somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার আমি ভাবনা "শূন্য থেকে" আত্ন সমালোচনা ।

২৪ শে জুলাই, ২০১৭ দুপুর ১২:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমিই মহান! আমাকে ধারন করার ক্ষমতা আমি ছাড়া আর কারো নেই। আমি ভাবি আমি অতিক্ষুদ্র একটি প্রাণ। আবার আমি ভাবি আমার মাঝে কর্মদক্ষতা নেই, নেই অনেক বেশি জ্ঞান। মাঝে মাঝে ভাবি আমার মাঝে প্রেম, দয়া-মায়াও খুব বেশি নেই। এগুলো সবই আমার ভাবনা, ভাবনা ছাড়া আর কিছুই না। আর হ্যা, এগুলো সব ভুল ভাবনা (হয়তো) আমি বলছিনা এগুলো মিথ্যা ভাবনা, আমি বলতে চাচ্ছি এগুলো সত্য ভাবনা নয়। এই ভাবনা গুলো অসত্য এইজন্য যে, এগুলো একটাও সঠিক ভাবনা নয়, আর মিথ্যা ভাবনা নয় এই জন্য যে, ভাবনাগুলো আমি নিজেই নিজেকে নিয়ে ভেবে স্থীর করেছি।

একটু সহজ করে বলি, ধরুন আমি মজা করে আমার স্ত্রীকে বলেছি যে "আগামী মাসে আমি তোমাকে একটা স্বর্ণের হার কিনে দিব"। অথচ কথাটা সত্য নয়, কারন আমার এরূপ ইচ্ছা ও সামর্থ কোনোটাই নাই, শুধু মজা করেই বলেছি। কিন্তু আমার স্ত্রী এটাকে সত্যভেবে প্রতি মাসেই আমাকে খুব ভালবেসে আহ্লাদী কন্ঠে বিষয়টা মনে করিয়ে দিতে থাকল। এভাবে আমি হঠাৎ ব্যপারটা নিয়ে সিরিয়াস হয়ে উঠলাম এবং স্ত্রীকে দেওয়া কথাটা রাখার জন্য অনেক পরিশ্রম করে একবছরের মধ্যে হার কেনার টাকাটা জমিয়ে ফেললাম এবং স্ত্রীকে হার কিনে দিয়ে আমার সেই মজা করে বলা অসত্য কথাটাকে সত্যে রূপান্তর করলাম। এক্ষেত্রে আমার সেই কথাটা সত্য না হলেও এখন আর মিথ্যা নেই, কারন আমি তা করে দেখিয়েছি শেষ পর্যন্ত। কিন্তু এটা সত্য যে আমার কথাটা তখন অসত্য ছিল। কিন্তু অসত্য ছিল শুধুই আমার ভাবনার জন্য, আমি ভেবেছিলাম আমি পারবো না তাই। কিন্তু আমি আজ তা করে দেখিয়েছি এবং নিজেই নিজের ভাবনাকে মিথ্যা প্রমাণ করতে পেরেছি।



আমি নিজেকে যা-ই ভাবি না কেন, তাতে দোষের তেমন কিছুই নেই। শুধু কর্ম করা যাই। নিজেকে মহান করার চেষ্টা করি, গভীরভাবে ধ্যানে ডুব দিই আমার ভিতর হতে ভিতরে, জ্ঞান আমাকে ধরা দিতে বাধ্য । ভালবাসি সবাইকে, মায়া, প্রেম বিলিয়ে দিতেই থাকি । হঠাৎ ভাবনায় আমি প্রেমিক, দয়াবান হয়ে গেলাম। হঠাৎ আমি নিজেকে নিয়ে অন্যরকম ভাবে ভাবতে শুরু করলাম আর দিন দিন সেদিকেই অগ্রসর হতে থাকলাম। একদিন আমার ভিতরের ভাবনা বাইরে সকলের কাছে সত্য হিসেবে প্রকাশ পাবেই।
আমার ভাবনাই আমাকে সুখে ও দুঃখে রাখছে। আমি নিজেকে সুখী ভাবছি না বলেই আমি দুঃখী। আমি সব বিষয়েই সিরিয়াস হয়ে ভিন্ন ভাবনা ভাবছি। কোনো কিছু নিয়েই খুব সিরিয়াসভাবে ভাবি না। সেটা যেমন বিষয়ই হোক। আমি সিরিয়াস হতে চাই, খুব বেশি সিরিয়াস হতে চাই না। আমাকে কেউ কষ্ট দিতে চাইলে আমি সেটা নিয়ে দুঃখী শুধু আমার ভাবনার কারনে। কেউ কাউকে গালি দিলে আমার কিছু হয় না, তবুও আমার মন খারাপ হয় নানা ধরনের বাজে ভাবনার কারনে। জীবনকে খুব বেশি সিরিয়াসভাবে নেওয়ার কারনেই হয়ত আমি দুঃশ্চিন্তা করি।



পাগলের সুখ-দুঃখ কোনোটাই নাই। এমনটা নয় একটি পাগল খুব সুখী, সে মোটেও সুখী নয়। কিন্তু আমার মত সে দুঃখীও নয়। কারন সে জীবন নিয়ে সিরিয়াসভাবে ভাবেনা। আজ দুপুরে ইলিশ মাছ দিয়ে ভাত খাবার সাথে সাথেই আমি ভাবছি আগামীকাল আমি কি খাবো, শুধু কি সেটা! আমি আজ রাতে কি খাবো সেটা ভেবেও ব্যস্ত আমি। অথচ রাতে ও আগামীকাল আমি যে খাবারের অভাবে অনাহারে থাকবো না এটা কি আমি নিশ্চিত? কারন আমার অনেক আছে, আমি অভাবী নই। তবুও আমার ভাবনার কারনে আমি একটি পাখির চেয়েও চিন্তিত, যে পাখি কিনা আজ আহার করে এসে বাসায় ফিরে জানেনা আগামীকাল সে কি খাবে। অথচ আমি নিশ্চিত আমি খাবার পাবো তবুও আমি কী কী খাবার খাবো তা নিয়ে ব্যস্ত। অপরদিকে আরেকজন অভাবীও ভাবছেন আগামীকাল সে কি খাবার পাবে! আমার ভাবনাও সেই অভাবীর মত। তাই আমি আমার ভাবনার কারনে অভাবী না হয়েও ঐ অভাবী ব্যক্তির মতই মানসিকভাবে অসুখী হয়ে পড়ছি ।



আমি হঠাৎ একজন সাধু যোগীকে দেখে ভাবছি সে অনেক বড় একজন সাধক, আমি তার মত হতে পারবো না। অথচ হতে পারে সে সাধনা কেবল শুরু করেছে, আমি যা ভাবছি তা মোটেও সত্য নয়। আমি যদি সাধনায় বসতাম তবে যেটুকু হোক প্রাপ্তিটা আমার হত। আমি সাধক হতে পারতাম যদি আমি ভাবতাম আমি সাধক হতে সক্ষম। আমি ভাবছি সাধু হতে গেলে অনেকে আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করবে, কিন্তু আমি নিজেই দেখছি একজন সাধককে মানুষ কতটা মূল্যায়ন করে। কিন্তু আমার এই ভাবনাটার কারনে আমি নিজের বেলায় তা ভেবে উল্টো ভাবছি এবং নিজেকে অক্ষম মনে করছি। আমি ভাবছিলাম যারা অনেক বড় সাধক হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন, তারা অনেক যুগ যুগ সাধনা করেছেন যা আমার পক্ষে করা সম্ভব না। অথচ আমি যদি ভাবতাম "তারা ত যুগ যুগ সাধনা করেছে, আমি ত কয়েকটা দিন চেষ্টা করে দেখতে পারি"। কিন্তু আমি তা না ভেবে ভুল ভাবনা নিয়েই রয়েছি। তাই আমার পক্ষে সাধক হওয়া ত দূরের কথা, আম সাধনা শুরুই করতে পারেন নি আজও।


"আমি সম্পূর্ণই আমার নিজের ভাবনার মত। তাই ভাবনার পরিবর্তনেই আমার পরিবর্তন ঘটবে।"

প্রতিটি মানুষের মাঝে যে 'আমিত্ব' আছে, সেটাই হল প্রকৃত শয়তান। দেহের বাইরে শয়তানের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে না। বাইরে থেকে কোনো শয়তান আমাদের ধোকা দিচ্ছে না। আমাদের মাঝে যে 'আমিত্ব" আছে, এই আমিত্ব নামক শয়তানটাই 'আমি'কে অপবিত্র করে দিচ্ছে। 'আমি' প্রভুর নূর, আর 'আমিত্ব' হল শয়তান। 'আমিত্ব' বাদ না দিতে পারলে 'আমি' কখনো পরিশুদ্ধ হয়ে মাওলার কাছে প্রত্যাবর্তন করতে পারবে না। আমিত্ব যতদিন থাকবে, ততদিনই জন্ম-মৃত্যুর বেরা-জালে আবদ্ধ হয়ে পৃথিবীতে বার বার আসতে হবে মানবকূল থেকে শুরু করে পশুকূলে। আর একবার পশুকূলে চলে গেলে পৃথিবীর বুকে লক্ষ কোটী পশু যোনী ভ্রমন করতে হবে।
'আমি' ও 'আমিত্ব' দুটি পৃথক বস্তু। এই দেহের মাঝে এই দুইয়ের বসবাস। এই দেহ থেকে 'আমিত্ব'কে সরিয়ে দিতে না পারলে কখনো প্রভুর দেখা পাওয়া সম্ভব নয়। 'আমিত্ব' হল অন্ধকার, আর প্রভুর নূর হল আলোর ন্যায় উজ্জ্বল। অন্ধকার আর আলো একসাথে থাকতে পারেনা। তাই যেখানে প্রভুর নূর আছে, সেখানে 'আমিত্ব' থাকতে পারেনা, আর 'আমিত্ব' থাকলে সেখানে প্রভুর নূর প্রকাশ পায় না। এই ধরনীর বুকে যত ওলী-আল্লাহ ছিলেন, যারা এখনও আছেন, এবং যারা আসবেন তারা সবাই আমিত্বকে বিসর্জন দিয়েই আল্লাহকে লাভ করেছেন এবং করবেন। 'আমিত্ব' নামক শয়তানের বন্ধু হয়ে কখনো আল্লাহকে বন্ধু রূপে পাওয়া সম্ভব না।
মানুষের সামান্য কথায় আমরা আমাদের ক্রোধকে দমিয়ে রাখতে পারিনা, কারো দেওয়া অল্প আঘাত আমরা সহ্য করতে না পেরে পাল্টা আঘাত করি, নিজের সন্তান ও পরিবারের বেলায় হাজার লক্ষ খরচ করতেও দ্বিধা করিনা; কিন্তু অন্যের বেলায় দু'পয়সা দান করতে গেলে হাত খাটো হয়ে আসে। এসবই হচ্ছে 'আমিত্ব' এর কারনে। 'আমি' এতো খারাপ নয়, 'আমি'কে খারাপ পথে পরিচালিত করছে আমার মধ্যে থাকা 'আমিত্ব'।
যখন কারো মন্দ কথা আমাদের গায়ে লাগবে না, কেউ বদনাম করলে কষ্ট পাবোনা, কারো মুখে নিজের প্রশংসা শুনে আমাদের আনন্দ জাগবে না, তখনই 'আমিত্ব' ভাব দূর হয়েছে বুঝতে হবে। তখনই ফানাফিশ শায়েখ পার হয়ে ফানাফির রাসূলে পৌছে যাবে একজন মানুষ।



ছবির মহা-মানবদের জিবনী থেকে অনুপ্রেরিত হয়ে লেখা। আমার একান্ত ভাবনা মাত্র, ভুলত্রুটি ধরিয়ে দিয়ে ক্ষমা করবেন। JR Sikder
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুলাই, ২০১৭ দুপুর ১২:২৭
৯টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×