বিদেশ-বিভুঁইয়ে অনেক বাংলাদেশীদের কাজ-কর্মে ইংরেজীতে যোগাযোগ করতে যথেষ্ট বেগ পেতে দেখা যায়। সমান বা বেশী যোগ্যতা থাকলেও তাদেরকে পাশ কাটিয়ে ভারত বা ইংরেজী ভাষার অন্য দেশের নাগরিকরা এগিয়ে যায়।
কয়েকজনের সাথে কথা বলে যা বুঝলাম, দেশে পড়াশোনা বা কাজের ক্ষেত্রে ইংরেজী ভাষার তেমন চর্চা করা হয়নি তাদের, যার কারণে এই ভোগান্তি।
এ কারণেই একটা প্রশ্ন বার বারই ঘুরপাক খেতো মনে, গ্লোবালাইজেশনের এই যুগে শিক্ষা বা অফিস-আদালতে মাতৃভাষায় কথা বলা কি আসলেই জরুরী।
আমি ভাষা বা সংস্কৃতি বিশেষজ্ঞ না। নিজেদের কোন কোন সংস্কৃতি না বজায় রাখলে স্বল্প বা দীর্ঘমেয়াদী কী কী সমস্যা হবে এ জাতীয় প্রশ্নের উত্তর আমার কাছে নেই। তবু সাদামাটা চোখে বিষয়টা বোঝার চেষ্টা করলাম। সন্তানের পিতা হিসেবে বিষয়টি আমার কাছে জরুরী।
খুব বেশীদূর যেতে হলো না। এ বিষয়ে কিছু গবেষণা ও সার্ভে থেকে জানলাম, একজন শিশুর বড় হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে, বিশেষ করে বাবা-মায়ের সাথে তার যোগাযোগের ক্ষেত্রে মাতৃভাষার ব্যবহার খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, মাতৃভাষায় বাবা-মা সবচাইতে আন্তরিকভাবে সন্তানদের সাথে যোগাযোগ ক্ষেত্রে। ভালোবাসার এই ভাষার মমত্বপূর্ণ স্পর্শ শিশুটিকে অনুভূতিশীল এবং বিবেকবান মানুষ হিসেবে বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে অনেক সাহায্য করে। এই কারণে মাল্টি কালচারাল দেশগুলোতে ইংরেজীর পাশাপাশি স্কুলগুলোতে শিশুদের মাতৃভাষায় আলাদাভাবে শেখানো হয়।
মানুষ হিসেবে বড় হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে মাতৃভাষার বিকল্প নেই। কিন্তু পেশাগত পর্যায়ে সফল হতে গেলে আন্তর্জাতিক ভাষা ইংরেজী কতটুকু গুরুত্ব পাবে সে প্রশ্ন চলেই আসে।
সত্যি বলতে কি ইংরেজীকে বাদ দিয়ে আগাতে পারলে একদিক থেকে ভালোই হতো। আরেকটি ভাষা শেখা ও রপ্ত করার পেছনে যে বিপুল সময় ও মেধা ব্যয় করতে হয়, সেটা যদি উৎপাদন বা সৃষ্টিশীলতার পেছনে দেয়া যায়, তাহলে জাতি হিসেবে আরো দ্রুত এগিয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে। জাপানের মতো অনেক দেশই সেটা করে দেখিয়েছে।
কিন্তু সে পর্যায়ের কঠিন অহং নিজেদের মধ্যে না থাকলে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে নিজেদের দক্ষ হিসেবে তৈরি করতে ইংরেজীকে জায়গা করে দিতে হবে। এবং সেটা শুধু কোন রকম যোগাযোগের জন্যে না। খুবই ভালোভাবে করতে হবে। শুধুমাত্র অন্য একটা ভাষায় দখল না থাকার করণে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও আমরা পেছনের কাতারে থাকবো এটা মেনে নেয়া কষ্টের।
সবাইকে মাতৃভাষা দিবসের শুভেচ্ছা।