরণ নার্সারি, আগারগা) যোগাযোগ করা যেতে পারে।





গোবর, সরিষার পচা খৈল, টিএসপি, পটাশ, হাড়ের গুঁড়া এসব সার গোলাপের জন্য উপকারী। ব্যাক্তিগতভাবে এগুলোর পাশাপাশি আমি তরকারির খোসা ব্যবহার করি। গোলাপে নভেম্বর মাস ছাড়া যথাসম্ভব ইউরিয়ার ব্যবহার (টবের গাছের ক্ষেত্রে) পরিহার করা উচিৎ।





সাধারণত এক মাস পর পর সার দেয়া ভালো। শীতের ঠিক পরেই অর্থাৎ মার্চের শেষে বা এপ্রিলের প্রথম দিকে টবের উপরের ৮ সেঃমিঃ – ১০ সেঃমিঃ মাটি তুলে দিয়ে খালি জায়গায় পচা গোবর সার দিয়ে দিলে ভালো ফুল হয়। এছাড়া গোবর ও সরিষার খৈল ৪-৫ দিন পানিতে পচিয়ে তরল করে মাসে ১ বার ব্যবহার করা যায়। ছোট মাছপঁচা পানি গাছের গোড়ায় দেয়া যায়। দুর্বল গাছে প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হিসাবে ইউরিয়া মিশিয়ে সকাল বিকাল কয়েকদিন পাতায় স্প্রে করলে গাছ দ্রুত তাজা হয়। কিন্তু তাজা/সুস্থ গাছে অযথা ইউরিয়া স্প্রে করা উচিৎ নয়, এতে দ্রুত ফুল দেবার ক্ষমতা কমতে থাকে।





বীজ থেকে গোলাপের চারা তৈরি করা গেলেও প্রধানত কলমের চারাই ব্যবহার করা হয়। সাধারণত গুটি কলম, শাখা কলম (কাটিং), চোখ কলম (বাডিং) ইত্যাদি উপায়ে গোলাপের চারা প্রস্তুত করা হয়। তবে নার্সারিতে আমরা যে গাছ/চারা দেখি সেগুলো চোখ কলম করা, ১ টা জংলি গোলাপের ডালে ভালো জাতের গোলাপের চোখ কলম করা হয়।





গোলাপের টব খোলামেলা আলো বাতাসপূর্ণ স্থানে রাখতে হবে যাতে সকালের সূর্য কিরণ পায় এবং প্রায় ৬-৮ ঘণ্টা সূর্যের আলো পায়। গোলাপ গাছটিতে যাতে চারিদিক হতেই আলো পড়ে সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। না হলে গাছটি কেবল আলোর দিক দিয়েই বাড়বে। এজন্য টবসহ গাছটি মাঝে মাঝে ঘুরিয়ে দেয়া ভালো।





টবের আকার নির্ভর করে যে গোলাপের চাষ করা হবে তার জাতের উপর। ছোট জতের জন্য ৮ ইঞ্চি টবই যথেষ্ট, হাইব্রিড-টি ও ফ্লোরিবান্ডার জন্য ১০-১২ ইঞ্চি বা আরো বড় টব ব্যবহার করতে হয়। তবে প্রথম বছর যে আকারের টবে গাছ বসানো হবে ২/৩ বছর পর বড় আকারের টবে গাছ স্থানান্তর করলে বড় আকারের বেশী ফুল পাওয়া যায়।





লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে গাছের গোড়ায় পানি দাঁড়িয়ে না যায়। পাশাপাশি টবের গাছ কখনই শুকিয়ে যেতে দেয়া যাবে না। বেশি গরমে প্রয়োজনে সকালে ও বিকালে ২ বার পানি দিতে হবে অথবা মালচিং করে নিতে হবে।





মৃত ও রোগাক্রান্ত ডাল অপসারনের জন্য, গাছের উপযুক্ত আকৃতি প্রদানের জন্য, প্রতিটি ডালে ফুল আসবার জন্য এবং প্রয়োজনীয় রোদ পাবার জন্য গোলাপ গাছ নিয়মিত ছাটাইয়ের প্রয়োজন হয়। গাছের ফুল দেয়া শেষ হলেই গাছ ছেঁটে দিতে হবে। নিয়মিত গাছ ছাঁটাই করলে বেশী ও বড় আকারের ফুল পাওয়া যায়। গাছের মরা ডাল দেখা মাত্র তা ধারালো সিকেচার দিয়ে কেটে ফেলতে হবে। সিকেচার জীবাণুমুক্ত রাখা সবচেয়ে বেশি জরুরী।





বছরে ১ বার অক্টোবর/নভেম্বর মাসে গোলাপের ডালপালা ছেঁটে দিতে হবে। ডালপালা ছাঁটাই-এর মাধ্যমে গাছের মৃত, দুর্বল, রোগাক্রান্ত, ও নষ্ট অংশ দূর করা হয়। যার ফলে নতুন ডালপালা জন্মে ও নতুনভাবে আরও ভালো ফুল উৎপন্ন সম্ভব হয়।
প্রয়োজনে কীটনাশক ব্যবহার করতে পারেন (পারফেকথিয়ন ৪০ ইসি), দাম ৬২ টাকা অথবা টাফগর। গোলাপের জন্য আরেকটি প্রয়োজনীয় কীটনাশক হল প্রক্লেম (দাম ৪৫ টাকা)। এছাড়া ছত্রাক নাশক বেভিসটিন পাউডার (দাম ৬৮ টাকা) অথবা ইন্দ্রোফিল এম-৪৫ ব্যবহার করা যায় (দাম ১০০ টাকা) । সাধারণত আর কোন কীটনাশক দেয়ার দরকার পরে না।





আশা করি এবার আপনারাও আপনাদের অন্য গাছের পাশাপাশি গোলাপ এর গাছ ও রাখবেন। সারা বছর ধরে ফোঁটা গোলাপ আপনার মনকে করে তুলবে আরও সজীব ও পবিত্র।


কাটিং চারা তৈরি পদ্ধতি



পোস্ট এ ব্যবহার করা প্রতিটি ছবিই আমার ছাদের বাগান থেকে তোলা।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৫৪
৩০টি মন্তব্য ২৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×