somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আদর্শ হিন্দু হোটেল

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ৯:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বই বিশ্লেষণঃ আদর্শ হিন্দু হোটেল
লেখকঃ বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
ধরণঃ সামাজিক উপন্যাস
প্রকাশকালঃ ১৯৪০
পৃষ্ঠাঃ ১৪৩

"আদর্শ হিন্দু হোটেল" ইংরেজ সময়ের পটভূমিতে রচিত বিভূতিভূষণের একটি বিখ্যাত উপন্যাস। এ উপন্যাসে তৎকালীন ব্রাহ্মণ সমাজের একজন "রাঁধুনি বামুণ" হাজারি দেবশর্মার জীবনকাহিনী লেখক সিদ্ধহস্তে বইয়ের পাতায় তুলে এনেছেন।

রাণাঘাটের রেল-বাজারে বেচু চক্কত্তির "আদর্শ হিন্দু হোটেল" বিখ্যাত হোটেল। এই হোটেলে রাঁধুনি বামুণের কাজ করে হাজারী ঠাকুর। মাসিক সাত টাকা, দুইবেলা আহার পায় হোটেল থেকে। রাতে হোটেলেই ঘুমায় সে। তার বাড়ি এঁড়োশোলা গ্রামে, গ্রামে তাঁর স্ত্রী, মেয়ে টেঁপি(আশালতা), ছেলে খোকা থাকে। সেখান থেকে কাজের সন্ধানে রাণাঘাট এসে সে বেচু চক্কত্তির হোটেলে কাজ শুরু করেছে আজ থেকে পাঁচ বছর আগে।

বেচু চক্কত্তির "আদর্শ হিন্দু হোটেল" এর উন্নতির পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান হাজারী ঠাকুরেরই। তার মত ওস্তাদ বামুণ রাণাঘাটে আর কেউ নেই। যারা একবার তার হাতের রান্না খেয়েছে, তারা বারবার এসেছে তার রান্না খাওয়ার জন্য। প্রতিবারই, লোকজন এসে তার রান্না খেয়ে প্রশংসা করে যায়, হাজারী ঠাকুরও বড্ড খুশি হয় প্রশংসাবাক্য শুনলে।
হোটেলের একজন বাদে সবাই তাকে ভালো জানে, হাজারী ঠাকুর মানুষটাও আগাগোড়া ভালো।

হোটেলের একজনই তাকে দেখতে পারে না, পদ্ম ঝি। হাজারী ঠাকুর তাকে "পদ্মদিদি" ডাকে। এই পদ্মঝি'র কথাই হোটেলের শেষকথা। এমনকি বেচু চক্কত্তিও তার কথার ওপরে কথা বলেনা। বেচু চক্কত্তির সাথে পদ্মঝি'র কোনো সম্পর্ক আছে কী না এ নিয়েও লোকজন বহু কথা বলে।
পদ্মঝি পদেপদে হাজারী ঠাকুরকে অপমান করে, বেচু চক্কত্তির কাছে হাজারী ঠাকুর সম্পর্কে বহু মিথ্যাচার করে তাকে অপদস্থ করে প্রায়শই। এ নিয়ে হাজারী ঠাকুরের কোনো অভিযোগ নেই, সব মিথ্যা অপবাদ সে মুখবুজে সহ্য করে নেয়। পদ্মদিদিকে সে ভীষণ ভয়ও পায়।

হাজারী ঠাকুরের বড় ইচ্ছে, সে একটা হোটেল খুলবে। রান্না, বাজার করা সে জানেই। এখন চারশো টাকার মত হলেই সে হোটেল খুলতে পারে। কিন্তু, টাকা কে দেবে? হোটেল নিয়ে অনেক বড় পরিকল্পনা তার। কিন্তু, টাকার প্রসঙ্গ এলেই সব পরিকল্পনা কেমন যেন চুপসে যায়

একদিন, পদ্মঝি'র ষড়যন্ত্রে মিথ্যা চুরির অপবাদে হাজারী ঠাকুরকে "আদর্শ হিন্দু হোটেল" এর চাকরী ছাড়তে হয়। কপর্দকহীন হয়ে রাস্তায় নেমে আসে হাজারী দেবশর্মা।

এখন কী করবে হাজারী ঠাকুর? তার হোটেল করার স্বপ্ন কী সত্যি হবেনা?

অতসী, কুসুম, রতন ঠাকুর, মতি, বংশী ঠাকুর, যদু বাঁড়ুয্যে,নরেন এদের নাম মনে রাখুন। "আদর্শ হিন্দু হোটেল" উপন্যাসে প্রবেশ করলে এই চরিত্রগুলোর সাথে আপনারও দেখা হয়ে যাবে।

সবারই বইটি পড়া উচিত। বিভূতিভূষণের অন্যতম বিখ্যাত উপন্যাস এটি। আমি একটানে বইটি শেষ করেছিলাম। অনেক বই পড়তে গেলে বারবার পৃষ্ঠার দিকে তাকাতে হয়। এ বই পড়ার সময়ে একবারও পৃষ্ঠার দিকে তাকাতে হয়নি। কাহিনী কোথাও ঝুলে যায়নি।ঘটনার টানটান গাঁথুনি ছিলো শেষপৃষ্ঠা পর্যন্ত। বিভূতিভূষণের লেখায় প্রকৃতির একটা ঘনিষ্ঠ বর্ণনা সবসময়ই পাওয়া যায়, এ উপন্যাসেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।
আমার কাছে অদ্ভুত সুন্দর লেগেছে উপন্যাসটি। সহজ, সরল, মসৃণ গতিতে এগিয়েছে কাহিনী।

এটা এমন একটা উপন্যাস যেটা পড়ে মন খারাপ থাকলেও ভালো হয়ে যাবে, শেখারও আছে অনেককিছু। হেরে যেতে যেতে কীভাবে ঘুরে দাঁড়ানো যায়, একটু সহযোগীতা পেলে মানুষ কতটা অসাধ্যসাধন করতে পারে তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ "আদর্শ হিন্দু হোটেল।"
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ৯:৫৪
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

×