somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অল্পস্বল্প ব্লগিং ২

১৯ শে মে, ২০১৪ রাত ১২:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অল্পস্বল্প ব্লগিং-১
তার হেয়ালী ধরতে পারি না বলে, দৃষ্টিতে জিজ্ঞাসা নিয়ে তাকিয়ে থাকি তার দিকে।

টাকাটা হাতে নিতে নিতে সে আবার বলল, এমন জায়গায় কি প্রথম আসলেন?

-হুম!

-সবাই তো আমাদের তুই-তুমি করে বলে।

-হঠাৎ করে কাউকে তুই বা তুমি বলতে পারি না।

-কী খেতে চান?

-মাছ-ভাত-ডাল-ভর্তা-ভাজি! রান্না ভালো হলেই হলো।

-পানি গিলবেন, নাকি এইটাও চিনেন না?

-এটা জানা আছে।

-তাহলে মাছ না। বমি হয়ে সব বের হয়ে যাবে। গরুর মাংসের কথা বলি।

-আচ্ছা।

মেয়েটি দরজা খুলে মাথাটা বের করে এদিক ওদিক দৃষ্টি ফিরিয়েই হয়তো ডেকে ওঠে- বিন্দু মাসী কুয়ানে গেলি?

প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই বাইরে কোনো প্রৌঢ়ার কণ্ঠ ধ্বনিত হয়-কি বলবি ক!

-গরুর চাপার গোস্ত দুইটা ডাবল। ভাত একটা ডাবল। মাঝারি কড়া একটা। বাকি পঞ্চাশ টাকা তোর।

এবারও তার কথাবার্তা পুরোপুরি বুঝি না। গরুর চাপার মাংস, মাঝারি কড়া, তা ছাড়া তিনশ টাকার জায়গায় পুরো টাকাটাই ছেড়ে দিল কেন?

দরজার একটি কপাট ধরে ফিরে বলল, গোসল করতে চাইলে নদীতে চলেন। আমার গোসল দরকার। সারাদিনের বস্তা সামলাতে সামলাতে শরীর গন্ধ হইয়ে গেছে।

বস্তা ব্যাপারটা যেন এতক্ষণে আমার বুঝে এলো কিছুটা। খদ্দের তাহলে তাদের কাছে বস্তা? হাসি পেলেও তা চেপে রাখি। বলা যায় না। নানা অপরাধের স্বর্গ এসব এলাকা। কী থেকে কী হয়ে যায় বলা কঠিন। তবে এ পর্যন্ত এ সমস্ত পল্লী নিয়ে যত কাহিনী আর গাল-গল্প পড়েছি এমন ঘটনার কথা কোথাও পাইনি। ব্যাপারটা যেন আমার মনের চিলেকোঠায় আটকে থাকা গুমোট ভাবটাকে বেরিয়ে যেতে একটি পথ করে দিল। যদিও ট্রলার থেকে নেমে এ পল্লীর ভেতরের দিকে হেঁটে আসতে নানা অশুভ ভাবনায় ভেতরে ভেতরে চুপসে যাচ্ছিলাম। সেই সঙ্গে কেমন খাপছাড়া আর অচেনা একটি অস্বস্তিকর গন্ধের মুখোমুখি হলে ভেতরের দিকে আসবার আগ্রহটা হ্রাস পাচ্ছিল ক্রমশ। কোনো কোনো খুপরি ঘরের সামনে দিয়ে আসবার সময় শুনতে পাচ্ছিলাম নূপুর আর অর্গানের শব্দ। তার কয়েকটা ঘর পরেই শুনতে পাচ্ছিলাম মিহি স্বরে কাঁদছে কোনো এক যুবতী বা রমণী। সব মিলিয়ে বিগত সময়ে জমে ওঠা যাবতীয় দৈহিক কাতরতা আর কামনা বাসনা ঝিমিয়ে পড়েছিল প্রায়। মেয়েটির মুখে গোসল আর নদী শব্দ দুটো শুনতে পেয়ে আমার স্নায়ুগুলো যেন জেগে উঠলো মুহূর্তে।

সারাদিনের রাস্তার ধকল, ক্ষুধা আর গরমের তাণ্ডবে এমনিতেই বেশ বিপর্যস্ত ছিলাম। তার সঙ্গে অন্ধকারাচ্ছন্ন পথে হাঁটতে হাঁটতে কখন যে আমারও গোসল করবার ইচ্ছেটা প্রবল হয়ে উঠেছে বুঝতে পারিনি। বিশেষ করে পানিতে ঝাঁপাঝাপি করে গোসল করা হয় না বহুকাল। বানিশান্তার নিষিদ্ধ এক খুপরি ঘরের অচেনা মেয়েটির কারণেই কিনা আমারও সাধ জাগে কৈশোরের মতো পানিতে ডুব দিয়ে মুঠো ভর্তি কাদা তুলে ছুঁড়ে মারি আরো গভীর পানিতে।

মেয়েটির সঙ্গে যে পথে নদীর দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলাম সে অংশটির অন্ধকারকে তেমন বেশি দুর্বল করতে পারেনি বেশ খানিকটা দূরে পাশাপাশি গায়ে গায়ে লাগানো বিভিন্ন আকৃতির ট্রলারে ঝুলিয়ে রাখা ছোটবড় বাতিগুলোর সম্মিলিত আলো। মেয়েটি তার হাতের কাপড়, সাবান, গামছা মাটিতে বা ঘাসের ওপর ফেলে রেখেই গায়ের কাপড় খুলতে খুলতে নেমে যায় পানিতে। আমি তার অস্পষ্ট দেহকাণ্ডের শাখা-প্রশাখা দেখি অথবা আমার বুভুক্ষু মন নিজের মতো করে এঁকে নেয় দৃষ্টির কালচে ক্যানভাসে। সেই সঙ্গে অদ্ভুত একটি নেশা যেন তাড়িত করে আমাকে। পানির কাছাকাছি আমি থমকে দাঁড়ালে মেয়েটি গলা অবধি পানিতে দাঁড়িয়ে বলল, সব খুলে নেমে পড়েন। আশপাশে কেউ নেই।

মেয়েটির আহ্বানে আমার ভেতরগত স্নায়ুতন্ত্রও যেন কেঁপে উঠল শিরশির করে। জীবনে কত কিছুই না বাকি থেকে গেছে সুশীলতার প্রাণপণ চেষ্টায়, মান-মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখবার ভণ্ডামিতে। সেই তো প্রাপ্তি বলতে শূন্যতা আর প্রতারণাই। তাহলে কেন আর শুধু শুধু নানা প্রতিশ্রুতির ভারবাহী হয়ে জীবন কাটানো? সজ্ঞানে যতক্ষণ মেয়েটির কাছাকাছি থাকি সে সময়টা হয়তো আমাকে ঠকাবে না সে। সুশীলতার আড়ালে সূক্ষ্ম স্বার্থপরতার সূচিকর্মে পটু হবার সুযোগ পাবার আগেই হয়তো নিষিদ্ধ এ পল্লীটির অন্ধকারে ডুবে গিয়েছিল সে। তারপর তার জীবনে কেবল পুরুষ, দিনরাত, ক্ষুধা-রেচনই হয়তো মুখ্য হয়ে আছে। আর সে কথা মনে হতেই পোশাক আশাক খুলে ফেলে সদ্যজাতের চাঞ্চল্যে ঝাঁপিয়ে পড়ি পশুর নদীর কালো জলে।

(আজ এ পর্যন্তই)
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মে, ২০১৪ দুপুর ১২:০৬
১১টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×