somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ক্ষুধাই যাদের নিত্য সঙ্গী।বেঁচে থাকার অদম্য ইচ্ছাই যাদের অস্ত্র!

১৪ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রায় বছর তিনেক আগের ঘটনা। বিভিন্ন কাজের চাপে ভুলেই গেছিলাম।অনেক দিন পর সেদিন বন্ধগেটে চা খেতে বসতেই ঘটনাটা মনে পড়ল।এর ওর কাছে খোঁজ নিলাম। কিন্তু কেউ দিতে পারলনা শুকুরের খোঁজ।হয়ত শুকুর নামের ছেলেটি হারিয়ে গেছে এই বিশাল পৃথিবীর কোন প্রান্তে।

কোন এক সন্ধ্যায় প্রতিদিনের মত বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়ার জন্য হেটে যাচ্ছিলাম বন্ধগেটের রেললাইন ধরে। হঠাৎ চোখে পড়ল একটি শিশু। রেললাইনের পাশে রাখা একটি খড়ের গাদার উপরে গভীর ঘুমে মগ্ন সে । চাপাই থেকে খুলনাগামী মহানন্দা একসপ্রেস ট্রেনটা ছুটে গেল পাশ দিয়ে। ট্রেনের হুইসেলে কান ধাপা ধরে গেল। কিন্তু ছেলেটির ঘুমে কোন ব্যাঘাত ঘটল না। অনুমান করলাম হয়ত সে কয়েকটি দিবা রাত্রি নিদ্রাহীন কাটিয়েছে। সে যেখানে ঘুমচ্ছিল তার একটু সামনেই ফুলবাবুর চায়ের দোকানে বসলাম বন্ধুদের সাথে। তুমুল আড্ডা চলছিল সাথে চায়ের কাপে বিড়ির ঝড়।
বেশ কিছুক্ষণ পরে আবার দেখলাম সেই ছেলেটিকে। এবার তার হাতে একটি বিড়ি। এদিক সেদিক কিছু একটা খুঁজছে। কিছুক্ষণ পর বুঝলাম সে আগুন খুঁজছিল। আড্ডার আসর থেকে উঠে গেলাম তার কাছে। জিজ্ঞেস করলাম,
- নাম কি তোর?
- শুকুর ।
- কোথায় থাকিস?
- এই রেললাইনেই।
- রেললাইনের কোথায়? বস্তিতে?
- না, রেললাইনেই।
- দেখলাম ঘুমচ্ছিলি, ঘুম ভেঙ্গে গেল?
- হ! বেশ্যার বেটা উডায় দিছে।
- কে?
- ভাঙ্গারীওয়ালা।
- রাতে ঘুমাও নাই?
- ঘুমাইতে দেয় না, শালারা উডায় দেয়।
- কারা? ভাঙ্গারীওয়ালারা?
- হ! আবার, পুলিশও মারে। কয়, টেকা দে, ঘুমাইলে টেকা লাগব।
- বাপ কি করে?
মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল সে। কোন উত্তর নেই তার মুখে।
- মা কি করে?
প্রচণ্ড ক্ষেপে গেল সে।
- আপনে কেডা? এত কথা জিগাছেন ক্যানে?
ওকে পাশে নিয়ে বসলাম। পিঠে হাত দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম-
- বাপ-মা নাই?
- না।
- মারা গেছে?
- জানিনা।
বুঝলাম তার বাবা মায়ের পরিচয় নেই। শিক্ষিত সমাজ যাদেরকে জারজ বলে।
- খাওয়ায় কে?
- কেডায় খাওয়াইব? ক্ষিদা লাগলে কাগজ কুড়াই বেচি। ওই টেকা দিয়া খাই।
- দুপুরে খাওয়া হইছে?
- না। কয়ডা কাগজ টোকাইছিলাম, এক ভাঙ্গারীওয়ালা আমারে মাইরা কাগজ লিয়ে গিলছে!
- বিড়ি কই পাইছস?
- রেল লাইনে পইড়া আছিল।
- বিড়ি খাওয়াতো ভাল না।
- আপনেও তো খাছেন।
আমার হাতে তখন সিগারেট ছিল।
- আমার মত বড় হলে খাস। এখন খাইস না।
- আইচ্ছা।
- শুধু কি সিগারেটই খাস? নাকি, গাঁজা-টাজাও খাস?
নিশ্চুপ সে।
- কি? গাঁজা-টাজাও খাস নাকি?
- রাইতে বন্ধুরা খায়। আমি মাঝে মাঝে অদের সাথে খাই।
কথা শুনে আমি অবাক! ওর বয়সে আমিতো গাঁজা কি তাই জানতাম না।
- এসব খাইস না। এগুলো খাওয়া ভাল না।
- আইচ্ছা। আর, খামু না।
সাথে নিয়ে গিয়ে একটি ভাতের হোটেলে বসালাম। ক্ষুধার্ত এক বালকের খাওয়া দেখে ভাবতে লাগলাম, বিধাতা এদের কেন দুনিয়ায় পাঠায়? প্রচণ্ড রাগ লাগল বিধাতা আর নিজের উপর। খাওয়া শেষ হলে তাকে আবার সিগারেট আর গাঁজা খেতে নিষেধ করলাম। আড্ডার জায়গাটি দেখিয়ে বললাম বিকেলে আমাকে এখানে পাবি। চলে গেল সে নিজের মত করে।
ছোট্ট এই বালকের থাকার কথা মায়ের পরম মমতায়। অথচ তাকে জন্ম দিয়েই তার মা দায়মুক্ত। মা-বাবার পরিচয় সে কাউকে দিতে পারেনা। পথে পথে ঘুরে সে। রেললাইনের শক্ত পাথর তার বিছানা। জীবনের প্রতি পদে সে খাচ্ছে হোঁচট। আর, আমরা ঘুমচ্ছি নরম বিছানায়। খাচ্ছি মুখরোচক খাবার। ছিঃ! এত বড় স্বার্থপর আমি,আমরা! ছিঃ!
দু’মুঠো ভাত চাইলে আমরা তাকে বলি ”কাজ করে খেতে পারিস না?”। তাকে কাজ দিবে কে? আমরা তো তাকে কোন কাজ দেই না। “জারজ ছেলে! বাজে ছেলে! তাকে কাজ দিয়ে পরে নিজে বিপদে পরব?”-এই হল আমাদের মত সুশীল সমাজের চিন্তাধারা।
আজ হয়ত মাঝে মাঝে সে গাঁজা সিগারেট খায়। কিছুদিন পর প্রতিদিন নেশা করবে। সেই নেশার টাকা জোগাতে করবে চুরি,ছিনতাই। নিজেকে বাঁচাতে খুঁজবে রাজনৈতিক আশ্রয়। নেতারা তাকে ব্যবহার করবে যাবতীয় খারাপ কাজে। একসময় সে হয়ে উঠবে সমাজের নাম করা সন্ত্রাসী।
পথশিশু হচ্ছে তারাই, যাদের বয়স ১৮ বছরের নিচে এবং রাস্তায় থাকে, রাস্তায় কাজ করে, রাস্তায় খেলে ও সেখানেই ঘুমায়। পথশিশুরা পথে জন্ম নেয় না, ঘরের শিশুরাই কোনো না কোনো নির্যাতনের কারণে পথে বেরিয়ে পড়ে। ভাসমান মানুষের মধ্যে এরাই সবচেয়ে বঞ্চিত এবং নির্যাতিত। অথচ এ পথশিশুরা নানা কাজের সঙ্গে জড়িত থাকে। সাধারণত তাদের কেউ ফুল বিক্রি করে, কেউ চকোলেট, সিগারেট, পানি ও পত্রিকা বিক্রি করে। আর যারা এ ধরনের কাজ করে না, তারা প্লাস্টিকের বোতল কুড়ায় কিংবা ভিক্ষা করে। তাদের কোনো স্থায়ী ঠিকানা নেই। ফুটপাতে, বিভিন্ন স্টেশনের প্লাটফর্মে, পার্কের বেঞ্চে তারা রাত কাটায়। তারা অশুভ শক্তির হাতে ব্যবহৃত হচ্ছে। মাদক ব্যবসা থেকে শুরু করে নানা ধরনের হীন কর্মকাণ্ডে নামমাত্র অর্থের বিনিময়ে ক্ষমতাবানরা তাদের ব্যবহার করে সামাজিক অবক্ষয়ের চিত্র আরও স্ফীত করে তুলছে। এ পরিস্থিতি অবশ্যই উদ্বেগজনক। আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, এসব পথশিশুর মধ্যে কন্যাশিশুদের জোরপূর্বক পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করা হচ্ছে। অনেককে আবার অপহরণ করে বিদেশেও পাচার করা হচ্ছে।
অবহেলিত শব্দটি পথশিশুদের জীবনের সঙ্গে যেন কোনো না কোনোভাবে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে পথশিশুরা নানা রকম অবহেলা আর বঞ্চনার শিকার হয়। রাস্তাঘাটে এক টাকা-দুই টাকার জন্য তারা পথচারীকে অনুরোধ করে নানাভাবে। কেউ কেউ আবার কাগজ কুড়ায়। তীব্র শীতের মধ্যেও তাদের প্রায়ই গরম কাপড় ছাড়া দেখা যায়, যা সত্যিই অমানবিক ও দুঃখজনক। কেননা, এভাবে কষ্টের মধ্যে জীবনযাপন করার জন্য তো তাদের জন্ম হয়নি। স্বাধীন দেশে এই পথশিশুদেরও সমান সুযোগ-সুবিধা নিয়ে বড় হওয়ার অধিকার আছে। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা—এই মৌলিক চাহিদাগুলো যথোপযুক্তভাবে পাওয়ার অধিকার তাদেরও আছে। যে বয়সে তাদের বিদ্যালয়ে যাওয়ার কথা, সেই বয়সে বস্তা হাতে নিয়ে কাগজ কুড়াবে কেন?
উন্নত দেশগুলোতে দেখা যায়, প্রত্যেকটি শিশুর দায়িত্ব রাষ্ট্র কোনো না কোনোভাবে পালন করে। বেশি খেয়াল রাখা হয় প্রত্যেক শিশুর সুস্থ জীবনযাপনের প্রতি। গড়ে দেওয়া হয় প্রত্যেক শিশুর ভবিষ্যৎ বিভিন্ন সুন্দর পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে, কোনো শিশু যেন অবহেলার শিকার না হয়।
এই পথশিশুদের আমরা কোনোভাবেই এড়িয়ে যেতে পারি না। আমরা সব সময় আগামী প্রজন্ম আগামী প্রজন্ম বলে স্বপ্ন দেখি, এই পথশিশুরাও কিন্তু সেই স্বপ্নের মধ্যে পড়ে। যদি এই পথশিশুদের ভবিষ্যৎ গড়ে দেওয়া না যায়, তবে হয়তো সেই স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হবে। সমান সুযোগ-সুবিধা পেলে এই পথশিশুদের মধ্য থেকে আসতে পারে দেশসেরা ব্যক্তিত্ব, যারা দেশের জন্য অনেক বেশি অবদান রেখে যেতে পারে। অনেক বড় মাপের মহান মানুষগুলোর জীবনী পড়তে গেলে এমন অনেক প্রমাণ মিলবে, যাঁরা খুব ছোট অবস্থা থেকে বড় হয়েছেন।
আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলেছে পথশিশুর সংখ্যা। দেশে বর্তমানে পথশিশুর সংখ্যা ১০ লাখ। পথশিশু বৃদ্ধির এ হার বজায় থাকলে ২০১৪ সাল নাগাদ সংখ্যা ১২ লাখে গিয়ে দাঁড়াবে। অথচ ক্রমবর্ধমান এ শিশুদের কল্যাণে নেই কোন নীতিমালা। পথশিশুদের প্রায় ৪৪ ভাগ ধূমপান করে এবং রাতে ঘুমানোর জন্য ৪১ ভাগ শিশুর কোন বিছানা নেই। পথশিশুদের প্রায় ৪০ ভাগ প্রতিদিন গোসল করতে পারে না ও ৩৫ ভাগ শিশু খোলা জায়গায় পায়খানা করে। কোন মতে খাবার যোগাড়ের জন্য ৮০ ভাগ পথশিশু বিভিন্ন ধরনের কাজ করে। ৮৪ ভাগের কোন শীতবস্ত্র নেই। এতে আরও বলা হয়, অসুস্থ হলে প্রায় ৫৪ ভাগের দেখাশোনার কেউ নেই। অর্থের অভাবে পথশিশুদের ৭৫ ভাগ ডাক্তারের কাছে যেতে পারে না।বিগত সরকারের সময়ে পথশিশুদের উন্নয়নে একটি কার্যকর ও পরিপূর্ণ নীতিমালা তৈরির উদ্যোগ নেয়া হলেও তা আজও বাস্তবায়িত হচ্ছে না।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর পরিসংখ্যান তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, শতকরা ৩৪ দশমিক ৮ ভাগ পথশিশু কোন একটি নির্দিষ্ট স্থানে বসবাস করে ১ থেকে ৬ মাস। ২৯ ভাগ পথশিশু স্থান পরিবর্তন করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কারণে, আর ৩৩ ভাগ পাহারাদারদের কারণে। এরা ফুটপাথে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটালেও প্রায় ৫৬ ভাগ শিশুকে মাসিক ১০০-২০০ টাকা নৈশ প্রহরী বা মস্তানকে দিতে হয়। বিবিএসের ওই একই গবেষণায় বলা হয়, পথশিশুদের প্রায় ৪৪ ভাগ ধূমপান করে এবং রাতে ঘুমানোর জন্য ৪১ ভাগ শিশুর কোন বিছানা নেই। পথশিশুদের প্রায় ৪০ ভাগ প্রতিদিন গোসল করতে পারে না ও ৩৫ ভাগ শিশু খোলা জায়গায় পায়খানা করে। কোন মতে খাবার যোগাড়ের জন্য ৮০ ভাগ পথশিশু বিভিন্ন ধরনের কাজ করে। ৮৪ ভাগের কোন শীতবস্ত্র নেই। এতে আরও বলা হয়, অসুস্থ হলে প্রায় ৫৪ ভাগের দেখাশোনার জন্য কেউ নেই। অর্থের অভাবে পথশিশুদের ৭৫ ভাগ ডাক্তারের কাছে যেতে পারে না।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেফতারের শিকার হয় ১৯ ভাগ পথশিশু। অথচ এদের অর্ধেকের বিরুদ্ধে কোন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকে না।আবার পথশিশু কিংবা ভবঘুরেরা যদি প্রতিবন্ধী হয় তাহলে সমস্যা আরও প্রকট। কারণ প্রতিবন্ধীদের সেবাযত্ন করার কোনো ব্যবস্থা আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে নেই। এসব আশ্রয়কেন্দ্রের অবকাঠামোও খুব দুর্বল। লোকবলের অভাব তো আছেই। দেশে অসংখ্য এনজিও রয়েছে অথচ হাতেগোনা কয়েকটি এনজিও পথশিশুদের নিয়ে কাজ করছে। এক্ষেত্রে যদি বড় এনজিওগুলো কাজ করে তাহলে বিবর্ণ চিত্রের অনেকটাই লাঘব সম্ভব।

সংবিধানে শিশুদের নিরাপদে বেড়ে ওঠার অধিকারের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ আছে। তাদের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানের পাশাপাশি শিক্ষালাভের অধিকার আছে। শিশুকে অপহরণ করা বা ফুসলে নিয়ে যাওয়া আইনের চোখে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। শিশুকে বেশ্যাবৃত্তিতে প্রলুব্ধ করা বা তাদের দিয়ে ভিক্ষা করানো কিংবা যারা এদের অভিভাবকত্বে থাকেন, তাদের দায়িত্ব পালনে অপারগতা কিংবা শিশুর প্রতি নিষ্ঠুরতা আইনের চোখে দণ্ডনীয় অপরাধ। সংবিধান শিশুদের জন্য বিশেষ সুবিধাজনক আইন প্রণয়ন করতে সরকারকে অধিকার দিয়েছে।
ইউএনডিপির অর্থায়নে সমাজসেবা অধিদফতরের অ্যারাইজ প্রকল্পের দায়িত্বশীলরা ১৯৯৯ সাল থেকে পথশিশুদের নিয়ে কাজ করছেন। এ প্রকল্পের মাধ্যমে পথশিশুদের উন্নত জীবনযাপনের জন্য 'ড্রপ-ইন-সেন্টার' চালু রয়েছে। এ প্রকল্পের মধ্যে আরও আছে পথশিশুদের খাদ্য, বাসস্থান, শিক্ষা, কাউন্সেলিং ভোকেশনাল ট্রেনিং, চিকিৎসাসেবা, খেলাধুলাসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা প্রদান। মোটকথা, 'ড্রপ-ইন-সেন্টার' হচ্ছে এখন পর্যন্ত দেশে পথশিশুদের নিরাপদ আশ্রয়। এক তথ্যে প্রকাশ, শুধু ঢাকা শহরেই তিন লাখের বেশি পথশিশু রয়েছে। এর মধ্যে এক ভাগ পথশিশুকে এ প্রকল্প থেকে সেবা প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে। সহজেই অনুমেয়, বাকিদের কী অবস্থা। সমাজসেবা অধিদফতরের অধীনে সারাদেশে ছয়টি ভবঘুরে আশ্রয়কেন্দ্র আছে, যেগুলোতে মোট আসন রয়েছে ১ হাজার ৯শ'।

শিশুদের অধিকারের ক্ষেত্রে জাতিসংঘ ১০টি নীতি ঘোষণা করেছে। শিশুরা সুস্থ, স্বাভাবিক ও স্বাধীন মর্যাদা নিয়ে যাতে শারীরিক, মানসিক, নৈতিক, আধ্যাত্মিক এবং সামাজিকভাবে পূর্ণ বিকাশ লাভ করতে পারে সেরকম সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার অধিকার সব শিশুরই আছে। বাংলাদেশে যেসব আইন প্রচলিত আছে, তা দিয়েই এ অধিকার রক্ষিত হতে পারে। কিন্তু প্রশ্ন অন্যখানে। এ আইনগুলো বাস্তবায়ন করার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। শিশুকে তার সব সম্ভাবনা নিয়ে বিকশিত হতে হলে সবার আগে নূ্যনতম প্রয়োজন পুষ্টিকর খাদ্য এবং উপযুক্ত নিরাপদ পরিবেশ। এ দুটির জন্য আইনে অভিভাবককে দায়ী করা হয়েছে। কিন্তু অভিভাবকের জীবনচিত্রও কি প্রীতিকর? এখনও এদেশে সিংহভাগ মানুষের বসবাস দারিদ্র্যসীমার অনেক নিচে। এ অবস্থায় অভিভাবক কতটা যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে পারেন তা-ও সহজেই অনুমেয়।
মানুষের মৌলিক অধিকার ভোগ করার ব্যবস্থা ও সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা দেওয়ার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। সরকার আসে, সরকার যায়; কিন্তু এসব বিষয় উপেক্ষিতই থাকে। কিংবা এক সরকার এক রকম ব্যবস্থা নিলে পরবর্তী সরকার তা পাল্টায়। ফলে মূল কাজ তো কিছু হচ্ছেই না; বরং রাষ্ট্রীয় কোষাগারের অর্থ নাশ হচ্ছে। এই পথশিশুদের দিকে আশু যথাযথ নজর না দিলে ভবিষ্যৎ পরিণাম হতে পারে বিপজ্জনক। পরিকল্পিত দূরদর্শী গঠনমূলক উদ্যোগ এক্ষেত্রে অবশ্যই ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এ নিয়ে কালক্ষেপণ না করে যত দ্রুত সম্ভব কার্যকর উদ্যোগ নেওয়াটাই জরুরি হয়ে পড়েছে। পথশিশুদের জীবনচিত্র রাষ্ট্রীয় ক্ষতের একটি বড় দিক। এই রাষ্ট্রীয় ক্ষত গোটা সমাজব্যবস্থাকে আরও বিবর্ণ করবে। তাই এর উপশম জরুরি।

সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১:৩৭
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×